আওয়ার ইসলাম: ইসলামী শিক্ষা ও আদর্শের সুতিকাগার “কওমি মাদরাসা সনদের স্বীকৃতি বিল” মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কাতার প্রবাসী উলামা-মাশায়েখ ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, এ স্বীকৃতি কওমি সন্তানদের জন্য মেধা ও জ্ঞানচর্চার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে তাদের ব্যাপক অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
গত মঙ্গলবার (১৪ আগষ্ট) দোহার দাওয়াত রেষ্টুরেন্টে আলনূর কালচারাল সেন্টার, কাতার আয়োজিত ‘কওমী সনদের স্বীকৃতি: প্রত্যাশা ও আশংকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মতামত ব্যক্ত করা হয়।
নির্বাহী সদস্য মুফতি আহসান উল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে আলনূর কালচারাল সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মাওলানা ইউসুফ নূর বলেন, “১৮৬৮ খৃষ্টাব্দে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উপমহাদেশে ইসলামী রেনেসাঁর নতুন অধ্যায় শুরু হয়। এই ধারাবাহিকতায় ১৯০১ ইং সনে চট্টগ্রাম দারুল উলুম হাটহাজারীর গোড়াপত্তনের মধ্য দিয়ে এ দেশে কওমি ধারার শুভ সূচনা হয়।
আজ শুধু উপমহাদেশ নয় বরং দুনিয়া জুড়ে কওমি মাদরাসার জয়জয়কার। এক নিউইয়র্ক শহরেই রয়েছে কয়েকশ কওমী সেন্টার। কওমি মাদরাসার তুখোড় মেধাবী সন্তানেরা হিফজুল কুরআন, ইসলামী ফিকহ ও আরবী সাহিত্যে আন্তর্জাতিক পুরস্কার ছিনিয়ে এনে দেশের মুখ উজ্জল করেছে। কাতারে প্রায় হাজার খানেক ইমমি-মুয়জ্জিন ও কুরআন প্রশিক্ষক রয়েছে, যাদের অধিকাংশই কওমি মাদরাসা পড়ুয়া।”
তিনি বলেন, “এ স্বীকৃতি আমাদের প্রত্যাশা ও আশংকা দুটোই বাড়িয়ে দিয়েছে। এ স্বীকৃতির কারণে কওমি ছাত্ররা পৃথিবীর খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা ও অধ্যাপনার সুযোগ পাবে। ইসলামী বিভাগ সমূহ তাদের দ্বারা উপকৃত হবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের কর্মপরিধি বৃদ্ধি পাবে।তবে সরকারী সংশ্লিষ্টতার কারণে অতীতে পৃথিবীর বিভিন্ন ইসলামী প্রতিষ্ঠানের স্বকীয়তা হারানোর নজীর ও কম নয়। তাই উলামা মাশায়েখদের সর্বোচ্চ সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফীর গতিশীল নেতৃত্ব স্বীকৃতি আন্দোলনকে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছিয়েছে। মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ, মুফতি রুহুল আমিন ও মাওলানা মাহমুদুল হাসান প্রমুখের অনবদ্য ভূমিকা রয়েছে। শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক, মুফতি ফজলুল হক আমিনী ও মাওলানা আব্দুল জাব্বারসহ অনেক মুরুব্বিদের অবদান ও জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে স্বরণ করবে।
নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা সকলেই কওমী মাদরাসার ছাত্র। আমাদের ইসলামী চেতনার মুলেই রয়েছে কওমী মাদরাসা। কওমি সনদের স্বীকৃতি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রমাণ। কওমী আলেমদের অগ্রসর চেতনার আরেক উদাহারণ আলনূর কালচারাল সেন্টার। কাতারে আমরা এর দ্বারা উপকৃত হচ্ছি। নিউইয়র্কেও আলনূর সেন্টারের কার্যক্রম স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছে।
ব্যবসার হিসাব নিয়ে জটিলতা আর নয় (কল- 01771 403 470) ক্লিক করুন
ইসলামী আন্দোলন কাতারের সেক্রেটারী মাওলানা তোয়াহা সিদ্দিকী বলেন, উলামা মাশায়েক ও শাসকদের নেক ঐক্য ইসলাম ও দেশের জনকল্যাণ বয়ে আনে কওমী স্বীকৃতি এর উজ্জল প্রমাণ। প্রকৌশলী আলীম উদ্দিন বলেন, জাতির সবচেয়ে মেধাবী সন্তানেরাই কওমী মাদ্রাসায় পড়ে। কারণ আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ছাড়া ঐশি জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়।
আওয়ামীলীগ কাতার শাখার (একাংশ) সভাপতি শফিকুল ইসলাম প্রধান বলেন, উলামা মাশায়েখ জাতির দরদি অভিভাবক। তারা আমাদের দুরে ঠেলে দিতে পারেননা। তারা কল্যাণের উৎস। প্রশাসন ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ এ উৎস থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখলে তা হবে দুঃখজনক। ইসলামের কথা বললেই জামাতী ট্যাগ লাগানোর প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
কওমী সনদের স্বীকৃতি দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তৌহীদি জনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন। আমরা তাকে অভিনন্দন জানাই। সাধারণ শিক্ষিত ও ইসলামী বিশেষজ্ঞদের সেতুবন্ধন আলনূর সেন্টারের সফলতা কামনা করি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করেন প্রখ্যাত কারী হাফেজ নূর মুহাম্মদ, হাফেজ জুনাইদ, কারী মুস্তাফিজুর রহমান ও হাফেজ সাফওয়ান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা সমিতির সহসভাপতি প্রকৌশলী আলিমুদ্দিন, কফিল উদ্দিন, মুফতি আব্দুল কাদের শাহীন ও প্রকৌশলী আবুল ওয়ালীদ, কাতার ইসলামী সেন্টারের গবেষক প্রকৌশলী মাওলানা সৈয়দ মাহবুব আলম, আলনূর শিক্ষা বিভাগীয় সহকারী পরিচালক মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী সদস্য হাফেজ লোকমান, কারী ইব্রাহিম, রাকিবুল ইসলাম ও ফজলে রাব্বি প্রমুখ।
আরও পড়ুন
‘কওমি মাদরাসার স্বীকৃতির বিরোধিতাকারীরা মূর্খের স্বর্গে বাস করেন’
স্বীকৃতির পর আমাদের কী করণীয়?
দেওবন্দের মূলনীতির ওপরে ভিত্তি করেই স্বীকৃতি বাস্তবায়ন হচ্ছে
সরকারকে অভিনন্দন তবে শঙ্কাও আছে: উবায়দুর রহমান খান নদভী
‘সরকারকে অভিনন্দন; তবে বাকি প্রক্রিয়াও শিগগির সম্পন্ন হোক’
-আরএম/