আওয়ার ইসলাম: কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান ঘোষণার পর প্রথমবারের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী সোমবার। এরই মধ্যে প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও কিছু বিষয় নিয়ে উঠেছে সমালোচনা। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে সব কিছু প্রস্তুত করায় প্রশংসাও পাচ্ছেন পরীক্ষা কমিটি।
স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আল হাইআতুল উলইয়ার লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে মোট ১৯ হাজার ৩৯৩ জন শিক্ষার্থী এ বছর দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। তবে কোন বোর্ডের শিক্ষার্থী কত তা নিয়ে লুকোচুরি লক্ষ করা গেছে। পরীক্ষা কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা তথ্য দিতে রাজি হননি। পরীক্ষার্থী সংখ্যা গোপন রাখায় কী ফায়দা সেটিরও কোনো সদুত্তর দেননি কর্মকর্তাগণ।
তবে কর্মকর্তাগণ বিষয়টি গোপন করলেও একটি সূত্র আওয়ার ইসলামকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এবার দাওরায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৩৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৫ হাজার ২৯৮ এবং নারী ৪ হাজার ৯৫ জন। মোট ২১৫টি কেন্দ্রে তারা পরীক্ষা দেবেন।
জানা যায়, ১৯৩৯৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছে ১১১৯১ পুরুষ, ৩৭৫২ নারী। চট্টগ্রামের ইত্তেহাদের অধীনে ১০০৭ পুরুষ ও ৩৭ জন নারী। সিলেটের আযাদ দ্বীনি এদারা’র অধীনে ১০৫০ পুরুষ, ১২৭ জন নারী। গওরডাঙ্গার বোর্ডের অধীনে ৪৭৫ পুরুষ, ১৪৫ নারী। উত্তরবঙ্গ তানযীমের অধীনে ১১২৬ পুরুষ, ০ নারী। জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৪৪৯ পুরুষ, ৩৪ নারী।
পুরুষদের পাশাপাশি এবার পরীক্ষায় মহিলা মাদরাসার শিক্ষার্থীদের প্রবেশ পত্রেও ছবি লাগবে। যা শনাক্ত করবেন হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নারী কর্মকর্তা।
জানা গেছে, পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র ইতোমধ্যেই অনেক কেন্দ্রে পৌঁছেছে। তবে অনেকে এখন পর্যন্ত প্রবেশপত্র হাতে পাননি। রাজধানীর মুগদার বাহরুল উলুম মাদরাসার এক দাওরা পরীক্ষার্থী জানান তারা এখনো প্রবেশপত্র পাননি।
এদিকে ঢাকার অনেক মাদরাসার শিক্ষার্থী প্রবেশ পত্র পাওয়ার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারণ জেনে দেখা গেছে, প্রবেশপত্রে নাম বা পিতার নাম ঠিক নেই। অনেকের নাম এসেছে অর্ধেক। কোনোটায় বানান ভুলের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত।
শুক্রবার এক মাদরাসা থেকে ভুলে ভরা অনেকগুলো প্রবেশপত্রের ছবি তুলে পাঠিয়েছেন একাধিক ছাত্র। তারা বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে পরীক্ষার সার্টিফিকেটে নামের বানান মিল না থাকলে নানা জটিলতায় পড়তে হবে কর্ম জীবনে। অথচ একটু সচেতন হলেই ভুলগুলো এড়িয়ে যাওয়া যেত।
শিক্ষার্থীদের পাঠানো পবেশপত্রের ছবিতে দেখা যায়, জাতীয় পরিচয় পত্রে নাম এইচ এম হাসান আহমাদ হলেও প্রবেশপত্রে লেখা হয়েছে শুধু হাসান আহমাদ। ওই শিক্ষার্থী জানান, আমি ফরম পূরণ করেছি পুরো নাম লিখেই তারা কেন শুধু হাসান আহমাদ লিখেছে বুঝতে পারছি না।
আরেকটি প্রবেশপত্রে পিতার নামে সরকার লেখা হয়েছে শ দিয়ে। আরেক শিক্ষার্থীর নাম যাইনুল আবেদীন, তার নাম লেখা হয়েছে সাইনুল আবেদীন। ফারুক আহমদকে লেখা হয়েছে ফারুখ আহম্মেদ। মোশাররফকে লেখা হয়েছে মোশারেফ।
নামের ভুল সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলার জন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা শামসুল হকের মোবাইলে দুপুর ১১.৩০ এর পর একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
একই বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় আল হাইআতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ এর দফতর প্রধান মাওলানা ওসিউর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা নাম এন্ট্রির জন্য খুব অল্প সময় পেয়েছি। যার কারণে কিছু ভুল থেকে গেছে। খাতা মূল্যায়নের সময়ই নামের ভুলগুলো ঠিক করে রেজাল্ট প্রকাশ করা হবে ইনশাল্লাহ।
এই নিয়ে কোনো বাড়তির চিন্তার প্রয়োজন নেই বলেও তিনি জানান।
মহিলা মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ছবির বিষয়টি জানতে চাইলে মাওলানা ওসিউর রহমান বলেন, এ বিষয়ে বেফাকের জরুরি বৈঠক এখন চলছে। বৈঠক শেষ হলে আগামী কাল ফাইনাল সিদ্ধান্ত জানানো যাবে।
সমাজে কওমি মাদরাসার অবদান তো অস্বীকার করা যায় না
প্রশ্নবাণে কওমি মাদরাসা : আমাদের নির্মম রসিকতা
আরআর