শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


যেমন ছিলেন আবদুল কাদের জিলানি রহ.

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ আল ফারুক : ইমাম শা’রানি রহ. বলেন, একবার এক ব্যক্তি কসম খেয়ে বললো, আমি এমন ইবাদত করবো যে, ভূপৃষ্ঠের দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি এ সময় এমন ইবাদত করবে না। যদি এই কসম পূর্ণ করতে না পারে; তবে তার স্ত্রী তিন তালাক। প্রশ্নটি বাগদাদের অনেক আলেমের কাছে উত্থাপিত হলো। সাধারণত উলামায়ে কেরাম তার সেই প্রশ্ন শুনে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতেন যে, বাহ্যত ওই ব্যক্তির জন্যে তালাক থেকে উদ্ধার পাওয়ার কোনো সূরত নেই। কেননা এমন আবার কোন ইবাদত আছে, যার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে বলা যাবে যে, ভূপৃষ্ঠের কোনো ব্যক্তি সেই ইবাদত করছে না। সবশেষে প্রশ্নটি হযরত শায়খ আবদুল কাদির যিলানি রহ.-এর খেদমতে উত্থাপিত হলো। তিনি তাৎক্ষণিক এর উত্তর জানিয়ে বললেন, এ ব্যক্তির জন্যে মক্কার হারাম শরীফ কিছুক্ষণের জন্যে জনশূন্য করে দেয়া হোক। সে একাকী সেখানে তাওয়াফ করবে। তার সাথে কেউ থাকতে পারবে না।

হযরতের অসংখ্য বাণী ও নসীহত শরীয়ত ও সুন্নতের অনুসরণ এবং বিদ’আত পরিহারের শিক্ষা ও প্রেরণার অত্যুজ্জ্বল সাক্ষী। হযরতের হৃদয়ছোঁয়া ওয়াযে মুগ্ধ হয়ে প্রত্যহ অসংখ্য মানুষ গুনাহ থেকে তাওবা করতো।

ইমাম শা’রানি রহ. হযরত আবদুল কাদির রহ.এর মুখ থেকে একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। হযরত বলেন, একবার আমার সামনে এতো বিশাল আলোর উজ্জ্বল ছটা ছড়িয়ে পড়লো যে, দশ দিগন্ত সে আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠলো। কিছুক্ষণ আমার সামনে একটি অবয়ব ফুটে ওঠলো। সেখান থেকে ঘোষণা এলো যে, হে আবদুল কাদির! আমি তোমার প্রভু। আমি আজ থেকে তোমার জন্যে সকল হারাম কাজ হালাল করে দিলাম। আমি সাথে সাথে বললাম, দূর হও ওরে বিতাড়িত শয়তান! আমার সে কথা শেষ না হতেই সেই আলো চরম অন্ধকারে পরিণত হলো। সেই অবয়বটি ধূয়ো হয়ে শূন্যে মিশে গেলো। সেখান থেকে আওয়াজ এলো : হে আবদুল কাদির! তুমি তোমার ইলমের বদৌলতে আমার প্রতারণার কবল থেকে রক্ষা পেলে। নয়তো এ জাতীয় প্রতারণার ফাঁদ পেতে আমি সত্তর জন তরিকতপন্থীকে পথচ্যূত করেছি। তার উত্তরে আমি বললা, এগুলো (আমার ইলমের বদৌলতে ঘটেনি) শুধু মহান আল্লাহর দয়া ও করুণার বদৌলতে ঘটেছে।
[আত তবাকাতুল কুবরা লিশ শা’রানি : ১/১০৯]

বুযুর্গরা বলেন, শয়তানের এই দ্বিতীয় আক্রমণটি ছিলো প্রথম আক্রমণের চেয়ে সাংঘাতিক মারাত্মক ও অধিক প্রতারণাপূর্ণ। কেননা প্রথম আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়ার পর হযরত রহ. কে তাঁর ইলমের অজুহাত দিয়ে জ্ঞানের অহংবোধে ফেলার চক্রান্ত করেছিলো। কিন্তু তার এই মারাত্মক আক্রমন থেকেও মহান আল্লাহ তাঁকে সুরক্ষিত রাখেন।

এ ধরনের ঘটনাবলী থেকে বুঝে আসে যে, হযরত রহ. তরিকতের সাথে সাথে শরিয়তের এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানের সমবিহারে বাহ্যিক জ্ঞান-বিদ্যার প্রতিও কী পরিমান গুরুত্বারোপ করতেন। যার ধারাবাহিকতায় তিনি অন্তিম নিশ্বাস পর্যন্ত দ্বীনি জ্ঞানসমূহের পাঠদান ও ফাতাওয়া প্রদান ইত্যাদির মাঝে স্বশরীরে ব্যপ্ত থেকেছেন।
কিন্তু অন্যান্য আউলিয়ায়ে কেরামের মাযারগুলোর মতো শরিয়ত ও তরিকতের এই মহান ইমামের মাযারেও অজ্ঞতাপ্রসূত শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের স্থূল দৃশ্য বিদ’আতের অবয়বে পরিলক্ষিত হলো। জাতির যেই মহান সেবকের সমগ্র জীবন ব্যয় হয়েছে শরিয়তের অনুসরণের শিক্ষায়; তার মুবারক মাযারের ওপর এ সমস্ত শরিয়তপরিপন্থী কার্যকলাপ খোদ তার কাছেই কতটা কষ্টকর অনুভূত হবে? তা ভাবতেই অন্তরের ভেতর ব্যথার কুন্ডুলি পাকিয়ে মোচড় দিয়ে ওঠলো।

মাযারের কাছ ঘেষেই বাইরে হযরতের প্রতিষ্ঠিত সেই মাদরাসাটি আজও দাঁড়িয়ে আছে। পরদিন মাগরিব নামাযের ভেতর সেই মাদরাসায় সম্মানিত বুযুর্গ শায়খ মুহাম্মাদ আবদুল করীম আল মুদাররিসের সাথে সাক্ষাৎ হলো। তিনি শায়খ আমজাদ যাহাভী রহ. এর অন্যতম সহচর। তিনি বর্তমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ডিগ্রিপ্রসবিণী কারিকুলাম ছেড়ে প্রাচীন কারিকুলামের যোগ্য উসতাযবৃন্দ ও শায়খদের কাছ থেকে বিভিন্ন দ্বীনি ইলম অর্জন করেছেন। ‘ম্যাজেস্ট্ররেট’ আর ‘ডক্টরেট’-এর এই যুগে এমন উলামায়ে কেরামের সঠিক মূল্যায়ন করার মতো লোক খুঁজে পাওয়া নিতান্তই দুষ্কর। কিন্তু সত্য হলো, ইলমে দ্বীনের যেই সৌরভ আর শরিয়ত ও সুন্নাতের যেই বিভা এই সকল পাতা মাদুরে উপবেষ্ট লোকদের কাছে অনুভূত হয়, তা সাধারণত ইউনিভার্সিটিগুলোর আকাশচুম্বী অট্টালিকা আর তার কৃত্রিম পরিবেশে পাওয়া যায় না। একারণে যেখানেই যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে, সেখানে এধরনের উলামাদেরকেই আমার অনুসন্ধিৎসু দু’নয়ন খুঁজে বেরিয়েছে।
কেমন ছিলেন আবদুল কাদের জিলানি রহ.।

পৃথিবীর পথে পথে (৩)

আবদুল কাদের জিলানি রহ. এর মাজারে তাকি উসমানি

ইমাম শা’রানি রহ. বলেন, একবার এক ব্যক্তি কসম খেয়ে বললো, আমি এমন ইবাদত করবো যে, ভূপৃষ্ঠের দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি এ সময় এমন ইবাদত করবে না। যদি এই কসম পূর্ণ করতে না পারে; তবে তার স্ত্রী তিন তালাক। প্রশ্নটি বাগদাদের অনেক আলেমের কাছে উত্থাপিত হলো। সাধারণত উলামায়ে কেরাম তার সেই প্রশ্ন শুনে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতেন যে, বাহ্যত ওই ব্যক্তির জন্যে তালাক থেকে উদ্ধার পাওয়ার কোনো সূরত নেই। কেননা এমন আবার কোন ইবাদত আছে, যার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে বলা যাবে যে, ভূপৃষ্ঠের কোনো ব্যক্তি সেই ইবাদত করছে না। সবশেষে প্রশ্নটি হযরত শায়খ আবদুল কাদির যিলানি রহ.-এর খেদমতে উত্থাপিত হলো। তিনি তাৎক্ষণিক এর উত্তর জানিয়ে বললেন, এ ব্যক্তির জন্যে মককার হারাম শরীফ কিছুক্ষণের জন্যে জনশূন্য করে দেয়া হোক। সে একাকী সেখানে তাওয়াফ করবে। তার সাথে কেউ থাকতে পারবে না।

হযরতের অসংখ্য বাণী ও নসীহত শরীয়ত ও সুন্নতের অনুসরণ এবং বিদ’আত পরিহারের শিক্ষা ও প্রেরণার অত্যুজ্জ্বল সাক্ষী। হযরতের হৃদয়ছোঁয়া ওয়াযে মুগ্ধ হয়ে প্রত্যহ অসংখ্য মানুষ গুনাহ থেকে তাওবা করতো। ইমাম শা’রানি রহ. হযরত আবদুল কাদির রহ.এর মুখ থেকে একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। হযরত বলেন, একবার আমার সামনে এতো বিশাল আলোর উজ্জ্বল ছটা ছড়িয়ে পড়লো যে, দশ দিগন্ত সে আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠলো। কিছুক্ষণ আমার সামনে একটি অবয়ব ফুটে ওঠলো। সেখান থেকে ঘোষণা এলো যে, হে আবদুল কাদির! আমি তোমার প্রভু। আমি আজ থেকে তোমার জন্যে সকল হারাম কাজ হালাল করে দিলাম। আমি সাথে সাথে বললাম, দূর হও ওরে বিতাড়িত শয়তান! আমার সে কথা শেষ না হতেই সেই আলো চরম অন্ধকারে পরিণত হলো। সেই অবয়বটি ধূয়ো হয়ে শূন্যে মিশে গেলো। সেখান থেকে আওয়াজ এলো : হে আবদুল কাদির! তুমি তোমার ইলমের বদৌলতে আমার প্রতারণার কবল থেকে রক্ষা পেলে। নয়তো এ জাতীয় প্রতারণার ফাঁদ পেতে আমি সত্তর জন তরিকতপন্থীকে পথচ্যূত করেছি। তার উত্তরে আমি বললা, এগুলো (আমার ইলমের বদৌলতে ঘটেনি) শুধু মহান আল্লাহর দয়া ও করুণার বদৌলতে ঘটেছে।
[আত তবাকাতুল কুবরা লিশ শা’রানি : ১/১০৯]

বুযুর্গরা বলেন, শয়তানের এই দ্বিতীয় আক্রমণটি ছিলো প্রথম আক্রমণের চেয়ে সাংঘাতিক মারাত্মক ও অধিক প্রতারণাপূর্ণ। কেননা প্রথম আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়ার পর হযরত রহ. কে তাঁর ইলমের অজুহাত দিয়ে জ্ঞানের অহংবোধে ফেলার চক্রান্ত করেছিলো। কিন্তু তার এই মারাত্মক আক্রমন থেকেও মহান আল্লাহ তাঁকে সুরক্ষিত রাখেন।

এ ধরনের ঘটনাবলী থেকে বুঝে আসে যে, হযরত রহ. তরিকতের সাথে সাথে শরিয়তের এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানের সমবিহারে বাহ্যিক জ্ঞান-বিদ্যার প্রতিও কী পরিমান গুরুত্বারোপ করতেন। যার ধারাবাহিকতায় তিনি অন্তিম নিশ্বাস পর্যন্ত দ্বীনি জ্ঞানসমূহের পাঠদান ও ফাতাওয়া প্রদান ইত্যাদির মাঝে স্বশরীরে ব্যপ্ত থেকেছেন।
কিন্তু অন্যান্য আউলিয়ায়ে কেরামের মাযারগুলোর মতো শরিয়ত ও তরিকতের এই মহান ইমামের মাযারেও অজ্ঞতাপ্রসূত শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের স্থূল দৃশ্য বিদ’আতের অবয়বে পরিলক্ষিত হলো। জাতির যেই মহান সেবকের সমগ্র জীবন ব্যয় হয়েছে শরিয়তের অনুসরণের শিক্ষায়; তার মুবারক মাযারের ওপর এ সমস্ত শরিয়তপরিপন্থী কার্যকলাপ খোদ তার কাছেই কতটা কষ্টকর অনুভূত হবে? তা ভাবতেই অন্তরের ভেতর ব্যথার কুন্ডুলি পাকিয়ে মোচড় দিয়ে ওঠলো।

পৃথিবীর পথে পথে (২)

পৃথিবীর পথে পথে

মাযারের কাছ ঘেষেই বাইরে হযরতের প্রতিষ্ঠিত সেই মাদরাসাটি আজও দাঁড়িয়ে আছে। পরদিন মাগরিব নামাযের ভেতর সেই মাদরাসায় সম্মানিত বুযুর্গ শায়খ মুহাম্মাদ আবদুল করীম আল মুদাররিসের সাথে সাক্ষাৎ হলো। তিনি শায়খ আমজাদ যাহাভী রহ. এর অন্যতম সহচর। তিনি বর্তমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ডিগ্রিপ্রসবিণী কারিকুলাম ছেড়ে প্রাচীন কারিকুলামের যোগ্য উসতাযবৃন্দ ও শায়খদের কাছ থেকে বিভিন্ন দ্বীনি ইলম অর্জন করেছেন। ‘ম্যাজেস্ট্ররেট’ আর ‘ডক্টরেট’-এর এই যুগে এমন উলামায়ে কেরামের সঠিক মূল্যায়ন করার মতো লোক খুঁজে পাওয়া নিতান্তই দুষ্কর। কিন্তু সত্য হলো, ইলমে দ্বীনের যেই সৌরভ আর শরিয়ত ও সুন্নাতের যেই বিভা এই সকল পাতা মাদুরে উপবেষ্ট লোকদের কাছে অনুভূত হয়, তা সাধারণত ইউনিভার্সিটিগুলোর আকাশচুম্বী অট্টালিকা আর তার কৃত্রিম পরিবেশে পাওয়া যায় না। একারণে যেখানেই যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে, সেখানে এধরনের উলামাদেরকেই আমার অনুসন্ধিৎসু দু’নয়ন খুঁজে বেরিয়েছে।

-এআরকে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ