মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


আবদুল কাদের জিলানি রহ. এর মাজারে তাকি উসমানি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ আল ফারুক : পরদিন ছিলো রোববার। নাশতার পর নিমন্ত্রণকারীদের প্রতিনিধি আবদুর রাজ্জাক সাহেব (প্রোটোকল অফিসার) হোটেলে উপস্থিত হন। আমরা সবকিছুর আগে হযরত ইমাম আবু হানিফা রহ., হযরত আবদুল কাদির যিলানি রহ. সহ অন্যান্য বুযুর্গের মাযারে হাযির হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলাম। তিনি খুব সহজেই প্রোগ্রাম তৈরি করলেন। জানালেন, আমাদের যাত্রাপথে সবার আগে পড়বে হযরত শায়খ আবদুল কাদির যিলানি রহ.এর মাযার। সে মোতাবেক বাইরে বেরিয়ে পড়লাম।

এই প্রথম দিনের আলোতে বাগদাদে পথ-ঘাট, দালানকোঠা দেখার সৌভাগ্য হলো। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম আধুনিক নগরী বাগদাদ। দৃষ্টিনন্দন বাড়ি-ঘর। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পথ-ঘাট। শহর জুড়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ফ্লাইওভার আর পাতাল সড়কগুলো একদিকে যেমন ট্রাফিক সমস্যার খুব সহজেই সমাধান করে দিচ্ছে, অপরদিকে রাস্তার সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ।

জনশ্রুতি আছে যে, আধুনিক বাগদাদ তৈরির রূপকার বাদশাহ সাদ্দাম এই নগরীকে সভ্যতা ও উন্নতির শীর্ষশিখরে পৌঁছে দিয়েছেন। যেখানে খতিব বাগদাদ তার ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেন যে, যখন বাদশাহ মনসুর এই নগরীর গোড়াপত্তন করেছিলেন, সে সময় এ নগরীর দৈর্ঘ যেমন ছিলো দুই মাইল, প্রস্থও ছিলো দুই মাইল। এই বাগদাদ নগরী পৃথিবীর মধ্যে সর্বপ্রথম গোলাকার ব্যাসার্ধে তৈরি জনপদ। আর আজকের বাগদাদের একেকটি মহল্লার আয়তনই কয়েক মাইল ছাড়িয়ে গেছে।

আমরা নতুন বাগদাদের একটির পর একটি এলাকা অতিক্রম করে সবশেষে পুরাতন অংশে প্রবেশ করলাম। বিভিন্ন অলিগলি থেকে প্রাচীন যুগের সৌরভ পাচ্ছিলাম। খানিকবাদেই আমাদের গাড়িটি একটি আধপাকা সড়কের পাশে এসে থেমে গেলো। সেখান থেকেই আমাদের চোখ পড়লো একটি আলিশান মসজিদের দেয়ালে। আমরা আমাদের সামনের গলির ভেতর ঢুকে পড়লাম। মসজিদের ফটকে এসে গলি মিশে গেছে। ফটকটি প্রাচীন রাজকীয় স্থাপত্য শিল্পের অনন্য কারুকার্য খচিত ছিলো। এটাই হযরত শায়খ আবদুল কাদির যিলানি রহ.এর মসজিদ ও তৎসংলগ্ন মাদরাসা। এখানে হযরত বড় পীর রহ. শায়িত আছেন।

পৃথিবীর পথে পথে

মসজিদটি হযরত শায়খ রহ.এর যুগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। তার পশ্চিম দিকের দেয়ালের পেছনে হযরত রহ.এর মাযার অবস্থিত। আজ এখানে উপস্থিত হতে পেরে নিজেকে বেশ ধন্য মনে হচ্ছিলো।
হযরত বড় পীর রহ. মূলত উত্তর ইরানের পশ্চিমাঞ্চলী প্রদেশ যিলানে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। এ এলাকার আরেক নাম দাইলাম। আনুমানিক ৪৮৮ হিজরিতে ১৮ বছর বয়সে তিনি বাগদাদে চলে আসেন। পরবর্তীতে এখানেই থিতু হয়ে যান। অন্যরা হয়তো একে কাকতালীয় ব্যপার বলবে। কিন্তু অবশ্যই এটি মহান আল্লাহর কুদরতি কারিশমার অনন্য দৃষ্টান্ত যে, সে বছরই হযরত ইমাম গাযালি রহ. বাগদাদ থেকে বিদায় নেন। কেমন যেনো এ শহর এক মহান সংস্কারক হতে বঞ্চিত হতেই আল্লাহ তা’আলা হযরত শায়খ রহ.-এর রূপে তৎক্ষণাৎ দ্বিতীয় আরেকজন মহান সংস্কারক দান করলেন।

পৃথিবীর পথে পথে (২)

হযরত বড় পীর রহ.-এর মাযার যেই মহল্লায় অবস্থিত, প্রাচীন যুগে সেখানে বাগদাদ নগরীর সীমানা প্রাচীর ছিলো। এখানে একটি ফটক ছিলো। যার নাম ‘বাবুল আযজ’। হযরত শায়খ যিলানি রহ.এর শিক্ষক হযরত শায়খ কাযী আবূ সা’দ মাখরামি রহ. এখানে ছোট্ট পরিসরে একটি দীনি শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর মাদরাসা পরিচালনার দায়িত্ব হযরত আবদুল কাদির যিলানি রহ.এর ওপর ন্যস্ত হয়।

হযরত রহ. এই মাদরাসাটিকে তাঁর ফয়েয বিতরণের কেন্দ্র বানিয়েছিলেন। এখান থেকেই হযরতের পাঠদান, সংকলন, ফতোয়া প্রদান, ওয়ায-নসিহত সহ যাবতীয় দ্বীনি কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা সূচিত হয়। পরবর্তীতে সেটি বিশাল এক দ্বীনি শিক্ষা চর্চাকেন্দ্রের রূপ ধারণ করে। [আল মুনতাযাম লি ইবনিল জাওযি : ১০/২১৯]

মাদরাসার আকৃতিতে হযরত শায়খের সেই ফয়যের ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে।

হযরতের যুগে মাদরাসাটি ছিলো সাধারণ ও গুণীজন; সকলেরই তৃঞ্চা নিবারণের উৎস। আর কেনইবা হবে না? এখানে যে হযরত বড় পীর রহ. স্বশরীরে দরস দান করতেন। প্রত্যহ তিনি একটি দরস তাফসীরের, একটি হাদিসের, একটি ফেকাহর এবং একটি আত্মশুদ্ধির; এভাবে নিজেই এ সকল বিষয়ের ওপর পাঠদান করতেন। সকাল ও সন্ধ্যার বিভিন্ন প্রহরে তাফসীর, হাদীস, ফেকাহ ও আরবী ব্যাকরণ শাস্ত্রের ওপর পাঠদান হতো। যোহরের পর হযরত রহ. নিজেই কুরআনুল কারীমের তেলাওয়াত করতেন বিভিন্ন কেরাআতে। এছাড়া ফাতাওয়ার ধারাবাহিকতা তো নিয়মিত চলতো। তিনি সাধারণত শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের নীতিমালা অনুসারে ফাতাওয়া দান করতেন।  [আত তবাকাতুল কুবরা লিশ শা’রানি : ১/১০৯]

এআরকে

পৃথিবীর পথে পথে (৩)

 


সম্পর্কিত খবর