বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’

পৃথিবীর পথে পথে (২)

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

jaha_didah3মুফতী তাকী উসমানী। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বিভাগের সাবেক প্রধান বিচারপতি। জাগতিক ও ধর্মীয় দু’শিক্ষায় শিক্ষিত বিদগ্ধ পণ্ডিত। ঘুরেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এশিয়া থেকে ইউরোপ। হিমালয় পাদদেশ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেখেছেন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অসংখ্য নিদর্শন। নিরীক্ষণের আঁতশী কাঁচের নিচে রেখে দেখেছেন সময়ের চঞ্চল প্রবাহ। আওয়ার ইসলামের পাঠকবর্গের জন্যে তার সেই ভ্রমণকাহিনী অনুবাদ করেছেন  নন্দিত অনুবাদক মাওলানা আব্দুল্লাহ আল ফারুক। এখন থেকে প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হবে শায়খ তাকী উসমানীর  ভ্রমণ কাহিনী।

মুসলিম সভ্যতার লীলাভূমি ইরাক
সৌদি আরব থেকে চলে আসি ইরাকে। ঐতিহ্যশোভিত দেশ ইরাক। এ দেশের সঙ্গে আমাদের মুসলমানদের যেই আন্তরিক সম্পর্ক ও বন্ধন সবসময় বিযুক্ত থাকে; তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। মদীনা মুনাওয়ারার পর মুসলিম জাহানের প্রথম রাজধানী এ ইরাকেই প্রতিষ্ঠিত হয়। হারামাইন শরীফাইনের পর এই ভুখন্ড যেভাবে নানা দ্বীনি ইলমচর্চার কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হয়েছিলো; মুসলিম জাহানের অন্য কোনো ভুখন্ডে সেভাবে হয়ে ওঠে নি। এরপর থেকে কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এই বাগদাদ গোটা মুসলিম জাহানের রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র ছিলো। জীবনসংশ্লিষ্ট প্রতিটি শাখায় এই প্রাণকেন্দ্র কত যে অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব জন্ম দিয়েছে; তা আমাদের ইতিহাসের এক সোনালী অধ্যায়।

এ সব কারণে অনেক দিন যাবত ইরাক দেখার তীব্র ইচ্ছা হৃদয়ে গুঞ্জরণ তুলছিলো। অপরদিকে ইরাকের ওয়াকফ মন্ত্রণালয় বেশ কিছু দিন ধরে ইসলামি ইলমসমূহের এমন অনেক দুষ্প্রাপ্য ও বিরল কিতাব ছেপে চলেছে, যা এতো দিন পর্যন্ত পাণ্ডুলিপি হয়ে জাদুঘরের শোভা বাড়াতো। ইতোপূর্বে যা কখনো আলোর মুখ দেখে নি। যেমন, ‘আল মু’জামুল কাবির লিত্ তবরানি’। ইতোপূর্বে আমরা প্রাচীন বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে শুধু এটির উদ্ধৃতি দিতে দেখেছি, মূল কিতাব কখনই দেখি নি।

ইরাকের ধর্মমন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো কিতাবটি প্রকাশিত করে। মাঝখানের কয়েকটি খণ্ড বাদ দিয়ে (যার পান্ডুলিপি তারা পায়নি) এখন পর্যন্ত কিতাবটির ২৬টি খণ্ড আলোর মুখ দেখেছে। এভাবে সেখানকার ওয়াকফ মন্ত্রণালয় শতাধিক কিতাব মুদ্রণ করেছে। সেই কিতাবগুলো পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমার ইরাক সফরের প্রধান উদ্দীপক। মদিনা মুনাওয়ারায় আমাদের প্রিয় সুহৃদ শ্রদ্ধেয় জনাব কারি বশির আহমাদ সাহেবও এই সফরে সহযাত্রী হওয়ার জন্যে প্রস্তুত হয়ে গেলেন।

আমাদের ভাবনা ছিলো, সফরটি হবে একান্তই ব্যক্তিগত। কিন্তু ঘটনাচক্রে মক্কা মুকাররমায় ইসলামি ফেকাহ একাডেমির ইরাকি প্রতিনিধি ডাক্টার মুহাম্মাদ শরিফ সাহেব (উপদেষ্টা. ওয়াকফ মন্ত্রণালয়) কিভাবে যেনো আমার সেই ইচ্ছার কথা জেনে ফেলেন। তিনি পিড়াপীড়ি করলেন যে, আপনাকে এই ইরাক সফরে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিথি হতে হবে। আমি আমার স্বভাবগত সংকোচবোধের কারণে তার এই নিমন্ত্রণ অন্যান্য কথার ভীড়ে এড়িয়ে গেলাম। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি যখন জানালেন যে, তিনি ট্যালেক্সের মাধ্যমে আমার আসার খবর মন্ত্রণালয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, তখন আর তার নিমন্ত্রণ এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকলো না। অগত্যা আমাকে তা গ্রহণ করতে হলো।

[caption id="attachment_30449" align="alignleft" width="500"]museum of iraq ইরাকের জাতীয় জাদুঘর[/caption]

সেমতে ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় মাগরিবের প্রাক্কালে আমরা জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে ইরাক এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজে চড়ে বসলাম। ইরাক তখন ভয়াবহ যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে। যার কারণে আমাদেরকে নিজেদের সিটে পৌঁছানোর পূর্বে বেশ কয়েকটি তল্লাশির মুখোমুখি হতে হলো। হাতের ব্রিফকেসটিকেও ভেতরের মালপত্রের বহরে পাঠিয়ে দিতে হলো। এধরনের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে যেখানে বিমানের উড্ডয়ন অব্যাহত রাখাই বিশাল ব্যাপার; সেখানে এ জাতীয় সতর্ক পদক্ষেপগুলো দেখে খুব বেশি অবাক হলাম না।

প্রায় ঘণ্টাদুয়েক উড্ডয়নের পর আমরা বাগদাদ এয়ারপোর্টে অবতরণ করলাম। সেখানকার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি এবং জনসংযোগ বিভাগের ডাইরেক্টর সহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ আমাদের সংবর্ধনা জানাতে এয়ারপোর্টে উপস্থিত ছিলেন। বাগদাদের এই নতুন এয়ারপোর্টটির নাম সাদ্দাম হুসাইন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। বিশাল পরিসরে বিস্তৃত এই এয়ারপোর্টটি তার চমৎকার নির্মাণশৈলী আর আধুনিক সুযোগ-সুবিধার বিচারে পশ্চিমাবিশ্বের যেকোনো এয়ারপোর্টকে মাত করবে।

সংবর্ধনার জন্য আগত কর্মকর্তাগণ এয়ারপোর্টের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা কয়েক মিনিটেই পূর্ণ করে দেন। স্বাগত জানানোর পর তারা আমাকে অবগত করলেন যে, পূর্ব থেকেই তারা আমাদের জন্য হোটেলে বুকিং দিয়ে রেখেছেন। নিয়ে যাওয়ার জন্যে একটি গাড়ি ও একজন গাইডও ঠিক করে রেখেছেন। ব্যক্তিগত সফরে বিদেশ-বিভুঁইয়ে এসে এ ধরনের আতিথেয়তা পাওয়া অবশ্যই অনেক বড় প্রাপ্তি। তার ওপর তারা যেভাবে সম্প্রীতি ও উঞ্চতা দেখিয়েছেন, এতো কিছুর পর তাদের এই আতিথেয়তা প্রত্যাখ্যান করা খুবই অন্যায্য হতো। যার কারণে তাদের এই ব্যবস্থাপনাকে গায়বি নেআমত জ্ঞান করে গ্রহণ করে নিলাম। পরবর্তীতে আমি একথাও অনুভব করেছি যে, তাদের এই সকল ব্যবস্থাপনা না থাকলে এতো অল্প সময়ের ভেতর এতোগুলো কাজ পূর্ণ করা সম্ভব হতো না; যা এখন হয়েছে।

এয়ারপোর্টটির অবস্থান শহর থেকে বেশ দূরে। নিমন্ত্রকগণ আমাদের অবস্থানের ব্যবস্থা করেছিলেন বাগদাদের বিখ্যাত ফাইভ স্টার হোটেল ‘ফুন্দুক আর রশীদ’-এ। হোটেলটি মূলত নির্মাণ করা হয়েছিলো নিরপেক্ষ দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের কন্ফারেন্সের জন্যে। কিন্তু যখন কন্ফারেন্সটি বাগদাদে আয়োজন করা সম্ভব হলো না, তখন সেটিকে বাণিজ্যিক হোটেলে রূপান্তরিত করা হয়। এ কারণে হোটেলটির নির্মাণশৈলী, আয়তন সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সাধারণ ফাইভ স্টার হোটেল থেকে বেশি বিস্তৃত ও আরামপ্রদ। হোটেলের লনটিই এক বর্গ কিলোমিটার দীর্ঘ ছিলো। এটিকে লন না বলে একটি পার্ক বলাই হবে শ্রেয়তর।

-এআরকে

পূর্বের পর্ব : পৃথিবীর পথে পথে-১


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ