একটি পৃথক সংস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত হবে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা, যেটিকে সরকার স্নাতকোত্তরের (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান দিয়েছে।
‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ নামের এই সংস্থার অধীনে আগামী ১৫ থেকে ২৫ মে অভিন্ন প্রশ্নে অনুষ্ঠিত হবে এই পরীক্ষা। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের এই সংস্থার নামে সনদ দেওয়া হবে। রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের আশপাশে সংস্থাটির কার্যালয় নেওয়া হবে।
সরকার দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর স্তরের সমমান দেওয়ার পর গতকাল রোববার এই সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটির প্রথম সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। চট্টগ্রামের দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে বৈঠকে ৩২ সদস্যের কমিটির মধ্যে ৩০ জন উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ একটি স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। এই সংস্থার অধীনেই দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা হবে এবং এই সংস্থার নামে দাওরায়ে হাদিসের সনদ দেওয়া হবে। এখন থেকে যাঁরা এই সংস্থার অধীনে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা দেবেন, কেবল তাঁরাই এই সরকারি স্বীকৃতি পাবেন। যাঁরা ইতিমধ্যে দাওরায়ে হাসিদ পাস করেছেন, তাঁরা এই সুযোগ পাবেন না।’
তবে একটি সংস্থার অধীনে স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষা ও সনদ দেওয়া সঠিক হচ্ছে না বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি গতকাল বলেন, কোনো সংস্থার অধীনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া যায় না। এর মাধ্যমে সনদ পেলেও গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এতে শিক্ষার্থীরা সনদ পেলে কার্যত সেটা কাজে আসবে না। আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃতিতে সমস্যায় পড়তে হবে। এই অধ্যাপকের পরামর্শ হলো, সাধারণ ধারার মাদ্রাসার ফাজিল ও কামিলের ডিগ্রি যেভাবে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেওয়া হয়, কওমির ক্ষেত্রেও আলাদা ব্যবস্থা করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেওয়া যেতে পারে। যা শিক্ষার্থীদের জন্যই ভালো হবে।
গতকাল বাস্তবায়ন কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য ও বেফাকের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক সাংবাদিকদের সভার সিদ্ধান্ত জানান। পরে বেফাকের সভাপতির প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহমদ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সভার বিস্তারিত জানান। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পরীক্ষা গ্রহণের জন্য ১১ সদস্যের একটি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে বেফাক থেকে ছয়জন ও অন্য পাঁচ বোর্ড থেকে একজন করে সদস্য থাকবেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মনোনীত করা হয়েছে গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মাওলানা শামসুল হককে। প্রজ্ঞাপনে থাকা ছয়টি বোর্ডে নিবন্ধিত দাওরায়ে হাদিসের মাদ্রাসাগুলো ওই সংস্থায় নিবন্ধিত বলে গণ্য হবে। এই বোর্ডগুলোর বাইরে থাকা কোনো মাদ্রাসা এই সংস্থায় নিবন্ধিত হতে পারবে না। বর্তমানে যে মাদ্রাসা যে বোর্ডে নিবন্ধিত, এ বছর সেই বোর্ডেই থাকতে হবে। মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, তবে এই ছয়টি বোর্ড বিলুপ্ত হবে না। দাওরায়ে হাদিস ছাড়া অন্যান্য স্তরের পরীক্ষাগুলো ওই বোর্ডগুলোর অধীনে হবে।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের কওমি শিক্ষার সনদের স্বীকৃতি বাতিলের দাবির বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, যারা ইসলামকে ভালোবাসে, তারা এর প্রতিবাদ করতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন
[সনদের মান গ্রহণে কওমি স্বকীয়তায় কোন ছাড় দেইনি: আল্লামা আহমদ শফী]
[বাংলাদেশে ধর্মীয় কারণে জঙ্গিবাদ হচ্ছে না: আইজিপি]
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকালের বৈঠকে দাওরায়ে হাদিসের সনদকে স্নাতকোত্তরের সমমান করায় শোকরিয়া আদায় করা হয়। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধন্যবাদ ও তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে বলা হয়, বেফাকের সভাপতি ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফী দাওরায়ে হাদিসের সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ওলামায়ে কেরামের বৈঠক নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, বেফাকসহ অপর কওমি মাদ্রাসা বোর্ডগুলোর সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের আলোকেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে এবং দাওরায়ে হাদিসের সনদের মান গ্রহণে সামান্যতমও ছাড় দেওয়া হয়নি।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ‘গ্রিক মূর্তি’ অপসারণে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও কওমি ওলামায়ে কেরামের ভূমিকা নিয়ে ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন উল্লেখ করে আল্লামা আহমদ শফী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সেদিনের বক্তব্য অত্যন্ত মূল্যবান ও প্রশংসনীয় ছিল।সুত্র: প্রথম আলো।
[দ্রুত মূর্তি সরাতে চরমোনাই পীরের আল্টিমেটাম]
এসএস/