শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

ভারতের দুই মাদানি; বিভক্তি কতটুকু আমরা কী জানি?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাওলাদার জহিরুল ইসলাম: ভারতীয় মুসলমানদের সবচে’ পুরনো রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠন, ‘জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ৷’ যা ১৯১৯ সালে হজরত শায়খুল হিন্দ মাহমূদ হাসান দেওবন্দী রহ.-এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়৷

শায়খুল আরব ওয়াল আজম হজরত সাইয়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. ছিলেন তার একান্ত সহযোগী৷ সংগঠনটি ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনে ঐতিহাসিক অবদান রাখে৷ স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় মুসলমানদের যে কোনো সংকটে (ধর্মীয় বা সামাজিক) জমিয়ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে৷

প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ ৯৯ বছর পর্যন্ত নেতৃত্বের পরিবর্তন আসলেও দলটির মাঝে কোনো বিভক্তি বা ফাটল সৃষ্টি হয়নি৷ কিন্তু ২০০৮ সালে এসে শত বছরের ঐক্যের বন্ধনে চির ধরে৷ তখনকার জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের প্রেসিডেন্ট মাওলানা সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানি ও সেক্রেটারি জেনারেল, মাওলানা মাহমুদ আসআদ মাদানি’র চিন্তায় পার্থক্য দেখা দেয়৷

দু'জনের দর্শন দু'দিকে মোড় নিতে থাকে৷ শেষ পর্যন্ত জমিয়ত দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়৷ দেশের উলামা-তলাবাও দু'গ্রুপে বিভক্ত হয়৷ আম জনতা অনেকটা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে৷

঳ কে হবেন দেশ গবেষক? অংশ নিন আপনিও

উভয় জমিয়তই ইসলাম, দেশ ও মানবতার জন্য কাজ করে চলে পাল্লা দিয়ে৷ ২০১৫ সালের রমজানে ভারতীয় মুসলমানগণ একটি খুশির সংবাদ শুনতে পান৷ ‘উভয় জমিয়ত নিজেদের চিন্তার পার্থক্য ভুলে গিয়ে দেশ ও জাতির জন্য এক সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে৷’

ঈদের পর দিল্লির হেড অফিসে জমিয়তের (দু'দলেরই) নেতৃবৃন্দ গোল টেবিল বৈঠকে মিলিত হন৷ পরস্পরের মতপার্থক্যের জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন৷ তবে কর্ম-কৌশল নির্ধারণে কিছুটা মতপার্থক্য রয়ে যায়৷ ফলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসে এভাবে-

১৷ দুই জমিয়তের নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ পদে বহাল থাকবেন৷ ২৷ সাধারণ কার্যক্রম চলবে এককভাবে৷ ৩৷ নিজ দলের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সবাই স্বাধীন থাকবে৷ ৪৷ দেশ-জাতির কল্যাণে সবাই এক সাথে কাজ করবে৷ ৫৷ জাতীয় কোনো ইস্যুতে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না৷ ৬৷ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে সবাই অংশ গ্রহণ করবে৷ ৭৷ সর্ব ক্ষেত্রে একে অন্যের সহযোগিতা করবে৷

মুদ্দা কথা হলো, বাহ্যত জমিয়ত দুই হলেও বাস্তবে এক৷ তাদের মাঝে কার্যত কোনোই বিরোধই অবশিষ্ট থাকবে না৷ এ তো ছিলো জমিয়তের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস৷ তবে আমরা যে বিষয়টি এখানে ফোকাস করতে চাই তা হলো, জমিয়ত নেতৃদ্বয়, মাওলানা সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানি ও সেক্রেটারি জেনারেল, মাওলানা মাহমুদ আসআদ মাদানি’র পারস্পরিক সম্পর্কটা কেমন?

তারা কি আসলেই বিভক্ত? ব্যক্তি পর্যায়ে একে অন্যকে কতোটা মুহাব্বত করেন৷ তো চলুন সে বিষয়ে একটু আলোচনা করা যাক৷

অনেকেই মনে করেন দুই মাদানি’র পরস্পরের সম্পর্কটা ভালো নয়৷ পরস্পরের মাঝে দূরত্ব অনেক৷ মজার ব্যাপার হলো, তাদের বিরোধে (!) র বিষয়টি বাংলাদেশের জমিয়ত পর্যন্ত গড়িয়েছে৷ সেখানেও কিছুটা সংকটের সৃষ্টি হয়েছে৷ অথচ বাস্তব চিত্রটা কিন্তু একেবারেই ভিন্ন৷ তাদের পারিবারিক বন্ধন কতেটা মজবুত একে অন্যের কতোটা কাছের কয়েকটি উদাহরণ দিলেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে৷

১৷ আরশাদ মাদানিকে বর্তমান ‘মাদানি খানদানে’র অভিভাবক নির্ধারণ৷ কিছু দিন আগে মাওলানা মাহমুদ মাদানি দিল্লির জমিয়ত অফিসে এক আলেমের প্রশ্নের জবাবে বলছিলেন, ‘মাদানি পরিবারে বহু আগ থেকেই একটি নিয়ম আছে, পুরো খান্দানের একজন মুরুব্বি বা অভিভাবক থাকেন৷

বর্তমানে আমরা সবাই মিলে আমার শ্রদ্ধেয় চাচা মাওলানা সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানিকে আমাদের পারিবারিক অভিভাবক নির্ধারণ করেছি৷ কর্মক্ষেত্রে কৌশলগত ও কাঠামোগত দিক থেকে পরস্পরের কিছুটা দ্বিমত থাকতে পারে৷ এটা স্বাভাবিক৷ এটাকে ব্যক্তিপর্যায়ে টেনে আনা উচিত নয়৷’

২৷ মাহমুদ মাদানির ছেলের বিয়ে পড়িয়েছেন আরশাদ মাদানি৷ গত দু’বছর আগে মাওলানা মাহমুদ মাদানি’র ছেলে 'হুসাইন মাদানি'র বিয়ে হয়৷ ওই বিয়ের মুরব্বি ছিলেন মাওলানা সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানি৷ এমনকি স্বয়ং আরশাদ মাদানি ওই বিয়ের খুৎবা পাঠ করেন৷

৩৷ গত বছর ১২,মার্চ দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইন্ডোর ইস্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জমিয়তের ‘জাতীয় ঐক্য সম্মেলনে’ সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাওলানা সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানি মাওলানা মাহমুদ মাদানি’র হাত ধরে নিয়ে মঞ্চে আরোহরণ করেন৷

তখন ওই সম্মেলনস্থলের লক্ষ লক্ষ জনতা তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন৷ সবাই নিজেদের শুধরে নেবার চেষ্টা করেন৷ জাতীয় দুু' নেতার এমন হৃদ্যতা থেকে ঐক্যের শিক্ষা গ্রহণ করেন৷ এতো দিন তাদের পারিবারিক মুহাব্বত-ভক্তি জনতা দেখতে না পেলেও ওই দিন দেখার সুযোগ পায়৷

৪৷ মাহমুদ মাদানির বাসভবনের খাদেমের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, যখনই মাহমুদ মাদানি দেওবন্দে আসেন চাচার (আরশাদ মাদানি) সাথে দেখা করতে যান৷ তার বাসায় একসঙ্গে খানায় শরিক হন৷ তার স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেন৷

এছাড়া বছরে দু'একবার পারিবারিক ভোজের আয়োজন করা হয়৷ তখনও সবাই আনন্দের সাথে এক দস্তরখানে মিলিত হন৷ দেওবন্দে ৪/৫ বছর ধরে আছেন এবং মাদানি পরিবারের সাথে সম্পর্ক রাখেন এমন ক'জন ছাত্রও ওপরের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করলেন৷

তারা আরো জানালেন, ঈদের সময় উভয় হজরত একসঙ্গে নামাজ আদায় করে বাসায় ফেরেন৷ পরস্পরের বাসায় মিষ্টান্ন হাদিয়া পাঠান৷ দুপুরে একই দস্তরখানে খাবার গ্রহণ করেন৷ এমন উদারহণ ভুরি ভুরি দেয়া যাবে৷ অথচ বাংলাদেশি রাজনীতিকদের মধ্যে এ ধরনের চিন্তা কল্পনাও আনা অসম্ভব।

বড়রা আসলেই `বড়' হন৷ এই তো হো তাদের আদর্শিক পরিচয়৷ কর্মক্ষেত্রে কৌশলগত দ্বিমত থাকলেও ব্যক্তিপর্যায়ে নেই সামান্যতম দূরত্ব৷ এটাই তো নববি আদর্শ৷ এটাই খোলাফায়ে রাশেদিনের চরিত্র৷ তারা তো সে আদর্শ ও চরিত্রের বাহক৷

তাদের শরীরে যে প্রবাহিত হয় নবি বংশের রক্তধারা! এখান থেকেই আমরা শিখতে পারি৷ ভুলে যেতে পারি নিজেদের ছোট-খাটো দ্বন্দ্ব৷ নিতে পারি ঐক্যের শপথ৷

আরআর

মহাসচিব, মহাপরিচালক এবং আগামী দিনের বেফাক

নাসিক নির্বাচনে মুফতী মাসুম বিল্লাহ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ