হুমায়ুন আইয়ুব
লালমনিরহাট থেকে ফিরে
রাতের নীরবতা ভেঙ্গে ট্রেন চলছে। লালমনির হাটের অচেনা পথে। শুধু বাংলাদেশের নয় এই অঞ্চলের প্রথম মসজিদ ‘সাহাবা মসজিদের’ টানে।
ইতিহাসের এ মসজিদটি অনেকটা রূপকথার মত হলেও সারেজমিনে দেখে বিশ্বাস না করার কোনো উপায়ই নেই। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের মাত্র আটান্ন বছর পর এ মসজিদ নির্মিত হয়। ৬৯ হিজরি ৬৮৯-৯০ সনের এ মসজিদটি লোকমুখে হারানো মসজিদ নামে খ্যাত।
উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট জেলা সদরের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস এলাকায় মসজিদটির অবস্থান।
চারদিকে মনোরম সবুজ গাছ-গাছালি পাখির কলতানে সাহাবাদের পা মাড়ানো মাটির পথ।
ইতিহাসের স্বর্ণ আচলে জড়ানো এ মসজিদটির অবহেলিত অবস্থা দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়েছে।
দেশ বিদেশের হাজারো পর্যটকের যাতায়াত থাকলেও মনে হয়নি মসজিদটির যথযথ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। করা হয়নি উন্নতিও।
মাওলানা আবদুর রহীম
মসজিদটির ইমাম মাওলানা আবদুর রহীম বলেন, এ মসজিদে অনেক অনেক মুসল্লি আসে। মসজিদ ভরে যায়। প্রতিদিন অনেক লোক দেখতে আসে এ মসজিদ। আমরা চাই এ মসজিদকে কেন্দ্র করে এখানে মুসলিম শিল্পনগরী গড়ে উঠুক।
মসজিদের ১নং নওদাবাদস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাস্টার গোলাম রাব্বানী আওয়ার ইসলামকে বলেন, আমি এ মসজিদে যেদিন থেকে নামাজ পড়ছি সেদিন থেকে আমার মনের পরিবর্তন হতে শুরু করেছে।
মাস্টার গোলাম রাব্বানী
তারপর থেকেই মসজিদটির সঙ্গে যুক্ত। কমিটিতেও আমাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে মসজিদটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছি।
আমরা চাই রাসুলের যুগের এ মসজিদকে কেন্দ্র করে এখানে একটি শিল্পনগরী গড়ে ওঠুক। এখানকার মানুষেরও প্রচুর আগ্রহ উদ্যিপনা রয়েছে মসজিদকে ঘিরে।
তিনি বলেন, মানুষ এগিয়ে আসছে বলেই আমরা আজ এখানে একটি মাদরাসা নির্মাণ করতে পেরেছি। যদি মুসলমানরা উদ্যোগী হয় তাহলে এখানে সাহাবাযুগের মসজিদ হিসেবে ভিন্নকিছুর আশা করতে পারি আমরা।
এলাকার একজন মুরব্বি সুলেমান আলী যিনি পাঁচওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন।
মুসল্লি সুলেমান আলী
তিনি বলেন, আমাদের এ মসজিদ নিয়ে যা হওয়ার দরকার ছিলো তা হচ্ছে না। তাই আমাদের মন খুব খারাপ। আমাদের এ মসজিদ আবিস্কার হওয়ার আগে আমরা দূরের মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতাম।
আমাদের অনেক কষ্ট হতো। তাই আমরা আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া করতাম আমাদের এ জঙ্গলের কাছে একটা মসজিদ বানাতে পারি যেনো।
আমার বড় ভাই এ জায়গাটা কিনে। এ জঙ্গলে মাটির নিচে মোটা দেয়াল দেয়া ছিলো। আমরা এগুলো ওঠালাম।
এক সময় যোহরের সময় আমরা একটা পাথর আর ইটা ওঠাতে গিয়ে সেখানে একটি পাথরের গায়ে লেখা দেখি মসজিদে রাসুলুল্লাহ আরবিতে ৬৯ লেখা ছিলো।
অজুখানা
এভাবে আবিস্কার হয় এ মসজিদ। পরে গ্রামের লোকজনসহ আমরা অনেক দিন মেহনত করার পর এ মসজিদটি নির্মাণ করি।
উল্লেখ্য, লেখক মতিউর রহমান বসনীয়া রচিত ‘রংপুরে দ্বীনি দাওয়াত’ বইয়ে এ মসজিদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, লালমনিরহাট জেলার এ প্রাচীন মসজিদ ও এর শিলালিপি দেখে আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি যে, বখতিয়ার খলজীর বাংলা বিজয়ের (১২০৪ খ্রি.) ৬০০ বছর আগেই বাংলা অঞ্চলে সাহাবি রা. দ্বারা ইসলামের আবির্ভাব হয়েছিল।
মাদরাসার পাশে গড়ে ওঠা হেফজখানা
ধারণা করা হয়, মহানবীর সা. জন্মগ্রহণের ৫০ বছর পরেই বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব হয়। লালমনিরহাট জেলায় আনুমানিক ৬২০ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম ইসলামের আবির্ভাব ঘটেছিল।
লালমনিরহাটে মসজিদটির যে ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে- এতে কালেমা তায়্যিবা ও ৬৯ হিজরি লেখা রয়েছে।
মসজিদটি নিয়ে দৈনিক প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন
হিজরি ৬৯ অর্থ হলো ৬৯০ খ্রিস্টাব্দ। রংপুর জেলার ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রাসূলের সা. মামা বিবি আমেনার চাচাতো ভাই আবু ওয়াক্কাস রা. ৬২০ থেকে ৬২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করেন (পৃ. ১২৬)।
অনুমান করা হয় যে, ৬৯০ খ্রিস্টাব্দের মসজিদটি আবু ওয়াক্কাস রা. নির্মাণ করেন। বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ও প্রাচীন এই মসজিদটির উত্তর-দক্ষিণে ২১ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১০ ফুট। মসজিদের ভেতরের পুরুত্ব সাড়ে ৪ ফুট।
মাসিক মদীনা পাবলিকেশান্স থেকে প্রকাশিত বইটিতে আছে আলোচনা
দেখুন মসজিদ নিয়ে তৈরি ভিডিওটি...
জাপানের রাস্তায় ব্যতিক্রমী মোবাইল মসজিদ; (ভিডিও)
-আরআর