বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৮ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


বরিশালে ইসলামি দল ঠেকাতে বড় দলের সমঝোতা; গুঞ্জন না সত্যি?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু
চিফ রিপোর্টার

আসন্ন সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে তুলনামূলক শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। প্রচার-প্রচারণায় মিডিয়া ও সাধারণ ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে দলটি। বিশেষত ঘরের মাঠ বরিশালে জোর প্রচারণায় নেমেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

দলের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তিত্ব ও মুফতী ফয়জুল করীম নিজে বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন। তিনিসহ দলের প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতা অংশ নিচ্ছেন বরিশাল সিটি নির্বাচনের প্রচার কাজে। তাদের উপস্থিতি দলীয় নেতা-কর্মীদের দারুণভাবে উজ্জীবিত করছে।

কিন্তু এরই মধ্যে বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অলিখিত সমঝোতার গুঞ্জন চলছে। এতে শঙ্কা তৈরি হয়েছে অন্যদের মধ্যে। তাদের ধারণা, ইসলামী দলের পক্ষে শুরু হওয়া গণজোয়ার ঠেকাতেই এ সমঝোতায় এসেছে দল দুটি।

তবে এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য না আসলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া দেখাতেও দেখা যাচ্ছে দলটির কোনো কোনো কেন্দ্রীয় নেতাকে।

যেমন একজন লিখেছেন, ‘আল কুফরু মিল্লাতুন ওয়াহিদা, হাতপাখা ঠেকাতে বরিশালে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।’ এমন আরও অনেক পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখে পড়ছে।

বরিশালের সিটিতে নির্বাচনে সমঝোতার গুঞ্জন চলছে বেশ কিছু দিন যাবত। তবে তা আলোচনায় আসে জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজ-এর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর।

‘সাদিককে মেয়র বানিয়ে এমপি হবেন সরোয়ার!’ শিরোনামে গত ২৬ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় বরিশালে সিটি নির্বাচনে আপোষ হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহ ও মজিবর রহমান সরোয়ারের মাঝে।

সমঝোতা অনুযায়ী মেয়র হবেন সাদিক এবং পরবর্তী এমপি করা হবে সরোয়ারকে। ভোরের কাগজে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর স্থানীয় কয়েকটি অনলাইন পোর্টালেও এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়, বিএনপির প্রার্থী আগের মতো প্রচারণায় নেই। নিজের ইচ্ছাতে সারোয়ার প্রার্থী হননি বলেও প্রতিবেদনগুলোতে উঠে আসে।

তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় পক্ষই সমঝোতার দাবি নাকচ করে দিয়েছেন।

বরিশাল বিএম কলেজের সাবেক ছাত্র নেতা এবং মজিবর রহমান সরোয়ারের একজন প্রচারকর্মী হাসিবুর রহমান শান্ত মনে করেন, মনোময়ন বঞ্চিত একজন বিএনপি নেতা শহরে এ কথা ছড়াচ্ছেন তাদের নেতার (সরোয়ার) সুনাম নষ্ট করার জন্য।

তাদের নেতা বিজয়ী হয়ে এসব প্রশ্নের উপযুক্ত জবাব দেবেন বলেও মন্তব্য করেন এ নেতা।

সরোয়ার বিরোধীদের অভিযোগ হলো তার প্রচার-প্রচারণাসহ সার্বিক নির্বাচনী কার্যক্রমে এক ধরনের শিথিলতা দেখা যাচ্ছে যা অতীতের নির্বাচনগুলোতে দেখা যায় নি।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কোথাও এ সমঝোতা ইসলামী আন্দোলনকে ঠেকানোর জন্য হয়েছে এমন আভাস দেয়া হয় নি। তাহলে, ইসলামী আন্দোলন ও হাতপাখার নামটি এর সাথে যুক্ত হলো কিভাবে?

আসলেই ইসলামী আন্দোলন দেশের প্রধান দুটি দলের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পেরেছে?

বরিশালের বাসিন্দা মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, না। ইসলামী আন্দোলন এখনও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে নি। কারণ জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে দলটির বড় সাফল্য নেই।

তাহলে, সমঝোতার পেছনে ইসলামী আন্দোলনকে ঠেকানোর কথা উঠছে কেনো?

মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি শিউর করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে হতে পারে এটি প্রচার করে দলীয় নেতা-কর্মীদের আরও উজ্জীবিত করতে চাচ্ছেন। তারা হয়তো এ ম্যাসেজ দিতে চাচ্ছেন, ইসলামী আন্দোলনের বিপক্ষে যেহেতু আওয়ামী লীগ-বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে সুতরাং হাতপাখার সম্ভবনা ৯০ ভাগ আর তা রক্ষা করতে যেকোনো ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এ কথা প্রমাণ করতে পারলে ইসলামপন্থীদের হাতপাখার ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ করা সহজ হবে।

বরিশাল বিএম কলেজে পড়েন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের তরুণ কর্মী আনিসুর রহমান।

তিনি মনে করেন, জাতীয় পর্যায়ে ইসলামী আন্দোলন উল্লেখযোগ্য সাফল্য না পেলেও স্থানীয় রাজনীতিতে হাতপাখা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। কারণ স্থানীয় রাজনীতির হিসেব জাতীয় রাজনীতি থেকে ভিন্ন হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

তরুণ এ রাজনৈতিক কর্মীর কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, স্থানীয় কোন স্বার্থ রক্ষার জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমঝোতা করবে?

উত্তরে তিনি বলেন, ‘বরিশালের সচেতন মানুষ মাত্র জানেন এখনকার ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রশাসন ও রাজনীতি কয়েকটি পরিবার নিয়ন্ত্রণ করে এবং তারা তা করে পারস্পারিক সমঝোতার মাধ্যমে। এজন্য দেশের যে কোনো রাজনৈতিক সংকটে বরিশালে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। এখনকার শান্ত ও স্থির। কায়েমি এ স্বার্থ রক্ষার জন্যই এ সমঝোতা হতে পারে।

বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমঝোতা এবং তা ইসলামী আন্দোলনকে ঠেকানোর জন্য হওয়া- বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করেছিলাম দলের যুগ্ম মহাসচিব ও নির্বাচনা পরিচালনা বিষয়ক সেলের অন্যতম সদস্য মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঙ্গে।

তিনি বিষয়টিকে সরাসরি নাকচও করেন নি আবার স্বীকারও করেন নি। তিনি বলেন, ‘সমঝোতা হয়েছে কিনা তা আমরা শতভাগ নিশ্চিত না। তবে বিষয়টি যেভাবে জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

তবে এটা তো নিশ্চিত বরিশালে হাতপাখার পক্ষে যে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে তা ঠেকাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমঝোতার বিকল্প নেই।’

অবশ্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমঝোতা নিয়ে মাথাব্যথা নেই সাধারণ মানুষের। তাদের প্রত্যাশা সমঝোতা হোক আর নাই হোক। ভোটাররা স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ চান।

সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়ে বরিশাল ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর আশঙ্কা

বরিশাল নৌকার পক্ষে ঠেলাগাড়ি, ধানের শীষে কেউ নেই!

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ