সুফিয়ান ফারাবী
রাজশাহী থেকে
রাজশাহী নগরীর অলি গলি থেকে মহল্লার চায়ের দোকান সর্বত্রই এখন সরব শেষ মূহুর্তের প্রচারণায়। শনিবার রাত ১২টার পর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে সব ধরনের প্রচারণা।
গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি, কখনও রোদ বৃষ্টির খেলা বা ঝিমঝিম শব্দে অঝোর ধারার বৃষ্টি। কোন কিছুই নাগাল টানতে পারছে না শেষ মূহুর্তেই প্রচারণাকে।
ট্রেন থেকে রাজশাহী রেল ষ্টেশনে নামা মাত্রই প্রচারণার মাত্রাটা নজর কাড়ে। টিকেট কাউন্টারের গোটা চত্বর জুড়ে ঝুলছে সারি সারি পোস্টার। সবগুলোই নৌকা প্রতীকের।
ষ্টেশন থেকে বের হতেই ভিন্ন এক নগরী। মনে হবে নির্বাচনী উৎসব। নগরীর আনাচে কানাচে বিলবোর্ড, পোস্টার,মাইকিং। রয়েছে পথে পথে গম্ভীরার মুখ্য চরিত্রে নানা-নাতির মুখে উন্নয়ন আর আশ্বাসের বর্ণনা দেয়া দলবদ্ধ লোক সঙ্গীতের আসর।
তবে সব প্রচারণাই যেন ঢেকে পড়েছে নৌকা প্রতীকের আড়ালে।
নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।
এ মাথা থেকে সে মাথা। ৯৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই নগরীতে ধানের শীষ প্রতীকের ব্যানার, ফেস্টুন বা বিলবোর্ড খুঁজে পেতে চোখকে বেশ কষ্টই দিতে হয়!
সে তুলনায় কাঁঠাল প্রতীকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (নাজিউর) হাবিবুর রহমান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শফিকুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র হিসেবে গণসংহতি আন্দোলনের মুরাদ মোর্শেদের হাতি প্রতীকের প্রচারণাও বেশ।
এতো গেলো বৃষ্টিভেজা নগরীর অলিগলির কথা। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও সরব প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা।
তবে সব বিবেচনায় প্রচারণায় নৌকা যে এগিয়ে আছে সেটা মানতে দ্বিধা নেই কারো। নির্বাচনী পরিবেশে নৌকার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা ধানের শীষের প্রচারণায় পিছিয়ে থাকার জায়গাগুলো দখল করে নিয়েছে নানা গুজবে।
‘বিএনপি নেতা গয়েশ্বর রায়কে বিমান থেকে নামিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া, গয়েশ্বর রায়কে সি-অফ করতে যাওয়া বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনুসহ ১০ নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করে বিমানবন্দর থানায় নেয়া, বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল যুবলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত, ছবি কারসাজির মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এমন অসংখ্য গুজব ছড়িয়ে শান্ত নগরীকে অশান্ত করার পাঁয়তারা করার বিস্তর নমুনা চোখে পড়ে ফেসবুক টুইটার বা ইনস্ট্রাগ্রামে।
আচানক পরিকল্পিতভাবে এসব গুজব ছড়ানোর বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে নগরবাসীকে বার বার সতর্ক করা হলেও কাটেনি গুজবের রেশ।
ফেসবুকে বিএনপি সমর্থক বাবু নামের একটি আইডি থেকে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পায়ে গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত একটি ছবি প্রকাশিত হয়।সেখানে ফটোশপের মাধ্যমে কারসাজি করে গুলিবিদ্ধ বুলবুলের পা থেকে রক্ত ঝরার দৃশ্যও জুড়ে দেয়া হয়। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা বুলবুলের ছবির নিচে ক্যাপশনে লেখা হয়, বুলবুলের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার করে কঠিন শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি হামলার নিন্দাটাও জানানো হয় ওই পোষ্টে।
যোগাযোগ করা হলে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, কারা, কেন এসব গুজব রটাচ্ছে তা আমার জানা নেই।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, প্রচারণায় টিকে থাকতে না পেরে অপ প্রচারণার মাধ্যমে পরিকল্পিত গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত বিএনপি। এটা তাদের এক ধরনের কৌশল। পুরনো খেলা।
রাজশাহীতে ভোটকেন্দ্রে ১৩৮টি। তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ ভোটারের দিকে তাকিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মেয়র পদে পাঁচজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১শ'৬০ এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৫২ জন প্রার্থী ।
যে আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে সব প্রস্তুতি গুছিয়ে এসেছে নির্বাচন কমিশন। তাদের সহায়তায় থাকছে ১৪শ' পুলিশ, ১৯শ'৩২ আনসার ও ৪শ'৫০ জন র্যাব সদস্য ছাড়াও ১৯ প্লাটুন বিজিবি সদস্যে ৩০ জন নির্বাহী ও ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
এর মধ্যে শনিবার সকাল থেকে টহলে নেমেছে ১৫ প্লাটুন। রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে প্রস্তুত রয়েছে ৪ প্লাটুন বিজিবি।
আগের মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ২০১৩ সালের রাজশাহী সিটি করপোরেশনে নির্দলীয় নির্বাচনে হেরেছিলেন বিএনপি সমর্থিত
মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কাছে।
৪৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে সেই হার রাজশাহী মতো দূর্গে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছিলো আওয়ামী লীগকে।
অন্যদিকে প্রচারে পিছিয়ে থাকলেও বিএনপির প্রত্যাশা ভোটে ‘নীরব বিপ্লবের’।
ভোটের প্রচারণায় পিছিয়ে নেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও। হাতপাখার ব্যাপক প্রচার প্রচারণা লক্ষ করা গেছে এলাকায়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোটারদের দারপ্রন্তে ছুটে চলছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা।
গেলবারের চেয়ে এবার তাদের আত্মবিশ্বাস বেশি। তাই নতুন করে ইশতিহার করে সাড়া জাগিয়েছেন হাতপাখার প্রার্থী আলহাজ মো. শফিকুল ইসলাম।
এ বিষয়ে কথা বললে রাজশাহীর দুপাইল জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মোল্লা আবুল কাশেম আওয়ার ইসলামকে বলেন, দীর্ঘ একমাস ধরে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চেয়ে আসছেন মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলামের কর্মীরা। এর পেছনে কাজ করছে তাঁর ইশতেহারে দুর্নীতিমুক্ত নগর ভবন গড়ার বিষয়টি।
তিনি বলেন, এলাকার জনগণও তাঁর এই কথায় কিছুটা হলেও আশ্বাস পেয়েছেন। তাই তিনি ভালো ভোটই পাবেন বলে আমাদের ধারণা।
এক সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল ইসলাম বলেছেন, সিটি করপোরেশনের কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হয়। আমি এই দুর্নীতি বন্ধ করে সে টাকায় নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে চাই। আনতে চাই নগর ভবনে আমূল পরিবর্তন।
চূড়ান্ত লড়াইয়ে ভোটের ব্যবধান কাটিয়ে কে হবেন রাজশাহীর নগর পিতা? আগামী ৩০ জুলাই নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে এই প্রশ্নের জবাব দেবেন আম আর সিল্কের নগরী রাজশাহীর জনগণ।
রাজশাহীতে ইসলামী আন্দোলন প্রার্থীর ৩২ দফা ইশতেহার
ককটেল মেরেছে আ.লীগ: রাজশাহীতে বিস্ফোরণ নিয়ে রিজভী
-আরআর