বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৮ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ওমানে ঈদ অভিজ্ঞতা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম
শিক্ষক, ইবরা কলেজ অব টেকনোলোজি, ওমান

ইবরা ওমানের আস শারকিয়া উত্তর এলাকার ২য় বৃহত্তর শহর, যা রাজধানী মাস্কাট থেকে ১৭০ কিমি দক্ষিণে অবস্থিত। এখানে বর্তমানে বিদেশিসহ ৫৫০০০ হাজার মানুষ বসবাস করে। এক সময় এটি ব্যাবসা, ধর্ম, শিক্ষা এবং সংস্কৃতির শহর নামে পরিচিত ছিল। ইবরা নামটা মহানবী সা. সময় থেকে প্রচলিত ছিল। এখানে অনেক পুরনো মসজিদ আর দুর্গ আছে।

জীবনে প্রথম প্রবাসী হয়ে রমজান আর ঈদ পালন করলাম এখানে। প্রায় তিন মাস হল এসেছি, ইবরাতে থাকি চাকরির সুবাদে। এখানে অনেক বাংলাদেশী থাকে, তাদের ৯০শতাংশই বৃহত্তর চট্টগ্রামের।

মধ্যপ্রাচের অন্যান্য দেশের মত এখানে ঈদ উৎযাপন করা হয় না। ওমানিদের রয়েছে নিজেস্ব সংস্কৃতি। এখানে ঈদের নামাজ মসজিদে পড়া হয় না, রয়েছে ঈদগাহ ময়দান। আমি ফজরের নামাজের পর গিয়েছিলাম আল নাসিব এলাকার ঈদগাহ মাঠে সকাল ৬ টায়।

ঈদগাহ ময়দানে কোন রঙচঙ সাইনবোর্ড কিংবা গেট ছিল না। তবে নিচে পাটিপাতা আর উপরে তাবু টানানো ছিল। অল্প একটু জায়গা চারফুট উচু করে অর্ধ-সার্কেল করে রাখা একটা জায়গা যেখানে বসেই ঈমাম সাহেব খুতবা পাঠ করেছিলেন।

আমি যখন ঈদগাহে পৌছেছিলাম তখন প্রথম কাতার পুর্ণ হয়েছে মাত্র। সবাই ওমানি তাই আমি তাদের সাথে যেয়ে বসলাম না। আমি মাঝামাঝি একটা জায়গায় বসলাম, এখানে আমার মতো অনেক বিদেশি আছে, তাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি, তাদের দেখে ভাল আর খারাপ দুটো অনুভূতিই হয়েছিল আমার।

খুবই অদ্ভুত একটা ব্যাপার লক্ষ করলাম যিনি বা যারা প্রথম এসেছিল তারা সবাই সবার সাথে মুসাহাফা করে দাঁড়িয়ে থাকল এরপর যত মানুষ আসল সবাই প্রথম কাতার দিয়ে প্রবেশ করে আর সবার সাথে মুসাহাফা করে পিছনে যেয়ে দাড়াল। প্রায় ৩০ মিনিট দেখলাম। যে ব্যক্তি সবার পরে আসল তার সামনের লাইন থেকে প্রায় ৬ কাতার ধরে সবার সাথে একইভাবে হ্যান্ডসেক করে পিছনে এসে দাড়াল। তাদের সাথে থাকা ছোট ছোট বাচ্চারাও একই নিয়ম পালন করে তবেই বসল। আরো একটা বিষয় লক্ষ করলাম মুসাহাফা করার সময় যারা তাদের নিকট আত্বিয়-স্বজন তারা নাকে নাক লাগিয়ে নাকানাকিও করল।

ওমানিরা সবসময় তাদের জাতীয় ড্রেস পরে থাকে। বিশেষ দিনে এর সাথে যোগ হয় খঞ্জর (একধরনের বাঁকানো চাকু) তা নাভির উপরে বেল্টের খঞ্জর আটকিয়ে পরে থাকে। হাতে থাকে লম্বা বেতের লাঠি যার একপাশে বাঁকানো। বলা বাহুল্য যে, এই ড্রেস ২ বছরের বাচ্চা থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ সবাই পরে আসে ঈদের নামাজ পড়তে।

ঈমাম সাহেব ঈদগাহে আসলেন বিশাল এক মিছিল নিয়ে। মিছিলের স্লোগান ছিল অনেক সুন্দর। ঈমাম সাহেব জোরে জোরে বলেন: "আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর"। তারপর পিছনের মুসল্লিরা "আলাহু আকবর, আল্লাহু আকবর।" এরপর বাকি অংশ ঈমাম সাহেব আগে বলে আর পরে আবার মুসল্লিরা। একটা অন্যরকম মুহুর্তই নয় বটে বরং অনুভুতিটাও ভিন্ন। এ দলটিও অন্যান্যদের মতো সবার সাথে মুসাহাফা করে যার যার জায়গায় বসে পড়ল এবং ইমাম সাহেব ফিরে গেলেন তার জায়গায়।

১৩ তাকবির দিয়ে পড়ানো হলো নামাজ। তাকবির তাহরিমার পর ৫ তাকবির দিলেন, এরপর ২য় রাকাতে এসে রুকুতে যাওয়ার আগে ৫ বার তাকবির এবং রুকু থেকে দাঁড়িয়ে ৩ তাকবির দিয়ে নামাজ শেষ করলেন। খুতবা শেষে কোন মুনাজাত ছাড়াই একে অপরের সাথে কোলাকুলি করল। কোন প্রকার কালেকশন করা হলো না এখানে।

ঈদের নামাজ শেষে, ঈদগাহ মাঠে উপস্থিত মুসল্লিদের ওমানের স্পেশাল হালুয়া বিতরণ করা হল, সাথে পানি। হালুয়াটা আসলেই অনেক মজার ছিল।

নামাজ শেষে লক্ষ করলাম ঈদগাহের পাশের রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ছেলে শিশুরা যাদের বয়স ২ থেকে ১৪। তারা এক পাশে আর অন্যপাশে মহিলা ও মেয়ে শিশুরা। আমি ভেবেছিলাম গরিব মানুষ হয়ত সাহায্যের জন্য দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু ব্যাপাটা তা নয়। তাদের বেশিরভাগই ওমানি কিছু বিদেশিও ছিল। মজার ব্যাপার লক্ষ করলাম যারা নামাজ পড়ে চলে যাচ্ছে তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা সব বাচ্চা আর মহিলাদের রিয়েল ঈদ সালামি হিসাবে দিচ্ছে। এটা কিন্তু দান নয় বরং এটা তাদের ঐতিয্য।

আরো একটা বিষয় লক্ষ করলাম, কোনো নারী ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ করেনি।

বিদেশি হিসেবে ঈদে আনন্দ করার মতো কিছুই ছিলনা। দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও অনেক অভিজ্ঞতা হলো। আপনজনদেরকে দেশে রেখে এইদিন আনন্দ উপভোগ করা যায় না।

সেই মাদরাসা সুপারের মাথায় মল ঢেলে নির্যাতনের মূলহোতা গ্রেফতার

এসএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ