শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল

কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড কিছু প্রস্তাবনা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা লাবীব আবদুল্লাহ
শিক্ষক, খতিব ও কলামিস্ট

ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম, উত্তারাঞ্চল, কিশোরগঞ্জ, বি বাড়িয়াসহ আরও কয়েকটি অঞ্চলকেন্দ্রিক কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড দেখার সুযোগ হয়েছে আমার৷ ব্যাক্তিগতভাবে গত দুই যুগ থেকে আমি নাযেমে তালীমাতের কাজে জড়িত৷

তাছাড়া ইত্তেফাকুল উলামা বৃহত্তর মোমেনশাহীর কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্পাদক হিসেবে কিছুদিন সরাসরি বর্তামানে সহযোগীদের সহযোগিতায় বৃত্তিপরীক্ষার সঙ্গে জড়িত৷ ব্যক্তিগতভাবে বেফাকের সকল মারহালায় পরীক্ষা দিয়েছি তালেবে ইলমের যামানায়৷

আমাদের সময় পরীক্ষাগুলোর উত্তরপত্র অনেকেই আরবিতে লিখতেন৷ আমিও তাকমিলের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা আরবিতে দিয়েছিলাম৷ হস্তাক্ষর সুন্দরের জন্য পৃথক নম্বর দেওয়া হতো৷ সুন্দর উপস্থাপনার জন্যও পৃথক নম্বর থাকতো৷

১৯৯২ সালে কেন্দ্রীয় পরীক্ষা দেই তাকমিলে৷ তখন কল্পনাও করা যেতো না বাংলা নোট গাইডের৷ সাজেশনের৷ ফজিলত পরীক্ষায় তাহরিকে দারুল উলূম দেওবন্দ বিষয়টি পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত ছিলো৷

তখনও মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া রহ রচিত দেওবন্দ আন্দোলন: ইতিহাস ঐতিহ্য অবদান বইটি রচিত হয়নি৷ নানা উপায়ে দেওবন্দ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এই বিষয়ে পরীক্ষা দেই৷ ১০০ মার্কের ৯৬ নম্বর পেয়েছিলাম আমি৷

এই উত্তরপত্রে বাংলায় লিখেছিলাম৷ আমাদের সময় কেউ কেউ উত্তরপত্র উর্দুতে লিখতো৷ এখন আগের মতো নেই৷

পরীক্ষাকেন্দ্রিক নানা আয়োজন৷ আমার জানামতে কোথাও কোথাও কোচিং ও শুরু হয়েছে৷ নোট, গাইড ও সাজেশন বাজারে ছয়লাব৷ যেকোনো মাদরাসায় তালেবে ইলমের পড়ার টেবিল দেখলেই পাওয়া যাবে সকল বাংলা নোট৷ গাইড৷

সাজেশন৷ একটি পরীক্ষা হলে সবাইকে বাংলায় উত্তরপত্র লিখতে দেখলাম৷ একজন শুধু আরবিতে লিখছে৷ উর্দুতে কেউ না৷ চট্রগ্রাম, সিলেট, উত্তারাঞ্চলে এখনও কেউ কেউ উর্দুতে উত্তরপত্র লিখে৷

ঢাকা ও ময়মনসিংহে উর্দু প্রায় বিদায়৷ আমি যদি স্পষ্ট করে হলি তাহলে আমাদের শিক্ষাবোর্ডগুলো পরীক্ষা সর্ববস্ব হয়ে যাচ্ছে৷ শিক্ষার৷ মান উন্নতি করার পদক্ষেপ সীমিত৷ তালিম তরবিয়তের মান বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বা ভিশন মিশন অস্পষ্ট৷

তাছাড়া শিক্ষাবোর্ডগুলোর পরীক্ষার সিলেবাসে দীন দুনিয়ার জ্ঞানের সমন্বয়ের অভাব৷ তাকমিলের একজন তালেবে ইলমকে হাদিস ও ফিকহ সম্পর্কে কিছুটা ধারনা রাখে৷

তাফসিরে জালালাইন তো মনে হয় অনেক বোর্ডে পরীক্ষাই হয় না৷ আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বা নিজ দেশ সম্পর্কে বিশেষ কিছু না জেনেও তাকমিল বা মাস্টার্স এর সনদ পেয়ে যাচ্ছে৷ হাইতুল উলইয়ার পরীক্ষার সিলেবাসটি পর্যালোচনা করলেই এই কথার প্রমাণ পাওয়া যাবে৷

তাছাড়া দেশের ১৮/১৯টি বোর্ড বা হাইআতুল উলইয়ার অন্তরভুক্ত ৬টি বোর্ডের তাকমিল ছাড়া বোর্ডের সিলেবাসে ভয়াবহ অসঙ্গতি৷ খোদ বেফাকের মাননীয় সভাপতির মাদরাসার পরীক্ষার্থীরা সবাই তাকমিলে পরীক্ষা দেয় না এবং বোর্ডের সকল মারহালার পরীক্ষায় অংশ নেয় না মুতরাম সভাপতির প্রাচীনতম ঐতিহ্যাহী মাদরাসা বা জামিয়া৷

বেফাক নূরানী ও কাফিয়ার কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নেবে৷ কাফিয়া কিতাবটিই তো বাদ দেওয়া হয়েছে অনেক মাদরাসায়৷ বেফাক শরহে বেকায়া থেকে কুতবী বাদ দিয়েছে৷ বাদ দিয়েছে আরও কিছু কিতাব৷

বোর্ডে মহিলা মাদরাসার সিলেবাস শর্ট৷ ছেলেদেরটা কোথাও কিছুটা দীর্ঘ৷ কিন্তু কোনোটাই মাস্টার্স সনদের অর্জনের ১৭ বছরের নয়৷ কোনো বোর্ড আমার জানা মতে
বিশ্বমনের সিলেবাস রচিত হয় নি৷

সেই পুরনো দরসে নেজামীর আদলে সাজানো৷ দরসে নেজামীও পুরোটা নয় আবার৷ কাটছাট৷ সর্বোপরি কওমী মাদরাসার স্বার্থ রক্ষায় বোর্ডগুলো ইতিবাচক ভূমিকা রেখে যাচ্ছে৷

কিছুটা শিক্ষায় প্রতিযোগিতার মনোভাব থাকলেও বাংলা নটো গাইড অবক্ষয়ের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে শিক্ষার৷ তরবিয়তের নিম্নমান সবার জানা৷ মহিলা মাদরাসার পরিচালনার জন্য আজও নীতিমালা তৈয়ার হয় নি৷ শর্তাবলী পালনযোগ্য আইনে পরিনত করা সম্ভব হয় নি৷

মহিলা মাদরাসার সিলেবাসটি আলিয়া মাদরাসার জন্য রচিত আল ফাতাহর বইগুলো ভালো কাজে দিচ্ছে৷ এতো সমস্যার ভেতরও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে স্বপ্ন দেখতে হবে আগামীর৷
আগামী প্রজন্ম যেনো সুন্দর একটি পরিবেশ পায় সেই প্রচেষ্টা করে যেতেই হবে৷

যেনো বিশ্বমানের আলেম হয় এই প্রজন্ম সেই কোশেশ করে যেতে হবে৷ এ ক্ষেত্রে বোর্ডগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবেই৷ তালেবে ইলম ও মাদরাসার বার্ষিক চাঁদা ও ফি দিয়ে পরিচালিত হয় বোর্ডগুলো৷ তালেবে ইলমের আগামী নিয়ে চিন্তা করতেই হবে৷

কিছু প্রস্তাবনা

১. সবগুলো শিক্ষাবোর্ডের মাদরাসার পরিসংখ্যান তৈয়ার৷ তালেবে ইলম ও উস্তাজদের পরিসংখ্যান তৈয়ার৷

২. মারহালা ছানাবিয়ার পরীক্ষা অভিন্ন সিলেবাসে গ্রহণ৷ এই পরীক্ষার সনদধারীরা যেনো আরব বিশ্বের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বা জামিয়াগুলোতে অনার্সের সুযোগ লাভ করে সেই পথ রচনা করা৷

মুআদালা করা৷ এই ক্ষেত্রে মদীনা ইউনিভার্সিটি, আল আযহার, নদওয়ার সিলেবাসটি সামনে রেখে পরীক্ষার সিলেবাস তৈয়ার করা এবং আরবীতে পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা৷

৩. বোর্ডগুলোর প্রাইমারি লেভেলের ও মুতাওয়াসসিতা পরীক্ষাকে সরকারি অনুনোদন নিয়ে নেওয়া৷ প্রয়োজনে সরকারি সিলেবাসের সঙ্গে সমন্বয় করে সেই অনুমোদন নেওয়া৷

পরিবেশ মাদরাসার, কিছু সিলেবাস স্কুলের৷ এতে তালেবে ইলমরা নিজস্ব পথ রচনা করতে পারবে৷ আমলি সমস্যা হবে না এতে৷ মাদরাসার তালেবে ইলমরাও স্কুল বা আলিয়ায় যাবার প্রয়োজন মনে করবে না৷

৪. হাইআতুল উলইয়ার অন্তর্ভুক্ত ছয় বোর্ডে সম্নিলিতভাবে একটি সিলেবাস প্রনয়ণ কমিটি গঠন করবে৷ পুরো কওমী মাদরাসার অভিন্ন বা কাছাকাছি একটি সিলেবাস উপহার দেবে যা হবে পুরনো ঐতিহ্য রক্ষা করে এবং আধুনিতাকার ভালো বিষয়গুলো সমন্বিত৷

চিন্তা চেতনায় দেওবন্দ কিন্তু দেশের চাহিদাও সামনে রেখে রচিত হবে সেই সিলেবাস৷

৫. প্রায় বিশ হাজার তালেবে ইলম মাওলানা হিসেবে বের হচ্ছেন ফি বছর৷ তাদের কর্মসংস্থানের একটি রুপতল্প তৈরি করা৷

৬. আধুনিক সব মেথড মেনেই হাইআতুল উলায়া বা একটি জামেয়া তালেবে ইলমদের এম ফিল, দাকতুরা ডক্টরেট দিতে পারে সেই উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং সেই গবেষণাপত্রগুলো প্রকাশ করার ব্যবস্থা করা৷

৭. বোর্ডের কর্মচারি কর্মকর্তা নিয়োগবিধিতে বোর্ডের সেরা মেধাবীদের জন্য কোটা রাখা বা তাদের অগ্রাধিকার৷দেওয়া৷

৮. সরকারি প্রাইমারি স্কুল বা কলেজ ভার্সিটির শিক্ষকদের বেতন কাঠামো ও স্কেলকে সামনে রেখে কওমী মাদরাসার জন্য একটি অভিন্ন বেতন স্কেল তৈয়ার৷ এই স্কেল পালনে তাকাদা দেওয়া বা সুপারিশ করা৷

৯. বোর্ডের সেরা মেধাবীদেরকে শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে উচ্চশিক্ষায় দেশের বাইরে পাঠানো৷ দেশে ফেরার পর ভালো পদে খেদমতের সুযোগ রাখা৷

১০. বোর্ডগুলোর কমিটি গঠন না করে অন্যন্য শিক্ষাবোর্ডের আলোকে পদবিন্যাস করা৷ যদিও কমিটি করতেই হয় তাহলে দেশের খ্যাতিমান আলেমদের সদস্য যেহেতু রাখতেই হবে এটি রেখে বোর্ডে যারা ফলাফলে শীর্ষ থাকবে সেই মাদরাসাগুলো কমিটির সদস্যপদ লাভ করবে৷

অাঞ্চলিকতা, স্বজন হওয়া বর্জনীয় কমিটির সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে৷ কমিটিতে নদভী, মাদানী ও আযহারীদেরও অন্তরভুক্ত রাখা৷

লাবীব আব্দুল্লাহ
পরিচালক, ইবনে খালদুন ইনস্টিটিউট

কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব; বেফাক যা করতে পারে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ