শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

আমাদের টার্গেট দক্ষ আলেম তৈরি, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার নয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম : বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার দু’টি প্রধান ধারা – আলিয়া এবং কওমি৷ আলিয়া মাদ্রাসা সরকার স্বীকৃত৷ আর কওমি মাদ্রাসাকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি৷

স্বীকৃতি দেওয়ার পর আলোচনার তুঙ্গে রয়েছে কওমি মাদ্রাসা৷ কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাকে সরকার স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি দাওরায়ে হাদিসকে সাধারণ শিক্ষার মাস্টার্স-এর সমমান ঘোষণা করা হয়েছে৷ যদিও অন্যান্য স্তরের মান কী হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি৷ এছাড়া আর দাওরায়ে হাদিস-এর মান নির্ধারণ নিয়েও জটিলতা আছে৷ কারণ কওমি শিক্ষার মধ্যে নানা ভাগ থাকায়, কেউ ন'বছর পড়াশুনার পর আবার কেউ ১২ বছর পড়াশুনার পর দাওরায়ে হাদিস পাশ করেন৷

১৮৬৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই উপমহাদেশে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার শুরু৷

এই শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত ইংরেজদের প্রতিষ্ঠিত আলিয়া মাদ্রাসাকে চ্যালেঞ্জ করে গড়ে ওঠে, তাও আবার কোনো প্রকার সরকারি সহযোগিতা ছাড়াই৷ আর এখন তারা সরকারের স্বীকৃতি নিলেও, কোনো ধরনের আর্থিক সহযোগিতা নিতে রাজি নয়৷

কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই
কওমি মাদ্রাসাকে সরকারের মনিটরিং বা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা ছিল অনেক আগে থেকেই৷ এ ধরনের মাদ্রাসার শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়৷ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা শাহ আহমদ শফীকে চেয়ারম্যান করে ১৭ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়৷

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঐ বছরের ২৮ আগস্ট ‘কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৩' মন্ত্রিসভায় উঠানো হয়৷ যদিও মন্ত্রিসভা সেই আইনের খসড়া প্রত্যাহার করা৷ শেষ পর্যন্ত ১১ এপ্রিল শাহ আহমদ শফীর শর্ত মেনে নিয়ে তাঁর উপস্থিতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন৷ কিন্তু কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারে যে কমিশন হয়েছে, আহমদ শফীর নেতৃত্বে তাতে সরকারের কোনো প্রতিনিধি নেই৷

কওমি স্বীকৃতিকে কোনো সংকীর্ণ জায়গা থেকে দেখা উচিৎ হবে না: মিজানুর রহমান খান

স্বতন্ত্র কওমি ইউনিভার্সিটি হতে কোনো আইনি বাধা আছে বলে মনে করি না: অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ১৩ হাজার ৯০২টি কওমি মাদ্রাসায় বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে৷ কিন্তু বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশি৷ তাছাড়া মাওলানা শাহ আহম শফীর নেতৃত্বে কওমি শিক্ষাবোর্ড সর্ববৃহৎ হলেও, এর বাইরে আরো পাঁচটি কওমি শিক্ষাবোর্ড আছে, যারা স্বাধীনভাবে মাদ্রাসা এবং কওমি শিক্ষা পরিচালনা করেন৷

কওমি শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত কোরআন হাদিস ভিত্তিক৷ ভাষা হিসেবে আরবি, ফার্সি এবং উর্দুকে প্রাধান্য দেওয়া হয়৷ তবে আজকাল প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান, ইতিহাস, গণিত এবং ভূগোল পড়ানো হয়৷ এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে কওমি শিক্ষাবিদরা বিশেষায়িত শিক্ষা হিসেবে দেখেন৷ কোরআন হাদিস এবং ফিকাহ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনই এর মূল লক্ষ্য৷ আরবি এবং উর্দু সাহিত্যও পড়ানো হয়৷

বাংলাদেশের প্রধানত মসজিদকে কেন্দ্র করেই কওমি মাদ্রাসাগুলো গড়ে উঠেছে৷ এই মাদ্রাসার ছাত্ররা প্রধানত আবাসিক৷ লিল্লাহ বোডিং-এর আওতায় তাদের থাকা, খাওয়া এবং পড়াশুনার খরচ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষই বহন করে৷ তবে তারা সরকারি কোনো সহযোগিতা বা অনুদান নেয় না৷ মুসলামানদের জাকাত, ফিতরা, কোরাবানির চামড়া, অনুদানের টাকায়ই মাদ্রাসাগুলো পরিচালিত হয়৷

উচ্চশিক্ষার সুযোগ
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশ হিফজুল কোরান  কোরআন৷ এ বিষয়ের শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র পবিত্র কোরান শরীফ মুখস্থ করে থাকেন৷ তবে হিফজুল কোরান শেষ হলে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে অন্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষারো সুযোগ আছে৷

এই শিক্ষা ব্যবস্থার যে কোনো পর্যায় থেকে সাধারণ শিক্ষার সমমানে প্রবেশের সুযোগ নেই৷ তাছাড়া বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ বলতে কিছু নেই৷ সর্বোচ্চ দাওরায়ে হাদিস শ্রেণিতে হাদিসের বিশুদ্ধতম ছয়টি গ্রন্থসহ  ১০টি বিখ্যাত গ্রন্থ পড়ানো হয়।  আর একেই মাস্টার্সের সমমান ঘোষণা করা হয়েছে৷

 আগামী ১৫ মে সরকারি স্বীকৃতির পর প্রথম দাওরায়ে হাদিসের প্রথম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে৷ দাওরায়ে হাদিসের সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য মাওলানা মাহফুজুল হক ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘ছয়টি কওমি শিক্ষা বোর্ডকে এক করে এই পরীক্ষা হবে৷ এ জন্য একটি কমিটি হয়েছে৷ ঐ কমিটি সার্টিফিকেট দেবে৷'

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে অন্যান্য স্তরের সঙ্গে মান সমন্বয়ের কোনো প্রয়োজন নাই৷ সেটা করা হলে মাঝখান থেকে ছাত্ররা চলে যাবে৷ দেশে কোরান-হাদিসে শিক্ষিত দক্ষ আলেমের অভাব আছে৷ আমাদের টার্গেট দক্ষ আলেম তৈরি করা৷ ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করা আমাদের কাজ নয়৷'

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারি অর্থ সহায়তা নিলে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবে৷ তাতে দ্বীনি বা ইসলামের শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ তাই আমরা সরকারে অনুদান নেব না৷'

কওমি মাদরাসায় যেসব বিষয় পড়ানো হয়

ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে কওমি মাদরাসা

ঢাকার জামিয়া ইসলামিয়া ওয়াহিদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন বলেন, ‘আমাদের টার্গেট কোরআন-হাদিসে শিক্ষিত আলেম গড়ে তোলা৷ এটা একটি বিশেষায়িত শিক্ষা৷ প্রথম থেকেই তাই কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের ওই বিষয়গুলোই পড়ানো হয়৷ যাদের আগ্রহ আছে তারা পড়বেন৷ অন্য বিষয়ে পড়শুনা করার জন্য তো আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে৷'

তিনি বলেন, ‘তবে এখন প্রথমদিকে বাংলা, ইতিহাস, ভুগোলের মতো কিছু বিষয় পড়ানো হয়৷'

 

শিক্ষাবিদ এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ২০১০ সালের শিক্ষা নীতির আলোকেই চলছে৷ এই শিক্ষা ববস্থা সরকারি এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণেই আছে৷ তাই আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে মিলিয়েই এর কোর্স বা কারিকুলাম তৈরি হয়েছে৷ কিন্তু কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই৷ এর কারিকুলাম তৈরিতে সরকার বা রাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই৷ এটা কীভাবে সম্ভব?'

তাঁর কথায়, ‘সরকার হঠাৎ করেই কওমি মাদ্রাসার একটি কোর্সকে মাস্টার্সের সমমান ঘোষণা করল৷ এটা করার আগে কোনো গবেষণা হয়েছে? কোনো তথ্য নেওয়া হয়েছে যে ঐ কোর্সটি মাস্টার্সের সমমানের কিনা? দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান করা হলে আগের ধাপগুলোর মর্যাদা কী?'

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে বা মনিটরিং-এর বাইরে একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চলতে পারে না৷ তাদের অর্থের উৎস কী? তারা কী পড়ায়? পড়ানোর মান কেমন? এ সব সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকতে পারে না৷ ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে শিক্ষায় বৈষম্য কমানোর কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু করা হচ্ছে ঠিক উল্টো৷'

কৃতজ্ঞতায় : ডয়েচ ভেলে

-এআরকে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ