বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫


স্বতন্ত্র কওমি ইউনিভার্সিটি হতে কোনো আইনি বাধা আছে বলে মনে করি না: অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ড. সলিমুল্লাহ খান। জন্মেছেন চট্টগ্রামের মহেশখালিতে। পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। দেশ-বিদেশের একাধিক সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করেছেন অধ্যাপনা। শিক্ষকতার বাইরেও লেখক, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে তার। দেশের খ্যাতিমান এ বুদ্ধিজীবী কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি বিষয়ে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলাম সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব। সঙ্গে ছিলেন সহকর্মী আতাউর রহমান খসরু

আওয়ার ইসলাম : কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

ড. সলিমুল্লা খান : বিষয়টিকে আমি হ্যা বাচক হিসেবেই দেখছি। এটি একটি দীর্ঘদিনের বিলম্বিত সিদ্ধান্ত। যা বহুদিন পর নেয়া হয়েছে। অনেকে বলছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। আমি সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। যে উদ্দেশ্যেই করা হোক কাজটি দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত কাজ। ভালো হয়েছে।

আমি চাই, আমাদের দেশের সব শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয় ধারায় অন্তর্ভুক্ত হোক। তাতে বৈচিত্র থাকবে। উচ্চ শিক্ষায় বৈচিত্র থাকা প্রয়োজন। কিন্তু নিচের দিকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাগুলোকে একীভূত করতে পারলে ভালো। এটা আমার সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি।

দীর্ঘ দিন ধরে কওমি মাদরাসা মূল ধারা থেকে আলাদা ছিলো। তার ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। আমি সেদিকে যাচ্ছি না। এখন তো আমাদের জাতীয় রাষ্ট্র হয়েছে। ঔনিবেশিক আমলে বাইরে থাকার একটি যুক্তি ছিলো। এখন আর বাইরে থাকার যৌক্তিকতা নেই। আমরা সবাই স্বাধীন দেশের নাগরিক।

আমাদের সবার ধর্মীয় শিক্ষার দরকার আছে। ধর্মীয় শিক্ষার শ্রেষ্ঠ জায়গা  ঐতিহাসিক মাদরাসাগুলি। আমাদের বিশ্ব বিদ্যালয়ে (ইসলামিক স্টাডিজে) এমএ করানো হয়। ইলমুল কালাম, হাদিস ও তাফসির পড়ানো হয়। কিন্তু এগুলো মাদরাসায় ভালো পড়ানো হয়। কোনো কোনো গণমাধ্যম সেটাকে মাদরাসার শিক্ষকরা বেশি মেধাবী বলে উপস্থাপন করেছে।

আমি মনে করি, বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজন আছে। আমি জামিয়া মিল্লিয়া দিল্লির খুব ভক্ত। এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দি রহ.। তিনি জামিয়া মিল্লিয়া দিল্লির প্রতিষ্ঠাকালে তিনি বলেছিলেন, এটা আমরা দেওবন্দে পারবো না। আপনারাই করেন। জামিয়া মিল্লিয়ায় পড়েছিলেন ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাকির হোসাইন, অধ্যাপক মুজিব।

আরও পড়ৃন : ইংরেজি শিক্ষকদের চেয়ে মাদরাসা শিক্ষকরা মেধাবী

কওমি স্বীকৃতিকে কোনো সংকীর্ণ জায়গা থেকে দেখা উচিৎ হবে না: মিজানুর রহমান খান

আওয়ার ইসলাম : স্বীকৃতি বাস্তয়ন কমিটি কোনো সংস্থা বা ইনিস্টিটিউট করার ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা আছে কি?

ড. সলিমুল্লা খান : আপনার এ প্রশ্নটির ব্যাপারে আমি একটু ভেবে দেখতে চাই। আমি মনে করি না আইনত কোনো বাধা আছে। সরকার সার্বভৌম। তারা কওমি মাদারাসর জন্য একটি এ্যক্ট করতে পারে। যেমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ্যক্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যক্ট ইত্যাদি হয়েছে, তেমন কওমি মাদরাসার জন্য একটি রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপনের মতো অর্ডিন্যান্স তৈরি করতে পারে। আইনের দিক থেকে আমি মনে করি না এটা অসম্ভব। এটার জন্য যে রাজনৈতিক ইচ্ছা দরকার সেটা আছে কী না সেটাই আসল কথা।

আওয়ার ইসলাম : আইনি বলতে আমি যা বোঝাতে চেয়েছি, সরকার যেহেতু কওমি মাদরাসাকে উচ্চ শিক্ষার মান দিয়েছে, সেটা তো আর বোর্ড নেই। বোর্ডের অধীনে তো উচ্চ শিক্ষা চলতে পারে না.....

ড. সলিমুল্লা খান : বোর্ড তো একটা শব্দ। যেমন আপনারা বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া লিখছেন। এটা লেখার সময় ইংরেজিতে ব্র্যাকেটে লেখে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। এটি রাষ্ট্রীয় সংজ্ঞায়নের ব্যাপার। এটাকে বোর্ড না বলে ইউনিভার্সিটি গ্রান্ডস কমিশন বলেন সেটা সরকারের ব্যাপার। বোর্ড বলেন বা কমিশন বলেন সেটা সরকার সংজ্ঞায়ন করবে।

আওয়ার ইসলাম : সরকারের প্রজ্ঞাপন সামনের রেখে কওমি ইনিস্টিটিউট বা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করতে চাইলে কওমি কর্তৃপক্ষ কীভাবে এগুবো?

ড. সলিমুল্লা খান : এটা একজন আইনজীবীর সাথে কথা বলে দেখতে পারেন।  তবে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার প্রয়োজনটা সবচেয়ে বেশি। সরকার চাইলে করতে পারেন। আপনাদের দাওয়ারে হাদিসে যা পড়ানো হয়, তাতে আলিয়া মাদরাসার কামিলের সমমান হয়ে যায়। এখন এটাতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে যেসব শর্ত রয়েছে লাইব্রেরি থাকা, শিক্ষকদের শিক্ষার মান নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে সরকার একটি  বডি করে দিতে পারে। আমি বোর্ড বলবো না বডি বলবো।

আওয়ার ইসলাম : সরকার তো ইতিমধ্যেই একটি কমিটি করে দিয়েছেন?

ড. সলিমুল্লা খান : সরকার যেটা করে দিয়েছেন, সেটা অনেকটা ট্রানজিকশন বডি বা পরিবহন বডি। যাদের কাজ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া। এরপর পরিচালনার জন্য সরকার একটি কমিটি করে দিতে পারেন।

আওয়ার ইসলাম : স্বীকৃতি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কওমি নীতিনির্ধারকদের প্রতি আপনার কোনো আহবান আছে কী?

ড. সলিমুল্লা খান :  অনেক আহবান আছে। আমরা প্রথমে তাদের কথা শুনবো। তারপর তাদেরকে বলবো দেশের মানুষের জন্য এবং বিশ্বের কল্যাণের জন্য যা উপযুক্ত তাই করবেন। ভারতের দেওবন্দ মাদরাসাও কিন্তু নিজেই নিজের অনেক কর্মসূচি পাল্টাচ্ছে।

আমি মাদরাসা শিক্ষার সংস্কারের কথা বলি। সংস্কারের অর্থ কুরআন হাদিস বর্জন নয়। সংস্কার মানে আজকের জরুরিয়্যাতের অন্তর্ভূক্তি ও অনুভব। আমি তাদের প্রতি আহবান জানাবো, আপনারা জজবা ব্যবহার না করে হিকমতটা বেশি ব্যবহার করেন।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ