শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬


কওমি স্বীকৃতিকে কোনো সংকীর্ণ জায়গা থেকে দেখা উচিৎ হবে না: মিজানুর রহমান খান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মিজানুর রহমান খান। জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক। সম্প্রতি আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন কওমি মাদরাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি ও মান প্রদানের বিষয়ে। তার আলোচনায় উঠে এসেছে কওমি সনদের স্বীকৃতি বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি ও বাস্তবায়ন কমিটির প্রতি তার মূল্যবান পরামর্শ। তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব। সঙ্গে ছিলেন সহকর্মী আতাউর রহমান খসরু

আওয়ার ইসলাম : সরকার কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ শ্রেণি দাওরায়ে হাদিসকে ইসলামিক স্টাডিজ ও অ্যারাবিকে মাস্টার্সের সমমান দিয়েছি। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?

মিজানুর রহমান খান : আমি বিষয়টি এমনভাবে দেখি যে, কওমি মাদরাসার সাথে রাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার প্রয়োজন দীর্ঘদিন যাবৎ অনুভূত হচ্ছিলো। সেই সম্পৃক্ততার সূচনা যদি হয়, তবে আমি বিষয়টিকে নীতিগতভাবে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখবো। কিন্তু শর্ত হচ্ছে, সার্বিক সংস্কারের যে ্প্রয়োজন রয়েছে আমি বিষয়টিকে তার সূচনা হিসেবেই দেখতে চাইবো। একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেব বা এর মাধ্যমে যে রাজনৈতিক সমীকরণ কাজ করছে; বাস্তবে হচ্ছে বা প্রতীয়মান হচ্ছে বিষয়টি যেনো তাতে আটকে না থাকে। সত্যিকার অর্থে বিষয়টি সংস্কার এবং বিশাল একটি জনগোষ্ঠি তাদেরকে শিক্ষার একটি ধারার মধ্যে বা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসা উচিৎ। আমি চাই বিষয়টি সেই জায়গা থেকে দেখা হোক। কোনো সংকীর্ণ, দলীয় বা গোষ্ঠিগত জায়গা থেকে যেনো দেখা না হয়।

আওয়ার ইসলাম : আপনি বলেছেন, দীর্ঘ মেয়াদি একটি ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার কথা। সরকার স্বীকৃতি বাস্তবায়ন কমিটি নামে একটি কমিটি করেছে। এ কমিটি যদি কোনো দীর্ঘ মেয়াদি কাজের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা করতে চায়, তাহলে তাদেরকে কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে? বা এ ক্ষেত্রে কী কী প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে?

মিজানুর রহমান খান : প্রথম বাঁধা হলো জনগণের আস্থা অর্জন করা। নিজেদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করা বড় একটি চ্যালেঞ্জ। জনমনের আস্থার জায়গাটা যেনো শক্তিশালী থাকে এই কমিটির উচিৎ সেই সব আশা ও আকাঙ্ক্ষার দিকে নজর দেয়া।

বিশেষ করে, এ কমিটির সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো কোনো ব্যক্তির কিছু বক্তব্যের কোনো কোনো অংশের ব্যাপারে জনমনে যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোর প্রতি তাদের সংবেদনশীল থাকা। যে যেটা ন্যায্য, যেটা উচিৎ এবং যেটা সংযত সে বিষয়গুলো যেনো তারা অধিকতর ধারণ করে। না হলে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠির আবেগ ও অনুভূতির ব্যাপারে তারা যদি উদাসীন থাকেন তাতে বিষয়টি গোলমেলে হবে।

উদারনৈতিক ইসলামের জায়গায় অবস্থান করতে হবে; সংক্ষেপে বললে, মদীনা সনদে শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সহাবস্থানের বিষয়টি তারা যতো বেশি নিশ্চিত করতে পারবে, জনমনে-সংসদে-সর্বত্রে তাদের পথ মসৃণ ও সহজ হবে।

ইংরেজি শিক্ষকদের চেয়ে মাদরাসা শিক্ষকরা মেধাবী

কওমি স্বীকৃতি নিয়ে কী ভাবছেন আলিয়ার ছাত্র-শিক্ষক

আওয়ার ইসলাম :  আপনি উদারনৈতিকতার কথা বলেছেন। আমি স্পেসেফিকলি আইনি প্রক্রিয়ার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

মিজানুর রহমান খান : একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করেছেন। আমি বলবো, আমাদের সংবিধানের আলোকেই  কমিটি কাজ করতে হবে। আমাদের সংবিধানে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যে সমতার কথা বলেছে তা সামনে রাখতে পারেন তারা। আবার কিছু বিশেষ দিকও রয়েছে। যেমন সংবিধানে অনগ্রসর জনগোষ্ঠির জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। কোটা ব্যবস্থাটা আমরা সেখান থেকেই পেয়েছি।

আমার মনে হয়,  অনগ্রসর জনগোষ্ঠির জায়গা থেকে সরকার কওমি মাদরাসা বিশেষ সুবিধা দিতে পারে। সংবিধানের অধিকার সংক্রান্ত যে ধারাগুলো রয়েছে সেগুলো থেকে তাদেরকে বাঁচিয়ে কীভাবে বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেয়া ও নেয়া যায় তা নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিটি কথা বলে দেখতে পারেন। বিষয়গুলো ভালোভাবে যাচাই ও বিশ্লেষণ করে দেখতে পারেন।

আওয়ার ইসলাম : কওমি স্বীকৃতি বাস্তবায়ন কমিটি একটি ইনিস্টিটিউট বা বিশ্ববিদ্যালয় করতে চাইলে তারা কী করবেন?

মিজানুর রহমান খান :  এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের যে নীতিমালা রয়েছে, রাষ্ট্রীয় আইন  ও শর্ত রয়েছে তার থেকে কতোটা অনুমোদনযোগ্য হবে তা আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই ঠিক করতে হবে। আমার পক্ষে উপস্থিত বলা সম্ভব নয়।

আমি নীতিগতভাবে মনে করি, এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়তে কোনো বাঁধা থাকা উচিৎ নয়। আমাদের দেশের যে আইন রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের যে নীতিমালা রয়েছে তাকে চ্যালেঞ্জ না করে স্বাতন্ত্র ও বৈশিষ্ট্য রক্ষার জন্য যদি অধিকতর স্বায়ত্ত প্রয়োজন হয়, কীভাবে দেয়া যায় তা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমাধানে পৌঁছা সম্ভব

আওয়ার ইসলাম : মানে কোনো প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য মঞ্জুরি কমিশন বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তারা আলোচনা করতে পারেন?

মিজানুর রহমান খান : তারা পারস্পারিক আলোচনা ও মতবিনিময় করতে পারেন। আরেকটা বিষয় নাম কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিন্তু নামে তারা স্কুল। তার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকস। বিশ্বের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। সুতরাং নাম কোনো বড় ইস্যু হওয়া উচিৎ নয়।

আমি আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে  কোনো বাঁধা দেখছি না।

আওয়ার ইসলাম : সময় দেয়ার জন্য আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।

মিজানুর রহমান খান : ধন্যবাদ আপনাদেরকেও।

-এআরকে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ