বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


ইংরেজি শিক্ষকদের চেয়ে মাদরাসা শিক্ষকরা মেধাবী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইংরেজি শিক্ষার শিক্ষকদের চেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষকরা মেধাবী বলে মন্তব্য করেছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের শিক্ষক দার্শনিক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার লোকেরা লেখাপড়া জানে না এমন প্রচারণা সঠিক নয়। বরং আমি চ্যালেঞ্জ করব আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ৫ জনও পাবেন না যে তাদের সঙ্গে (মাদ্রাসার শিক্ষক) যুক্তি-তর্কে পারবেন। মাদ্রাসা শিক্ষা গ্রহণ করে অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব হয়েছেন আমাদের দেশে ও উপ-মহাদেশে রয়েছে। তাদের জ্ঞানের ভান্ডার ব্যাপক।

গত ১২ এপ্রিল রাতে দীপ্ত টিভির টকশো তক্কা-তক্তিতে তিনি এসব কথা বলেন। হেফাজতের দাবি অনুযায়ী দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের মর্যাদা দেয়া নিয়ে বিতর্ক ওঠায় বেসরকারি টিভি চ্যানেল এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। তিনি বলেন, ইংরেজি সিলেবাস যেমন আন্তর্জাতিক, তেমনি মাদ্রাসার সিলেবাসও আন্তর্জাতিক। কওমী মাদ্রাসায় যা পড়ানো হয় সেটা ভারত, সউদী আরবে পড়ানো হয়। তারা মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় অনুসরণ করে। আসল কথা হচ্ছে এটা ধর্মীয় শিক্ষা। আপনি বিশ্ববিদ্যালয় যদি ধর্মতত্তে¡ আরবিতে এনে দিতে পারেন সেখানে মাদ্রাসাকে দিবেন না কেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর রুবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় টকশোতে অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো উপ-ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, সাংবাদিক অজয় দাসগুপ্ত প্রমুখ।

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের শিক্ষক প্রফেসর ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, এখন আমাদের  দেশে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল চলছে। এটার তো কথা ছিল না। এটা নিয়ে আমাদের দু’রকম শিক্ষা ব্যবস্থা হচ্ছে কিনা। সেটা কেউ কথা বলছে না, আমরা প্রশ্নও তুলছি না। তাহলে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল আগে থেকেই ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা সর্বান্তকরণে বাংলা মিডিয়াম করতে চেয়েছিলাম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কীভাবে বাংলা করা যায়। ১৯৫৪ সালে যে ২১ দফার দাবি ছিল, তার অন্যতম দাবি বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা, পরীক্ষা বাংলা দেয়া ইত্যাদি। সেগুলো এখন গেল কোথায়? অর্থাৎ সেগুলো একটা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। শিক্ষা বহতা নদীর মতো, এক জায়গায় থেমে থাকে না। বাংলাদেশের আগে ভারতে মুসলমানদের মধ্যে দরসে নিযামিয়া শিক্ষা ব্যবস্থা চালু ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি লক্ষনৌতে চালু হয়। সেই সিলেবাস অনুসরণ করে মাদরাসা শিক্ষা হতো।

১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর মৌলভী আহমদুল্লাহ নামে এক লোক ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছিলেন। তার ১০ বছর পর ভারতের মৌলভীরা আলীগড় থেকে একটু দূরে উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ নামক জায়গায় এটা (কওমী মাদ্রাসা) তারা স্থাপন করে। সেটাই অনুসরণ করছে বাংলাদেশসহ অনেক দেশে। কিন্তু হাটহাজারী মাদরাসার বড় আলেম আল্লামা আহমদ শহীদ প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে মোনাজাত পরিচালনা করেন। এটা হেফাজত ইসলামের সাথে কওমী মাদরাসার সম্পর্ক। তাদের লোকদের আন্দোলনে হেফাজত ইসলাম গড়ে ওঠে। ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যে ঘটনা ঘটেছিল তখন তারা একটা অশুভ শক্তি অর্থাৎ জামায়াতে ইসলামের সাথে যারা যুদ্ধাপরাধীদের সাথে সরাসরি অভিযুক্ত তাদের সঙ্গে করে। তাদের সহায়তাকারী বিএনপি; এরশাদও মনে করেছিল সরকার উৎখাতে হেফাজত ইসলামকে ব্যবহার করবে এবং তারা পেছনে অভ্যুত্থান করবেন। জামায়াত থেকে হেফাজতকে আলাদা করার জন্য আওয়ামী লীগ একটু ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। হেফাজতকে দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলা যায় কিনা এটা তারই একটা চেষ্টার অংশ হতে পারে। কারণ, ১৮৫৭ সালে যে সকল আলেম-ওলামা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন তারা কিন্তু ব্রিটিশদের সাথে আপোষ করেননি। কওমী শিক্ষার অর্থ জাতীয় শিক্ষা। ভারতের স্বাধীনতার একটু আগে এই ধারার একটা বিশ্ববিদ্যালয় জওহরলাল নেহুরুদের অনুমতি নিয়ে, গান্ধীর আশীর্বাদ নিয়ে, মওলানা আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে দিল্লিতে স্থাপিত হয়েছে; নাম জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এটাও একটা স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, আমাদের ইংরেজি শিক্ষার প্রতি একটু পক্ষপাত আছে। যেটাকে আমরা বারবার একটা শব্দে বলে থাকি, ইংরেজি শিক্ষা বলি না, বলে থাকি আধুনিক শিক্ষা। আধুনিক শিক্ষা মাত্রই আধুনিক শিক্ষা, এটাই হয়েছে আমাদের এখানে। বাংলায় কি আধুনিক শিক্ষা হতে পারে? উত্তরে বলা হবে অনুবাদের মাধ্যমে। মাদরাসা শিক্ষকদের জিজ্ঞেস করেছি আপনি ক্লাসে কোন ভাষায় বক্তব্য দেন তিনি উত্তরে জানান আরবিতে, কারণ কোরআন এবং হাদিস আরবিতে এজন্য। বোঝান কোন ভাষায়? বলেন, উর্দুতে, কেউ কেউ বাংলাতে বোঝান। এই সমস্যাটা সমাধান করার আগে আমাদের নৈতিক দিককে একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, আমরা আমাদের তিন বছরের বাচ্চাকে কিন্ডারগার্টেনে ইংরেজিতে পড়াই কেন। সেটা যদি নৈতিক দিক দিয়ে আপনি মীমাংসা করতে না পারেন তাহলে ওদের কাছ থেকেও আপনি দাবি করতে পারেন না। ওরা বলে যে, আমাদের কাজ হচ্ছে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া। আগে এই মাদরাসাগুলোতে চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষা দেয়া হতো। সেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা দেয়া হতো। আজকে তারা সেটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যেটাকে আমরা বলছি ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা। হাদিসে বলা হচ্ছে দুনিয়া আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। কৃষি যদি অপবিত্র হতো তাহলে এই কথাটা আমরা হাদিসে পেতাম না।

আজকে যারা পয়লা বৈশাখ পালন নিয়ে নানা কথা বলছেন, আমি বলব পহেলা বৈশাখ পালন করা না করা ইসলামের দৃষ্টিতে তোলার কথা নয়, কারণ এটা আমাদের কৃষি সভ্যতার সাথে জড়িত। কৃষি তো ইসলামের অনুমোদিত পেশা নয়। মাদরাসা শিক্ষার দুর্বলতা এটা আমরা স্বীকার করব। এটা অনাধুনিকতার নয়, তারা উপনিবেশবাদকে প্রত্যাখ্যান করতে গিয়ে তারা শুধু উপনিবেশবাদ থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়নি, আমাদের সুশীল সমাজ থেকেও বিচ্ছিন হয়েছে। তাদেরকে ফিরিয়ে আনা আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু কোন পথে তাদেরকে ফিরিয়ে আনবেন, আমাকে নিজেকে তো সঠিক পথে থাকতে হবে। কারণ, আমরা নিজেরাই তো এখনো উপনিবেশের শিক্ষাতে ডুবে আছি। জাতীয় শিক্ষা গড়ে তুলতে পারিনি।

তাহলে আমি তাদেরকে কোন নৈতিক অধিকারে বলব। মওলানা আবুল কালাম আজাদ কোনো মাদরাসায় পড়াশোনা করেননি। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি। তারা ছিলেন সত্যিকারের জিনিয়াস (মেধাবী)। মওলানা আবুল কালাম আজাদের শুধু হিস্ট্রি অব ফিলোসফি ইন্টার্ন এন্ড ওয়েস্টার্ন-এর উপরে যে জ্ঞান ছিল, রাধা কৃষ্ণ ও হুমায়ুন কবীরের সম্পাদনায় যে বইটা ভারত সরকারের অধীনে বেরিয়েছিল সেটির ভূমিকা লিখেছেন আবুল কালাম আজাদ। ভারতবর্ষে জীবিত দ্বিতীয় কোনো দার্শনিক ছিলেন না যে ওই রকম একটা ভূমিকা লিখতে পারেন। ওনাকে শায়খুল হিন্দ উপাধি দেয়ার কথা ছিল, উনি কোনো মাদরাসায় পড়েননি। উনি জন্মেছেন মক্কায়, ৭০ বছর বয়সে মারা গেছেন ভারতে। মাদরাসা শিক্ষায় লোকেরা যে লেখাপড়া জানেন না এটা সঠিক নয়, বরং আমি চ্যালেঞ্জ করব আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন প্রফেসরও পাবেন না যারা তাদের সাথে তর্কে পারবে। কিন্তু তারা ওখানে পড়ে আছেন, বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। এটা তাদের জন্য খারাপ, আমাদের জন্যও খারাপ।

প্রখ্যাত দার্শনিক ড. সলিমুল্লাহ বলেন, পশ্চিমবঙ্গে মাদরাসা সংস্কার হয়েছে। সেখানে হিন্দু ছেলেরা পড়ে। আমাদের এখানে একটা কথা অকপটে স্বীকার করতে হবে। আমাদের একটা অভিন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা দরকার। মাদরাসার ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা, তাহলে প্রশ্ন হলো আমরা যে ‘এ’ লেভেল এবং ‘ও’ লেভেলকে স্বীকৃতি দিচ্ছি সেখানে সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে না কেন, কারণ সেটা আন্তর্জাতিক সিলেবাস। আমাদের মনে রাখতে হবে, মাদরাসার সিলেবাসটাও আন্তর্জাতিক। এটা ভিন্ন ভূ-আন্তর্জাতিক। এটা ভারতীয়, এটা সউদী আরবীয় এবং অন্যান্য দেশেও। তারা মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুসরণ করে এবং দেওবন্দকেও অনুসরণ করে। আসল কথা হচ্ছে তারা সেখান থেকে কোনটা অনুসরণ করে, ধর্মীয় শিক্ষা। কিন্তু সউদী আরবের বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এখানে তারা সেটা করছে না। এজন্য তারা বলছে তারা একটা ফ্যাকাল্টি। এটা ফ্যাকাল্টি অব থিওলজি। ফ্যাকাল্টি অব রিলিজিয়াস স্টাডিজ। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি আরবি, ধর্মতত্তে¡ মাস্টার্স ডিগ্রি দিতে পারেন, তাহলে সেখানে তাদেরকে দিব না কেন? বিসিএস পরীক্ষার বিষয়ে প্রশ্ন আসে, এই পরীক্ষায় যে কোনো বিষয়ে গ্রাজ্যুয়েটরা অংশ নিতে পারবেন। সেখানে আপনি যদি বিদ্যা অর্জন না করেন, তাহলে পাস করতে পারবেন না। বাংলা, ইংরেজি, গণিতেও পাস করতে হবে।

মাদরাসা শিক্ষা যে নানা দিক থেকে আমাদের অন্যান্য শিক্ষা থেকে ভালো তার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমার সৌভাগ্য হয়নি মাদরাসায় পড়ার, কিন্তু যারা মাদরাসায় পড়েছেন তাদের অনেকের সাথে আমি আলাপ করেছি। যেমন লজিক বলে একটা শাস্ত্র আছে। আমরা কোনো লজিক না পড়ে বিএ পাস করতে পারি। এইচএসসিতে এসে একটা লজিক শাস্ত্র পড়ি। সেটা অপশনাল। না হলে না নেই। তাতে ডিটাকটিভ-ইনডাকটিভ আছে। আরবিতে এটাকে বলে মানতেক। মানতেক মানে লজিক। এজন্য কথা বলাটাকেও লজিক বলে।

আরবিতে আছে, আল ইনসানু হাই ওয়ানুন নাতেকুন। মানুষ যুক্তিশীল প্রাণী। এটা কার বক্তব্য? এরিস্টটলের বক্তব্য। আমাদের মাদরাসায় এখনো প্লেটো পড়ানো হয় আফলাতুন নামে। এখানে আরস্তু নামে এরিস্টটল পড়ানো হয়। আরো আসেন, সেখানে নিউপ্লাটোনিকদেরকেও পড়ানো হয়। কিন্তু তারা হেগেল, মার্কসদেরকে পড়ান না। আমি তাদেরকে বলি, ইউরোপীয়দের দর্শনকে তো আপনারা পড়ান, তথাকথিত ইসলামী দর্শন বলে যেটা আছে সেটা গ্রিক দর্শন ছাড়া আর কিছুই নয়। তাতে আল কিন্দি নবম শতাব্দীতে ইসলাম প্রচারের দুইশ বছর পরে প্রথম আরবদের দার্শনিক হলো আবু ইউছুফ আল কিন্দি। তার একটু পরে আসে ইবনে সিনা এবং ইবনে রুশদ। এরা হচ্ছে মুতাজিলা দার্শনিকদের পরবর্তী। এরা যে দর্শন প্রচার করেছে সেটাই ইউরোপে গেছে। সেটাই আমরা ধুয়ে পড়ছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন পড়া কি আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জাহান্নামে গেছে, কারণ আমরা লজিককে বাধ্যতামূলক করিনি। আপনি ফ্রান্সের শিক্ষা ব্যবস্থা দেখেন, ফ্রান্সে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত দর্শন বাধ্যতামূলক। আমি তো সেটা অনুসরণ করছি না। কিন্তু শুধু মাদরাসার উপরই আমার সমস্ত ঘৃণা আমি ঢেলে দিচ্ছি। ঘৃণার রাজনীতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। মাদরাসাকে সংস্কার করতে হবে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি দরকার আত্মসংস্কারের।

একই টকশোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. আখতারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে বাস্তবতা হলো, ১৪ হাজার মাদরাসা আছে যারা মূল ধারার সাথে বিচ্ছিন্ন এবং এতে ১৪ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এসডিজিতে বড় লক্ষ্যমাত্রা হলো একটি ইনক্লুসিভ সমাজ বিনির্মাণ। সমাজের কোনো একটি অংশকে বিচ্ছিন্ন রেখে ভালো সমাজ বিনির্মাণ করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই একটা বাস্তবতা উপলব্ধি করার জন্য। এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে যে বিদ্যা তারা গ্রহণ করছে তার প্রায়োগিক দিক সমাজে খুব কম। নিয়োগ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এগুলো গ্রহণ করত না। তারা মূল সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। যদিও তারা কোরআন-হাদীস ইত্যাদি বিষয়ে ভালো শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। তাদেরকে সমাজের মধ্যে একীভূত করার প্রয়াস প্রশংসনীয়। তার একটি ইনক্লুসিভ সমাজের অংশ হলো। তাদের এতদিন কোনো রশিই ছিল না। এখন তাদের সাথে যোগসূত্রের যে সূচনা হলো, সেই কৌশল হয়তো কালক্রমে প্রণীত হবে। এর আগে যখন এগুলো নিয়ে কথা বলতাম তারা কোনোভাবে শুনতে চায় না। স্বতন্ত্রতা, ঐতিহ্য নষ্ট হবে এজন্য। অনুদান-দান গ্রহণ করত না। নিজেদের অর্থে পরিচালিত হতো। তিনি বলেন, ইসলামি আরবি শিক্ষা ও ইসলামি ব্যাংকিং একটা বাস্তবতা। ইসলামি ব্যাংকিং যখন প্রথম শুরু হয়েছিল তখন এটা কেউ গ্রহণ করেনি। কিন্তু এখন সারাবিশ্বে এটা গৃহীত হচ্ছে। ওদের (কওমী) শিক্ষা ধারায় চারটা স্তর আছে। এগুলো হলো হিদায়া (এসএসসি), সরে বেকিয়া (এইচএসসি), মিসকাত (অনার্স), দাওরা হলো কামিল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এগুলোর সময়কাল কতটুকু, কোন সময় পড়ে, এদের সিলেবাস অনুমোদন করে কারা, তাদের দক্ষতা কতটুকু। এই বিষয়গুলো মূলত ভালো ব্যবস্থাপনার জন্য এক সময় হয়তো দেখতে হবেই। নাহলে হয়তো প্রশ্নের মুখে পড়বে। এরাই হয়তো ঠকবে। তবে এদের ইন্টিগ্রেট করার যে প্রক্রিয়া সেই মহৎ কাজটা কিন্তু শুরু হয়ে গেল। সেটি হওয়াটাই হলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আগামীতে তারা নিজেরই আধুনিক বিষয়গুলো গ্রহণ করবে নিজেদের প্রয়োজনেই। আমাদের এখনে মাদরাসা শিক্ষায় সংস্কারের পর্বগুলো এখন শুরু হয়েছে। আলেয়া ধারায় পাঠ্য বইয়ে স্কুল-কলেজের মতো একই বিষয় পড়ানো হয়, একই বই আছে। যেটা জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যবই বোর্ড (এনসিটিবি) তৈরি করছে। ফলে অনেক সংস্কার শুরু হয়েছে।

মাদরাসা শিক্ষার্থীরা বাস্তবতা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে। কওমীদের ক্ষেত্রে এটা শুরু হয়েছে। ইন্টিগ্রেটেশন মানে এই নয়, যে মূল সমাজের মধ্যে তারা একীভূত হয়ে যাবে। তাদের নিজস্ব অনেক বৈশিষ্ট্য আছে, স্বাতন্ত্র্যতা আছে, এটা যদি তাদের মধ্যে না রাখি, তাহলে কালচারাল হেজিমনি হয়ে যাবে। তাদেরকে নিজস্ব ঘরানার জন্য স্পেস দিতে হবে। সুত্র: ইনকিলাব।

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ