আশরাফ উদ্দীন খান
আলেম, লেখক ও গবেষক
বাংলাদেশে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে কওমি মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা একটি উল্লেখযোগ্য ধারা। নিজস্ব শিক্ষানীতি, উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি নিয়ে এই শিক্ষা বিরাজমান দেশের প্রতিটি অঞ্চলে।
১৮৬৬ সালের তৎকালীন পাক-ভারত উপমহাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের প্রভাবে, শুধুমাত্র ধর্মপ্রাণ মুসলমানের আর্থিক ও নৈতিক সহযোগিতা গ্রহণ করে এই ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার প্রথম প্রতিষ্ঠান ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ মাদরাসার গোঁড়া পত্তন হয়।
পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট মানুষের সামনে বহির্গমনের পথ ও কর্ম-কৌশল নির্ধারণ করে থাকে, তাই তদানীন্তন পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে ‘পরাধীন’ মুসলিম উম্মাহ কিভাবে তাদের দ্বীন-ইমান ও দ্বীনী শিক্ষাকে টিকিয়ে রাখতে পারেন সেই চিন্তা সামনে রেখেই কওমি মাদরাসার মাধ্যমে একটি শিক্ষা ব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল।
পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সাথে কর্ম-পদ্ধতি ও কৌশল পরিবর্তন করা জরুরী –এটাও বুদ্ধি ও যুক্তির দাবী।
‘কওমিমাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল) এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্ট্যাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান আইন, ২০১৮’ এর মাধ্যমে দাওরায়ে হাদিসের শিক্ষার্থীরা ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি সাহিত্য- এ দুই বিষয়ে মাস্টার্সের মর্যাদা পাবে।
সন্দেহ নেই যে কওমি মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্যে এটি একটি ইতিবাচক সংবাদ, যা দীর্ঘ দিনের ফিকির ও মোজাহাদার মাধ্যমে অর্জিত হল এবং আইনটি বাস্তবায়নে অনুমদিত হল।
যে কোন নতুন পরিস্থিতি, উদ্যোগ, পরিকল্পনা একদিকে যেমন আশা ও সম্ভাবনা দ্বারা ঘিরে থাকে, ঠিক তেমনি তার বিপরীতে তাকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকের মনেই দ্বিধা, দুঃশ্চিন্তা ও আতংক বিরাজ করে।
কওমি মাদরাসার স্বীকৃতির বিষয়ের সরকারের আজকের সিদ্ধান্ত এই প্রবণতার বাইরের কিছু নয়। স্বীকৃতি প্রদানের আগে ও পরে, স্বীকৃতি বিষয়ে যে মনোভাব আমাদের মধ্যে সামগ্রিকভাবে বিরাজ করে আসছে তা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়-
স্বীকৃতির জন্যে আন্দোলন করা বা স্বীকৃতি গ্রহণ করা একটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত, যার মাধ্যমে কওমি মাদরাসার মূল দর্শন, উদ্দেশ্য ও চেতনা থেকে দূরে সরে যাওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়ে যায়।
স্বীকৃতি আদায় করা ছাড়া কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারে না।
স্বীকৃতি অর্জন বর্তমান প্রেক্ষাপটের জন্যে একটি কৌশল ও উপকরণ যার মাধ্যমে এই শিক্ষা ব্যবস্থার প্রভুত উন্নয়ন অর্জন সম্ভব হতে পারে, যদি সঠিকভাবে এর ব্যবহার করা যায় ও ক্ষতিকর দিকসমূহ সতর্কতার সাথে রুদ্ধ করা যায়।
প্রথম দুই চিন্তাধারা হচ্ছে সম্পুর্ণভাবে প্রান্তিক চিন্তাধারা, যেখান বাস্তবতার চেয়ে একদিকে যেমন অধিক আতংক সামনে রাখা হয়েছে অন্যদিকে অধিক বেশি প্রত্যাশা পোষণ করা হয়েছে।
এই দুই প্রান্তিক চিন্তাকে দুই প্রান্তে রেখে যদি বাস্তবতার আলোকে চিন্তা করা যায়, তাহলে তৃতীয় চিন্তাধারাকেই যুক্তি ও বাস্তবতার অধিকতর নিকটবর্তী বলে মনে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার একটি অব্যাহত প্রচেষ্ঠা।
যুগ, পরিবেশ, মানসিকতার পরিবর্তনের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে পরিবর্তন সাধিত হয়ে থাকে, এবং যুগের দাবী ও চাহিদা সঠিক ভাবে পূরণ করার জন্য, শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করা একটি জরুরি বিষয়।
এই দায়িত্ব ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক সহ সকলের। তাই কওমি মাদরাসার অভিভাবকতুল্য সংস্থা ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়ার’ নিকট শিক্ষার্থী হিসাবে ও মুসলিম উম্মার সদস্য হিসাবে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি ও সদুর–প্রসারী।
ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্তকে আমি এই ভাবে চিন্তা করি যে, কারো হাতে সংরক্ষিত পুজি বা মূলধন রয়েছে, যেটাকে তিনি বিচক্ষণতার সাথে ব্যবহার করার মাধ্যমে যেমন লাভবান হতে পারেন, ঠিক তেমনি সেটাকে কাজে না লাগিয়ে যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় ফেলে রাখতে পারেন।
কওমি মাদরাসার শিক্ষার সরকারি স্বীকৃতি না থাকার কারণে যে সীমাবদ্ধতা ছিল, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সেই সীমাবদ্ধতা উঠে যাওয়ার ব্যবস্থা হল। এরপর আমাদের অবস্থা দুইয়ের একটি হতে পারে এটা নিয়েই সন্তুষ্ট হয়ে থাকা অথবা এটাকে ভিত্তি বানিয়ে এই সম্ভাবনাকে আরো অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
একটি শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, উম্মতের মধ্যে কি ধরনের মৌলিক পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব সেটা নতুন করে বলার কোনো দরকার নেই।
যারা শিক্ষক তাদের বলা হয়ে থাকে ‘মানুষ তৈরির কারিগর’, শিক্ষা ব্যবস্থা হচ্ছে মানুষ তৈরির মাধ্যম, আর যারা শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে থাকেন তারা মানব তৈরির ব্যবস্থার নেতৃত্ব প্রদান করে থাকেন।
যে কোন আদর্শ, ব্যবস্থা, মূলনীতির দুটি ভিন্ন ভিন্ন দিক বা উপাদান থাকে, এক. অপরিবর্তনীয় উপাদান, দুই. নমনীয় উপাদান যা যুগ, সমাজ ও বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে পরিবর্তনের আওতায় থাকে।
কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেও এই দুই ধরনের উপাদান বিদ্যমান। এখানে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যাদের বাদ দিলে বা পরিবর্তন ও পরিমার্জন করতে গেলে সেটাকে আর কওমি শিক্ষা বলার বা নামকরণের কোনো উপায় ও সুযোগ থাকে না, আর দ্বিতীয় কিছু উপাদান রয়েছে যাকে পরিবর্তন ও সংস্কার সাধন না করলে এই শিক্ষাকে সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করার পরিবেশ সৃষ্টি হয় না।
স্থির ও অকাট্য উপাদানের পরিবর্তনের চিন্তা যেমন অন্যায় ঠিক তেমনি নমনীয় উপাদানের সংস্কার না করার চিন্তার করা সম পর্যায়ের অন্যায়, কারণ উভয় অবস্থানের কারণেই মূল বিষয়ের ক্ষতি হয়ে থাকে।
কওমি মাদরাসার ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর সার্বিক ভবিষ্যৎ এই শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে জড়িত। সার্বিক ভবিষ্যৎ বলার উদ্দেশ্য এটাই, শিক্ষা ব্যবস্থা শুধুমাত্র শিক্ষার সংকীর্ণ ধারণা নিয়ে কাজ করে না, বরং প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনের সকল দিকের গঠন ও উন্নতি নিয়ে কাজ।
শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, মেধা, চিন্তার উৎকর্ষতার পাশাপাশি তাদের শারীরিক, মানসিক, আখলাক, চরিত্র, কর্মযোগ্যতা, সৃজনশীল শক্তি, নেতৃত্বের গুণসহ যাবতীয় মানবীয় গুণ ও অবস্থার উন্মেষ কি ভাবে ঘটানো যায় তা নিয়ে ফিকির করে থাকে, এবং কওমি মাদরাসার ফিকির আরো অনেক গভীর।
কারণ এটা একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের দুনিয়া নিয়ে ফিকির করে আরেক দিকে বরং সেটাই হচ্ছে কওমি মাদরাসার মূল ‘রিসালাহ’ তাদের ও উম্মতের আখেরাত ও ধর্মিয় জীবন নিয়ে ফিকির করে থাকে। কাজেই এই মাদরাসার দায়িত্বের পরিধি অনেক বিস্তৃত, অনেক গভীর।
এই অঞ্চলের মুসলমানদের শিক্ষা ব্যবস্থার ইতিহাস অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, নির্যাতন, নিপীড়ন দ্বারা বেষ্টিত। ইংরেজদের হাতে ১৭৫৭ সালে (১৭৫৭-১৯৪৭) এই অঞ্চলের মানুষদের স্বাধীনতা হরণ হওয়ার পরে, শিক্ষা ব্যবস্থার ইতিহাস লিপিবদ্ধ করতে গেলে যে কয়টি বিশেষ পর্ব নির্ধারণ করতে হয় বা আমার কাছে উল্লেখযোগ্য বলে মনে হয়েছে। আমি তা তুলে ধরছি।
কলকাতা আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ১৭৮০ সাল, দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ১৮৬৬ সাল বাংলাদেশে কওমি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ১৯০১ সাল, এটা ছিল খালেস ইসলামী শিক্ষার ইতিহাসের ধারা, এর বাইরে এই অঞ্চলের মুসলমানদের শিক্ষার ইতিহাস হিসাবে ১৮৭৭ সালের আলীগড় মুসলিম স্কুল ও পরে বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯২১ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা ছিল উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
তবে এই সম্পর্কে এখানে আমরা কোন আলোচনা করছি না। ১৮১৩ সালে বৃটিশ পার্লামেন্টে ভারতীয় শিক্ষানীতি সম্পর্কে আলোচনা উঠে এবং একটি শিক্ষানীতি ঘোষিত হয়।
উক্ত শিক্ষানীতির পরিপেক্ষিতে হেন্টিংস যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তা থেকে মাদ্রাসা সম্পর্কে তার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠে।
কওমি মাদরাসার ইতিহাস দেওবন্দ আন্দোলন
পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের ব্যাপারে কমিটি যে প্রস্তাব আনয়ন করেছে, তাও গভর্ণর অবান্তর বলে উড়িয়ে দিতে চান না। তবে তা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য প্রয়াস, কারণ মুসলমানদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা বহুকাল ধরে চলে আসছে, এই শিক্ষার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য তাদের মনপ্রাণকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।
তাই এখন এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা ঠিক হবে না, তবে আস্তে আস্তে যখন পাশ্চাত্য শিক্ষার উপকারিতা ও গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের মানসিকতার ওপর প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব হবে তখন তা কার্যকরি করা কঠিন হবে না। (বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষা ও সমাজ জীবনে তার প্রভাব, ড. আব্দুস সাত্তার, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।
অন্যদিকে বিংশ শতাব্দীর গোড়াতে ১৯১০ সালে মাওলানা আবু নাছর ওহীদ মাদরাসা শিক্ষার সাথে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় করে নিউ স্কীম নামে একটি নতুন শিক্ষা কাঠামো ও পাঠ্যসূচি সরকারের নিকট পেশ করেন। মাদরাসা শিক্ষার পাঠ্যক্রমের সাথে সাধারণ শিক্ষার পাঠ্যক্রমের সমন্বয় ঘটে।
১৯১৪ সালের ৩রা জুলাই (৪৫০ নং পত্রে) সরকার এই নিউ স্কীম শিক্ষাধারা অনুমোদন করেন। সরকারি পত্রের ভুমিকায় বাংলাদেশ তথা ভারত বর্ষের মুসলমানদের শিক্ষা সম্পর্কিত একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বর্ণিত হয়।
এতে বলা হয় রাজত্বের প্রথম অবস্থায় মুসলমানগণ তাদের সাহিত্য ও আইনের উচ্চ প্রশংসা পত্র লাভ করে রাজকর্মে উচ্চ স্থান অধিকার করেছিল, কিন্তু তারা তখন ইংরেজি শিক্ষার অবশ্যকতা উপলব্ধি করতে পারেনি।
ইংরেজ রাজত্ব স্থাপনের প্রথম তিন-চতুর্থাংশ শতাব্দী পর্যন্ত ইংরেজি শিক্ষিত যুবকগণ রাজকাজে এবং আইন ব্যবসায় অগ্রগণ্য বলে বিবেচিত হতো। সে সময় মুসলমানগণ তাদের নিজ ভাষা ত্যাগ করতে অনিচ্ছুক ছিল এবং প্রায় এক পুরুষ পর্যন্ত তাদের নিজ সাহিত্য ও আইন সম্পর্কে ভালবাসা ত্যাগ করে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা করতে যায়নি।
এই সুযোগে বাংলার হিন্দুদের মুসলমানদের মত কোন ঐতিহাসিক কোন স্মৃতি ছিল না। তাই তারা সময় ক্ষেপণ না করে ইংরেজি শেখা শুরু করে নিজেদেরকে রাজকার্য ও আইন ব্যবসায়ের উপযুক্ত করে তুলেছিল। হিন্দুদের কাছে এটা নিছক এক বিদেশী ভাষার পরিবর্তে আরেকটি বিদেশী ভাষার পরিবর্তন মাত্র।
মাদরাসা শিক্ষা অধ্যাদেশ ১৯৭৮ বনাম দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদান আইন ২০১৮
আলিয়া মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে, মাদ্রাসা শিক্ষা অধ্যাদেশ ১৯৭৮ নামে একটি প্রজ্ঞাপন ২রা মার্চ ১৯৭৮ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটে বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রজ্ঞাপনের ধারা অনুযায়ী ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড’ নামে একটি ‘স্বায়ত্তশাসিত শিক্ষা বোর্ড’ প্রতিষ্ঠা করা হল। (বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষা)
সামনে আমরা দেখবো ‘মাদরাসা শিক্ষা অধ্যাদেশ ১৯৭৮’ এর ক্ষমতা বলা মাদরাসা কর্তৃপক্ষ কিভাবে ধীরে ধীরে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সাজানোর পরিকল্পনা শুরু করে ও ধীরে ধীরে সেই পথে তারা অগ্রসর হয়।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা জরুরি, এই তুলনার মাধ্যমে এটা মনে করার কোন যুক্তি নেই যে কওমি মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থাকে আমরা আলিয়া মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থায় রুপান্তর করার কথা বলছি।
এমন মনে করার কোন যুক্তি নেই, কারণ কওমী শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমরা সবসময় আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে ও স্বতন্ত্র শিক্ষা ব্যবস্থা হিসাবেই মনে করে থাকি। এখানে শুধুমাত্র দেখার বিষয় এতটুকু যে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর সুযোগকে অন্যেরা কিভাবে কাজে লাগিয়েছে এবং এই কাজে লাগানোর পথে তাদেরকে কিভাবে সামনে আগ্রসর হয়েছে।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড স্বায়ত্ব শাসন লাভের পর একাডেমিক সিদ্ধান্তসমূহ
মাদরাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করে ঢেলে সাজানোর জন্যে মাদরাসা শিক্ষার বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব পেশের জন্য ‘মাদরাসা শিক্ষা অধ্যাদেশ ১৯৭৮’ এর ক্ষমতা বলে বিভিন্ন কমিটি, সাব-কমিটি গঠন করা হয়।
১৯৪৭ সালে থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত দাখিল পরীক্ষার মান ছিল সাধারণ শিক্ষার ৪র্থ শ্রেণী, ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত দাখিল পরীক্ষার মান ছিল ৬ষ্ট শ্রেণী। ১৯৭৭ সাল থেকে দাখিল পরীক্ষার মান ছিল ৮ম শ্রেণী। ১৯৮৫ সাথে থেকে দাখিল পরীক্ষার মান সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমিক পরীক্ষার সমমানে উন্নীত হয়।
মাদরাসা শিক্ষার স্তর বিন্যাস
মাদরাসা শিক্ষাকে প্রাথমিক (ইবতিদায়ী), নিম্নমাধ্যমিক (৮ম শ্রেণী) ও মাধ্যমিক (১০ শ্রেণী)কে দাখিল স্তরে, উচ্চমাধ্যমিক মানের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীকে আলিম স্তরে, স্নাতককে ফাজিল স্তরে ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীকে কামিল স্তরে বিন্যাস করা হয়।
১৯৮৫ সাল থেকে মাদরাসা শিক্ষা দাখিল অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত একই শিক্ষা এবং ৯ম শ্রেণী থেকে দাখিল সাধারণ, দাখিল বিজ্ঞান, দাখিল মুজাব্বিদ ও দাখিল হিফজুল কুরআন নামে ৪তি বিভাগ প্রবর্তন করা হয়।
একইভাবে আলিম সাধারণ, আলিম বিজ্ঞান ও আলিম মুজাব্বিদ-এ-মাহির নামে তিনটি বিভাগ প্রবর্তন করা হয়। ফাজিল শ্রেণীতে ফাজিল সাধারণ ও মুজাব্বিদ-এ-ফাজিল নামে দুটি বিভাগ প্রবর্তন করা হয়, কামিল শ্রেণীতে কামিল হাদীস, কামিল তাফসীর, কামিল ফিকাহ, কামিল আদব ও মুজাব্বিদ-এ-কামিল নামে মোট পাঁচটি বিভাগ প্রবর্তন করা হয়।
শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি তৈরির প্রাথমিক পদক্ষেপসমূহ
পঠিতব্য সব পুস্তক ইসলামী ভাবধারায় প্রণীত হবে। আরবী সাহিত্য পুস্তক আধুনিক কায়দায় রচিত হবে। যতদিন পর্যন্ত বোর্ডের পক্ষ থেকে পুস্তক প্রণীত বা অনুমোদিত না হয়, ততদিন টেক্সট বুক বোর্ডের বই পাঠ্য হিসাবে চালু থাকবে।
১৯৭৯ সালের ৪ঠা জুলাই বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড স্বায়ত্ব শাসন লাভ করে। স্বায়ত্ব শাসন লাভের পরে মাদরাসা শিক্ষা উন্নয়নের দ্বার উন্মুক্ত হয়। ১৯৭৫ সালে তৃণমূল পর্যায়ে সংস্কারের ধারাকে অব্যাহত রেখে ১৯৮৪ সালে একটি নতুন পাঠ্যসূচি সরকারের অনুমোদন লাভ করে।
যার ফলে শিক্ষার ইবতিদায়ি ৫ বছরে ৫ শ্রেণী, দাখিল ৫ বছরে ৫ শ্রেণী হিসাবে সাধারণ শিক্ষার ১০ শ্রেণীর মানে দাখিল ১০ শ্রেণীর পাঠ্যসূচি নির্ধারিত হয়।
১৯৮৫ সালে দাখিল পাস করা ছাত্র-ছাত্রীরা সাধারণ শিক্ষার এস. এস. সি. পাসের সমমান লাভ করে। ১৯৮৪ সালে দাখিল পাস করা ছাত্র-ছাত্রীরা ১৯৮৫ সালের দাখিল পরিক্ষার্থীদের সাথে শুধু বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে দাখিল বিশেষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়।
অনুরুপভাবে ১৯৮৬ সালে আলিক পাস ছাত্র-ছাত্রীরা ১৯৮৭ সালের নিয়মিত আলিম পরিক্ষার্থীর সাথে শুধু বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে আলিম বিশেষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে তদানীন্তন রেজিস্টার আব্দুল আজিজ স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়, এতদ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যাইতেছে যে, বাংলাদেশ মাদরাসা বোর্ড হইতে যাহারা ১৯৮৫ সালে দাখিল স্পেশাল পরীক্ষায় (বাংলা ও ইংরেজি) পাস করিয়াছে এবং ১৯৮৭ সালে আলিম স্পেশাল (বাংলা ও ইংরেজি) পরীক্ষায় পাস করিয়াছে তাহাদের সার্টিফিকেট সাধারণ দাখিল ও সাধারণ আলিম সার্টিফিকেটের সমতুল্য বলিয়া গণ্য হইবে।
মাদরাসা শিক্ষার প্রশাসনিক সংহতির জন্যে আরো সুপারিশ করা হয় যে, ফাজিল ও কামিল মাদরাসাসমূহ অবিলম্বে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা দরকার। এই উদ্দেশ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি এফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্সে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে।
এই ব্যবস্থায় নতুন মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন আবশ্যক হবে। ফাজিল ও কামিল শ্রেণীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর সমমান দেওয়ার জন্য মাদরাসা বোর্ড কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়।
সরকার মাদরাসা শিক্ষার সমমানের বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করার জন্য তা মঞ্জুরি কমিশনে পাঠান।
ইতিপুর্বে পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন কড়াকড়ি বা ধারাবাহিকতা ছিল না, ফলে অনেকেই আলিয়া নেসাবের শ্রেণীসমূহের ধারাবাহিকতা রক্ষা না করে সরাসরি আলিম, ফাজিল বা কামিল পরীক্ষায় অংশ নিত।
অতঃপর বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা ও মাদরাসার শিক্ষিতদের সনদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে কয়েক বছর আলাপ-আলোচনার পরে ৬/৬/১৯৮৮ তারিখে বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ৭১তম সভায় একটি বিশেষ ‘মানবিক সিদ্ধান্ত’ গৃহীত হয়।
ফলে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত আলিম পরীক্ষা ব্যতীত ফাজিল ও ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দাখিল পরীক্ষা ছাড়া আলিম পরীক্ষার সনদ বৈধ বলে বিবেচিত হবে। (বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষা...)
আল-হাইয়াতুল উলইয়ার কাছে আমাদের প্রত্যাশা
প্রথমেই একটি ধারণা এখানে স্পষ্ট করার চেষ্ঠা করতে চাচ্ছি, যেটা হচ্ছে মূল্যবোধ বা মূলনীতিকে ব্যবহারিক রুপদান করার ধারণা। মুসলিম উম্মাহ হিসাবে আমাদের সামনে বিভিন্ন মূলনীতি ও মূল্যবোধ রয়েছে, যেগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের জীবন যাপনের জন্যে সঠিক ও উপযুক্ত পদ্ধতি নির্ধারণ করা।
এই জন্যে আমাদের সেই সকল মূলনীতি ও মূল্যবোধকে দৈনন্দিন কর্মে ও আচরণে রুপান্তর করার জন্যে চিন্তা ও ইজতিহাদের দরকার পরে। সুদের লেনদেন ইসলামি শরিয়তে হারাম, সুতরাং সুদ থেকে মুসলিম উম্মাহকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে।
অন্যদিকে ব্যবসা শরিয়তে হালাল করা হয়েছে, অর্থনৈতিক উন্নতির জন্যে হালাল উপায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হয়। সুদ হারাম এটা একটি ইসলামী মূলনীতি। এই মূলনীতি বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পদ্ধতি, কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে।
আজকে ইসলামি অর্থনীতির আকৃতিতে আমাদের সামনে জ্ঞান ও কৌশলের যে বিশাল রাজ্য গড়ে উঠেছে, সন্দেহ নেই কিছু সংখ্যক মুজতাহিদ গবেষক মুসলিমের নিরবচ্ছিন্ন গবেষণা, ইজতিহাদের মাধ্যমেই সেটা গড়ে উঠেছে। আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা অনুযায়ী পবিত্র কুরআনের হিফাজতের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু দেখা যায় কুরআন অবতীর্ণের সেই যুগ থেকে ও পরবর্তীতে সাহাবায়ে কারাম রা. এর যুগ থেকেই এই মূলনীতির বাস্তবায়ন কিভাবে হতে পারে সেটা নিয়ে চিন্তা, ইজতিহাদ করা হয়েছে। হিফফুল কুরআন, তাদভিনে কুরআনের মত বিভিন্ন পদ্ধতি উম্মতের সামনে এসেছে।
সেই ঘোষণার বাস্তবায়নের জন্যে উম্মতের মধ্যে কুরআনের হিফজ করার আগ্রহসহ আরো বিভিন্ন পদ্ধতি চালু হয়েছে। বিচার বিভাগের কথা ধরা যাক, ইসলামি শরিয়ত এই বিষয়ে মৌলিক নীতিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেই মূলনীতির আলোকে বিচার বিভাগের পদ্ধতি ও কৌশল হিসাবে কত অসংখ্য ইজতিহাদ ও গবেষণা হয়েছে তার কোন অনুমান করা যাবে না। এই সবকিছু হচ্ছে মূল্যবোধ ও মূলনীতিকে ব্যবহারিক রুপদান করার ধারণা।
একটি ইসলামি মূলনীতি হচ্ছে মানবিক সহযোগিতার গুণ। অসহায়কে সাহার্য করা একটি ইসলামি মূল্যবোধ, যে বিষয়ে ইসলাম সব সময় গুরুত্ব প্রদান করেছে। নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার গুণ সৃষ্টি করা, অভাব ও বিপদগ্রস্তদেরকে সহযোগিতা করা একটি অতি গুরুত্বপুর্ণ ইবাদত।
অতীতে এটা সম্ভব ছিল অতি সরলভাবে ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে, কিন্তু এখন ব্যক্তিগত পর্যায়ের সাথে সাথে –সমস্যার গভীরতার দিকে খেয়াল করে, যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে- সামস্টিক পর্যায়ে এই গুনটি উম্মতের মধ্যে কার্যকর রাখা অতি জরুরী।
সামষ্টিক পর্যায়ে এই মূলনীতি বাস্তবায়নের জন্যে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে কাজ করা অতি জরুরী। তাই এখানে চিন্তা-ইজতিহাদের মাধ্যমে যুগ ও সমস্যার আলোকে কর্ম কৌশল নির্ধারণ করা জরুরী।
অন্যদিকে মানুষ ‘ভোক্তা জীব’ অর্থাৎ মানুষ যেমন তার প্রয়োজন পূরণ করতে ভোগ করে থাকে, ঠিক তেমনি বিভিন্ন ব্যবস্থা, পদ্ধতিও মানুষ ভোগ করে থাকে। তাই দেখা যায় সময়ের ব্যবধানে মানুষের সামনে বিভিন্ন পুরাতন পদ্ধতির কার্যকারিতা হ্রাস পেতে থাকে, এবং সেই স্থানে তাকে নতুন নতুন পদ্ধতি আবিস্কার করতে হয়। এখানেই চিন্তা ও ইজতিহাদের দরকার পরে।
আমাদের মূল বিষয়ের সাথে এই বিষয়ের অবতারণার উদ্দেশ্য ছিল এই দিকে ইঙ্গিত করা যে, চিন্তা-ফিকির ও ইজতিহাদের মাধ্যমে মূলনীতিকে মূলনীতির পরিধি থেকে বের করে উম্মতের বাস্তব জীবনে সেটা কার্যকর করা হয়ে থাকে এবং এর মাধ্যমে সেই মূলনীতির ফলাফল উম্মতের জীবনে প্রকাশ পেতে থাকে।
এই সকল বিষয়ে ইজতিহাদ ও গবেষণা যত বিস্তৃত হয়ে থাকে, সেই মূলনীতির পরিধি তত বেশি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ধরে নিলাম কওমি মাদরাসা থেকে অর্জিত সনদ এখন সরকারের কাছে ‘স্বীকৃত একটি সনদ’।
এই অবস্থা বা বাস্তবতাকে আমরা আমাদের বাস্তব অবস্থার আলোকে ও পরিবর্তিত সমাজ ও বিশ্ব ব্যবস্থাকে সামনে রেখে যত বেশী কার্যকর করার চিন্তা করবো, ‘স্বীকৃতি’ থেকে ঠিক তত বেশী আমরা উপকৃত হত, আমাদের শিক্ষার্থীরা তত বেশী উপকৃত হবে, এবং জাতি এ থেকে তত বেশী উপকৃত হবে।
আর যদি তা না করে স্বীকৃতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট হয়ে বসে থাকি, তাহলে একটি বিশাল সম্ভাবনা থেকে আমরা মাহরুম রয়ে গেলাম।
এই অঞ্চলের মুসলমানদের শিক্ষা ব্যবস্থার ইতিহাসের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায় যে, আমাদের ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রায় সবসময় যুগ, সমাজ, সরকারের সাথে ‘চেষ্ঠা-তদবির’ করেই টিকে থাকতে হয়েছে। ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থার ‘রুহ’ ও স্বতন্ত্রতা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত ও ষড়যন্ত বারবার হয়েছে।
শিক্ষা ব্যবস্থা একটি অব্যাহতভাবে পরিবর্তনশীল ব্যবস্থা। এই পরিবর্তন যখন নিজেদের মধ্য থেকে উত্থাপিত হয় তখন নিজেদের স্বার্থ ও উপকারিতার দিকে খেয়াল রাখা সহজ হয়, আর যখন এটা বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয় তখন সেখানে অন্যদের স্বার্থের দিকে অধিক খেয়াল রাখা হয়।
ঐতিহাসিকভাবে ও সেই সাথে সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও যুগের চাহিদার আলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করলে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবীর প্রতিধ্বনি শুনা যায়।
অতীতে যেমন ওল্ডস্কীম ও নিউস্কীম নামে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, আমরা সে ধরনের কোনো পরিবর্তনের পক্ষে নই। বর্তমান প্রচলিত নিসাবে-তালিমের সাথে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার দুই-একটা পাঠ্যবই সংযোজন করার মাধ্যমে বা পুরাতন কিতাবের স্থানে নতুন কিতাব চালু করার মাধ্যমে যে সংস্কারের ধারা চালু হয়েছে আমরা সেই সংস্কারের পক্ষেও নয়, বরং আমরা চাই ইসলামি শিক্ষা দর্শন ও শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের মর্মকথা সামনে রেখে একটি সামগ্রিক সংস্কার, সেটা কখনোই দুই-একটা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সম্ভব হবে না।
বরং সেই জন্যে দরকার সম্মিলিত চিন্তা-ফিকির ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার। আল-হাইয়াতুল উলইয়ার কাছে আমাদের ও উম্মতের আজকের প্রত্যাশা সেটাই।
কাজেই এখানে লক্ষ্যণীয় হচ্ছে সনদের স্বীকৃতির পরেও আরো কোনো ধরনের সীমাবদ্ধতা সামনে থাকলে সেটা দূর করার ফিকির ও পরিকল্পনা করা এবং আমাদের উচিত হবে এই সম্ভাবনাকে আরো ব্যাপক ভাবে কি ভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে সেই পথে অগ্রসর হওয়া।
শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সুযোগ ও কর্ম সুযোগ এর মাধ্যমে আরো বেশি বিস্তৃত ও কার্যকর করার ফিকির করা।
আমিনুল ইসলাম মামুন; শোলাকিয়া থেকে কোটি হৃদয়ে
যুক্তরাজ্যের স্কুলগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে হিজাব