১০ মে ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামে ৬৮ হাজার কুরআনি মক্তব প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষাবোর্ড। এরপর আপন লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে সারা দেশে কুরআন শিক্ষাবোর্ডের পরিচালিত মাদরাসার সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। বোর্ডের নিবন্ধিত মাদরাসার সংখ্যা ৩ হাজারের উপরে।
চরমোনাইয়ের মরহুম পীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম রহ. কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কুরআন শিক্ষাবোর্ডের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক তারই সুযোগ্য সন্তান আলহাজ্জ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ নুরুল করীম। মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন মরহুমের সুযোগ্য খলিফা ও দেশ বরেণ্য আলেম আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজি।
বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষাবোর্ডের বিস্তৃত কাযক্রমের একটি অংশ দেশব্যাপী মুআল্লিম বা শিক্ষক প্রশিক্ষণ। ১৬ কেন্দ্রে বছরজুড়ে চলে প্রশিক্ষণ। মহিলাদের জন্য রয়েছে ৪ টি পৃথক কেন্দ্র। আসন্ন রমজানে মুআল্লিম প্রশিক্ষণের নতুন ব্যাচ শুরু হতে যাচ্ছে। শুরু হতে যাওয়া কোর্স সম্পর্কে কথা হয় বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষাবোর্ডের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সচিব মুফতি আবদুস সাত্তারের সঙ্গে। তার আলাপচারিতায় উঠে আসে মুআল্লিম প্রশিক্ষণের আদ্যপান্ত। আওয়ার ইসলামের পক্ষে তার সঙ্গে কথা বলেন, আতাউর রহমান খসরু।
আওয়ার ইসলাম : কোন লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আপনাদের এ আয়োজন?
মুফতি আবদুস সাত্তার : আমাদের স্বপ্ন হলো, বাংলাদেশের আপামর মুসলিম জনসাধারণকে কুরআনের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শেখানো। শুধু তেলাওয়া নয়; বরং মানুষের জীবনে কুরআনের আমল প্রতিষ্ঠা করা, কুরআনি জীবন ছড়িয়ে দেয়ায় আমাদের লক্ষ্য।
এজন্যই বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষাবোর্ড একদিকে কুরআনি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করছে এবং অন্যদিকে মুআল্লিম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যোগ্য শিক্ষক তৈরি করছে। আমাদের স্বপ্ন বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামে ৬৮ হাজার কুরআনি মক্তব প্রতিষ্ঠা করে মানুষের কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
আওয়ার ইসলাম : সারা দেশে আপনাদের কতোগুলো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে?
মুফতি আবদুস সাত্তার : সারা বাংলাদেশে কুরআন শিক্ষাবোর্ড পরিচালিত মুআল্লিম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা ২০টি। ১৬টি পুরুষ এবং ৪টি মহিলা।
প্রতি বছর এসব কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪ হাজার পুরুষ এবং ৩শ মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।
আওয়ার ইসলাম : কোন প্রক্রিয়ায় আপনারা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন?
মুফতি আবদুস সাত্তার : আমাদের প্রশিক্ষণ কোর্সটি ২০ দিন ব্যাপী। আমরা এ কোর্সের জন্য তাদেরই নির্বাচন করি যাদের কুরআন তেলাওয়াত বিশুদ্ধ। ২০ দিন প্রশিক্ষণ দেয়ার পর যদি যারা দক্ষতার পরিচয় দেন, আমরা তাদের চাকরিতে নিয়োগ দেই। যদি তাদের চাকরি না থাকে।
[কমিটির বাড়ির কাজ না করায় ইমামকে মারধর; মুসল্লিদের জুতামিছিল]
আর যদি ২০ দিনে তারা যোগ্য হয়ে না ওঠে, তবে তাদের আমরা আবার প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ দেই। এভাবে একটি প্রশিক্ষণার্থী ৩ বার প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ পান।
আওয়ার ইসলাম : বাংলাদেশে আপনাদের কতোগুলো মাদরাসা রয়েছে এবং সেখানে শিক্ষক চাহিদা কেমন?
মুফতি আবদুস সাত্তার : বাংলাদেশে আমাদের প্রায় ২ হাজার মাদরাসা রয়েছে। এতে প্রচুর শিক্ষক প্রয়োজন হয়। আমরা যাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করি তাদের দিয়ে আমাদের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। বরং সব সময় চাহিদা অনুযায়ী আমরা শিক্ষক দিতে পারি না। বলতে পারেন, যোগ্যতার ভিত্তিতে অধিকাংশেরই আমরা চাকরির ব্যবস্থা করতে পারি।
আওয়ার ইসলাম : প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের আপনারা কেমন সুযোগ সুবিধা দেন?
মুফতি আবদুস সাত্তার : আবাসন সুবিধার বাইরে আমরা ছয় হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দিয়ে থাকি।
আওয়ার ইসলাম : মৌলিকভাবে আপনার কী কী শেখান?
মুফতি আবদুস সাত্তার : মৌলিকভাবে আমরা চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দেই। তাহলো, ক. পাঠদান পদ্ধতি, খ. শিক্ষকসূলভ আচরণ, গ. হাতের লেখা, ঘ. ব্লাকবোর্ডের ব্যবহার।
কুরআন শিক্ষাবোর্ডর শিক্ষা পদ্ধতিতে ব্লাকবোর্ডের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা ব্লাকবোর্ডের ব্যবহার ও হাতের লেখার উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করি।
আওয়ার ইসলাম : আপনাদের প্রশিক্ষণের রূপরেখাটা যদি তুলে ধরতেন?
মুফতি আবদুস সাত্তার : আমরা মুআল্লিমদের ৬টি প্রশ্নের উত্তর শেখাই। তাহলো, কী পড়াবে?, কেনো পড়াবে?, কে পড়াবে?, কাকে পড়াবে?, কোথায় পড়াবে?, কিভাবে পড়াবে?
কী পড়াবে? এর উত্তর হলো, ছাত্রদের আকায়েদ, মাসায়েল, কুরআন, দোয়া, হাদিস ও আমল শেখাবে। সাথে প্রয়োজনীয় সাধারণ শিক্ষা।
কেনো পড়াবে? উত্তরে ইসলামি শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও পুরস্কার এবং ইসলামি শিক্ষা ত্যাগের পরিণতি শেখানো হয়।
কে পড়াবে? এর উত্তরে আমরা আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী শেখাই।
কাকে পড়াবে? এর উত্তরে ছাত্রদের মেধা, বয়স, যোগ্যতা ও যাচাইকরণ পদ্ধতি শেখাই। সাথে সাথে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক কেমন হবে তাও শেখাই।
কোথায় পড়াবে? এ অধ্যায়ে আমরা শিক্ষকদের মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, পরিচালনা ও উন্নতি কিভাবে করতে পারবে তা শেখাই।
কিভাবে পড়াবে-তে থাকে কুরআন শিক্ষাবোর্ডের সহজ ও কাযকর কুরআন শিক্ষা পদ্ধতি।
আওয়ার ইসলাম : প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন?
মুফতি আবদুস সাত্তার : আল হামদুলিল্লাহ! অনেক ভালো। ছাত্রদের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়। তারা অল্প সময়ে কুরআন শিখতে পারে। অভিভাবকরাও অত্যন্ত খুশি।
আওয়ার ইসলাম : কুরআন শিক্ষাবোর্ডের অন্য কোনো প্রশিক্ষণ কার্যক্রম রয়েছে কী?
মুফতি আবদুস সাত্তার : কুরআন শিক্ষাবোর্ডের একটি বিশেষ কার্যক্রম বয়স্ক কুরআন শিক্ষা। এ কার্যক্রমের অধীনে ২০ দিনে ২০ ঘণ্টায় হরফ চেনে না এমন মানুষদের কুরআনের বিশুদ্ধ তেলাওয়া শিক্ষা দেই।
আল হামদুলিল্লাহ! বাংলাদেশের ৫০টি কেন্দ্রে ৫০ জন মুআল্লিম বয়স্কদের কুরআন শেখান। এবং এ পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষ বয়স্ক কুরআন শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে কুরআন শিখেছে।
যেখানে যেখানে হচ্ছে মুয়াল্লিম প্রশিক্ষণ কোর্স; দেখতে ক্লিক করুন