বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে আবারও অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে দেশ: ফখরুল চক্রান্তের ফাঁদে না পড়ে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণের আহ্বান শায়খ আহমাদুল্লাহর ভোলায় জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও স্মরণসভা চরমোনাইর বার্ষিক অগ্রহায়ণ মাহফিল বুধবার, চলছে সর্বশেষ প্রস্তুতি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান আসিফ মাহমুদের অসহায় শীতার্তের পাশে মাওলানা গাজী ইয়াকুবের তাকওয়া ফাউন্ডেশন দেশের তিন জেলায় শিক্ষক নিচ্ছে ‘আলোকিত মক্তব’ বৃদ্ধার দাড়ি টেনে ছিঁড়ে ফেলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল প্রতিবন্ধীদের ধর্মীয় ও কারিগরি শিক্ষা দিতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে: ধর্ম উপদেষ্টা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র সফল হবে না: মাওলানা আরশাদ মাদানী

ভারতে সম্রাট শাহজাহান নির্মিত সর্ববৃহৎ মসজিদ ও শাহি ইমামগণ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: ষোল শতাব্দীর কথা। সেই সময়ে ১০ লাখ রুপি ব্যয় করে মুঘল সম্রাট শাহজাহান নির্মাণ করেছিলেন দিল্লির জামে মসজিদ। প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো ভারতের সবচেয়ে বড় এই মজসিদ দেশটির অন্যতম প্রধান ঐতিহ্যের ধারক। সম্রাট শাহজাহান তাজমহলসহ যেসব স্থাপত্য নির্মাণের জন্য অমর হয়ে আছেন, দিল্লির জামে মসজিদ তার মধ্যে অন্যতম। এটি এখনো ভারতের সবচেয়ে বড় মসজিদ।

জামে মসজিদ। বিভিন্ন ভাষায় এটিকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। বাংলায় বলা হয় ‘জামে মসজিদ’, তবে হিন্দি এবং উর্দুতে ডাকা হয় ‘জামা মসজিদ’ নামে। জামা শব্দের অর্থ শুক্রবার।

সম্রাট শাহজাহানের নির্দেশে কোনো এক শুক্রবারে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় মসজিদটির এমন নামকরণ করা হয় বলে ধারণা করা হয়। আবার আগেকার সময়ে সব মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করা হতো না। যেসব মসজিদে অনেক মানুষ একসঙ্গে জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা যেত এবং নামাজ পড়ানোর জন্য সর্বজন গ্রহণযোগ্য ইমাম নিয়োগ দেওয়া হতো, সেসব মসজিদকে অনেকে জামে মসজিদ নামে ডাকত।

Mosque-2ফার্সিতে এই মসজিদকে ডাকা হয় ‘মসজিদ-ই-জাহান-নুমা’ নামে, যার অর্থ দাঁড়ায় ‘বিশ্বকে প্রতিফলিত করা মসজিদ’। মসজিদটির নির্মাণশেলী ও স্থাপত্যবিষয়ক সৌন্দর্য প্রথম থেকে মানুষকে মুগ্ধ করেছে। তিনটি বিশাল ফটক সম্বলিত মসজিদটির চারটি সাদা গম্বুজ এবং দুটি মিনার রয়েছে। মিনার দুটির উচ্চতা প্রায় ৪০ মিটার। মিনার দুটির পাঁচটি ধাপে পাঁচটি করে ব্যালকোনি রয়েছে, যার প্রথম তিনটি লাল বেলেপাথর, চতুর্থটি সাদা মার্বেল এবং পঞ্চমটি সাধারণ পাথর দিয়ে তৈরি।

লাল বেলেপাথর এবং সাদা মার্বেলের স্ট্রাইপ দেওয়া মিনার দুটি সূর্যের আলোর তীব্রতা ভেদে রং বদলায়। ঝলমলে সূর্যালোক এবং ভরা পূর্ণিমার সময়ে এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য হৃদয় কাড়ে।

নামাজিদের জন্য মসজিদের মেঝেতে প্রায় ৯০০ কাতার করা আছে। বেলেপাথরের ভিত্তির ওপর নির্মিত মসজিদটি ভূমি থেকে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু। এর মেঝের নির্মাণকাঠামো অনেকটা আগ্রার জামে মসজিদের মতো। কারণ দিল্লির জামে মসজিদের মেঝের অলঙ্করণেও ব্যবহার করা হয়েছে সাদা এবং কালো মার্বেল।

কয়েক শতাব্দীর পুরোনো মসজিদটি ঘিরে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনার জন্ম হয়েছে। কিন্তু একটি বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আসেনি। আর তা হলো ইমাম নিয়োগের পদ্ধতি। নির্মাণের পর থেকে বংশ পরম্পরায় দিল্লির জামে মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছে বুখারি পরিবার। এই নিয়ম পৃথিবীর অন্য কোনো মসজিদে আছে বলে শোনা যায় না।

Mosque-4

দিল্লির জামে মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৬৪৪ সালে। ৫ হাজার কর্মী নির্মাণ কাজে নিযুক্ত হয়। ১২ বছর পরে ১৬৫৬ সালে মসজিদ নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়। ওই বছরের জুলাই মাসের ২৩ তারিখে মসজিদটি উদ্বোধন করেন ইসলাম ধর্মের একজন সাধক ইমাম বুখারি (র.)।

ইমাম বুখারির বাড়ি ছিল ইজবেকিস্তানের বুখারায়। তার প্রকৃত নাম সৈয়দ আব্দুল গফুর শাহ বুখারি। সম্রাট শাহজাহানের আমন্ত্রণে তিনি দিল্লি আসেন। বুখারিকে দিল্লির জামে মসজিদের ইমাম নিয়োগ দিয়ে তাকে রাষ্ট্রীয় ইমাম হিসেবে ঘোষণা দেন সম্রাট শাহজাহান। তার পদবি দেওয়া হয় ‘শাহি ইমাম’।

 মুঘল আমলে সম্রাট হওয়ার ব্যাপারে বংশ পরম্পরাকে আদর্শ মনে করা হতো। জামে মসজিদের ইমাম হওয়ার শর্ত হিসেবেও বংশের ধারাবাহিকতা অনুসরণ করা হতো। ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল আমলের পর নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটলেও জামে মসজিদের ইমামদের ক্ষেত্রে বংশ পরম্পরায় ইমাম হওয়ার প্রথা একইভাবে চালু আছে। মজার ব্যাপার হলো- ১৮৫৭ সালের পর ইংরেজরা ক্ষমতায় এসে জামে মসজিদে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ব্রিটিশ সৈন্যদের আবাসিক ভবন বানায়। কয়েক বছর এভাবে থাকার পর মসজিদটি আবার মুসল্লিদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তখনো ইমাম হিসেবে সৈয়দ আবদুল গফুর শাহ বুখারির উত্তরসূরিই নিয়োগ পান।

বর্তমানে শাহি ইমাম হিসেবে সৈয়দ আবদুল গফুর শাহ বুখারির ১৩তম উত্তরসূরি সৈয়দ আহমেদ বুখারি নিয়োজিত আছেন। সৈয়দ আহমেদ বুখারি ছাড়াও বংশ পরম্পরায় যে ইমামরা শাহি ইমামের দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা হলেন- সৈয়দ আবদুল গফুর শাহের বড় পুত্র সৈয়দ আবদুল শাকুর শাহ বুখারি, সৈয়দ আবদুল রহিম শাহ বুখারি, সৈয়দ আবদুল গফুর শাহ বুখারি থানি, সৈয়দ আবদুর রহমান শাহ বুখারি, সৈয়দ আবদুল করিম শাহ বুখারি, সৈয়দ মির জেওয়ান শাহ বুখারি, সৈয়দ মির আহমেদ আলি শাহ বুখারি, সৈয়দ মুহাম্মাদ শাহ বুখারি, সৈয়দ আহমেদ বুখারি, সৈয়দ হামিদ বুখারি (১৯৪২-১৯৭৩), সৈয়দ আবদুল্লাহ বুখারি (১৯৭৩-২০০০), সৈয়দ আহমেদ বুখারি (২০০০-বর্তমান)। তবে আহমেদ বুখারির পরে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তার ছেলে শাবান আহমেদ বুখারি।

২৫ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন জামে মসজিদে। উপমহাদেশসহ বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর কাছে অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত এই জামে মসজিদ। এ ছাড়া স্থাপত্য-সৌন্দর্যের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মসজিদটি দেখতে আসে।

মুসলিম জাতিকে বিজয়ী বলায় ইমামকে ৪০০০ ডলার জরিমানা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ