বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৯ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ফতোয়া বিভাগের জন্য নীতিমালা জরুরি: ফিকহবিদদের অভিমত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রোকন রাইয়ান: কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের পর অনেকগুলো উচ্চতর গবেষণা বিভাগ রয়েছে। এর  মধ্যে ফতোয়া বিভাগ অন্যতম। যাকে আরবিতে ‘তাখাচ্ছুছ ফিল ফিকহি ওয়াল ইফতা’ বলা হয়। একসময় সীমিত কিছু মাদরাসায় এ বিভাগ থাকলেও এখন অধিকাংশ মাদরাসাতেই বিভাগটির অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে। ফলে মানের দিক থেকে অভিযোগ উঠেছে ঘাটতির।

ফতোয়া বা আইনশাস্ত্র সমাজ ও ব্যক্তিজীবনের উল্লেখযোগ্য দিক। মুসলিমদের জীবন চলতে মাসআলা মাসায়েল জানা জরুরি। তেমনিভাবে নতুন আবিস্কৃত সমস্যাগুলোরি সুষ্ঠু সমাধান এবং সে অনুযায়ী চলার জন্য দরকার সঠিত তত্ত্বাবধান। কিন্তু যত্রতত্র ফতোয়া বিভাগের বিস্তৃতি বিষয়টিকে হালকা করে ফেলার পাশপাাশি কোনো কোনো ক্ষেত্রে করে তুলছে মানহীন। রাজধানীর এমন অনেক ফতোয়া বিভাগ গড়ে উঠেছে যেখানে সপ্তাহে মাত্র একদিন ক্লাস করেও বছর শেষে সনদ পাওয়া যায়। এখানে কী শেখানে হয় কিভাবে শেখানো হয় এগুলো নিয়ে বড়দের তদারকি না থাকায় বিভাগগুলো হয়ে উঠছে সনদসর্বস্ব।

রাজধানীর তাখাচ্ছুছের সুপরিচিত মাদরাসা শায়েখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার। মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদের তত্ত্বাবধানে যেটি সুনামের সঙ্গে চলছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের তাখাচ্ছুছ বিভাগ নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে আওয়ার ইসলামকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের তাখাচ্ছুছের মান দেওবন্দ-করাচীর তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। তবে তিনি এও আশঙ্কা করেন, বর্তমানে অনেক তাখাচ্ছুছ বিভাগ খোলা হচ্ছে যারা মানের দিকে তাকাচ্ছেন না। অলিতে গলিতে এসব মাদরাসা গড়ে উঠছে যাদের একটি নির্দিষ্ট ভবনও নেই। এভাবে চললে বাংলাদেশে তাখাচ্ছুছের নিচের দিকে নামতে থাকবে।

মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ মনে করেন, ফতোয়া বিভাগ চালানোর জন্য দেশে একটি নীতিমালা থাকা দরকার। সেই নীতিমালার আলোকেই হতে পারে আমাদের কর্মপন্থা।

সাধারণ মানুষ যখন দীনি বিষয়ে কোনো সমস্যায় পড়েন সবার আগে ছুটেন আলেমদের কাছে। এ কারণে মাসআলা মাসায়েল সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে সব সময় সতর্ক থাকা দরকার বলে মনে করেন দেশের অধিকাংশ মুফতি। তাদের মতে, মাসআলা নিয়ে কেউ এলেই তাহকিক ব্যতীত সমাধান দেয়ার প্রবণতা এখন বেশি। অনেক সময় বিষয়টি কারো কারো জানা না থাকলেও লজ্জার কারণে এদিস সেদিক করে সমাধান বলে দেন। যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে মনে করেন আলেমগণ। তাদের মতে শরিয়ত সবকিছু আগ থেকেই নির্ধারিত করে দেয়া আছে। এগুলোর গোজামিল দিয়ে সমাধান একপ্রকার প্রতারণা। দেশের আইনের ক্ষেত্রে যেমন দেখা যায় মাসআলা মাসায়েলের ক্ষেত্রে ঠিক তাই অবলম্বন করা উচিত।

এ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো শহরের তুলনায় বেশি হয় গ্রামে। গ্রামাঞ্চলে যেমন কিতাবাদি স্বল্পতা তেমনি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মুফতির সংখ্যাও কম। এ সমস্যা দূর করতে শহরের মুফতিদের সঙ্গে গ্রামের মুফতিদের একটা সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরিরও পরামর্শ  দেন অনেকে।

দারুল উলুম কেন্দুয়াপাড়া, নালিতাবাড়ী শেরপুরের প্রধান মুফতি- মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম বলেন,  আমার কাছে অনেকে তালাকের মাসালা নিযে আসে। আমি যখন সমাধান দেই তখন অনেকেই বলে অমুক মুফতি তো এমনটা বলেছেন। তার মানে অনেক অল্প জানা লোকের কাছে মানুষ গেলেও তারা অনুমান নির্ভর সমাধান দিয়ে দিচ্ছেন।

এর জন্য শহুরে আলেমদের গ্রামীণ সমস্যাগুলোতে নজর রাখা এবং আলেম-মুফতিদের সঙ্গে সহজে যোগযোগের মাধ্যম রাখা অত্যন্ত জরুরি বলে জানান মুজাহিদুল ইসলাম।

সময় যতো এগুচ্ছে সমানতালে বৃদ্ধি পাচ্ছে সমস্যা। পাল্টাচ্ছে সমস্যার ধরণ। ইন্টারনেটে মাসআলা জানতে চাওয়া মানুষদের প্রশ্নুগলোর দিকে নজর দিলেই দেখা যায় কত নিত্য নতুন বিষয়ে ফতোয়া জানতে চাওয়া হচ্ছে এখন। অজু নামাজ গোছলের জিজ্ঞাসার পরিবর্তে স্থান দখল করেছে ‘হাই কমোড, চুলের স্ট্রেইট, বিমানে নামাজ, পুরুষকে তালাক, গর্ভভাড়া ইত্যাদি। এই নব্যসৃষ্ট সমস্যা সমাধানে গবেষণার ধরনও নিশ্চয়ই পরিবর্তন হওয়া জরুরি।

জানতে চেয়েছিলাম মা’হাদুল ইকতিসাদ ওয়াল ফিকহিল ইসলামী, যাত্রাবাড়ী ঢাকার প্রধান মুফতী কামাল উদ্দীন আহমাদ রাশেদীর কাছে। তিনি বলেন, গবেষণার জন্য তো বড় বড় সব মাদরাসাতেই ফতেয়া বিভাগ রয়েছে। এসবে পর্যাপ্ত গবেষণাও হচ্ছে।

অবশ্য আধুনিক বিষয়গুলো কারো প্রশ্নে না এলে সেগুলো নিয়ে সাধারণত চর্চা হয় না বলেই জানান তিনি। তবে তিনি জানান, কিছু মাসআলা তো রয়েছে উসুল জানা থাকলেই বের করা যায়। অল্প কিছু মাসালা হল করা কঠিন।

মুফতি কামাল উদ্দীন রাশেদী উপযুক্ত ও যোগ্য ব্যক্তি ছাড়া ফতোয়া বিভাগ খোলা ও ফতোয়া দানের বিষয়ে অনাগ্রহী। তিনি বলেন, একজন মুফতির কী কী যোগ্যতা থাকতে হবে সেসব বিষয়ে আমি দুটি কিতাব লিখেছি। এখানে আমি স্পষ্ট করেই বিষয়গুলো উল্লেখ করেছি।

তিনি বলেন, এসবের জন্য একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার। কেউ চাইলেই একটা কিছু করে ফেলল অথচ তার সে বিষয়ে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নেই- এগুলো সমাজে সমস্যা তৈরি করবে। এর জন্য একটা বোর্ডও থাকা দরকার। বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো বোর্ড আছে কিনা আমার জানা নেই।

প্রশ্নবাণে কওমি মাদরাসা : আমাদের নির্মম রসিকতা

শরিয়তের মানদণ্ডে লাইলাতুল বারাআত বা শবে বরাত

পূর্বের দাওরা পাশ ছাত্রদের পক্ষ থেকে ছোট্ট একটি দাবি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ