বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে আবারও অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে দেশ: ফখরুল চক্রান্তের ফাঁদে না পড়ে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণের আহ্বান শায়খ আহমাদুল্লাহর ভোলায় জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও স্মরণসভা চরমোনাইর বার্ষিক অগ্রহায়ণ মাহফিল বুধবার, চলছে সর্বশেষ প্রস্তুতি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান আসিফ মাহমুদের অসহায় শীতার্তের পাশে মাওলানা গাজী ইয়াকুবের তাকওয়া ফাউন্ডেশন দেশের তিন জেলায় শিক্ষক নিচ্ছে ‘আলোকিত মক্তব’ বৃদ্ধার দাড়ি টেনে ছিঁড়ে ফেলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল প্রতিবন্ধীদের ধর্মীয় ও কারিগরি শিক্ষা দিতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে: ধর্ম উপদেষ্টা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র সফল হবে না: মাওলানা আরশাদ মাদানী

সনদের মান গ্রহণে কওমি স্বকীয়তায় কোন ছাড় দেইনি: আল্লামা আহমদ শফী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: শিক্ষামন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ১৩ এপ্রিল কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদকে মাস্টার্স (ইসলামিক স্টাডিজ এবং আরবী) এর সমমান প্রদান করে প্রজ্ঞাপন জারির পর কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যগণ এক জরুরি বৈঠকে মিলিত হন।

চট্টগ্রামের দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসায় মহাপরিচালকের কার্যালয়ে আজ (১৬ এপ্রিল) রবিবার সকাল ১০টা থেকে এই বৈঠক শুরু হয়ে বেলা দেড়টায় শেষ হয়। বৈঠকে সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে কওমি মাদরাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ও দারুল উলূম দেওবন্দের মূলনীতিসমূহকে ভিত্তি ধরে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স (ইসলামিক স্টাডিজ ও এবং আরবি) এর সমমান প্রদান করায় মহান আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা হয়। পাশাপাশি এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রীমহোদয় ও কর্মকর্তাগণকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।

বৈঠকে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হয় এবং ৬ বোর্ডের আওতাধীন মাদ্রাসাসমূহে চলতি শিক্ষাবর্ষের দাওরায়ে হাদীসের পরীক্ষা অভিন্ন প্রশ্নপত্রে গ্রহণসহ আরো কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে মাদরাসা বোর্ডের কর্মকর্তাগণ সনদ বিষয়ে প্রাপ্ত এই অর্জনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সকল চক্রান্ত নস্যাত করার জন্য উলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানকে আরো দৃঢ় রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) সভাপতি শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, মাওলানা মুফতী ওয়াক্কাস, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মুফতী রূহুল আমীন, মুফতী আরশাদ রাহমানী, মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, মাওলানা নূরুল ইসলাম, মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা মুফতী ফয়জুল্লাহ, মাওলানা যোবায়ের আহমাদ চৌধুরী, মাওলানা মুফতী জসীম উদ্দীন, মাওলানা মাহফুজুল হক, মুফতী শামসুদ্দীন জিয়া, মাওলানা মুহাম্মদ আলী, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা মুসলিহ উদ্দীন রাজু, মাওলানা মুফতী নূরুল আমীন, মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব, মাওলানা এনামুল হক, মাওলানা নূরুল হুদা ফয়জী, মাওলানা কাজী আখতার হোসাইন, মাওলানা ইউসুফ, মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ, মাওলানা আব্দুল জাব্বার প্রমুখ।

বৈঠকে বেফাক সভাপতি শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদের সরকারি মানগ্রহণ বিষয়ে গত ১১ এপ্রিল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ওলামায়ে কেরামের বৈঠক নিয়ে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে বলেন, বেফাকসহ অপরাপর কওমি মাদরাসা বোর্ডসমূহের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের আলোকেই সেদিন প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক হয়েছে এবং দাওরায়ে হাদীসের সনদের মান গ্রহণে আমাদের পূর্বঘোষিত শর্তে সামান্যতমও ছাড় দেওয়া হয়নি।

শিক্ষামন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে আমাদের পূর্ব ঘোষিত যৌক্তিক অবস্থান গ্রহণ করেই যে সনদের মান প্রদান করা হয়েছে, তাতেই আমরা যে নীতিতে অবিচল অটল ছিলাম, সেটা স্পষ্ট হয়েছে।

তিনি বলেন, সবসময় ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতার বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমি কাজ করে আসছি। এই ঐক্য গড়ে তোলার স্বার্থে অনেক সময় আমার নিজস্ব মতামত ও সিদ্ধান্তেও ছাড় দিয়ে থাকি। কারণ, ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতার ঐক্যবদ্ধ মজবুত অবস্থান ছাড়া বর্তমানের বহুমুখী ইসলাম বিদ্বেষী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা অনেক কঠিন।

বৈঠকে আল্লামা শাহ আহমদ শফী আরো বলেন, কওমি মাদরাসার সনদ নিয়ে বেফাক ও অন্যান্য আঞ্চলিক কওমি বোর্ডসমূহের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘ দিন থেকেই আমি চেষ্টা করে আসছি। আর সেই চেষ্টার সুফল হিসেবে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসায় বেফাকসহ অপরাপর ছয় বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাগণ দীর্ঘ এক বৈঠকে মিলিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করে। তার সুফল হিসেবেই কওমি মাদরাসার স্বতন্ত্র ও স্বাধীন বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ও দারুল উলূম দেওবন্দের মূলনীতিসমূহকে ভিত্তি ধরে সরকার নিয়ন্ত্রিত কোন কমিটি, কমিশন, বিদ্যমান কারিকুলাম পরিবর্তন ও মাদ্রসা পরিচালনায় কোনরূপ সরকারী হস্তক্ষেপ ছাড়া কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদের মাস্টার্স (ইসলামিক স্টাডিজ ও এবং আরবি)এর সমমানের দাবী অর্জিত হয়।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী বহুমুখী ষড়যন্ত্র চলছে অনেক আগে থেকে। এসব ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা শতভাগ অক্ষুণ্ন রেখে সকলের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান বজায় রাখার বিষয়টিকে আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছি সবসময়।

তিনি বলেন, পরম করুণাময় আল্লাহর ইচ্ছায় বাংলাদেশের কওমি মাদ্রসাসমূহ শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনাসহ অন্যান্য সকল বিষয়ে পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। আর এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের ফলেই গত ১১ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ স্তর থেকেই উলামায়ে কেরাম সম্মানিত হয়েছেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কওমী মাদ্রাসার গৌরবময় ঐতিহ্য ও ইসলামী শিক্ষার গুরুত্বের কথা স্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি দেওবন্দের উসূল ও কওমি স্বকীয়তা শতভাগ অক্ষুণ্ন রেখে আমাদের প্রত্যাশা মতে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদকে মাস্টার্স-এর সম-মান দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে স্থাপিত গ্রীক মূর্তি অপসারণের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি প্রদান, স্বাধীনতা সংগ্রামে কওমী উলামায়ে কেরামের গৌরবজ্জ্বল ভূমিকার উল্লেখসহ ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেক ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সেদিনের বক্তব্য অত্যন্ত মূল্যবান ও প্রশংসনীয় ছিল।

তিনি বলেন, সুতরাং যে বা যারাই ওলামায়ে কেরাম ও কওমি মাদরাসা বোর্ডসমূহের বর্তমান অবস্থান নিয়ে সমালোচনা করছেন বা বিভ্রান্তি ছড়াতে চাচ্ছেন, বুঝতে হবে তারা নিজেদের স্বার্থের চিন্তা থেকেই এমনটা করছেন। বেফাক সভাপতি ওলামায়ে কেরামকে কোনরূপ বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারে কান না দেওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, সরকারের ঘোষণা ও প্রজ্ঞাপন নিয়ে কোন মহল থেকেই যেন কোনরূপ ষড়যন্ত্র বা ছলচাতুরি করতে না পারে, সেজন্য আমাদের সকলের দৃঢ় ঐক্য ও সতর্ক অবস্থান বজায় রাখা অবশ্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ। ওলামায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলে কোন অপশক্তিই ষড়যন্ত্র করে সফল হবে না, ইনশাআল্লাহ।

বৈঠকে বেফাক সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফী আরো বলেন, বাংলাদেশের কওমি মাদরাসা বোর্ডসমূহ কোনভাবেই প্রচলিত রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। আমরা শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে খাঁটি ইসলামী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করি এবং ঈমান-আক্বীদা, দেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র বা হুমকি তৈরি হলে আমরা দেশ ও জাতির পক্ষে ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখতে সচেষ্ট হই। আমরা সবসময় শন্তিপূর্ণ সমাজ ও দেশ গঠনে ভ‚মিকা রাখতে সচেষ্ট থাকি। এসব বিষয়ে যেকোন ব্যক্তি বিশেষ, সংগঠন, রাজনৈতিক দলের নেতা বা সরকারের সাথে আলোচনা বা বৈঠককে নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনই সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, আজকের (১৬ এপ্রিল) কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটির বৈঠকে নিন্মোক্ত সিদ্ধান্তসমূহ সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়।

(১) “আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ” নামে সর্বোচ্চ সংস্থার আওতায় দাওরায়ে হাদীসের পরীক্ষা গ্রহণ ও সনদ বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

(২) চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই অভিন্ন প্রশ্নপত্রে একসাথে সকল বোর্ডের আওতাধীন মাদরাসাসমূহে দাওরায়ে হাদীসের পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। চলতি শিক্ষাবর্ষের দাওরায়ে হাদীসের চূড়ান্ত পরীক্ষা ১৫ মে সোমবার থেকে ২৫ মে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গ্রহণের তারিখ চ‚ড়ান্ত করা হয়।

(৩) বেফাক থেকে ৬ জন এবং অন্য ৫ বোর্ড থেকে ১ জন হারে মোট ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপকমিটি গঠন করা হয় এবং গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মাওলানা শামসুল হককে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে মনোনীত করা হয়। এই কমিটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার থেকে কোন ধরণের আর্থিক সহযোগিতা বা সুবিধা গ্রহণ করবে না মর্মেও সিদ্ধান্ত হয়।

(৪) প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত ৬ বোর্ডে নিবন্ধিত দাওরায়ে হাদীসের মাদ্রাসাসমূহ “আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ” সংস্থায় নিবন্ধিত মাদ্রাসা বলে গন্য হবে। ৬ বোর্ডের আওতার বাইরে থাকা কোন মাদ্রাসা এই সংস্থায় পৃথকভাবে নিবন্ধিত হতে পারবে না।

(৫) বর্তমানে যে মাদ্রাসা যে বোর্ডে নিবন্ধিত, এই বৎসর সেই বোর্ডেই থাকতে হবে। অন্য বোর্ডে যেতে পারবে না। এর বাইরে আরো কয়েকটি দাপ্তরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

১৫ মে থেকে ছয় বোর্ডের সম্মিলিত পরীক্ষা

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ