শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


কলরব থেকে আবু সুফিয়ানকে অব্যহতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

abu_sufianআওয়ার ইসলাম: জাতীয় শিশু কিশোর সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরব থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে সিনিয়র শিল্পী আবু সুফিয়ানকে। তিনি কলরবের সূচনা থেকেই যুক্ত ছিলেন। সর্বশেষ নির্বাহী কমিটিতে যুগ্ম সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।

কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর প্রধান পরিচালক রশিদ আহমদ ফেরদৌস ও নির্বাহী পরিচালক সাঈদ আহমাদ সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে আজ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

সূত্র জানায়, গত দুই বছর ধরে তার কিছু কর্মকাণ্ডের জন্য আকস্মিক এ বহিষ্কারাদেশ দেয়া হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে না জানিয়ে বহিষ্কারের বিষয়ে বিবৃতি ও ফেসবুকে লেখালেখির বিষয়টিতে অবাক হয়েছেন বলে আওয়ার ইসলামকে জানান শিল্পী আবু সুফিয়ান।

বিবৃতিতে শিল্পী আবু সুফিয়ানকে বহিষ্কার বা অব্যহতির কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়,  প্রিয় শুভাকাঙ্ক্ষী! “আপনারা অবগত আছেন বেশকিছু দিন ধরে কলরবের নামে অযৌক্তিক ও মিথ্যা অভিযোগে সংগঠনটির বিরুদ্ধে নানারকম অপপ্রচার চলছে। এতে সংগঠনসহ এর সদস্যরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর পেছনে অন্যতম রসদ হিসেবে কাজ করছেন কলরবেরই একজন সদস্য আবু সুফিয়ান। কলরবের উপদেষ্টা পরিষদ একাধিকবার তাকে এসব অযৌক্তিক বিষয়ে সতর্ক করাসহ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও তিনি অপপ্রচার থেকে বিরত হননি। এ কারণে কলরবের উপদেষ্টা কমিটি ও নির্বাহী কমিটি তাকে সংগঠন থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আবু সুফিয়ানের সৃষ্ট সাংগঠনিক সমস্যাগুলো

ক. বিগত ০১/১২/২০১৫ তারিখে সবার সম্মতিক্রমে কলরবের নতুন কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে সবাই একমত হলেও আবু সুফিয়ান বেঁকে বসেন এবং তিনি বিভিন্নভাবে প্রচার করেন এ কমিটি মানি না। প্রথমে এটি কলরবের স্বার্থে মনে করা হলেও পরে জানা যায়, তিনি ব্যক্তিস্বার্থে এ কমিটির বিরোধিতা করছেন। বিরোধিতার কারণ হলো, কমিটি করার সময় তার একটি মতামত গৃহিত না হওয়া। তিনি মতামত দিয়েছিলেন একইসাথে ৩ জন হবে কলরবের নির্বাহী পরিচালক। একই সঙ্গে ৩জন নির্বাহী পরিচালক পদ অযৌক্তিক হওয়ায় তা সবার সম্মতিক্রমে বাতিল হয়। কিন্তু এটি মানতে না পেরে তিনি অপপ্রচার শুরু করেন। যা সংগঠনের পুরোপুরি স্বার্থবিরোধী। ফেসবুকে বিভিন্ন ফেক আইডির মাধ্যমে আজও এ অপপ্রচার চলছে।

খ. কমিটি নিয়ে আবু সুফিয়ানের দ্বিমতের সঙ্গে সঙ্গে তিনি কলরবের সদস্য ও বিভিন্ন বিষয় নিয়েও বিরোধিতা শুরু করেন। এসব বিষয় গত সেপ্টেম্বর ২০১৬ এর শেষের দিকে উপদেষ্টা মণ্ডলিকে জানানো হয়। তারা আলোচনা করে ০৫ অক্টোবর ২০১৬ এ নির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টা কমিটির মিটিং আহবান করেন। মিটিং এ যথাক্রমে মাওঃ গাজী আতাউর রহমান, মাওঃ ইমতিয়াজ আলম, মাওঃ নেছার উদ্দিন, মুফতি মোস্তফা কামাল, কে এম আতিকুর রহমান ও কলবর পরিচালক রশিদ আহমদ ফেরদৌসসহ কলরবের নির্বাহী কমিটির উপস্থিতিতে আবু সুফিয়ান এবং কলরবের সকলের অভিযোগ শুনেন। সেখানে কলরব সংক্রান্ত সকল অভিযোগের সন্তোষজনক সমাধান হয়। যা আবু সুফিয়ানসহ কলরবের সবাই মেনে নেন। সভায় সতর্কতা হিসেবে ফেসবুকে সাংগঠনিক কোন বিষয়ে না লেখার বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় এবং এ ব্যপারে সবার অঙ্গিকার নেয়া হয় ।

সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর

কলেজ-ভার্সিটিতে জিন্স ও টি-শার্ট নিষিদ্ধ 

গ. মিটিংয়ে বিষগুলো সমাধানের পর আবু সুফিয়ান সংগঠনের পরামর্শ বা সিদ্ধান্ত ছাড়াই সাংস্কৃতিক জোটের সহ সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ওই সংগঠনের কাজে পুরোপুলি লিপ্ত হয়ে যান। যা সংগঠনের শৃঙ্খলার পরিপন্থী । পরবর্তীতে উদারতার ঘোষণা দিয়ে নিজ সংগঠনের সদস্যদের অবজ্ঞা করে অন্য সংগঠনের সাথে (যারা কখনোই কলরবের ভাল চায়নি) সন্দেহজনক চলাফেরা, প্রোগ্রাম ও ভ্রমণ শুরু করে। যা সংগঠনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এর ফলে কলরবের নির্বাহী কমিটির ফেইসবুক আলোচনা কেন্দ্রে (যা একটি সিক্রেট গ্রুপ) শুধু আবু সুফিয়ানকে উদ্দেশ্য করে তার সহকর্মী বদরুজ্জামান বন্ধুত্বের দাবিতে একটি ফানি পোষ্ট দেয় (লুলরে লুল । ৭ শীর্ষ শিল্পীর ভ্রমণ । পরগাছা নির্ভর লুলামী) যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ‘নিজের ঘরের সদস্যদের সাথে আনন্দের খবর নেই অন্যের সাথে আনন্দ উদযাপন’। কিন্তু উপরোক্ত ফানি স্ট্যাটাসটি সিক্রেট গ্রুপ থেকে জনসম্মূখে প্রকাশ করে ঐদিনই আবু সুফিয়ান এই স্ট্যাটাসদাতার কি বিচার হওয়া উচিত বলে মানুষকে উষ্কানি দিয়ে ক্ষেপানোর চেষ্টা করে। পরবর্তীতে একে কেন্দ্র করে কলরব তথা পুরো সাংস্কৃতিক জগৎ উত্তপ্ত হয়। যার সুযোগে কলরবের শুভাকাঙ্খী নয় এমন লোকেরা সুযোগ গ্রহণ করে কলরবকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে।

ঘ. বিদ্যমান এ পরিস্থিতিতে আবারও ৫/১১/১৬ বাদ মাগরিব কলরবের কার্যনির্বাহী কমিটি, উপদেষ্টা ও মুরুব্বীদের নিয়ে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। মাওঃ গাজী আতাউর রহমান, শাহ্ ইফতেখার তারিক, মাওঃ নেছার উদ্দিন, মুফতি মোস্তফা কামাল ও কলরব পরিচালক রশিদ আহমদ ফেরদৌসসহ নির্বাহী কমিটির সকল সদস্যের উপস্থিতিতে সভায় ফেইসবুকে আপত্তিকর, উস্কানিমূলক ও কলরবের জন্য ক্ষতিকর তৎপরতার কারণে যুগ্ম নির্বাহী পরিচালক আবু সুফিয়ান ও বদরুজ্জামানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সভায় অপরাধের মাত্রার তারতম্যের বিবেচনায় ২ জনের বিরুদ্ধে ২ ধরনের শাস্তিমূলক ব্যাবস্থার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। উক্ত সভায় আবু সুফিয়ানকে ০৩ (তিন) মাসের জন্য কলরবের কার্যক্রম থেকে অবসর এবং বদরুজ্জামানকে ১ মাসের জন্য দায়িত্ব থেকে অব্যহতির সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। শর্ত ছিল এই সময়ে আবু সুফিয়ান কলরবের ব্যানারে কোন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না। যদি ০৩ (তিন) মাসের মধ্যে তার আচরণ সংশোধনমূলক বলে প্রমাণিত হয় তবে তাকে পুনরায় কলরবে গ্রহণ করা হবে। ০৩ (তিন) মাসের মধ্যে কলরবের জন্য ক্ষতিকর কোন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হলে তার বাহিস্কারাদেশ স্থায়ী করা হবে।

অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য- সিদ্ধান্তের ০৫ (পাঁচ) মাস গত হলেও সে সংশোধন তো পরের বিষয় কলরব সাংগঠনিক ভিত্তির উপরে টিকে থাকুক অথবা অগ্রসর হোক এমন কোন পদক্ষেপ তার পক্ষে দেখা যায়নি এমনকি তিনি কলরব ধ্বংসের জন্য এমন কোন পথ ও পন্থা নেই যা অবলম্বন করেননি।

সম্মানিত কলরব শুভাকাঙ্খী!

আমাদের একটি বিনীত আরজ, একটি সংগঠনের ২৫ সদস্যের নির্বাহী কমিটি, একটি অভিভাবক পরিষদ ও একটি উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে কলরব সাংগঠনিক ভিত্তির উপরে চলছে। একটি সংগঠন সবার মতামতের ভিত্তিতেই চলতে হয়। সেক্ষেত্রে ব্যক্তি হিসেবে দু-একজনের মতামত অনেকক্ষেত্রে উপেক্ষিত হওয়াটাই স্বাভাবিক কিন্তু দুর্ভগ্যজনকভাবে আবু সুফিয়ান পুরো কমিটিকে অবজ্ঞা করে একের পর এক উপদেষ্টা, মুরুব্বী, দায়িত্বশীল এমনকি শিশুকিশোর শিল্পীদেরও ফেইসবুক ও ফোনে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি, চরিত্রহরণসহ, কোন ব্যক্তিকেই আঘাত করতে বাকি রাখেনি । যার কারণে তিনি কলরবে যতই থাকার দাবী করুক বাস্তবে তিনি নিজেই সবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছেন।

এমতাবস্থায় উপদেষ্টা পরিষদ ও নির্বাহী কমিটির সভায় গত (০৫-১১-২০১৬) যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল এর ভিত্তিতে আবু সুফিয়ানের বহিষ্কারাদেশ বহাল আছে। সে প্রেক্ষিতে জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরবের নির্বাহী পরিষদের (০৫-০৪-২০১৭) বৈঠকে জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরবের সার্থ পরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকায়, কলরবের সার্থবিরোধী তৎপরতায় নিয়েজিত থাকায় এবং কলরবের উপদেষ্টা মণ্ডলির সতর্কতা উপেক্ষা করায় আবু সুফিয়ানকে কলরবের সর্ব প্রকার দায়িত্ব এবং প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সর্বসম্মত এই সিদ্ধান্তের পর কলরব সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ে আবু সুফিয়ানের সাথে কাউকে কোন প্রকার যোগাযোগ না করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। কলরবের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার ধারাবাহিক কাজে লিপ্ত আবু সুফিয়ানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য কলরবের সকল ভক্ত সুহৃদ, শুভাকাঙ্খীদের অনুরোধ করা যাচ্ছে।

বিনীত
রশিদ আহমাদ ফেরদৌস
পরিচালক, কলরব

সাঈদ আহমাদ
নির্বাহী পরিচালক, কলরব

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে আবু সুফিয়ান আওয়ার ইসলামকে বলেন, বহিষ্কার বা অব্যহতির বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। বেশ কিছুদিন ধরেই একটা সমস্যা চলছিল। তবে কথা ছিল মুরব্বিরা বসে এটার ফায়সালা করবেন। কিন্তু সেটা না করে এমন ঘোষণায় আমি অবাক হয়েছি।

সামনে নতুন কোনো শিল্পীগোষ্ঠীর চিন্তা আছে কিনা এ বিষয়ে তিনি জানান, নতুন কিছু আসবে তবে শিল্পীগোষ্ঠী নয়। এলেই জানতে পারবেন।

এআরকে

add-our


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ