ইসমাঈল আযহার: ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর রা.। তার খেলাফাত জামানা অন্যান্য খলিফাদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। হুজুর পাক স. এর ইন্তেকালের পর মদিনায় একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। তিনি দৃঢ় চিত্তে সেগুলোর মুকাবেলা করেছেন।
হযরত আবু বকর রা. খেলাফত জামানার সবচে‘ গুরুত্বপূর্ণ চারটি বিষয় তুলে ধরা হল।
১.যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।
হযরত উসামা রাএর বাহিনী সিরিয়াতে অবস্থানকালেই উত্তরাঞ্চলে বনু আব্বাস ও বনু যুবিয়ান গােত্র যাকাত দিতে অস্বীকার করে। তারা এই মর্মে মদিনাতে একজন প্রতিনিধি প্রেরণ করে যে, তাদেরকে যাকাত থেকে অব্যাহতি দেয়া হােক।
জবাবে হযরত আবু বকর রা. তাদেরকে জানিয়ে দেন যে, “আল্লাহর শপথ! যাকাত হিসেবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে যা পাঠানাে হতাে তার মধ্যে থেকেএকটি বকরির বাচ্চা দিতেও যদি কেউ অস্বীকৃতি জানায় তাহলে আমি তার বিরুদ্ধে লড়াই করবাে।” এ ঘােষণা শুনে ঐসব গােত্র বিদ্রোহ করে বসে।
তারা মদীনার ওপর আক্রমণ চালানাের জন্য মদীনা থেকে ১২ মাইল দূরবর্তী যুলকিসসা নামক স্থানে সমবেত হয়। ইতিমধ্যে হযরত উসামা রা. এর বাহিনী সফলকাম হয়ে প্রত্যাবর্তন করে।
হযরত আবু বকর (রা) হযরত উসামা রা. কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে সেনাবাহিনী নিয়ে নিজেই তাদের মােকাবিলায় অগ্রসর হন। তারা পরাজিত হয়। এতে অন্যান্য যাকাত অস্বীকারকারীরা আপনা থেকেই। নিজেদের যাকাত নিয়ে খলিফার দরবারে হাযির হয়।
২. নবুওয়াতের মিথ্যাদাবীদের উৎখাত।
সত্য নবীর সাফল্য দেখে আরবে নবুওয়াতের কতিপয় মিথ্যা দাবীদারের উদ্ভব ঘটে। এই দুর্ভাগারা মনে করে যে, নুবওয়াতের দাবীও পার্থিব উন্নতির একটি উত্তম উপায় হতে পারে।
সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের শেষ দিকে ইয়ামানে আসওয়াদ আনাসী এবং ইয়ামামায় মুসায়লামা কাযযাব নবুওয়াতের দাবী করে বসে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইনতিকালের পর নাজদে তুলায় আসাদী এবং ইরাকে সাজা নামী এক স্ত্রীলােক নবুওয়াতের দাবী করে।
নবুওয়াতের এসব দাবীদারদের | সাথে বড় বড় দল ভিড়ে যায় এবং তাদের ফিতনা আরবের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। হযরত আবু বকর (রা) তাঁর খােদা প্রদত্ত সাহস ও সংকল্পের সাথে এদিকে মনযােগ দেন। এসব ভন্ড নবীদেরকে উপযুক্ত শাস্তিদানের জন্য | ইসলামী বাহিনী প্রেরণ করেন যার মধ্যে মুহাজির এবং আনসারও ছিলেন।
৩. মুরতাদদের মূলােৎপাটন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইনতিকালের পর কোন কোন আরব গােত্রের নেতা মুরতাদ হয়ে যায় এবং নিজ নিজ গোত্রে স্বতন্ত্র শাসন কায়েম করে। এবং কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘােষণা দেয়। এভাবে বাহরাইনে নুমান ইবনে মুনযির মাথা তুলে দাঁড়ায়। লাকীত ইবনে মালেক ওমানে বিদ্রোহ করে এবং কিন্দা অঞ্চলেও কতিপয় শাসকের আবির্ভাব ঘটে।
হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা ভন্ড নবীদের শায়েস্তা করার পর এদিকে দৃষ্টি দেন। আলা আল হাদরামীকে বাহরাইনে পাঠিয়ে নুমান ইবনে মুনযিরকে দমন করেন। অনুরূপ হযায়ফা ইবনে মিহসানের হাতে লাকীত ইবনে মালেকের ধ্বংস সাধন হয় এবং যিয়াদ ইবনে ওয়ালীদের হাতে কিলার | স্বঘােষিত শাসকদের মূলােৎপাটন হয়।
৪.কুরআন মাজীদ সংকলন।
কুরআন মজীদ বর্তমানে যেভাবে বিন্যস্ত আছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি | ওয়া সাল্লামের সময় হাফেজদের স্মৃতিতেও সেভাবেই সংরক্ষিত ছিল। তবে লিখিতভাবে একটি গ্রন্থে ছিল না বরং বিভিন্ন হােট ঘােট পুস্তিকাকারে সংরক্ষিত ছিল।
ইয়ামামার যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক কুরআনের হাফেজ শাহাদাত লাভ করলে হযরত উমর রা নবী স. যেভাবে কুরআন মজীদ বিন্যস্ত করেছিলেন সেইভাবে একটি মাত্র গ্রন্থাকারে বিন্যস্ত করে সংরক্ষণের জন্যপ্রস্তাব দেন।
হযরত আবু বকর রা প্রথমে কিছু আপত্তি করলেও পরে তার সাথে ঐকমত্য পােষণ করেন এবং কাতেৰে ওহি হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত রা এ কাজের জন্য আদিষ্ট হন। তিনি অতীব যত্ন সহকারে ছােট ছােট সহীফাসমূহ একত্র করে তার সাথে কুরআন মজীদকে একটি বিন্যস্ত গ্রন্থের আকারে সংকলিত ও লিপিবদ্ধ করেন।
আবু বকর রা. এর ইনতিকালের পর উক্ত মাসহাফ হযরত উমরের কাছে সংরক্ষিত ছিল। হযরত উসমান (রা) খলিফা হওয়ার পর তার একাধিক কপি প্রস্তুত করিয়ে অন্যান্য শহরে প্রেরণ করেন।
আমীর মুয়াবিয়ার শাসনযুগে মদীনার গভর্ণর মারওয়ান, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. এর নিকট থেকে হযরত আবু বকর রা. এর প্রস্তুতকৃত মাসহাফ নিয়ে ধ্বংস করে ফেলে।