শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৩ কার্তিক ১৪৩১ ।। ৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চান্দিনা থানা কওমি মাদরাসা সংগঠনের মাহফিল আগামীকাল ‘বৈষম্যহীন কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় রাসূল সা. এর জীবনাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হবে’ কোনো দলের লেজুরভিত্তি করে ক্ষমতায় যেতে চায় না: চরমোনাই পীর আর-রহমান হুফফাজ ফাউন্ডেশনের হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার অডিশন সম্পন্ন মিডিয়ায় অসত্য প্রচার নিন্দনীয় জঘন্য কাজ: বায়তুল মোকাররমের খতিব গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই : তারেক রহমান দারুল উলুম দেওবন্দ পরিদর্শনে লাগবে অনুমতিপত্র শেখ হাসিনা মানুষের ওপর জুলুম করেছে : জামায়াত আমির ৫ আগস্টের মতো ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না চবি ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতৃত্বে তামজিদ-রোমান

সহস্রাব্দের ঋণ; গ্রন্থ ও গ্রন্থকার প্রসঙ্গে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল হালিম নোমানি আল আযহারি

বিশ্বময় চলছে সভ্যতার সংঘাত। স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন লিখিত ‘দি ক্ল্যাশ অব সেভিলাইজেশন’ থিউরি এই সংঘাতকে নতুন করে উস্কে দিলেও ইসলাম বরাবরই পশ্চিমা সভ্যতার ঘোষিত প্রতিপক্ষ। মুসলিম সভ্যতা তার আক্রমণের শিকার।

কিন্তু সভ্যতার সংঘাতের এ যুগে আক্রমণের ধারা আর আগের মতো থাকেনি। এখন চলছে সভ্যতাকে সভ্যতা দিয়ে পরাজিত করার লড়াই। এতে পশ্চিমা সভ্যতা বজ্রগর্জনে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করছে।

তার সৈনিকরা বিশ্বময় সমস্বরে এর প্রতিধ্বনি করছেন। তারা পশ্চিমা সভ্যতাকে যতটা মহান করছেন, ঠিক ততটাই কলঙ্কময় চিত্রায়ন করছেন ইসলামি সভ্যতার।

ইসলামকে এভাবে মার দেয়াটা এতো তীব্র ও ব্যাপক যে, এর ফলে সারা বিশ্বে শিক্ষিত মুসলিমদের প্রধান একটি অংশ নামাজ-রোজার প্রশ্নে মুসলিম হলেও সভ্যতার লড়াইয়ে পাশ্চাত্যের প্রচারণায় বিশ্বাস স্থাপন করেছে।

তারা মনে করে, ধর্ম হিসেবে ইসলাম হয়তো সেরা, কিন্তু সভ্যতা হিসেবে ইসলামি সভ্যতা পশ্চিমা সভ্যতার তুলনায় অপকৃষ্ট।

পশ্চিমা সভ্যতা যেসব উপকরণ নিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে, সেগুলো ইউরোপীয় রেনেসাঁ ও আধুনিক দুনিয়া গড়ার মালসামান। তার দাবি, এইসব ‘সামানা’ মানব সভ্যতাকে অগ্রগতির শেখরে নিয়ে যাচ্ছে আর ‘সামানা’গুলো একান্তই তার।

এগুলো সে অর্জন করেছে আপন সাধনায়। এর অনেকটাই তার পূর্বপুরুষ গ্রিকদের উত্তরাধিকার। মানব জাতির প্রতি এগুলো তার অবদান। বিপরীতে ইসলামি সভ্যতা দুনিয়াকে দিয়েছে বর্বরতা আর অনগ্রসরতা।

সে জানে এই থিউরির প্রচার ও প্রতিষ্ঠার ওপর সভ্যতার লড়াইয়ে বিজয় অনেকটাই নির্ভরশীল । অতএব জয়ের পথে তুমুল গতিতে সে ধাবমান।

‘সহস্রাব্দের ঋণ’ এ বাস্তবতায় একটি বিপরিতমুখি উচ্চারণ। একটি পাল্টা তরঙ্গ। যে-সব ‘সামানা’ নিয়ে পাশ্চাত্য সভ্যতা শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করে, দুনিয়া শাসনের যুক্তি খাড়া করে এবং ইসলামকে হেয় করে, বইটি বলে, আসুন- সভ্যতার এই সম্পদগুলোর দাগ-খতিয়ান, দলিল, বায়নামা সামনে নিয়ে বসি।

কে এগুলোর শিক্ষাদাতা? কে লালন ও বিকাশদাতা? কোথায় এগুলোর উৎসমূল? এগুলো প্রকৃতই কার দান? মুসলিম-সভ্যতার যে সময়টিকে পশ্চিমারা ‘মধ্যযুগীয় বর্বরতা’র অভিধা দেন, বইটি সে সময়ের বিপরীত চিত্র দেখায় এবং পশ্চিমা সূত্র দিয়েই প্রমাণ করে পাশ্চাত্যের প্রচারণার ভ্রান্তি।

সভ্যতার শিক্ষক হিসেবে বইটি ইসলামকে প্রতিষ্ঠা দেয়। এক্ষেত্রে পশ্চিমা দুনিয়ার গর্বের উপকরণগুলোর গোপন বংশপরিচয় উদঘাটন করে এবং ঘোষনা দেয়, ‘এর জনকের নাম ‘ইসলাম।’

হাজার বছরে মুসলিমরা সভ্যতার সবক শিখিয়েছেন ইউরোপকে। দিনের জন্য সূর্যের ভূমিকা যেমন, বর্তমান সভ্যতার জন্ম ও ইউরোপীয় রেনেসাঁর জন্য ইসলামের ভূমিকা ঠিক তেমনই।

বইয়ের লেখক কবি-গবেষক মুসা আল হাফিজ একটি গতিশীল চিন্তাপ্রতিষ্ঠান। প্রজ্ঞাচর্চা ও বুদ্ধিজীবিতার যে ধারা ইসলামের সোনালি মনীষীরা রচনা করে গেছেন, বর্তমানে এই চিন্তাবিদ আলেম সে ধারার অন্যতম প্রতিনিধি।

এদেশে ইসলামপ্রশ্নে প্রাচ্যবাদের ডিসকোর্সকে বিশ্লেষণ করার পথিকৃত তিনি। তাঁর ‘প্রাচ্যবিদদের দাঁতের দাগ’ এ বিষয়ে বাংলা ভাষায় প্রথম মৌলিক গ্রন্থ। বইটি ইসলামবিচারের যে পশ্চিমা বুদ্ধিজীবিতা, তার রঙিন খোলসকে সরিয়ে উন্মোচন করে দেয় আসল স্বরূপ।

তাঁর ‘আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার’ ‘পাশ্চাত্য দর্শনে মুসলিম অবদান’ ‘আমি বিজয়ের সন্তান’ কিংবা ‘পৃথিবী ঘরে ফিরো’ গ্রন্থ প্রামাণ্য কণ্ঠে এমন ভাষ্য উচ্চারণ করে, সময়ের কান যা শোনার জন্য প্রস্তুত নয়।

ঐতিহাসিকের বিচার, দার্শনিকের দৃষ্টি ও সমাজবিজ্ঞানীর প্রজ্ঞা নিয়ে তিনি ঐতিহাসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অনুষঙ্গে অবতীর্ণ হন। কোনো ভান করা নিরপেক্ষতার চোরাবালিতে না ঘুরে মানবমুক্তি ও সত্যের প্রতি নিরাপোষ পক্ষপাত তাকে আলাদা বিশেষত্ব দেয় ।

একজন কবি হয়ে ইতিহাস, সমাজ ও সভ্যতার বৃহৎ ক্যানভাসে কেন তিনি বিচরণ করেন? এ প্রশ্নে তাঁর জবাব, ‘এ বিচরণ আসলে কবিসত্তার নির্দেশে, সত্যের জন্য উদগ্র যে দার্শনিক বোধ, তার নির্দেশে। আপনার পথের পাশে জখমি সত্যের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকবে আর আপনি শুধু গুণতে থাকবেন পথের বালুকণা, এ হয় না।’

বুঝতে পারলাম, কবিকে লড়াকু বানিয়েছে ‘জখমি সত্যের রক্তাক্ত দেহ।’ এ দেহ থেকে তিনি ‘জখম’ সারাবেন, ‘রক্ত’ মুছে সুস্থ, সবল করে তার আনন্দযাত্রা নিশ্চিত করবেন, এই তাহলে কবির অঙ্গীকার !

আমরা এই লড়াই ও অঙ্গীকারে তাঁর যাত্রার অংশীদার হতে চাই। কেননা তিনি যখন আমাদের আত্মপরিচয়ের হারানো নথিগুলো জাদুকরের মত উপস্থাপন করেন, তখন আমরা নিজেদের খুজে পাই। যখন আমাদের গৌরবের ছেঁড়া পৃষ্ঠাগুলো উদ্ধার করে তিনি মেলে ধরেন, তখন আমরা নিজেদের শক্তি ও সম্ভাবনা সম্পর্কে সুদৃঢ় হই।

তিনি যখন আমাদের অস্তিত্বের সীমানায় হানাদারির প্রতিরোধে প্রবল হাতিয়ার আমাদের হাতে তুলে দেন, তখন তার সাথে আমাদের থাকতেই হয়। উম্মাহের জীবনে নতুন উত্থানের শিখা যেন এ বইয়ের ভেতরে জ্বলে উঠছে। পাঠকদের সেই আলোর দিকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

মুসা আল হাফিজ ও বাংলা কবিতার পরম সাঁতার

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ