সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম কাতারের প্রভাবশালী আশশারক পত্রিকায় বাংলাদেশ-কাতার সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য আরবি থেকে ভাষান্তর করেছেন মুজাহিদুল ইসলাম
বাংলাদেশ-কাতারের সম্পর্ক বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন,
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে চমৎকার ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে; বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কাতার বাংলাদেশকে প্রথম দিকেই স্বীকৃতি দিয়েছে, দেশনির্মাণ ও উন্নয়নে সে সময়ের বাংলাদেশের নেতৃত্বকে তারা সমর্থন দিয়েছে, এখনো সমর্থন দিয়ে আসছেন।
অধিকন্তু বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে অপরাপর আরব ও ইসলামি দেশগুলোকে তারা উৎসাহ জুগিয়েছেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে দু দেশের মধ্যে চমৎকার ও দীর্ঘ সম্পর্কের ইতিহাস রয়েছে।
বর্তমানে কাতারে অবস্থানকারী মন্ত্রী বলেন, অভিজ্ঞতা ও জনশক্তি সরবরাহের মাধ্যমে বাংলাদেশ কাতারের অভাবনীয় উন্নয়নে মৌলিকভাবে অবদান রাখছে।
তিনি আরো বলেন, কাতার বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ; এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যে ও বিনিয়োগের অনেক অনেক সুযোগ আছে।
শাহরিয়ার আলম কাতারি বিনোয়গকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান জানান।
তিনি বলেন, কাতার-বাংলাদেশ ক্লাব কাতারি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিনিয়োগ-সুবিধা সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দিতে ভূমিকা রাখবে, পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার বৈদেশিক বিনিয়োগ সম্প্রসারণে উন্মুখ হয়ে আছে, তাছাড়া বাংলাদেশ এখন অর্থনীতিতে দ্রুত অগ্রসর দেশগুলোর অন্যতম।
আপনার মাদরাসার জন্য নিন কওমি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার
মন্ত্রী নিশ্চিত করেন, তার দেশ কাতারের সাথে বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগের সম্পর্ককে গভীর করতে এবং তা সর্বোচ্চ পর্যায় নিতে খুবই আগ্রহী।
কাতার-বাংলাদেশ ক্লাবের মাধ্যমে হওয়া বর্তমান কাতার সফর মূলত বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে শক্তিশালী করার সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করেই হয়েছে। এখানে উভয় পক্ষেরই আগ্রহ রয়েছে, কারণ কাতার ফিনান্সিয়াল সেন্টার এ কনফারেন্সে বড় আকারে ভূমিকা রেখেছে। এটা উভয় পক্ষের অর্থনৈতিক পারস্পারিক সম্পর্ক বৃদ্ধির আগ্রহের প্রকাশ।
পাশাপাশি মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, কাতার-বাংলাদেশ ক্লাব উভয় দেশে বিশেষভাবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও কাজের সুবিধা নিয়ে আলোচনায় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যকার বাণিজ্যের পরিমাণের ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, এটা খুব বেশি নয়, প্রায় ২০০ মিলিয়ন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ১৫ বছর মেয়াদের জ্বালানি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। প্রতিবছর কাতার বাংলাদেশকে আড়াই মিলিয়ন টন গ্যাস সরবরাহ করবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কাতারের থেকে প্রাকৃতিক তরল জ্বালানির দ্বিতীয় জাহাজকে স্বাগত জানিয়েছে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পোশাক, ব্যাংক, পর্যটন, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাতারের বিনিয়োগকারীরা সহজেই বিনিয়োগ করতে পারেন।
২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিতব্য ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কাতার চমৎকার ও সফলভাবে এটা আয়োজন করবে।
‘আমার বাবা এমপি, ঠিক আছে?’ (ভিডিও ভাইরাল)
মন্ত্রী আরো বলেন, তার দেশ এটাকে খুবই গুরুত্ব দেয়। কারণ, কাতারই প্রথম উপসাগরীয় ও আরব দেশ, যারা বিশ্বকাপ আয়োজন করছে। এটা পুরো অঞ্চলের গৌরবের কারণ।
মন্ত্রী নিশ্চিত করেন, গত কিছুদিন আগে কাতার শ্রমআইনে যে সংশোধনী এনেছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ; এটা আন্তর্জাতিক স্টান্ডার্ড ও মানবাধিকারের সাথে সাজুয্যপূর্ণ।
যেহেতু প্রায় চল্লিশ হাজার বাংলাদেশি কাতারে কাজ করে, তাই মন্ত্রী এতে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি আশা করেন, আগামী বছরগুলোতে কাতারে কাজের পরিবেশ আরো উন্নত হবে।
মন্ত্রী কাতার-উন্নয়ন ফান্ডের অর্থায়ণে বাংলাদেশ ও ভারতে চক্ষু রোগীদের চিকিৎসার প্রশংসা করেন।
তিনি আরো জানান, কাতারের এ উদ্যোগ বাংলাদেশি সমাজে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ চিহৃ রাখবে।
উপসাগরীয় সংকট ও কাতারের ওপর সৌদির অবরোধ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ সংকট সমাধাণযোগ্য কেননা এটা নিজেদের ভাইদের মাঝে হয়েছে। পাশাপাশি তিনি বলেন, এ অঞ্চল আর কোনো মতানৈক্য বহন করতে পারবে না।
এখানে ফিলিস্তিন সিরিয়াসহ আরো অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। সব সংকট সমাধানে সব দেশকে ঐক্যবদ্ধ হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।
মন্ত্রী জানান, এ সংকট বা অবরোধের কারণে বাংলাদেশ কাতার সম্পর্কে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসেনি। কারণ, বাংলাদেশ তার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন। পাশাপাশি উপসাগরীয় সকল দেশের সাথে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে।
মন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটে কাতারে ভূমিকার প্রশংসা করেন; কারণ কাতার তাদের বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সকল প্রকার সহযোগিতা করেছে।
পাশাপাশি মন্ত্রী বলেন, সকল প্রকার সন্ত্রাস মোকাবেলায় কাতারের প্রচেষ্টা স্পষ্ট, তবে সন্ত্রাস ও চরমপন্থা মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ কর্মপদ্ধতির কোনো বিকল্প নাই।