আবদুল্লাহ তামিম
আওয়ার ইসলাম
স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও ঢাকার রাস্তায় এই দৃশ্য কেউ কল্পনাও করতে পারেনি সে দৃশ্য শিক্ষার্থীরা দেখিয়েছে। শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সড়কে শৃঙ্খলার যে নজির দেখা গেছে তা নিয়ে আশাবাদী সব শ্রেণির মানুষ।
তবে এটি বাস্তবায়ন করা কি সম্ভব? কিভাবে সম্ভব? এসব বিষয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন লেখক, গবেষক ও মুহাদ্দিস মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন।
শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
চলমান আন্দোলন আসলে কোনো পরিকল্পনা অনুযায়ী হওয়া কোনো আন্দোলন নয়। বরং সহপাঠী নিহত হওয়ার ঘটনায় একটা পরিস্থিতি তাদের মাঠে নামিয়ে এনেছে। নেমে আসতে বাধ্য করেছে। গত কয়েকমাসে যেভাবে সড়ক দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে এর বিপরীতে সরকার কোনো প্রতিকার করেছে কী না সেটা মানুষ দেখেতে চায়।
আমরা জানি এ যে দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলোর প্রতিকারে কার্যত ব্যবস্থা চোখে পরার মত নেই। এক মাসের মাথায় ছয়জন ছাত্র নিহত হয়েছে, আর এ কয়েকদিনে নিহত হয়েছে আরো চারজন। এতে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? সেরকম কোনো দৃষ্টান্ত সামনে নেই।
যে কারণে আজ সারা দেশের মানুষ নীরবে সম্মতি দিচ্ছে এ আন্দোলনকে। আমি আবারো বলছি, এ আন্দোলন কোনো পরিকল্পিত আন্দোলন নয়, বরং স্বজনহারা বেদনার আন্দোলন।
সড়কে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাগুলো বারবার কেন ঘটছে, এগুলো কি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব?
রস্তায় যে প্রাইভেটকারগুলো আছে সেগুলো শিশু বা মানুষ দেখলে স্লো করে। কিন্তু বাসের বেপরোয়া গতি স্লো হয় না। বরং মানুষ দেখলে তাদের গতি আরও বেড়ে যায়। অনেক মানুষ সামনে থাকলেও তারা এমনভাবে গাড়ি টানে যেন মানুষগুলোর প্রাণ তাদের কাছে মূল্যহীন।
তাই আইন প্রয়োগের দিকে লক্ষ্য করলে ও বাস্তবায়নের প্রতি জোর দিলে আশা করা যায় এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা থেকে আমরা রক্ষা পাবো। এ জন্য শুধু সরকারের ইচ্ছাই যথেষ্ট বলে মনে করি আমি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কীভাবে আমরা সুন্দর একটি সমাধানে পৌঁছতে পারবো বলে মনে করেন?
এ যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে ছাত্ররা অামাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে আইন যারা তৈরি করে তারা আজ আইন মানছে না। তাহলে বুঝা গেলো আমাদের আইন আছে কিন্তু বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ নাই। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের একটিই উপায় আইনের প্রয়োগ করা।
প্রতি বছর বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ হাজার ১৬৬ জন নিহত হন৷ আর তাতে প্রতিদিন গড়ে নিহতের সংখ্যা ৬৪ জন৷ এভাবে একটি দেশে শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় যদি মানুষ মরে তাহলে এটা খুবই দুঃখজনক।
শুধু তো মানুষের প্রাণ নয় দেশের ক্ষতির পরিমাণ ৩৪ হাজার কোটি টাকা বছরে। এ দিকে সরকার ভালো করে নজর না দিলে দেশের উন্নতি হুমকির মুখে পড়বে।
তাছাড়া প্রতিনিয়ত মানুষের মৃত্যুতে হতাহতের যে আঘাত বা ধাক্কা মানুষের মনে লাগছে এটা খুবই আশাহত হওয়ার মত কথা।
শিক্ষার্থীরা সড়কে যে সুন্দর লেন পদ্ধতি দেখিয়েছে এটা কী বাস্তবায়ন করা সম্ভব?
আমাদের ঢাকায় যদি কেউ সৌদির মত গাড়ি চালাতে চায় এখানে সেটা পারবে না। ঢাকায় যারা থাকছে তারা তাদের সখে থাকছে না বরং তারা তাদের প্রয়োজন মেটাতেই থাকছে। ঢাকার রোডে যদি রিকশা বন্ধ করে দেয় তাহলে মানুষ থাকবে কীভাবে চলবে কীভাবে।
ঢাকার মানুষের হিসেব মতই তাদের যানবাহন চলচলের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে মানুষের বসবাস চলচল কষ্টকর হয়ে পড়বে।
এ পরিমাণ অধিবাসী নিয়েই ঢাকা যে সুন্দরভাবে চলতে পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ঈদ বা রমজানে দেখা যায়, ঢাকার রাস্তায়, আর্মিরা মাঠে নামলে ইফতারের আগেই দেখা যায় পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে রাস্তা।
আমরা তখন দেখি একটি ঝরঝরে ঢাকা। তাহলে আমরা বুঝলাম যে আমাদের আইনের প্রয়োগ নেই। সেটি থাকলে এমন লেন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন অসম্ভব কিছু নয়।
রাস্তায় শিক্ষার্থীরা পুলিশ, আর্মি, বিচারপতি এমনকি মন্ত্রী এমপিদের লাইসেন্সও পরীক্ষা করছে। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
আসলে বর্তমান পরিস্থিতিই বাধ্য করেছে তাদের। অনেককেই দেখা গেছে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তারা কেঁদে কেঁদে তাদের ভাই বোনের মৃত্যুর কথা বলছে। এ অবস্থাতে যে দরদ ও ভালোবাসা মন্ত্রী থেকে সরকার থেকে আশা করেছে তারা তা পায়নি।
উপরন্তু একজন মন্ত্রী শিক্ষার্থী নিহতের বিষয়ে প্রশ্ন করলে হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। সুতরাং আমি বলবো শিক্ষার্থীরা যেটা করছে তা তারা বাধ্য হয়েই করেছে এবং এটি ঠিক আছে। তারা দেখিয়ে দিয়েছে সড়কে হাজার হাজার গাড়ির লাইসেন্স নেই। এটা হয়তো আমরা কোনোদিন জানতে পারতাম না।
অনেকে মন্তব্য করছে যে ছাত্রদের ওপর বিএনপি জামায়াত ভর করেছে এই মন্তব্যগুলোর সত্যতা কতটুকু?
এটি আগের মতোই নামতা পাঠের মতো মন্তব্য। দেখুন, যাদের স্বজন মারা গেছে সেই বুঝে তাকে হারানোর বেদনা কতটুকু। আজ যারা এসি রুমে বসে নামতা পাঠের মত কিছু কথা বাতাসে উড়িয়ে দিচ্ছে এর মাধ্যমে এ আন্দোলন দমানো যায় না। এটা হারানোর ও বেদনার আন্দোলন।
যারা রাস্তায় নেমেছে, খোঁজ নিয়ে দেখুন বহু আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতার সন্তান এখানে রয়েছে। আজ সরকার যদি মনে করে শুধু এ শিক্ষার্থীরাই মাঠে নেমেছে তাহলে ভুল হবে। কারণ রাজেপথের শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের পরিবারের সদস্যও তাদের সঙ্গে আছে।
সড়ক দুর্ঘটনার ব্যাপারে শরিয়তের কি কোনো বিধান আছে?
শরিয়ত বলে রাষ্ট্র যতক্ষণ ইসলামবিরোধী আইন না করবে তা মান্য করা বশ্য কর্তব্য। ইসলামের ভাষায় তাকে ফরজ বলে। এখানে আমরা দেখি সরকারের আইন থাকলেও আমরা মানছি না। ট্রাফিক আইন মানলে আজ এত সমস্যা আর মৃত্যু ঘটত না ।
আবার অনেক সময় আইন না মানার কারণ প্রশাসনও। দেখা যায় ট্রাফিক সিগনালে লাল বাতি জ্বলছে, কিন্তু দায়িত্বে থাকা পুলিশ সেটা খেয়াল না করে গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছে। আবার যখন সবুজ বাতি জ্বলছে তখনও হাত উচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে না যাওয়ার জন্য।
সড়কে চলাচলে ইসলামের বিধান রয়েছে। সেগুলো মানলে বা সরকার প্রয়োগ করলে দুর্ঘটনা কমে যেত। মানুষও নিরাপদে চলতে পারতো।
এ আন্দোলন থামাতে সরকারকে কোন বিষয়ে মনযোগী হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
আন্দোলন থামানোর জন্য শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে আইনগুলোকে সত্যি সত্যি কার্যকর করতে হবে।
শুধু নামকা ওয়াস্তে দাবি মানা নয়। বাস্তবতা দেখালে মানুষও বুঝবে। নিজেদের বক্তব্যকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। আজ অামাদের সরকারি কর্মকর্তারা এমপি, মন্ত্রীর গাড়ির ফিটনেসের ঠিক নেই, লাইসেন্স নেই। এগুলো তো বাস্তবে লাইনে আনতে হবে। তাদেরই যদি এসব না থাকে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা থাকবে কী করে।
তাই প্রয়োজন সর্বমহলের সচেতনতা ও গণতন্ত্রের সঠিক অধিকার নিশ্চিত করা।
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন যেসব আলেম
টেলিভিশনগুলোকে সতর্কতা জানিয়ে সরকারের চিঠি
-আরআর