রকিব মুহাম্মদ
আওয়ার ইসলাম
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভাংচুরের চেষ্টার অভিযোগে অাটক মাদরাসা শিক্ষক কোনো জঙ্গী নন। আটক মো. সারোয়ার একজন মানসিক ভারসম্যহীন রোগী। তিনি কোন অালেমও নন বলে জানা গেছে।
শুক্রবার রাত ৮টার দিকে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে ভাংচুর করার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি নবীর হোসেন তাকে আটক করেন।
জানা যায়, সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে হাতুরি দিয়ে আঘাত করতে থাকেন সারোয়ার। আশপাশের লোকজন থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়।
আটক মো. সারোয়ার জেলা শহরের শিমরাইলকান্দি এলাকার মো. তাহের মিয়ার ছেলে। তিনি কাউতলী এলাকায় একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। অসুস্থতার কারণে মাঝেমাঝে তিনি এমন অমূলক আচরণ করে থাকেন বলে জানা যায়।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ আটককৃত ব্যক্তিকে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত বলেও মন্তব্য করেছেন। তারা ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করতেও ছাড়ছেন না।
কনক বড়ুয়া নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তার নিজস্ব ফেসবুক ওয়ালেে এ ঘটনার ব্যাপারে লিখেছেন, “অনেকে বলেছিলেন। অনেক করে বলেছিলাম। বলেছিলাম, দুধ কলা দিয়ে সাপ না পুষতে। কারো কথার কোন কর্ণপাতের প্রয়োজন মনে করেন নি নেত্রী। শুরুর চেষ্টা এটা। শুরু হবে, কেউ থামানোর থাকবে না। অসহায়ভাবে দেখে যেতে হবে শুধু। না জানি কী ভয়াবহ তাণ্ডবতা অপেক্ষা করছে...!”
তবে মো. সারোয়ারের এলাবাবাসী ও পরিবারের দাবী তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগে অাক্রান্ত। সোমবার ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জামিয়া ইউনুসিয়ার দাওরা হাদিসের শিক্ষার্থী ইফতিখার জামিল ফেসবুকে তার মানসিক রোগের সত্যতা তুলে ধরে একটি পোস্ট দেন।
তিনি লেখেন, গত কিছুদিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নব নির্মিত বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙ্গার চেষ্টা করেছিলো একটা ছেলে৷ পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে৷ এটা মোটামুটি সবাই-ই জানি৷ এটা নিয়ে অনেকেই অনেক ধরনের মন্তব্য করছে। কেউ বলছে মানসিক রোগী, কেউ বলছে, হামলা করেছে বলে এখন তারা মানসিক রোগী বলে চালিয়ে দিচ্ছে৷ অনেকেই আবার একধাপ এগিয়ে তাকে পাঞ্জাবি, টুপি পরা বলে জঙ্গি বলতে পিছপা হচ্ছে না৷
ইফতিখার জামিল লেখেন, আসলে ছেলেটি গত ৮/১০ বছর যাবত মানসিক রোগে ভুগছেন। সারাবছর ভালই থাকেন, কিন্তু মাঝে মাঝে সমস্যা দেখা দেয়৷ তিনি প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. এম এ মুহিত কামালের কাছে চিকিৎসাধীন আছে ।
সারোয়ারের প্রেসক্রিপশন কপি
ঘটনার ব্যাপারে জানতে আটককৃত মো. সারোয়ারের ভাই বাবলু হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, আমার ভাই কোনো জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত নন। তিনি ৪ বছর মাদরাসায় লেখাপড়া করেছেন। বর্তমানে তিনি একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করছেন।
‘ঘটনার দিন সকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায়, মাদরাসা থেকে লোকজন এসে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যায়। বিকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় এবং রাতে আমরা থানায় খোঁজ নিয়ে ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারি।’ বলেন বাবলু হোসাইন।
তিনি আরো বলেন, ২০১২ সাল থেকে আমার ভাই মানসিক রোগে আক্রান্ত। সারাবছর ভালোই থাকেন, কিন্তু মাঝেমাঝে তার মাথায় সমস্যা হয়। কিছুদিন আগে রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাণ দিতে গিয়েও তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং নাফ নদীতে লাফ দেন। পরে আইনশৃখ্ঙলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে উদ্ধার করেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে তার চিকিৎসা করিয়ে আসছি।
জানা গেছে, বর্তমানে মো. সারোয়ার জেল হাজতে আছেন।
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের শহরমুখী হওয়ার নেপথ্যে কী?
-আরআর