বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ ।। ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫


মাদরাসা শিক্ষার্থীদের শহরমুখী হওয়ার নেপথ্যে কী?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

গ্রাম ছেড়ে শহরের দিকে ছুটছে মানুষ। শহরমুখী মানুষের হার বাড়ছে দিন দিন। স্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা ও নাগরিক জীবনের আরাম আয়েশের কথা চিন্তা করেই শহরের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে মানুষের। জনমানুষের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গ্রাম-গঞ্জের কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও শহরমুখী হচ্ছে ব্যাপকভাবে। বিষয়টি নিয়ে আছে ইতিবাচক-নেতিবাচক আলোচনা।

দীর্ঘদিনের মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার একজন দক্ষ নাবিক মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া। যিনি চট্টগ্রাম আল জামিয়া আল ইসলামিয়া জমিরিয়া কাসেমুল উলুম পটিয়া’র মুহাদ্দিস এবং ইফতা বিভাগের প্রধান। তার অসংখ্য শিষ্য দেশ-বিদেশে দীনের খেদমত করে যাচ্ছেন।

মাদরাসা শিক্ষার্থীরা শহরমুখী হওয়ার নেপথ্যের কারণ উদ্ঘাটন করতে প্রথিতযশা এ আলেমের সঙ্গে  কথা বলেছেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর বার্তা সম্পাদক আবদুল্লাহ তামিম

আওয়ার ইসলাম: বর্তমানে ব্যাপকভাবে গ্রামের মাদরাসা শিক্ষার্থীরা শহরমুখী হওয়ার কারণ কী?

মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া: মাদরাসা শিক্ষার্থীরা দিন দিন আধুনিক হচ্ছে। তাদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে চালচলন চিন্তা ভাবনা সবকিছুতেই পরিবর্তন আসছে। আমাদের দেশে শহর ও গ্রাম সব জায়গাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কওমি মাদরাসা।

সবখানে সমানতালে পড়াশোনা হলেও বর্তমানে গ্রাম থেকে শহরের দিকে ছূটছে কওমি শিক্ষার্থীরা। এ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এটা বাড়তেই থাকবে। এর মূল কারণ বলে মনে করি সুযোগ সুবিধা।

গ্রামের বিভিন্ন মাদরাসায় দেখা যায় শিক্ষার্থীদের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দিতে অক্ষম থাকে। তাই ব্যাপকভাবে গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছে তারা।

আওয়ার ইসলাম: শহরমুখী শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধার কথা বলছিলেন,  কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা?

মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া: গ্রামের বিভিন্ন মাদরাসায় কালেকশন হয়ে থাকে। অনেক কষ্ট করে কালেকশন করে তারা মাদরাসা পরিচালনা করে। তাছাড়া গ্রামের মাদরাসাগুলোর লজিং সিস্টেম ছাত্রদের জন্য অনেক কষ্টকর।তাই তারা শহরের দিকে ছুটছে।

আর গ্রামের মাদরাসাগুলোর তুলনায় শহরের মাদরাসাগুলোতে  কম খরচে তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা থাকে। এসব সুবিধা ছাড়াও শহরে অনেক সময় উন্নতমানের পড়াশোনা হয় বলেও তারা শহরমুখী হচ্ছে।

আওয়ার ইসলাম: আপনি কি মনে করেন, গ্রামে ও শহরের পড়াশোনার মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে?

মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া: পড়াশোনার বিষয়টা আসলে উস্তাদদের উপর নির্ভর করে। গ্রামে অনেক সময় দেখা যায় নিয়মিত ক্লাস হয় না। কালেকশন ইত্যাদির কারণে উস্তাদ ভালো হলেও পরিবেশ ভালো থাকে না। পড়াশোনার পরিবেশ থাকে না। অনেক সময় দেখা যায় গ্রামের শিক্ষার্থীরা অতিমাত্রায় নিয়ম-কানুন পছন্দ করে না বলেও শহরের দিকে ঝুঁকছে।

আওয়ার ইসলাম: শিক্ষার্থীদের শহরমুখী হওয়ায় তাদের লাভ-ক্ষতির হিসেবটা আপনি কিভাবে করবেন?

মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া: আসলে গ্রাম-গঞ্জে পড়াশোনা হয় না যে এমন নয়। পড়াশোনা হয়। তবে অনেক সময় ভালো উস্তাদ থাকলে উন্নত পরিবেশ থাকে না। আবার পরিবেশ উন্নদ থাকলেও ভালো উস্তাদ থাকে না। সবদিক সমন্বয় যদি করা যায় তাহলে গ্রামেও ভালো পড়াশোনার সুযাগ আছে বলে মনে করি আমি।

পড়াশোনা যেখানেই হোক ভালো পড়াশোনা হলে শিক্ষার্থীরা লাভবান হবেন। আর শহরে যেহেতু ব্যবস্থাপনা ভালো থাকে তাই শিক্ষার্থীদের শহরমুখী হওয়ায় তাদের লাভের দিকটাই প্রবল বলে মনে করি।

আওয়ার ইসলাম: বর্তমানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকরাও শহরমুখী । এর কারণ কী বলে মনে করেন আপনি?

মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া: একই কারণে শিক্ষকরা শহরমুখী হচ্ছেন। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে বেতন বাকি, কালেকশন ও পরিবেশ। এ বিষয়গুলোর কারনেই বেশির ভাগ উস্তাদদের শহরমুখী হতে দেখা যায়।

আওয়ার ইসলাম: গ্রামের ছাত্ররা শহরমুখী হয়ে মোবাইল ফোন ইন্টারনেটের বব্যহার প্রকটভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে! এ বিষয়টা সম্পর্কে কী বলবেন?

মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া: দেখেন এ বিষয়টা এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। সবাই ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়ছে দিনদিন। শুধু শহর নয়, গ্রামের ছেলেরাও এখন স্মার্টফোন, ইন্টারনেটে মজে গেছে।

ছোট বড় ছাত্র-শিক্ষক আলেম উলামা, যুবক-যুবতি এমনকি গোটা বিশ্বকে এ ইন্টারনেট ইউটিউব পঙ্গু করে দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগমী প্রজন্ম পঙ্গু মূর্খ ও জ্ঞানশূন্য অবস্থায় নিজেদের আত্মপ্রকাশ ঘটাবে।

আওয়ার ইসলাম: এ নেশা ও মহামারী থেকে উত্তরণের উপায় কী হতে পারে বলে মনে করেন?

মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া: শহর কিংবা গ্রাম, সব মাদরাসাতেই মোবাইলকে হারাম ঘোষণা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য মাদরাসায় মোবাইল ব্যবহার করা না জায়েজ করতে হবে।

বর্তমানে বিদেশিরাও এটা উপলব্ধি করেছে যে মোবাইল ইন্টারনেট আগামী প্রজন্মের জন্য হুমকি। তাই অনেক দেশে এখনই ইন্টারনেট ব্যবহারে কড়াকড়ি করা হচ্ছে। আমাদের দেশেও এমন নিয়ম করা দরকার। মাদরাসায় প্রতিষ্ঠানিকভাবে আর পরিবারে পারিবারিকভাবে অভিভাবকদের সাবধান হতে হবে।

আর সরকারীভাবেও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সরকার নিজস্ব অর্থায়ণে স্যাটেলাইট প্রতিস্থাপন করেছে। স্যাটেলাইটের সাহয্যে শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যাতে ইন্টারনেটের নিষিদ্ধ সাইট বা অশ্লীল কন্টেন্ট তাদের ফোনে ঢুকতে না পারে এবং শুধু তাদের জন্য উপকারী বিষয়গুলোই তাদের দৃষ্ঠিগোচর হয়।

শক্তহাতে এসব ব্যবস্থা গ্র্রহণ করতে পারলে আমি মনে করি শহর কিংবা গ্রাম সবখানেই তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে।

‘মুসলিম জাগরণের কবি অভিধায় ফররুখকে একঘরে করার চেষ্টাকে আমি সাহিত্যিক সততার মধ্যে ধরি না’

এসএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ