বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


ভোটের রাজনীতিতে ইসলামী আন্দোলনের চমক: যেভাবে দেখছে ইসলামি দলগুলো

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু
চিফ রিপোর্টার

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ক্রমেই জমে উঠছে রাজনীতির বিচার-বিশ্লেষণ। আর তাতে নতুনভাবে যে নামটি খুব জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে তাহলো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

বিশ্লেষকদের ধারণা ভোটের রাজনীতিতে ক্রমেই ‘বড় ফ্যাক্ট’ হয়ে উঠছে ইসলামি ধারার এ দলটি।

সদ্য সমাপ্ত ৫টি সিটি নির্বাচনে ৩য় স্থান অধিকার করে সাধারণ ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পর জাতীয় পার্টি ও জামাআতে ইসলামীর মতো দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির দলগুলোকে পেছনে ফেলে ৩য় স্থান অধিকার করছে তারা। আসন্ন সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটিতেও ভালো ফলাফল আশা করছে দলটি।

দলীয় নেতাকর্মীগণ মনে করেন দলের সুসংহত নেতৃত্ব ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্যই ভোটের রাজনীতিতে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ভোটের ফলাফল আরও ভালো হতো।

বিপরীতে সরকারের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অঘোষিত আপোষ, নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ও জামাআতে ইসলামীর পৃথক অংশগ্রহণ না থাকা এবং জাতীয় নির্বাচনে প্রলুব্ধ করতে সরকারের প্রচেষ্টার প্রশ্নও উঠে আসছে আলোচনায়।

পক্ষে-বিপক্ষে উত্থাপিত প্রশ্নগুলো নিয়েই মুখোমুখি হয়েছিলাম দেশের অন্যান্য ইসলামি দলগুলোর নেতৃবৃন্দের। কিভাবে দেখছেন তারা ইসলামী আন্দোলনের এ সাফল্যকে?

দেশের প্রবীণ ইসলামি রাজনীতিবিদ ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নিজামী ইসলামী আন্দোলনের ভোটের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিস্মিত নন।

তিনি মনে করেন, ‘দেশের মানুষ যে সামগ্রিক অর্থে ইসলাম ও ইসলামি রাজনীতির দিকে ঝুঁকছে তারই নিদর্শন দলটির ভোট বৃদ্ধি। জোরালো নেতৃত্ব ও উদ্যোম থাকলে অন্যান্য ইসলামি দলগুলোও ভোটের রাজনীতিতে সফল হবে বলে মনে করেন তিনি।’

সাফল্য ধরে রাখতে ইসলামী আন্দোলনকে আরও বেশি জনসম্পৃক্ত রাজনীতি করার পরামর্শ দেন অভিজ্ঞ এ রাজনীতিবিদ।

খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদীও ইসলামি আন্দোলনের ভোটবৃদ্ধিকে সামগ্রিক সাফল্য হিসেবেই দেখতেন চান।

তারা ভাষায়- তাবলিগ জামাত, ইসলামি দলসমূহের রাজনৈতিক প্রচেষ্টা, মাদরাসা-মসজিদে আলেমদের খেদমত ও ইসলামি সাহিত্যের চর্চা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এসব প্রচেষ্টারই প্রতিফলন তাদের এ ভোটবৃদ্ধি। এটাই সত্য মানুষ ইসলামের পথে আসছে।

স্থানীয় নির্বাচনের এ ফলাফলকে সাফল্য বললেও উল্লসিত হতে রাজি নন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের

তার মতে সাফল্যের মাপকাঠি হতে পারে কেবল জাতীয় নির্বাচনই। জাতীয় নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন ভালো করলেই তাদের সফল বলা যাবে।

তার কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, ইসলামী আন্দোলনের এ সাফল্যকে অন্যান্য ইসলামি দলগুলো নিজের ভাবতে পারে কি না? তিনি বলেন, প্রথমত এভাবে ভাবার সময় এখনও আসে নি। তারা সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছে মাত্র। দ্বিতীয়ত এটা নির্ভর করবে ইসলামী আন্দোলনের আচরণের উপর। তারা যদি তাদের আচরণে বোঝায় এ সাফল্য সবার তবে অন্যরাও তাই ভাববে। আর তাদের আচরণ যদি হয় রূঢ় তবে অন্যরা মুখ ফিরিয়ে নিবে।

অন্যদিকে সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের ভোটপ্রাপ্তিতে সরকারের সঙ্গে তাদের গোপন আঁতাতেরই ছায়া দেখছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (কাসেমি গ্রুপ) এর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট শাহীনূর পাশা চৌধুরী

তিনি প্রায় রাখ-ঢাক ছাড়াই বলেন, অনেকের মতো তিনিও মনে করেন সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাতের কারণে ইসলামী আন্দোলনের প্রাপ্য ভোটের চেয়ে বেশি শো (প্রদর্শন) করা হয়েছে। নতুবা তাদের ভোটের পরিমাণ অন্যরকম হতো।

তিনি আরও বলেন, সরকারের সঙ্গে সু-সম্পর্কের কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন কিছু আসনে বিজয়ী হতে পারে। আর সরকার নিজের স্বার্থেই এটা করবে। যেনো তারা বোঝাতে পারে নির্বাচন স্বচ্ছ হয়েছে।

সরকারের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের আঁতাত রয়েছে এমন ধারণার ভিত্তি কী? প্রশ্ন করলে সাবেক এ সাংসদ বলেন, ‘বিষয়টি খুবই স্পষ্ট। আমরা (জমিয়ত) প্রেসক্লাবের ভেতর অনুষ্ঠান করার অনুমতি পাই না। আর তারা পুলিশ পাহারায় রাজপথে সমাবেশ করে। তাছাড়াও সরকার বিরোধী কোনো প্লাটফর্মে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নেই। হেফাজত ইস্যুতে সারা বাংলাদেশ এক হয়ে গেলেও তারা আসে নি। প্রশ্ন হলো, কাকে খুশি করার জন্য তারা বৃহত্তর প্লাটফর্ম থেকে দূরে থাকছে?’

No automatic alt text available.

বই কিনতে অর্ডার করুন রকমারিতে

অবশ্য আঁতাত প্রশ্নে শাহীনূর পাশার সঙ্গে একমত নন মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী। তার বক্তব্য হলো ইসলামী আন্দোলন সরকারের সাথে আঁতাত করলে তাদের ভোটের পরিমাণ হতো লক্ষাধিক ও লক্ষের কাছাকাছি। তারা ৪ লাখ ভোটের বিপরীতে ২৬ হাজার ভোট পেয়ে ৩য় হতো না।

এডভোকেট শাহীনূর পাশার প্রশ্ন ও সাম্প্রতিক সাফল্যের কারণ জানতে মুখোমুখি হয়েছিলাম ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব ও দলের নির্বাচন পরিচালন সেলের অন্যতম সদস্য মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের

সাফল্যের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের এ সাফল্য হঠাৎ করে হয় নি। আমাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফসল। দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়মতান্ত্রিক ও আন্তরিক প্রচেষ্টার পরিশ্রমেই আজ এ পর্যন্ত পৌঁছানো গেছে। আপনি খেয়াল করে দেখবেন, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে যেখানে আমাদের প্রার্থী ছিলো সেখানে জোট ও মহাজোটের বাইরে ৮০ ভাগ জায়গায় আমরাই ৩য় স্থান অধিকার করেছিলাম।

এবার বিষয়টি মিডিয়ার চোখে এসেছে। বিশেষত ৫ সিটি নির্বাচনে ৩য় স্থান অধিকার করার পর তারা ইসলামী আন্দোলনের ধারাবাহিক সাফল্যের বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেছে।’

এডভোকেট শাহীনূর পাশার অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘উনি কোন সেন্স থেকে আঁতাতের অভিযোগ করলেন বুঝলাম না। আমাদের চেয়ে সরকারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক জাতীয় পার্টির। তারা সরকারের অংশ। তাহলে খুলনায় তারা মাত্র ১ হাজার সত্তর ভোট কেনো পেলো?

আর সরকার বিরোধী প্লাটফর্ম বলতে তিনি যদি বিএনপি জামাত জোটকে বোঝান তাতে আমরা নেই। কিন্তু সরকার বিরোধী অবস্থানে যে আমরা রয়েছি এবং সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার দলের চেয়ে বেশি সোচ্চার তা তিনি অবশ্যই স্বীকার করবেন।’

নেতা নয় নীতির পরিবর্তন চায় এ স্লোগানকে সামনে রেখে রাজনীতির মায়দানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে ইসলামী আন্দোলন। একই সঙ্গে আধ্যাত্মিক ময়দানেও সারাদেশে কাজ রয়েছে দলটির। দুটি বিষয়ে বেশ ফারাক থাকলেও একত্রিত করে চলতে দলটি এখন পর্যন্ত বড় কোনো সঙ্কটের মুখে পড়েনি। এবার দেখার বিষয় সিটি আন্দোলনের মতো জাতীয় নির্বাচনে কেমন করে দলটি। রাজনীতি সচেতন অধিকাংশের প্রশ্ন এখন সেটিই।

আরও পড়ুন: প্রিয় তাবলিগি ভাইয়েরা এবার একটু ক্ষান্ত দিন!

স্বল্পমূল্যে মাদরাসার ছাত্রদের আইডি কার্ড ছাপছে লুবাবা গ্রাফিক্স

-আরআর


সম্পর্কিত খবর