বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


মাদরাসার জন্য কি আমরা আরেকটু উদার হতে পারি না?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার

সহস্র মানবতার অশ্রু আত্মত্যাগ ও এক মহাসাগর খুনের বদলে আমরা হয়েছি এক অপরূপা জনপদের স্বত্বাধিকারী। আর সে জনপদই হল আমাদের মা। সুতারাং এ জনপদে সবাই একই মায়ের সন্তান।

মানুষের মধ্যে ভাষা, সাংস্কৃতি, দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদির পার্থক্য পৃথিবীর জন্মকাল থেকেই অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু পার্থক্যের মাঝেও অব্যাহত রয়েছে পরস্পরের মধ্যে সম্প্রীতি, ভালোবাসা ও আবেগ অনুভূতির বিনিময়।

প্রতিটি মানুষ তার দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে বাঁচতে শেখে ও স্বপ্ন দেখে। সে জন্যই পৃথিবীতে মানুষের ভোগের জন্য আবিস্কার বিভিন্ন প্রকার ভোগের সামগ্রী। না হয় এক ধরনের ভোগ্য সামগ্রীর ভিত্তিতেই পরিচালিত হতো আমাদের পৃথিবী।

তেমনই একটি পার্থক্য হলো মাদরাসা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে। স্কুল, মাদরাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সবকিছু আমাদের সম্পদ। শিক্ষা ব্যবস্থার এ দুটি শাখা প্রত্যেকে যার যার অবস্থানে থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। দীর্ঘ বছর ধরে সমৃদ্ধ করে আসছে আমাদের প্রাণের স্পন্দন এ মাতৃভূমিকে।

মাতৃভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে মাতৃভূমির প্রতি সবাই তাদের দায়িত্ববোধে অটল রয়েছে।

কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বার বার বৈষম্যে দাবানলে দহন হয়ে চলেছে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। প্রথমে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক মান ছিল না। তার জন্যও সংগ্রাম করতে হয়েছে তাদের। মান পাওয়া পর তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত পাঠ্যপুস্তকের চাপ। সেটিও আপোষহীনভাবে গ্রহণ করেছে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা।

এত কিছুর পরও বিশ্ববিদ্যালয়ে কাঙ্খিত বিভাগ পেতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এরপর তাদের ওপর শুরু হয়েছে কর্মসংস্থান প্রদান ও নানা পরোক্ষ অত্যাচার। পরোক্ষ হওয়ার কারণে এ অত্যাচারের প্রতিবাদ করার কোন মানদণ্ড আবিষ্কার করতে পারে না তারা।

চাকরির সাক্ষাতকারে তাদের দিকে তাকানো হয় বাঁকা চোখে। এমনকি চাকরির সাক্ষাতকারে অনেক মাদরাসার শিক্ষার্থীকে বিদ্রুপ ও মানহানির শিকার হওয়ার লজ্জাজনক উদাহরণও রয়েছে। আজও রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রতিনিয়ত পরোক্ষ বৈষমের শিকার হচ্ছে তারা।

আমাদের সারা দেশজুড়ে রয়েছে যেসব অসংখ্য মাদরাসা, সেগুলোতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে রাষ্ট্রের অসামান্য অর্থ। যদিও তা স্কুল কলেজের চেয়ে অত্যন্ত অপ্রতুল। কিন্তু তা তো আমাদের রাষ্ট্রের জাতীয় আয় থেকেই ব্যয় হচ্ছে।

মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য রাষ্ট্রে কোনো সেবামূলক কর্মে নিয়োজিত করা না যায় তাহলে জাতির সম্পদের ভাণ্ডারের বৃহৎ একটি অংশ একদম অপাত্রেই চলে যাচ্ছে না? যার কারণে ব্যর্থতার আগুনে পুড়ছে আমাদের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী।

রমজানে লেখালেখি ও সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণ কোর্স

একদিকে সমাজ ও রাষ্ট্রে কোনো অবদান রাখতে পারছে না নৈতিকতা সমৃদ্ধ এ বৃহৎ জনগোষ্ঠিটি আর অন্যদিকে দেশপ্রেমহীনতার পাথর বাঁধছে তাদের হৃদয়ের অভ্যন্তরে।

এক পর্যায়ে তাদের তাদের এ দেশপ্রেমহীনতা যেমন তাদের বিপদ ডেকে আনবে তেমনি আরো ভয়ঙ্কর দেশ ও জাতির জন্য। তাদের জন্য যদি আমরা আমাদের হৃদয়কে প্রসারিত করি, নির্দ্বিধায় মেলে দিই ভালোবাসার ডানা- তারা বয়ে আনতে পারে আমাদের জন্য উন্নয়নের প্রশস্ত দ্বারের সমাহার।

মাদরাসা শিক্ষা কি আমাদের জন্য আদৌ প্রয়োজন আছে? কতটুকু প্রয়োজন? কী বয়ে আনবে এ শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের জন্য? এ ধরনের প্রশ্ন তোলা অথবা এসব নিয়ে গবেষণা করতে এখনো পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

১০ দিন্যব্যাপী ইসলামী রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওপর প্রশিক্ষণ কোর্স

শুধুমাত্র দেখা গেছে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে কোণঠাসা করতে। কিন্তু এটি কি আমাদের জীবনের, সম্ভাবনাময় সোনার বাংলার কোনো লালিত স্বপ্নকে সত্যে রূপান্তর করতে পারবে না?

অতীতের থেকে তাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা সহমর্মিতা ও উদারতা বেড়েছে অনেকখানি। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক মান দেওয়া হয়েছে। তাদের উচ্চশিক্ষার উদ্দেশে স্বতন্ত্র করে স্থাপন করা হয়ে ইসলামি আররি বিশ্ববিদ্যালয়। স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে কওমি মাদরাসাকে।

তারা আমাদেরই সন্তান। আমরা তাদের তুচ্ছ করলে কি হবে? তারা তো প্রতিনিয়ত আমাদের প্রতি অভিমান করে। কিন্তু কখনো বিশ্বাস ঘাতকতা করে না। তাদের প্রতি যদি আমরা আরো একটু উদার হই তাহলে নৈতিকতাসমৃদ্ধ এ জনগোষ্ঠি আমাদের জন্য বয়ে আনতে পারে অসামান্য কল্যাণ। বিষয়টি ভাবা উচিত সবার।

লেখক: কবি, সাংবাদিক ও উপস্থাপক

‘কওমি শিক্ষাকে কর্মসংস্থানের মাধ্যম মনে করা হলে তা আর ইবাদত হিসেবে টিকে থাকবে না’

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ