শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


মসজিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন এক খ্রীস্টান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম: সবুজ রংয়ের বিশাল গম্বুজওয়ালা মসজিদটি লিংকন শহরের অংশ হয়ে উঠতে শুরু করেছে। নির্মাণের অনুমতি চেয়ে স্থানীয় সরকারের কাছে আবেদন করার ১০ বছর পর আগামি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মসজিদটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার কথা। খরচ হয়েছে ২০ লাখ পাউন্ড।

শুরুর দিকে মসজিদ নির্মাণের কট্টর বিরোধী ছিলেন ইয়ান। নির্মাণের অনুমতি ঠেকাতে তিনি একটি আন্দোলনও গড়ে তুলেছিলেন।

অবশ্য তিনি বলেন, তার আপত্তির প্রধান কারণ ছিল যানজট নিয়ে উদ্বেগ।

“কোনো পার্কিং লট ছিলনা। মাত্র ১২টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল, অথচ আমি আশঙ্কা করছিলাম মসজিদ হলে ৯০টি গাড়ি এসে হাজির হবে।”

পরিস্থিতি খুবই খারাপ চেহারা নিয়েছিল। যে জায়গায় মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়, সেখানে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। জানা যায়নি কীভাবে আগুন লেগেছিল।

কট্টর মুসলিম বিরোধী দল ইংলিশ ডিফেন্স লীগ (ইডিএল) এবং ইস্ট অ্যাংলিয়ান প্যাট্রিয়টস নামে একটি কট্টর ডানপন্থী সংগঠন অন্তত তিনবার এই মসজিদের নির্মানের বিপক্ষে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে।

ইয়ানের মনে ভয় ঢুকে যায় যে তার মসজিদ বিরোধী প্রচারণা কট্টরপন্থীদের কবলে যাচ্ছে।

“আমরা তখন সংবাদপত্রে চিঠি লিখে মানুষকে বলতে শুরু করলাম যে ইডিএলকে দেখলেই মুখ ফিরিয়ে চলে যাও, লিংকনের মানুষ সেটাই করেছে।”

বার্মিংহাম বা লেস্টারের তুলনায় লিংকনের মুসলিমদের সংখ্যা অনেক কম। কিন্তু তারপরও যে মসজিদটি আগে ছিল, তাতে নামাজের জায়গা হতো না।

শুক্রবার জুমার নামাজে আড়াইশ’র মত মানুষ হতো। ফলে পাশের কোনো কম্যুনিটি হল ভাড়া করতে হতো।

নতুন মসজিদের আবেদনটি অনুমোদন না পাওয়ায়, পরবর্তীতে পরিত্যক্ত একটি দুগ্ধ খামারে মসজিদ তৈরির আরেকটি আবেদন করা হয় এবং সেটির অনুমোদন হয়ে যায়। কিন্তু তা নিয়েও শুরু হয়ে যায় সন্দেহ- এই মসজিদ তৈরির উদ্দেশ্য কি?

লিংকন ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান তানভির আহমেদ বলেন, বাতাসে গুজব ছড়াতে থাকে যে মসজিদ হলে, দিনে পাঁচবার মাইকে আজান দেওয়া হবে।

সুতরাং ভুল ভাঙাতে তিনি মানুষের দোরে দোরে যেতে শুরু করেন। বোঝাতে লাগলেন যে মুসলিমদের উপস্থিতি কোনোভাবেই এখানকার জীবনধারা পরিবর্তন করবে না।

“অনেক মানুষ আমাদের স্বাগত জানালেন, কিন্তু কিছু মানুষ খুশি ছিলেন না। আমরা লিফলেট হাতে দিলে সাথে সাথেই তা ছুঁড়ে ফেলে দিতেন।”

এমনকী অনেক মুসলিমও তাকে সন্দেহের চোখে দেখতেন।

“আমার স্ত্রী আমাকে বলতে শুরু করে ‘কেন তুমি এসব করছো? আমার নিরাপত্তা নিয়ে আমার সন্তানরা ভয়ে থাকতো।”

ইয়ান বললেন, “আমি ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। একদিন একটি ইমেল পেলাম -‘আমরা কিছু আলোচনার ব্যবস্থা করছি, আপনি কি আসবেন?’, আমি গেলাম। খুবই ভালো লাগলো।”

তারপর থেকে তিনি এতোবার মসজিদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেছেন যে অনেক মানুষ তাকে এখন রাস্তায় দেখে চিনতে পারেন।

“মুসলিমদের সাথে কথা বলে, তাদের বন্ধুত্ব নিয়ে আমি এখন গর্ব করি। অনেক মানুষ এতে নাখোশ, আমি বলি- ওরাও আমাদের মতই মানুষ”।

“আমি আমার জানালা দিয়ে বাম দিকে তাকালে গীর্জা দেখতে পাই, বাম দিকে তাকালে দেখি মসজিদ। লিংকনে পূর্ব এবং পশ্চিম একসাথে মিলেছে।”

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের স্মরণে দিবসটি বহু ইংরেজের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিন। বিশেষ করে ইয়ানের মত সাবেক সেনারা সেদিন ফুল নিয়ে প্যারেড করে শহরের নিহতদের স্মরণে তৈরি বেদিতে যান। ২০১২ সালের স্মরণ দিবসের অনুষ্ঠানে তানভির এবং অন্য মুমলিমরা ফুল নিয়ে হাজির হলে, বিস্মিত হয়ে পড়েন ইয়ান এবং অন্যান্যরা। খুশি হয়েছিলেন তারা যে তানভির এবং অন্যরা নিজের ইচ্ছায় এই সমাজের অংশ হতে চাইছে।

অনেক মুসলিম পছন্দ করেনি কিন্তু তারভীর তাদের বোঝান, “আমরা এ দেশে থাকি। এরা দেশকে বাঁচাতে জীবন দিয়েছে।”

তানভির মনে করেন একের উচিৎ অন্যের পবিত্র জায়গায় যাওয়া। “আমরা যদি তাদের পবিত্র জায়গায় যাই তারা অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। খোলাখুলি অনেক প্রশ্ন করতে পারে। তারা মসজিদে গেলে সেসব প্রশ্ন করতে কুণ্ঠা বোধ করে।”

মসজিদটি চালু হলে অনেক চিন্তামুক্ত হবেন তানভির। কিন্তু তিনি জানেন, তার কাজ শেষ হয়নি।

গতবছর সন্ত্রাসী হামলার পর, লিংকনের মুসলিমরা নতুন করে চাপে পড়েন। তানভীর নিজে গালি-গালাজের শিকার হয়েছেন। পুরনো মসজিদে ঢিল পড়েছে।

তিনি মনে করেন, স্থানীয় মুসলিমদের উচিৎ স্থানীয়দের সাথে আরো বেশি করে মেশা।

তার আশা- নতুন মসজিদে এমন একটি জায়গা রাখা হবে যেখানে অমুসলিমরা তাদের বিভিন্ন অনুষ্টানে করতে পারবে।

“অনেক মানুষ জানেই না মসজিদে কী হয়, তারা যদি মসজিদ প্রাঙ্গনে আসার সুযোগ পায়, আসে, তাহলে আমাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে তারা অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।”

আরো পড়ুন- মসজিদের শহর ঢাকাসহ সারা দেশে নামাজিদের এত কষ্ট কেন?


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ