বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
শিক্ষক ও বাবুর্চি নিয়োগ দেবে রাজধানীর আল্লামা শামসুল হক রহ.মাদরাসা উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে কি ইসলামি দলগুলো? পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী বিচ্ছিন্নভাবে দে‌শের স্বার্থ অর্জন করার সুযোগ নেই : সেনা প্রধান স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ করব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের মাঝে পড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত আ.লীগের মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা; অমান্য করলে ব্যবস্থা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর পরামর্শ -‘ফারেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে’ ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়া নিয়ে ভোট শুক্রবার

বেতনভুক্ত কালেকটরের মাধ্যমে টাকা তুলে মসজিদ নির্মাণ কতটা যৌক্তিক?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাওলাদার জহিরুল ইসলাম: রাজধানী ঢাকা  বিশ্ব দরবারে মসজিদের শহর হিসেবে পরিচিত ও বিখ্যাত। এ শহরে পৃথীবির অন্য মুসলিম রাষ্ট্রের তুলনায় অধিক মসজিদ থাকায় একে মাদিনাতুল মাসাজিদ বা মসজিদের শহর বলা হয়।

২০১৬ সালে র্ধমমন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকায় ৫ হাজার ৭৭৬টি মসজিদ রয়েছে। এ সংখ্যা এখন আরো বড়েছে তা বলার অপক্ষো রাখে না।

নতুন করে মসিজদ তেমন প্রতিষ্ঠিত না হলেও পুরনো মসজিদগুলো সংস্কারের কাজ চলে বছর জুড়ে। কোনো  কোনো মসজিদ ভেঙে গড়ে তোলা হয় নতুনভাবে, আধুনকি ডজিাইনে। আবার কোনো মসজিদে চলে রঙ বা টাইলস লাগানোর কাজ।

মসজিদ নির্মাণ বা সংস্কারে সাধারণত মসজিদ সংশ্লিষ্ট এলাকর মুসলমানরাই অংশ নেন। কিন্তু কোথাও কোথাও ঢালাওভাবে মানুষের কাছে চাঁদা তুলতে দেখা যায়।

রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। মজার ব্যাপার হলো এধরনের কালেকশন একবার শুরু হলে যেন শেষ হওয়ার আর নাম থাকে না।

রাজধানীর মুগদা বিশ্ব রোড সংলগ্ন ‘মুগদা কবরস্থান জামে মসজিদে’র অবস্থান। স্থানীয় এক দোকানদারের ভাষ্যমতে, এ মসজিদের পুন:সংস্কার কাজ শুরু হয় গত ৫ বছর আগে। কিন্তু কালকেশন শুরু হয় আরো দুই বছর আগ থেকে। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও আগের মতোই চলছে এ মসজিদের কালেকশন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ব রোডের ফুটপাথে স্থায়ীভাবে মাইক লাগিয়ে মসজিদের জন্য অর্থ সাহায্য চাওয়া হচ্ছে। ‘দান করিলে মাতা-পিতা সুখে থাকবেন কবরে, নুরের টুপি মাথায় দিয়ে উঠাবেন কাল হাশরে’ ‘কতো টাকা কতো পয়সা অকারণে চলে যায় আল্লাহর ঘরে দান করিলে আমলনামায় জমা রয়’ এমন নানা উৎসাহ মূলক কথা ভেসে আসছে মাইক থেকে।

আর দু তিন জন বাস থেকে নামা যাত্রী ও রিকশায় চলামন যাত্রীদের থেকে টাকা তুলছেন। তাদের দেখলে মনে হয় না, আল্লাহর ঘরের জন্য স্বেচ্ছায় দান সংগ্রহ করছেন। অনেকটা জোর করে নেয়ার  একটা ভাব পরিলক্ষিত হয়।

রাস্তা পার হয়ে মুগদা-মান্ডা রোডে আরেকটু অগ্রসর হলে আরেকটি মাইকের আওয়াজ কানে আসে। খেয়াল করে দেখা গেল একই মসজিদের জন্যই এখানেও টাকা তোলা হচ্ছে। একটি টেবিলের সামনে বয়স্ক মতোন একজন বসে আছেন। আর ছোট মাইক থেকে একের পর এক রেকর্ড বেজেই চলছে।

মসজিদ সংশ্লিষ্ট স্থানীয় একজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় ১০ জন কালেকটর মুগদা বিশ্ব রোডে চলাচল করা বাসে কালেকশন করে থাকেন। সকাল ৭/৮ টা থেকেই মাইক বাজতে শুরু করে। কালেকটররা কমলাপুর ওভারব্রিজ থেকে মানিকনগর পর্যন্ত জায়গায় চাঁদা তুলে থাকেন। প্রত্যেকের হাতেই রশিদ বই ও গলায় বিশেষ কার্ড ঝুলানো থাকে। এদের কেউ কেউ বেতনভুক্ত। আবার কেউ কমিশনের ওপর কাজ করে থাকেন।

আরেকটু সামনে গিয়ে দেখা যায় সুবিশাল মসজিদ দাঁড়িয়ে আছে। পরিকল্পানাধীন ৭ তলার কেবল ৪ তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই হয়েছে। এখনো প্লাস্টার-রঙ করা হয়নি। তবে ২য় তলায় নিয়মিত নামাজ হয়। অন্যসব তলায় কেবল জুমার নামাজ হয়।  ১৪ একর জমির উপর এমসজিদ প্রতিষ্ঠিত বলে জানান এক মুসল্লি।

এভাবে রাস্তায় ও বাসে বাসে চাঁদা তুলে মাসজিদ নির্মাণ  ইসলাম কতোটা সমর্থন করে তা নিয়ে কথ হয় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাদরাসার ফতোয়া বিভাগের প্রধান মুফতি সাদেকুল ইসলামের সঙ্গে।

তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন,  মসজিদ নির্মাণ বা সংস্কারের দায়িত্ব মসজিদ এলাকার মুসল্লিদের । একান্ত যদি ওই এলাকার মানুষ দরিদ্র হয় বা মসজিদ নির্মাণে অপরগতা প্রকাশ করে এবং বাস্তবেই সেখানে মসজিদ নির্মাণ  জরুরি হয় তাহলে বাইরের মানুষের থেকে স্বতস্ফূর্ত চাঁদা তোলা যেতে পারে। ইসলামে এমন সুযোগ আছে।

কিন্তু কমিশন বা পার্সেন্টিস দিয়ে  কালেকটর রাখা বৈধ  নয় বলে জানান এই আলেম। বলেন, কালেকটর রাখলে তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন দিয়ে রাখতে হবে। তার বেতন অস্পষ্ট বা অনুল্লেখ থাকার সুযোগ নেই।

আর রাস্তায় ও বাসে কালেকশনের বিষয়ে তিনি বলেন, কালেকশন করা যদি কারো বিরক্তির কারণ না হয় তাহলে এর সুযোগ আছে। কিন্তু মানুষের চলাচলে বিঘ্ন হয় বা পথচারীরা বিরক্তিবোধ করেন তাহলে এর থেকে বিরত থাকা জরুরি।

অপরদিকে এ ব্যাপারে প্রতিবেকের কথা হয় রাজধানীর ফরিদাবাদ মাদরাসার মুফতি আবদুল্লাহর সঙ্গে।

তিনি বলেন, মসজিদ  নির্মাণ করা সংশ্লিষ্ট এলাকার মুসলমানের দায়িত্ব। ঢালাওভাবে মোড়ে মোড়ে কালেকশন করা অনুচিত। এতে মসজিদ বা দীনি প্রতিষ্ঠানের প্রতি সাধারণ মুসল্লিদের শ্রদ্ধাবোধে ঘাটতি দেখা দেয়। কেউ কেউ হয়তো বিরক্তও হয়। তবে শালীনভাবে যদি স্বেচ্ছায় দান তোলা হয় তার সুযোগ আছে।

যেভাবেই হোক চাঁদা তুলে মসজিদ নির্মাণ করতেই হবে ইসলামে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। মসজিদ নির্মাণ এলাকার সবার দায়িত্ব। এলাকার মানুষ যতোটুকু সামর্থ রাখে ততোটুকুতেই ক্ষ্যান্ত থাকা উচিত।

কিন্তু একটা মসজিদের জন্য ৭ বছর ধরে প্রতিদিন রাস্তায় মাইক হাঁকানো অনুচিত বলেই মনে করছেন আলেমগণ। আল্লাহ আমাদের এ থেকে বেঁচে থাকার সুযোগ দিন এবং ধর্ম ও ইবাদতকে যেন কারো কাছে বিরক্তিকর করে না তোলা হয়  সে তৌফিক দিন।

আড়াই মাসের দীর্ঘ ছুটি মাদরাসায়; কী করবে শিক্ষার্থীরা?

দুই সিটিতে ২৭ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী চায় জামায়াত

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ