আবদুল্লাহ তামিম: আপনি কী জানেন বায়তুল্লাহর [কাবা ঘর] গিলাফ কালো কেনো। কাবা ঘরের গিলাফ শুরুতে কালো ছিলো না। নবীয়ে আকরাম সা. অন্য রঙের গিলাফ লাগিয়েছিলেন। এটা কে পরিবর্তন করলে কবে করলো এ ধরনের নানান প্রশ্ন ঘুর ঘুর করে অনেকের মাথায।
অাজ জানবো আমরা কাবার গিলাফ সম্পর্কে বিস্তারিত।
এক ধরনের বিশেষ কাপড়ে পবিত্র কাবা শরিফকে আবৃত করে রাখা হয়। একে আমরা বলি গিলাফ এবং আরবরা বলে কিসওয়া।
হজের কয়েকদিন আগে কাবার নিচের অংশ থেকে গিলাফ কিছুটা উপরে তুলে দেয়া হয় যাতে কাবা শরিফের বাইরের অংশ দেখা বা ধরা যায়। গিলাফের ইতিহাস কাবা শরিফের ইতিহাস থেকে শুরু হয়েছে।
জানা যায়, তুব্বা আল হোমায়রি প্রথমে মোটা কাপড় দিয়ে গিলাফ তৈরির প্রচলন শুরু করেন। ইসলাম পূর্ব সময়ে অনেকে কাবা শরিফের গায়ে গিলাফ পরিয়েছেন, কারণ তারা এটিকে ওয়াজিব মনে করতেন। তখন একটার উপর আরেকটা গিলাফ পরানো হত।
গিলাফগুলো ভারী বা পুরাতন হয়ে গেলে সরিয়ে ফেলা হত। গিলাফের উপর গিলাফ পরানোর ফলে ওজন বেড়ে কাবা শরিফের দেয়াল ভেঙে যাওয়ার আশংকা সৃষ্টি হলে ১৬০ হিজরিতে খলিফা আল মাহদী কাবা শরিফের গায়ে একই সময়ে একটার বেশি গিলাফ দেয়া নিষিদ্ধ করেন।
আরও পড়ুন: সংশয় কাটছে না ইসলামি দলগুলোর জোটগঠন নিয়ে
আব্বাসী খলিফা আল মামুনের সময়ে কাবা শরিফের গায়ে তিনবার গিলাফ পরানো হত। প্রথমবার ৮ জিলহজ লাল সিল্কের গিলাফ, দ্বিতীয়বার ১ রজব মিসরীয় সাদা কাবাতি কাপড়ের গিলাফ, তৃতীয়বার ২৯ রমজান সিল্কের তৈরি গিলাফ লাগানো হত।
আব্বাসীয় খলিফা আল নাসির প্রথমে কাবা শরিফে সবুজ ও পরে কালো রঙের গিলাফ পরান। সেখান থেকে আজ পর্যন্ত কাবা শরিফে কালো রঙের গিলাফ লাগানো হচ্ছে।
৭৫১ হিজরিতে মিসরের বাদশাহ ইসমাইল বিন নাসের বিন কলাউন কাবা শরিফের গিলাফ তৈরির জন্য একটি বিশেষ ওয়াকফ ঘোষণা করেন।
এই ওয়াকফ থেকে প্রতি বছর খানায়ে কাবার জন্য বাইরের একটি কালো গিলাফ এবং একটি অভ্যন্তরীণ লাল গিলাফ তৈরি করা হত। এখন কাবা শরিফের দরজা ও বাইরের গিলাফ দুটোই মজবুত রেশমি কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়।
গিলাফের মোট ৫টি টুকরো তৈরি করা হয়। চারটি টুকরো চারদিকে এবং বাকি টুকরোটি দরজায় লাগানো হয়। টুকরোগুলো পরস্পর সেলাই করা থাকে। বর্তমানে প্রতি বছর ৯ জিলহজ কাবা শরিফের গায়ে পরানো হয় নতুন গিলাফ।
নতুন গিলাফ পরানোর সময়ে পুরাতন গিলাফটি সরিয়ে ফেলা হয়। পরে পুরাতন গিলাফটি কেটে মুসলিম দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের উপহার দেয়া হয়। প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন রেশম দিয়ে তৈরি করা হয় কাবার গিলাফ। রেশমকে রং দিয়ে কালো করা হয়।
পরে গিলাফে বিভিন্ন দোয়ার নকশা আঁকা হয়। গিলাফের উচ্চতা ১৪ মিটার। উপরের তৃতীয়াংশে ৯৫ সেন্টিমিটার চওড়া বন্ধনীতে কোরআনের আয়াত লেখা।
বন্ধনীতে ইসলামি করুকার্যখচিত একটি ফ্রেম থাকে। বন্ধনীটি সোনার প্রলেপ দেয়া রুপালি তারের মাধ্যমে এমব্রয়ডারি করা হয়। এই বন্ধনীটি কাবা শরিফের চারধারে পরিবেষ্টিত থাকে। ৪৭ মিটার লম্বা বন্ধনীটি ১৬ টুকরায় বিভক্ত থাকে।
বন্ধনীটির নিচে প্রতি কোনায় সূরা ইখলাস, নিচে পৃথক পৃথক ফ্রেমে লেখা হয় কুরআনের ছয়টি আয়াত। এতে এমব্র্রডারি করে উপরে সোনা ও রুপার চিকন তার লাগানো হয়। এছাড়া গিলাফে ১১টি নকশা করা মোমবাতির প্রতিকৃতি বসানো হয়।
নাসের আব্বাসী নামের একজন বাদশাহ সবুজ রঙের গিলাফ তারপর কালো রঙের গিলাফ চড়ান। সেই সময় থেকে আজও কালো গিলাফ চড়ানো হচ্ছে। আব্বাসী খেলাফত পতনের পর ৬৫৯ হিজরিতে সর্বপ্রথম ইয়েমেনী বাদশাহ ‘মুজাফফর’ কাবা ঘরের গিলাফ লাগান।
তিনি বেশ কয়েক বছর মিশরি বাদশাহর সঙ্গে পালাক্রমে গিলাফ চড়ানোর কাজ চালু রাখেন।
৬৬১ হিজরিতে আব্বাসীদের পর যে মিশরি শাসক সর্বপ্রথম গিলাফ চড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি হচ্ছেন বাদশাহ যাহের বাইবেরাস বন্দুকধারী।
৭৫১ হিজরিতে মিশরের বাদশাহ ইসমাইল বিন নাসের বিন মুহাম্মাদ বিন কালাউন কাবার গেলাফের জন্য বিশেষ ওয়াকফের ব্যবস্থা করেন।
তিনি কাবার জন্য প্রতি বছর কালো গিলাফ ও প্রতি পাঁচ বছর পর মদীনায় রাসুল সা. এর রওজার জন্য সবুজ রঙের গিলাফ পাঠাতেন। এর পর থেকে এ ধারাবাহিকতা চলে আসছে।
আরো পড়ুন
‘মাওলানা সাদ চাইলে এক মিনিটেই তাবলিগের আগুন নেভাতে পারেন;
যারা বায়তুল্লাহ’র সফর করেনি তাদেরকে এর ব্যাকুলতা বোঝানো অসম্ভব