শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


চরমোনাই মাহফিলে যা বললেন দেওবন্দের তিন আলেম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাওলাদার জহিরুল ইসলাম: আজ ৮ মার্চ চরমোনাই জামিয়া রশিদিয়া ময়দানে অনুষ্ঠিত উলামা মাশায়েখ সম্মেলনে মূল্যাবান নসিহত পেশ করেন ভারতে দারুল উলুম দেওবন্দের ৪ শীর্ষ আলেম। তারা তাদের বয়ানে মুসলিমদের ঈমান আমলের প্রতি সর্বদা গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান।

আল্লামা কমরুদ্দীন আহমদ

দারুল উলুম দেওবন্দের শায়খে সানি আল্লামা কমরুদ্দীন আহমদ বলেন, আল্লাহ তায়ালা হজরত মুহাম্মদ সা.এর মাঝে অনেক সৌন্দর্য এবং বৈশিষ্ট্য দান করেছিলেন। হজরত আয়েশা রা. বলতেন, হজরত ইউসুফ আ.এর সৌন্দর্য দেখে মিশরের নারীরা ফল কাটার পরিবর্তে তাদের হাত কেটে ফেলেছিলো। যদি তারা মুহাম্মদ স.এর সৌন্দর্য দেখতো তাহলে নিজেদের কলিজা কেটে ফেলতো!

রাসুল সা.কে হাওজে কাউসার দিয়েও সম্মনিত করা হয়েছে। যেখানে তারকা সমপরিমান পেয়ালা থাকবে। রাসুল সেখানে উম্মতকে পানি পান করাবেন। কিন্তু উম্মতকে এ নেয়ামত লাভ করতে হলে আমল করতে হবে। প্রথমত নিয়মিত নামাজ আদায় করতে হবে।

রাসুল সা. হাদিসে ইরশাদ করেছেন, আমার তিন জিনিস প্রিয়, নামাজ, সুগন্ধি ও নারী। আপনারা এ ময়দান থেকে এ শপথ নিন যে, নিজেরাও নামাজ আদায়ে যত্নবান হবেন এবং নিজ পরিবারকেও উৎসাহিত করবেন। আপানারা উলামা, মাদরাসা মসজিদের সাথে সুসম্পর্ক রাখুন।

বড়ই আনন্দের বিষয় যে হজরত পীর সাহেবের ডাকে এ ময়দানে লাখ লাখ মুসলমান একত্রিত হয়েছেন। এটা আমাদের পূর্ববর্তী বুজুর্গদের মকবুলিয়াতের নিদর্শনও বটে। (চরমোনাইর) এ সিলসিলা হজরত গাঙ্গুহী রহ.এর সিলসিলা। আর তিনি ছিলেন আকাবির উলামাদের মুরুব্বী।

আমি আমার বড়দের থেকে শুনেছি, হজরত গাঙ্গুহী রহ.এর খানকার জিকিরের প্রভাব এই ছিলো যে এক ধোপা যখন কাপড় পরিস্কার করতো তখনও সে জিকির করতো। এ সিলসিলা একটি বরকতময় সিলসিলা।

আল্লাহ তায়ালা আপানাদের এ হক তরিকার সাথে, পীর সাহেবের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। আল্লাহ সবাইকে হকের উপর অটল বিচলতা এবং এখলাস দান করুন। সমস্ত অনিষ্টতা ও বিপদ থেকে হেফাজত করুন।

আল্লামা হাবিবুর রহামন আজমি

দারুল উলুম দেওবন্দের সিনিয়র মুহাদ্দিস ও জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ নেতা আল্লামা হাবিবুর রহমান আজমি বলেন, ‘আপনাদের আমন্ত্রণে আমরা ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে এখানে উপস্থিত হয়েছি। আপনাদের সাথে একত্রিত হতে পারা বড়ই আনন্দের।

রাসুল সা. বলেছেন, আমাকে শিক্ষক হিসেবে পাঠানো হয়েছে। সে দিক থেকে উম্মত হলো শিক্ষার্থী। রাসুল সা. স্বীয় ২৩ বছরের জীবনে সমস্ত শিক্ষা পূর্ণ করে গিয়েছেন।

শুধু মসজিদ বা মাদরাসায় বসে থাকার নাম ইসলাম নয়। ইসালাম তো আপনাকে এ আহ্বান করে- আপনি আপনার পুরো জীবনকেই ইসলামের নির্দেশ অনুযায়ী ঢেলে সাজাবেন।

রাসুলা সা. একদিকে যেমন ঈমান ও ইবাদতের শিক্ষা দিয়েছেন অপরদিকে সামাজিক রীতিনীতিও শিক্ষা দিয়েছেন। যে রাসুল মসজিদে নববীতে ইমামতি করেছেন সে রাসুলই বদর যুদ্ধে সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

একদিনে মুসলামানদের কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন অপরদিকে মদিনার বিচারপতিও ছিলেন। রাসুলের জীবনের সবটাই শিক্ষায় পরিপূর্ণ।

রাসুল নামাজ, রোজা, হজ যাকাতের আদেশ বর্ণনা করেছেন আবার নিজে ব্যবসা বাণিজ্যও করেছেন। বৈরাগ্যবাদিতার নাম ইসলাম নয় যে আপনি পৃথিবী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মসজিদের এক কোণায় বসে থাকবেন। বরং ইসলাম আপানকে এ শিক্ষাই দেয় যে জীবনের প্রতিটি স্তরে, প্রতিটি সেক্টরে ইসলামি বিধান বাস্তবায়ন করবেন।

যে ইসলামে নামাজ রোজার বিধান আছে সে ইসলামে ব্যবসা, কৃষি, সমাজ, ও রাষ্ট্র পরিচালনারও বিধান রয়েছে। আমাদের দেখতে হবে, ইসলাম কীভাবে রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচারলনার নির্দেশ দেয় সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

উলামায়ে কেরামের উচিত আল্লামা ইবনে তাইমিয়ার ‘আস সিয়াসাতুল ইসলামিয়া’ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করা। ইসলামি রাষ্ট্রের মৌলিক বিষয়ের একটি হলো, পরামর্শভিত্তিক কাজ করা। দ্বিতীয়ত উপযুক্ত ব্যক্তিকে মসনদে বসানো।

নিজ ছেলে, ভাই, আত্মীয়, শাগরেদ ক্ষমতা হস্তান্তর না করা। তৃতীয়ত, মানুষের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা, ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখা। চতুর্থত সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা। সাহাবায়ে কেরামের রাষ্ট্র পরিচালনায় এ ৪টি মূলনীতিই বিদ্যমান ছিলো।

আল্লামা মুজিবুল্লাহ কাসেমী

দারুল উলুম দেওবন্দের অপর সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা মুজিবুল্লাহ কাসেমী বলেন, উলামায়ে কেরামের দুটি অবস্থান রয়েছে। এক মুসলমান হওয়া। দুই আলেম হওয়া।

যদি এই পৃথিবীকে একটি হাসপাতালের সাথে তুলনা করা হয় তাহলে কুরআন হবে চিফ মেডিকেল অফিসার, হাদিস শরিফ হবে এ্যসিস্টেন্ট মেডিকেল অফিসার, সাহাবায়ে কেরামের জীবনী হবে মেডিকেল হল আর উলামাদের অবস্থান হবে নার্সের মতো।

যাদের কাজ হলো ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী রোগীদের ওষুধ সেবন করানো ও যা রোগীর জন্য ক্ষতিকর তা থেকে তাদের দূরে রাখা।

তাই আলেমদের কাজ হলো উম্মতকে সৎ কাজের প্রতি আহ্বান করা, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা।

হজরত মুহাম্মদ সা. যেহেতু শেষ নবি আর দীনে মুহাম্মদি কিয়ামত পর্যন্ত বাকি থাকবে। আর তা হবে উলামাদের মাধ্যমেই। তাই উম্মত কখনোই আলেমদের থেকে অমুখাপেক্ষী হতে পারে না। উলামাদের বনি  ইসরাইলের নবির সাথে তুলনা করা হয়েছে। তাই নিজেদের মর্যাদা অনুযায়ী দীনের কাজ আঞ্জাম দেয়া চাই।

আরও পড়ুন: ‘মৌলভি এছহাক! হজরত গাঙ্গুহি’র তরিকা আপনার উসিলায় বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছবে’


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ