শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


‘মৌলভি এছহাক! হজরত গাঙ্গুহি’র তরিকা আপনার উসিলায় বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছবে’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু
চিফ রিপোর্টার

পাক-ভারত- বাংলাদেশ উপমহাদেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে পীর মাশায়েখের ভূমিকাই সর্বশ্রেষ্ঠ। উপমহাদেশে ইসলামের প্রচারে তারাই সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন।

পৃথিবীর ইতিহাসে পিছিয়ে থাকা এই উপমহাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে ইসলামের আলো তারাই পৌঁছে দিয়েছেন। তাই উপমহাদেশের ইসলামের ইতিহাসের সঙ্গে তাদের জীবন ও ত্যাগের ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

এই উপমহাদেশের ইসলাম প্রচারের ধারায় প্রথম দিকে রয়েছেন হজরত খাজা মাইনুদ্দিন চিশতি রহ., হজরত খাজা নিজামুদ্দিন রহ., হজরত শাহ জালাল ইয়ামানি রহ., শাহ আলি বাগদাদি রহ., খান জাহান আলি রহ. প্রমুখ। তাদের মাধ্যমে উপমহাদেশে ইসলাম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

ইসলাম প্রচার ও প্রসারের মতো এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে ইসলামী জীবনব্যবস্থা ও শিক্ষা-দীক্ষার সঙ্গে পরিচিত করে তোলা; তাদের পরিপালনের দায়িত্বও পীর মাশায়েখগণ পালন করেছেন। এবং এখনো করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষার প্রচার, ইসলাম থেকে দূরে সড়ে যাওয়া মানুষকে পথপ্রদর্শন করার ক্ষেত্রে যে সব পীর মাশায়েখগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন চরমোনাই-এর পীরগণ তাদের অন্যতম।

চরমোনাইর প্রথম পীর এবং চরমোনাই দরবারের প্রতিষ্ঠা সৈয়দ মোহাম্মদ এছহাক রহ.। তিনি বাংলা ১৩১২ সালে বরিশালের পশুরকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার ছিলো অত্র অঞ্চলে ধর্মীয় ঐতিহ্যের অধিকারী ও সম্ভ্রান্ত।

মাতা ও পিতা উভয় দিক থেকে তিনি ছিলেন সৈয়দ তথা রাসুলের বংশধর। এজন্য তাকে ‘নজিবুত তারফাইন’ বলা হয়।

আব্বাসী খেলাফতের শেষভাগে তাঁর পূর্ব পুরুষগণ বাগদাদ থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বের হন। শেষ পর্যন্ত বরিশাল শহরের পূর্বকোণে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন। স্থানীয়দের সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হন।

তিনি স্বীয় মামা ও কারী ইবরাহিম রহ. এর বিশিষ্ট খলিফা মাওলানা সৈয়দ আবদুল জব্বার রহ. এর নিবীড় তত্ত্বাবধানে লালিত পালিত হন।

তিনি ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্র। আরবি ও ফার্সি ভাষায় ছিলো তাঁর দারুণ দক্ষতা।রাখতেন গভীর ধর্মীয় জ্ঞান। তিনি ভাগনেকে ঠিক নিজের মতো করেই গড়ে তোলেন। এরপর ইলমে কেরাতে আরও দক্ষতা অর্জনের জন্য কারী ইবরাহিম রহ. এর কাছে পাঠিয়ে দেন।

সৈয়দ মোহাম্মদ এছহাক রহ. ইলমে কেরাতের শিক্ষা গ্রহণের পর উচ্চতর জ্ঞান অর্জনের জন্য ভর্তি হন ভোলা দারুল হাদিস আলিয়া মাদরাসায়। সেখান থেকেই জামাতে উলা শেষ করেন।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করে মনোযোগী হন আধ্যাত্মিক সাধনায়। ইলমে মারেফত ছাড়া ইলমে শরীয়তের জ্ঞান অনেকটাই অপূর্ণ। তাই তিনি ইলমে মারেফাতের শিক্ষার্জনের জন্য কুতবুল আলম কারী ইবরাহিম রহ. হাতে বায়আত গ্রহণ করেন।

তাঁর কাছ থেকে আধ্যাত্মিক সাধনায় মগ্ন হন। শিষ্যের নিষ্ঠা ও মনোযোগ, আগ্রহ ও উদ্দীপনা দেখে মন ভরে যায় শায়খের। স্নেহ ও ভালোবাসায় সিক্ত করেন তাকে। কারী ইবরাহিম রহ. বড় মায়া ভরে তাকে ডাকতেন, বাবা মৌলভি এছহাক।

প্রাতিষ্ঠানিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা সমাপণের পর পীরের নির্দেশ অনুযায়ী মানুষের মাঝে ইসলামের বাণী প্রচার শুরু করেন। শুরু করেন চিশতিয়া সাবেরিয়া তরিকার খেদমত। নিজের সর্বস্ব দিয়ে কাজ করে যান গণ মানুষের জন্য।

দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সর্বত্র ঘুরে ঘুরে মানুষের মাঝে হেদায়েতের বাণী ছড়াতেন। রোপন করতেন খোদাপ্রেমের বীজ।

কারণ, তার শায়খ কুতবুল আলম কারী ইবরাহিম রহ. তাকে বলেছিলেন, বাবা মৌলভি এছহাক! আপনি বিনা চাষের জমিনে দানা রোপন করবেন। তিনি দোয়া করে বলেন, ‘বাবা মৌলভি এছহাক! যান কুতুবে আলম হজরত রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি রহ. এর তরিকা আপনার উসিলায় আল্লাহপাক বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌঁছাইয়া দিবেন।  আল্লাহর ফজলে আপনার সহিত কেহ পারিবে না’।

সত্যিই তিনি হাজারো অনাবাদী অনুর্বর মানব হৃদয়কে খোদার আরশে পরিণত করেছেন। জ্বালিয়েছেন আল্লাহ প্রেমের অনির্বাণ শিখা। তাঁর উসিলায় মুফতি রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি রহ. এর তরিকা বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে।

আপনার সন্তানকে ভর্তি করুন ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট মাদরাসায়

মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ এছহাক রহ. যেমন ছিলেন একজন কামেল পীর তেমন ছিলেন একজন মর্দে মুজাহিদ। তিনি সারা জীবন ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আন্দোলন করে গেছেন। রাজনৈতিকভাবে তিনি ছিলেন নেজামে ইসলাম পার্টির নেতা ও কর্মী। তখন নেজামে ইসলামই ছিলো বাংলাদেশে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় ও শক্তিশালী।

তাঁর এই সংগ্রামী মনোভাবের প্রতিফলন আমরা তাঁর জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখতে পাই। যেমন, তিনি তাঁর ব্যক্তিগত লঞ্চের নাম দেন জেহাদে ইসলাম। অন্যায় ও অবিচারের প্রতি তিনি ছিলেন একজন জ্বালাময়ী কণ্ঠস্বর। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে কখনো কুণ্ঠাবোধ করতেন।

১৯৭১ সালে যখন বাংলার সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অন্যায়ভাবে ঝাপিয়ে পড়লো তখন তিনি তার প্রতিবাদ করেন। নিজের হাতে গড়া চরমোনাই মাদরাসায় আশ্রয় দেন মুক্তিবাহিনীকে। তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি।

শুধু মুখে নয় লেখনির মাধ্যমেও তিনি মিটিয়েছেন আল্লাহ পথের পথিকদের জ্ঞানতৃষ্ণা। হালকা করেছেন খোদা প্রেমের যন্ত্রণা। তার লেখা ২৭টি বই আজও মুমিন হৃদয়ে আলোর ফুল ফোটায়। আলো ছড়ায়। জ্বালায় জ্ঞানের প্রদীপ। যোগায় আত্মার খোরাক।

আপনার মোবাইলফোনে ইনস্টল করুন গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিতাব ও বয়ানের অ্যাপ

তাঁর লেখা বইগুলোর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো, আশেক মাশুক, মারেফতের হক, বেহেস্তের সুখ, দোজখের দু:খ, ভেদে মারেফত, যুক্তিপূর্ণ ওয়াজ, তফসীরে আমপারা, হজরত ক্বারী ইব্রাহীম সাহেবের র.জীবনী। ইত্যাদি।

ওয়াজ- নসিহত এবং বই লেখা ছাড়াও তিনি ইলমে দীনের খেদমতের জন্য ১৯২৪ সালে একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান চরমোনাই মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।

বেলা শেষে ডুবে যায় সূর্য। ঘরে ফেরে পাখি। জীবনের সব ক্লান্তি নিয়ে মানুষ ফেরে তার প্রিয়জনের কাছে। ভুলে যেতে সব কষ্ট। পেতে ভালোবাসার প্রতিদান। তেমনি ইহজীবনের সব দায়িত্ব শেষে প্রিয়তম আল্লাহর দরবারে হাজির হন সৈয়দ মোহাম্মদ এছহাক রহ.।

বাংলা ৩০ ভাদ্র ১৩৮০ সালে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা দান করেন। আমিন।

চরমোনাইয়ের মাহফিলের গুরুত্বপূর্ণ বয়ানগুলোর লাইভ শুনুন আওয়ার ইসলাম পেইজ থেকে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ