হাওলাদার জহিরুল ইসলাম: ১ মার্চ ভারতের নয়া দিল্লিতে বিজ্ঞান ভবনের একটি অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘আ থিংকিং ম্যানস গাইড টু ইসলাম’ শীর্ষক বইয়ের উর্দু অনুবাদ জর্ডনের রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহকে উপহার দেন।
যা এই মুহূর্তে বিশ্ব রাজনীতির একটি চর্চিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রিন্স গাজী বিন মুহাম্মদ উক্ত বইটি লিখেছেন এবং জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মহাসচিব মাওলানা মাহমুদ মাদানী বইটির উর্দু অনুবাদ করেছেন।
এদিন জর্ডনের রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘Islamic Heritage: promoting, understanding and moderation’ শীর্ষক একটি বক্তব্য প্রদান করেন।
যার অনূদিত উর্দু বই নিয়ে এতো সমাদৃিত সেই মাওলানা মাহমুদ মাদানী অবশ্য বর্তমান যুগে বইটির তাৎপর্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, প্রিন্স গাজী বিন মুহাম্মদের লেখা ‘আ থিংকিং ম্যানস গাইড টু ইসলাম’ এর উর্দু অনুবাদকৃত বই প্রকাশ একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
এই বইয়ে ইসলামের প্রকৃত অর্থ, ইসলামের বিশ্বজনীনতা, ইসলামের ভালোবাসা, শান্তি, সহাবস্থানের পয়গাম সুচারুভাবে ফুটে উঠেছে। আমাদের প্রধান অতিথি রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ যথার্থই বলেছেন, এই বই উপসাগরীয় দেশগুলির মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে।
মাহমুদ মাদানী বলেন, আমরা ভারতীয়দের জন্য পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববন্ধন, সহিষ্ণুতা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষার মানুষ বসবাস করে। কিন্তু ভারতবাসীরা এক অটুট বন্ধনে একে অপরের সঙ্গে আবদ্ধ।
আমাদের এই জাতীয় ঐক্যের প্রাপ্তি আকস্মিক কোন দুর্ঘটনাবশত নয়; বরং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই দেশের আত্মা ও মাটির সঙ্গে একাত্ম হয়ে বিকশিত হয়েছে।
আমাদের দেশের শ্রী রামচন্দ্রজী, গৌতম বুদ্ধ এবং মহাবীর জৈনের মানবপ্রেমের বাণী ভারতবাসীকে মুগ্ধ করেছিল। তারপর হাজার হাজার সূফি সাধকগণ রাসূলুল্লাহ সা. এর প্রদর্শিত ইসলামের ভালোবাসার পয়গামকে এই দেশের মানুষদের নিকট পেশ করেন।
তিনি আরও বলেন, হযরত খাজা মঈনউদ্দীন চিশতী, হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া, হযরত খাজা আমীর খসরু, কবীরের ন্যায় সূফি সাধকগণ ভালোবাসার যে ব্যুহ রচনা করে ভারতবাসীদের হৃদয় জয় করেন তা আমাদের ইসলামী ও জাতীয় সম্পদ।
ভারতবাসীরা রাজা-মহারাজাদের পরিবর্তে হযরত খাজা মঈনউদ্দীন চিশতী আজমেরী রহ. কে নিজেদের হৃদয়ের মণিকোঠায় বসিয়ে রাখেন। বস্তুত যিনি হৃদয় জয় করেন তিনিই তো আসল বাদশাহ। মহাত্মা গান্ধীর সাফল্যের রহস্য সবাইকে একসাথে নিয়ে চলার চেতনা।
তাঁর সঙ্গে যারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন করেন তাঁরা হলেন আমাদের আকাবির শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান রহ. ও মাওলানা আবুল কালাম আজাদ রহ. ।
শায়খুল ইসলাম মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের প্রচারক ছিলেন।
মানুষের হৃদয় জয় করার জন্য মুসলমানদের নিকট দুটি হাতিয়ার প্রথম ঈমান, দ্বিতীয় ইসলাম। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, মুমিন ঐ ব্যক্তি যার হাতে সকল মানুষের ধন ও প্রাণ নিরাপদ থাকে । দ্বীন ইসলামের এই মডেল পেশ করার মাধ্যমে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ সর্বদাই সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছে।
গত এক দশক ধরে এই সংগ্রাম চলছে। আমরা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ৬ হাজারের বেশি মুফতি ও উলামার ফতোয়া সংকলিত করেছি। এরপর আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে আড়াইশ’র বেশি সভা করেছি।
আমরা দুনিয়াকে জানিয়েছি, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ইসলামেরই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রয়েছে। আমরা বিশ্বের বড় বড় শক্তির কাছে আবেদন জানাচ্ছি, তাঁরা যেন তাঁদের রেজুলেশনে ইসলামের শান্তির বার্তাকে সামিল করে; কারণ ধর্মই বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের কাছে আসল দর্শন। ঘৃণা ও সহিংসতাকে পর্যদুস্ত করতে ধর্মের চেয়ে বড় হাতিয়ার আর কিছু নেই।
মাওলানা মাহমুদ মাদানী আরও বলেন, ইসলাম দেশবাসীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের নির্দেশ দেয়। সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদের উপর লড়তে গেলে কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সংকীর্ণ স্বার্থের উপর জাতীয় স্বার্থকে স্থান দিতে হবে। আমাদের বুজুর্গগণ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেশের কল্যাণের তাৎপর্য তুলে ধরেছেন।
আমাদের বুজুর্গদের সিদ্ধান্ত হল, ভারতবর্ষের মুসলমানদের স্বার্থ কখনই এ দেশের স্বার্থ থেকে পৃথক নয়।
সূত্র: রোজনামা খবর
জর্ডানের রাজাকে মাহমুদ মাদানীর বই উপহার দিলেন নরেন্দ্র মোদী