শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
জুমার খুতবার আগে ব্রেন স্ট্রোক, রাতে ইন্তেকাল তরুণ ইমামের জামিয়া গহরপুরের ফুজালা ও প্রাক্তনদের আয়োজনে ‘মাহফিলে নূর’ সম্প্রীতির বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক সকল অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে: ছাত্র জমিয়ত চিন্ময়ের মুক্তি চাওয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের উলম্ব অভিযান: রিজভী মতিঝিল থানা হেফাজতে ইসলামের কমিটি গঠন এডভোকেট হত্যার বিচার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে চাঁদপুর পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ‘সংবিধানে কুরআন-সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক কোন কিছু রাখা যাবে না’ চাঁদপুর জেলা সিরাত সম্মেলন আগামীকাল, থাকছেন হেফাজত আমীর চট্টগ্রামে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের বিক্ষোভ-সমাবেশে জনস্রোত মৌলভীবাজারে আইনজীবী হত্যা ও ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

‘আমি উৎসাহী জনতা’ ও নাগরিক সাংবাদিকতার চর্চা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তারেকুল ইসলাম
রাজনৈতিক বিশ্লেষক

সম্প্রতি একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে বেইলি রোডে উল্টোপথে গাড়ি চালানোর অপরাধে ইটিভির সিইও এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর সভাপতি মনজুরুল ইসলাম বুলবুলের গাড়ি আটকায় পুলিশ।

কর্তব্যরত পুলিশ তাকে গাড়ির কাগজপত্র দেখাতে বললে তিনি দেখাতে পারেননি; বরং ওই পুলিশ কর্মকর্তার সাথে অযথা বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হন।

প্রথম অপরাধ— ট্রাফিক আইন অমান্য করে উল্টোপথে তার গাড়ি এসেছে। আর দ্বিতীয় অপরাধ— তার গাড়ির কাগজপত্র নেই। তারওপর লম্বা লম্বা কথা বলে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তার সাথে অনর্থক ঝগড়া করা।

যাই হোক, এই পুরো ঘটনাটি সেখানে উপস্থিত একজন আগ্রহী জনতা তার মোবাইলে ভিডিও করেন। এবং পরে তিনি তার ফেইসবুক টাইমলাইনে সেটা প্রকাশ করেন।

পরবর্তীতে এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় এবং মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের মতো একজন সিনিয়র দায়িত্বশীল সাংবাদিক নেতার এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, ট্রাফিক আইন অমান্য করা এবং ধরা পড়ার পর কর্তব্যরত পুলিশের সাথে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হওয়ায় ব্যাপক নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে।

ভিডিও’র শেষদিকে সাংবাদিক নেতা বুলবুল ভিডিও ধারণকারীর মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হু আর ইউ? তখন ভিডিও ধারণকারী লোকটি বললো, ‘আমি উৎসাহী জনতা’। তার এই কথাটি ইতোমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে।

সেই ‘উৎসাহী জনতা’র ভিডিও ধারণ এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এর প্রকাশপূর্বক প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব বিবেচনায় এটি বাংলাদেশে নাগরিক সাংবাদিকতা বা সিটিজেন জার্নালিজম চর্চার একটি আদর্শ দৃষ্টান্ত বলে আমি মনে করি!

এর আগেও এক সাধারণ জনতার ধারণকৃত ভিডিও’র কল্যাণে শাবিপ্রবি’র ছাত্রলীগ নেতা বদরুল কর্তৃক এক কলেজ ছাত্রীকে নির্মমভাবে কোপানোর দৃশ্য দেশবাসী দেখেছিল।

অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে সিটিজেন জার্নালিজম বা নাগরিক সাংবাদিকতা বলতে বুঝানো হয়েছে, “The collection, dissemination, and analysis of news and information by the general public, especially by means of the Internet.”

অর্থাৎ, সাধারণ জনতা বা নাগরিক কর্তৃক সংগৃহীত সংবাদ ও তথ্য ইন্টারনেট তথা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার ও বিশ্লেষণ করাকে সিটিজেন জার্নালিজম বা নাগরিক সাংবাদিকতা বলে।

বিশেষ করে বর্তমান বাংলাদেশের সামাজিক অস্থিরতার ফলে একের পর এক এত ঘনঘন ইস্যু তৈরি হচ্ছে যে, আমাদের মেইনস্ট্রিম মিডিয়াও কোনটা রেখে কোনটা কভার করবে তা নিয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। এর ফলে মেইনস্ট্রিম মিডিয়াকে কখনো কখনো গুরুত্বপূর্ণ জনসংশ্লিষ্ট ইস্যু এড়িয়ে যেতেও দেখা যায়। সস্তা পপুলার ইস্যুগুলো প্রচারেই তারা ব্যতিব্যস্ত থাকে সবসময়।

ফ্যাসিবাদী সেকুলার মার্সেনারি মিডিয়া কর্তৃক হলুদ সাংবাদিকতা, পক্ষপাতদুষ্টতা, প্রপাগাণ্ডা ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো কোনো জনসংশ্লিষ্ট সংবাদ চেপে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে আজ নাগরিক সাংবাদিকতা বা সিটিজেন জার্নালিজমের চর্চা জরুরি হয়ে পড়েছে।

সমাজের যেখানেই অন্যায়, বৈষম্য, অনাচার, জুলুম ও গুম-খুন ইত্যাদি ঘটতে দেখা যাবে, সেখানেই ‘উৎসাহী জনতা’রা নিজেদের মোবাইলে ঘটনার ভিডিও ধারণ কিংবা সংবাদ ও তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিলে এর ইতিবাচক প্রভাব সুদূরপ্রসারী। জার্নালিজম বা সাংবাদিকতার প্রধানতম মৌলিক উদ্দেশ্য হলো: সঠিক তথ্য পরিবেশন করে সংবাদযোগ্য ঘটনাসমূহের ব্যাপারে জনগণ বা নাগরিকদের অবহিত ও সচেতন করা। এর ফলে গঠনমূলক জনমত তৈরি হয়, যা একটি সুস্থ সমাজের জন্য অপরিহার্য।

সুতরাং, তৃণমূল পর্যায়ে স্বয়ং নাগরিকরাই পারেন একেকজন 'স্বভাব সাংবাদিক' হয়ে উঠতে। পথে-ঘাটে চলাফেরা করার সময় আপনিও পারেন নাগরিক সাংবাদিকতার চর্চা করতে। আপনার আশেপাশে কিংবা চোখের সামনে কোনো অপরাধ ঘটতে দেখলে কিংবা অস্বাভাবিক বা অনিয়মের ঘটনা ঘটলে তা মোবাইলে রেকর্ড করে ফেলতে পারেন। এবং ঘটনা যা ঘটেছে, তার ভিডিও (সম্ভব হলে) অথবা হুবহু লিখিত বিবরণ আপনার ফেইসবুক বা টুইটার একাউন্টে প্রকাশ করুন। প্রয়োজনে সেই ঘটনা বা সংবাদ সম্পর্কে আপনার অনুভূতি, বিশ্লেষণ ও মতামতও সেখানে প্রকাশ করতে পারেন।

আজকে ইন্টারনেট ও ফেইসবুকের এই সোনালি যুগটাই হলো নাগরিক সাংবাদিকতা চর্চার সবচে উর্বর সময়। নাগরিকদের সবার হাতে হাতে আজ এনড্রয়েড মোবাইল। প্রত্যেকেই একে অপরের সাথে ইন্টারনেট তথা সোশ্যাল মিডিয়ায় কানেক্টেড।

সুতরাং, চোখের সামনে কিংবা আশেপাশে সংঘটিত অন্যায়, অপরাধ ও অনিয়মের ঘটনাগুলোকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরুন। আসুন, ‘আমি উৎসাহী জনতা’—এই পরিচয়ে প্রত্যেকে নাগরিক সাংবাদিকতার চর্চা করি। নিজেও জানি, মানুষকে জানাই এবং অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে সবার মাঝে সচেতনতা ও প্রতিরোধ গড়ে তুলি।

‘হজ বিষয়ক সিদ্ধান্তে সরকারের উচিত হাবের পরামর্শ নেয়া’


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ