শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


নাস্তিক আসাদ নূর গ্রেপ্তার, ৫৭ ধারা বিতর্ক ও ফৌজদারি দণ্ডবিধি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তারেকুল ইসলাম
রাজনৈতিক বিশ্লেষক

ধর্মাবমাননার অভিযোগে ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক আসাদ নূরের গ্রেপ্তার প্রচলিত ফৌজদারি দণ্ডবিধির আওতায় না  হয়ে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় হয়েছে। তাই গ্রেপ্তারটা অনেকের কাছে যথার্থ মনে হয়নি; বরং এর সুদূরপ্রসারী বিপদ বুঝাটা জরুরি।

কারণ, সাধু, ধার্মিক ও আস্তিক হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র ফ্যাসিবাদ ও রাজনৈতিক জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলার অপরাধে এই ধারায় আমাকে আপনাকেও হয়ত কাল-পরশু গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এর কোনো গ্যারান্টি নেই।

তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা একটি কালো আইন হিসেবে বিবেচিত। দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক নিন্দিত ও সমালোচিত। এমনকি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সম্প্রতি ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। ২৯ নভেম্বর ২০১৭, প্রথম আলো

৫৭ ধারায় ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক আসাদ নূরকে গ্রেপ্তার করার মাধ্যমে এই কালো আইনের প্রতি এইমূহূর্তে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মপ্রাণ মানুষের একটা সাময়িক নীরব সমর্থন বা সম্মতিমূলক আবেগ তৈরি হবে। এখানেই মূলত আমাদের সংশয় ও আশঙ্কা। বিপদটা এই জায়গায়।

ধর্মাবমাননার জন্য অবশ্যই আসাদ নূরকে গ্রেপ্তার করা দরকার ছিল, এ ব্যাপারে আমার কোনো আপস বা দ্বিমত নেই। কিন্তু গ্রেপ্তার বিষয়টা আইনি ব্যাপার। যেখানে ৫৭ ধারার আইন নিজেই বিতর্কিত ও ব্যাপক সমালোচিত, সেখানে সেই ধারায় আসাদ নূরের গ্রেপ্তারটা কেবলই নিবর্তনমূলক মনে হলো।

এতে করে ধর্মাবমাননার অপরাধে শাস্তি পাওয়ার পরিবর্তে সে হয়ত রাজনৈতিক জিঘাংসার শিকার হতে পারে। কারণ সে ধর্মাবমাননার পাশাপাশি মুজিবাবমানাও করেছিল!

মোদ্দা কথায়, ধর্মাবমাননার অভিযোগে কিংবা যেকোনো ধরনের অবমাননার অভিযোগে এই কালো আইনের প্রয়োগকে গ্রহণযোগ্য বা সঙ্গত মনে করার অবকাশ দেখি না। কারণ ৫৭ ধারাকে এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই বেশি ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

সুতরাং, ধর্মাবমাননার অভিযোগে আসাদ নূরকে ৫৭ ধারায় গ্রেপ্তার না করে যদি প্রচলিত ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫ বা ২৯৮ ধারায় গ্রেপ্তার করা হতো, তাহলে সেটাই সবচে যৌক্তিক ও সঙ্গত হতো। এমনকি তার গ্রেপ্তার নিয়ে এখন বিতর্ক বা প্রশ্ন উঠতো না।

কোনো বিতর্কিত আইন মোতাবেক গৃহীত যেকোনো পদক্ষেপই বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সুযোগ রাখে। দুঃখজনকভাবে কালপ্রিট আসাদ নূর এখন এই বিতর্কের একটা এডভান্টেজ পেয়ে যাবে।

যাই হোক, ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫ ও ২৯৮ ধারাগুলো হচ্ছে: ২৯৫ (ক) – কোনো বা যে কোনো বিশেষ ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবমাননা করে উক্ত যে কোনো ধর্মীয় অনুভূতিতে কঠোর আঘাত হানার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত বিদ্বেষাত্মক কাজ৷

২৯৮ – ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত করার উদ্দেশে শব্দ উচ্চারণ বা অঙ্গভঙ্গি৷

(ইসলামবিদ্বেষী স্বঘোষিত নাস্তিক আসাদ নূর অলরেডি স্যোশাল মিডিয়ায় তার প্রচারিত কয়েকটি ভিডিওতে ইসলামকে অবমাননা ও কটূক্তি করে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে। যা দেশজুড়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিয়েছে নিঃসন্দেহে।)

ফৌজদারি দণ্ডবিধির এই দুই ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তিস্বরূপ অর্থদণ্ডসহ সর্বোচ্চ দু’বছরের কারাদণ্ডের কথা উল্লেখ আছে।

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে ধর্মাবমাননার প্রবণতা ও অপরাধ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মাবমাননা সংক্রান্ত বর্তমান ফৌজদারি দণ্ডবিধির ধারাগুলোকে সরকার আরো কঠোর ও সময়োপযোগী করতে পারে।

একইসাথে শাস্তির পরিমাণও বাড়াতে পারে। তাহলে কথিত মুক্তমনা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে ধর্মাবমাননার প্রবণতা ও অপরাধের মাত্রা কমে আসবে বৈকি।

ইসলামী আন্দোলন-এর নেতার মামলায় নাস্তিক ব্লগার আসাদ নুর গ্রেফতার

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ