মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ।। ১২ কার্তিক ১৪৩২ ।। ৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
‘বাবরি মসজিদ একদিন পুনর্নির্মিত হবে’ ফেসবুকে এমন পোস্টে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে মামলা নির্বাচন সুষ্ঠ করতে দ্রুত বডি-ওর্ন ক্যামেরা কেনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার ‘তিনবারের বিশ্বজয় হাফেজ সাইফুর রহমান ত্বকীকে স্মরণীয় করে রাখবে’ প্রাথমিকে জনআকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী পদক্ষেপ নেবে না সরকার: ধর্ম উপদেষ্টা অভিমানী মানুষের মতোই বিদায় হাফেজ ত্বকীর এক মাসে ওমরাহ পালন ১ কোটি ১৭ লাখ মুসল্লি জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নতুন বাংলাদেশের পথ দেখাবে : প্রধান উপদেষ্টা হাফেজ ত্বকীর মৃত্যুতে মুরাদনগর উপজেলা কওমি তরুণ ওলামা পরিষদের শোক কেনিয়ায় যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত, আরোহী সবার মৃত্যুর শঙ্কা বারবার বিশ্ব দরবারে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন হাফেজ ত্বকী

দাওয়াতুল হকের ইজতেমায় ধর্মপ্রাণ মানুষের ঢল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব মুহাম্মদ, মুহাম্মদ তারিক জামিল
যাত্রাবাড়ী থেকে

আলেম উলামা, ধর্মপ্রাণ লাখো মানুষের উপস্থিতিতে ধর্মীয় ভাব-আবেগ ও গম্ভীর্যের মাধ্যমে চলছে মজলিসে দাওয়াতুল হকের ২৩তম কেন্দ্রীয় ইজতেমা।

আজ ২ ডিসেম্বর শনিবার সকাল ৯টা থেকে যাত্রাবাড়ীর জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়ায় (যাত্রাবাড়ী বড় মাদরাসা) দিনব্যাপী এ ইজতেমা শুরু হয়েছে।

ইজতেমা উপলক্ষ্যে সুন্নতের আমলি মশক, দেশ-বিদেশের আলেমদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ান, জিকির এবং দুয়া-মোনাজাতসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

মজলিসে দাওয়াতুল হক মহানবী সা. এর জীবন, আদর্শ ও সুন্নত চর্চার একটি বিশেষ কেন্দ্র। দেশব্যাপী সাধারণ মানুষদের আজান, ইকামত, নামাজ, ওজু, জানাজাসহ সুন্নতের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ হয়।

এবারের কেন্দ্রীয় ইজতেমার উদ্বোধনী ভাষণে মজলিসে দাওয়াতুল হকের আমির, গুলশান আজাদ মসজিদের খতিব ও যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুহতামিম মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান বলেন, আমাদের দেশে ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস শান্তির বাণী নিয়ে আগমন করেছেন। আমরা দেশবাসী রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তার ভাবনা ও অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাই। আমি আশা রাখছি, কিভাবে তিনি রোহিঙ্গা সমস্যাকে দেখছেন তা আমাদের সামনে স্পষ্ট করবেন।

তিনি পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, আমাদের দেশ ও সরকার রোহিঙ্গা সমস্যায় জর্জরিত। আমরা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছি, যতটুকু সম্ভব সাহায্য করেছি এবং এখনো করছি। আমরা চাই তিনি আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান।

তার প্রতি আমাদের আহবান, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে তিনি যথেষ্ট ভূমিকা রাখবেন।

আল্লামা মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, বিশ্ব মানবতা ও শান্তির দূত হজরত মুহাম্মদ সা.।

মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা উপলক্ষে বিশেষ নসিহতনামা পাঠিয়েছেন, ভারতের হজরতজি শাহ আবরারুল হক হারদুয়ী রহ. এর জানাশীন, মাওলানা কালিমুলল্লাহ ।

বিশেষ নসিহতনামায় তিনি বলেছেন, আমাদের উচিৎ সুন্নতের গুরুত্ব দেয়া, গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা, বিশুদ্ধ কুরআন তেলাওয়াত করা এবং ইখলাসের সাথে কাজই করা চাই।

তিনি বলেন, দীনের যে প্রকারের খেদমতই করা হোক তা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করা। ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান কোনো কিছুই মাকসাদ হতে পারে না।

পারস্পরিক ঐক্য বজায় রাখার ব্যাপারেও গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।

দাওয়াতুল হকের ইজতেমার সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও সাফল্য কামনা করে বাণী দিয়েছেন বাংলাদেশের শীর্ষ আলেম শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ ও উলামায়ে কেরামের এ সম্মিলন মোবারক হোক এবং আল্লাহ তায়ালা দেশ ও জাতির হেদায়েতের উপলক্ষ করুন। ঐক্যের প্লাটফর্ম হয়ে উঠুক মজলিসে দাওয়াতুল হক।

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও দাওয়াতুল হকের ইজতেমার সাফল্য কামনা করে বিশেষ বাণী দিয়েছেন।

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেছেন, মুহাম্মদ সা. এর জীবনাদর্শ থেকে সরে যাওয়ার কারণেই আজ পৃথিবীতে অশান্তি দেখা দিয়েছে। মুসলিম জাতি তার গৌরবোজ্জ্বল দিন হারিয়েছে। রাসুল সা. এর জীবনাদর্শের অনুসরণই বিশ্ব মানবতার মুক্তি নিশ্চিত করতে পারে। আমাদের জাতীয় জীবনের সংকটসমূহ সমাধানের পথও রাসুল সা. এর সুন্নতের অনুসরণ।

রাসুল সা. এর সুন্নতের প্রচার ও প্রসারে বিশ্বব্যাপী কাজ করছে মসলিসে দাওয়াতুল হক। ইসলাম ও মুসলমানের কল্যাণে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কাজ করে যাচ্ছে তারা। সুন্নতের চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির জন্য নিবেদিত মজলিসে দাওয়াতুল হক।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম আমার শায়খ ও মুরশিদ আল্লামা মাহমুদুল হাসান বাংলাদেশে সুন্নতে রাসুল সা. এর তালিম দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নিজে সুন্নতের উপর চলেন এবং অন্যকে সুন্নতের উপর চলতে উদ্বুদ্ধ করেন। হজরতের ব্যক্তিত্ব আমাকে মোহিত করে।

বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল তার বিশেষ বার্তায় বলেছেন, দাওয়াতুল হকের ইজতেমায় আমি অংশগ্রহণ করেছি। এমনিতেও আলেম-ওলামাদের সঙ্গে আমার ওঠ-বস আছে।

মহানবী সা. এর সুন্নতের আলোচনা এবং সবার ব্যক্তিগত জীবনে এর চর্চা দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি।

ইজতেমায় অংশ নেয়া আলেম-ওলামা ও ছাত্র-শিক্ষককে মহব্বতের সাগরে ভাসতে দেখেছি। আল্লাহ তায়ালা আমাকে নবীজির সুন্নত অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দিন।

দাওয়াতুল হকের ইজতেমায় অংশ নেয়ার কথা রয়েছে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের বুখারীর শায়েখ, আল্লামা মুফতি কমরুদ্দীন, মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আওলাদে রাসুল শেখ নাসের মক্কী, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সিনিয়র সহসভাপতি ও আল হাইআতুল উলয়ার কো-চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলী, চট্টগ্রাম জিরি মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা শাহ মোহাম্মদ তৈয়ব, পীরে কামেল প্রফেসর হামিদুর রহমান, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন মাওলানা শেখ হাসান মুসা, দারুল উলুম দেওবন্দের উস্তাদ মুফতি রাশেদ, পটিয়া মাদরাসার প্রধান মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া, মুফতি ওবায়দুল¬াহ সিদ্দিক বাজার, জামিয়া রাহমানিয়া আলী এন্ড নুরের মুহতামিম মুফতি মনসুরুল হক, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মাওলানা আরশাদ রাহমানি।

আরও উপস্থিত থাকবেন শায়খ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, বায়তুল উলুম ঢালকানগরের মুহতামিম মুফতি জাফর আহমদ, ঢালকানগরের পীর মাওলানা আবদুল মতিন, বিশিষ্ট আলেম ও ওয়ায়েজ মুফতি মুশতাকুন্নবী, বসুন্ধরা মারাসার মুফতি সুহাইল, মতিঝিল ওয়াপদা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা রফিক আহমদ প্রমুখ।

এছাড়াও দেশ বরেণ্য আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখগণ ইজতেমায় উপস্থিত থাকবেন। রাত ৯ টায় আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে ইজতেমা শেষ হবে।

এদিকে ঢাকা ও তার আশেপাশের জেলাগুলো থেকে হাজারো আলেম ইজতেমা অংশগ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে মসজিদও মাদরাসা প্রাঙ্গণ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে আলেমদের পদচারণাও। এছাড়াও সর্বসাধারণের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্য হারে রয়েছে।

যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদীর পরিচালনায় এখন মালফুজাত পরে শোনাচ্ছেন হযরতওয়ালা হারদূঈ রহ. এর বিশিষ্ট খলিফা প্রফেসর হামিদুর রহমান। তিনি সুন্নতের দাওয়াতকে বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে আহবান জানাচ্ছেন।

মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদী জানান, ইতোমধ্যে হারদুয়ী হযরতের অধিকাংশ খোলাফাগণ এসে উপস্থিত হয়েছেন। অনেকেই রাওনা হয়ে রাস্তায় আছেন। পর্যায়ক্রমে সবাই দিনভর বয়ান করবেন।

ইজতেমাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনিকভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করে ইজতেমারর ভেতরের কার্যক্রমও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

মজলিসে দাওয়াতুল হক ও মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ