রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
ঢাকাসহ ৫ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ‘বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে যাওয়া; দোয়া কবুল না হলেও বুঝতে হবে এতেই কল্যাণ রয়েছে’ উৎসবমূখর পরিবেশে শেষ হল ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন কাতার'র ঈদ পুনর্মিলনী ঝড়ে রেললাইনে গাছ পড়ে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ ইস্তিস্কার নামাজ কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়! মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা চায় মানবাধিকার কমিশন ‘কোরবানিতে ১ কোটি ৩০ লাখ গবাদিপশুর জোগান দেওয়া হবে’ ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়াসহ ৪০ বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে হিটস্ট্রোকে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু তীব্র তাপপ্রবাহে স্কুল-কলেজ বন্ধ নিয়ে যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী

মজলিসে দাওয়াতুল হক ও মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মাদ মাসরুর হাসান
অতিথি লেখক

১৩৫৮ হিজরীতে হযরত থানভী রহ.-এর দূরদর্শী এবং বৈপ্লবিক জীবনের অভিজ্ঞতা ও শুদ্ধি অভিযানের আলোকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও বিভ্রান্ত সমাজের পরিশুদ্ধি এবং অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের সঠিক দিক নির্দেশনা ও পাথেয় হিসেবে ‘মজলিসে দাওয়াতুল হক’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নতি, ইহকাল ও পরকালের মুক্তি এবং নাজাতের উপায় হচ্ছে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের অনুকরণ ও অনুসরণ। সমাজের সর্বস্তরে সুন্নত প্রতিষ্ঠা, বিদআত এবং মুনকারাতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা মুসলিম উম্মাহর অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য।

আমাদের পূর্বসুরী মনীষীগণ এই উপায় অবলম্বন করেই পরম সফলতা অর্জন এবং আদর্শ জীবন গড়ায় সক্ষম হয়েছেন। সুতরাং সার্বিক সফলতার জন্য আমাদেরকেও তাদেরই পাদঙ্ক অনুসরণ করতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই।

হযরত থানবি রহ. কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দাওয়াতুল হক মূলত মানবতার উৎকর্ষ সাধনে একটি নির্দেশনা ও পাথেয়। মুসলিম উম্মাহর হেদায়েতের জন্য রচিত অগণিত বই পুস্তকে আর বিশেষত দাওয়াতুদ্দায়ী, তাফহীমুল মুসলিমীন, তানজীমুল মুসলিমীন এবং হযরত মুহিউস সুন্নাহ রহ. রচিত আশরাফুন্নেজামে দাওয়াতুল হকের বিস্তারিত কর্মসূচী বিদ্যমান রয়েছে।

মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও কর্মসূচী শিরোনামে বাংলা ভাষায় দাওয়াতুল হকের কর্মসূচী প্রকাশ করা হয়েছে এবং সে অনুপাতে এদেশেও কার্যক্রম চালু রয়েছে।

মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ

হযরত থানবি রহ. তাঁর জীবদ্দশায় নিজে এবং তার সহচরদেরকে নিয়ে দাওয়াতুল হকের কর্মসূচী বাস্তবায়নে অবিরাম প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন এবং সমকালীন উলামা-মাশায়েখগণের প্রতি দীনের এই মহতী কাজে অংশগ্রহণের আহবান জানান।

ফলে দাওয়াতুল হকের কর্মসূচী সর্বমহলে সমাদৃত হয়, হতে থাকে। তারই বিশেষ অনুরাগী ভক্তবৃন্দ এবং খুলাফাগণের প্রচেষ্টা বাংলাদেশেও এই কাজের সূচনা হয়। হযরত মাওলানা আতহার আলী রহ., হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব হাটহাজারী রহ., হযরত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ., হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ., হযরত মাওলানা ফয়জুর রহমান সাহেব রহ., ইমাম জামে মসজিদ মোমেনশাহী প্রমুখের নিরলস প্রচেষ্টায় হযরত থানবির চিন্তাধারার বিশেষ প্রসার লাভ হয়।

মজলিসে দাওয়াতুল হক ও হারদুয়ী রহ.

হযরত থানবি রহ.এর খুলাফাগণের একের পর এক বিদায়ের পর দাওয়াতুল হকের কর্ণধার ছিলেন হযরত থানবি রহ.এর সর্বশেষ খলিফা, নবী বংশের উজ্জ্বল প্রদীপ মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা শাহ আবরারুল হক রহ.।

তিনি তার মুর্শিদের এই কার্যক্রমকে আরও বেগবান করার লক্ষ্যে আজীবন নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
হারদুয়ী হযরত শাহ আবরারুল হক রহ.এর অসাধারণ যোগ্যতা, পরহেজগারি ও সুন্নতের পাবন্দি দেখে তার সামনে মাথা ঝুঁকিয়েছেন শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ., মুফতি আব্দুর রহমান রহ., মাওলানা আনওয়ার শাহ ,আল্লামা শাহ মুহাম্মাদ তৈয়াব, আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ, মুফতী মনসুরুল হকসহ এদেশের প্রতিথযশা বিজ্ঞ আলেমে দ্বীন।

বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ছিল তার গভীর ভালবাসা ও নেক নজর। তিনি সুন্নতের অনুসরণের আহবান নিয়ে বারবার ছুটে আসতেন বাংলার জনগণের কাছে। মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বেও মজলিসে দাওয়াতুল হকের ১১তম মারকাযী ইজতেমায় তিনি তাশরীফ এনেছিলেন।

মজলিসে দাওয়াতুল হক ও মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান

মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান আপোষহীন এক ইসলামি ব্যক্তিত্ব। মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের প্রতিট রন্ধ্রেরন্ধ্রে যার অস্তিত্ব, জীবনের প্রতিটি ধাপে সুন্নতে রাসূলের অনুসরণ যার কৃতিত্ব, দুনিয়ার শান শওকত ও পার্থিব প্রাচুর্যের কাছে মাথানত না করা যার বৈশিষ্ট্য, সকল প্রকার রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে যিনি মুক্ত, সহনশীলতা, ক্ষমা ও উদারতা যার বীরত্ব, গীবত, কুৎসা, মিথ্যা বলা থেকে বেঁচে থাকা যার বৈশিষ্ট, যিনি সর্বদা দীনী খেদমত নিয়ে ব্যস্ত।

অসাধারণ প্রজ্ঞা, কৌশল ও অতুলনীয় পাণ্ডিত্যের অধিকারী এই আত্মত্যাগী আলেমে দ্বীনের সংস্পর্শে এসে সব শ্রেণীর মানুষের আত্মিক প্রশান্তি লাভ হয়। আলেমসমাজ তো বটেই সাধারণ শিক্ষিত উঁচুতলার ব্যক্তিরাও তার জ্ঞানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

আমীরুল উমারার দায়িত্ব অর্পণ

১৯৯৩ সনে হযরত ওয়ালা হারদূয়ী রহ. ধানমণ্ডিস্থ হাজী হাবীবুল্লাহ সাহেবের বাসায় সমস্ত মুরিদগণ ও খুলাফায়ে কেরামের মজলিসে এক পর্যায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, কি হল বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরামের সুন্নতের কাজের প্রতি তারা এত অবহেলা করছে। আমার আফসোস হয় আপনাদের কাজের প্রতি।

আজ আমি এত ব্যথিত যে, এখন যদি আমার উপযুক্ত তিন তিনটি ছেলে এক সঙ্গে মারা যেত, তবুও আমি এত কষ্ট পেতাম না, যতটুকু কষ্ট পেয়েছি আপনাদের কাজের অবস্থা দেখে। একথা শোনামাত্র মরহুম মাওলানা ফজলুর রহমান সাহেব রহ. অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।

হযরত আরও বললেন, বাংলাদেশের সফর বাতিল করে আমি আজই হারদূয়ীতে চলে যাব। এই বলে তিনি কামরা বন্ধ করে দিয়ে সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ বন্ধ করে দিলেন। এ সময় উপস্থিত সবাই অঙ্গীরকারনামা পেশ করলে হযরত খুশি হয়ে যান। তারপর হযরত সবাইকে ডেকে বিশেষ নসিহত করেন।

৩ জিলকদ ১৪১৩ হি. মোতাবেক ১৯৯৩ সালে বসুন্ধরা ইসলামী রিসার্চ সেন্টারের মুহতামিম হযরত মাওলানা মুফতী আব্দুর রহমান সাহেব দা. বা.-এর দস্ত মুবারকে হযরত ওয়ালা হারদুয়ী রহ. লেখালেন :

“আমাদের মুর্শিদ হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক সাহেব দা. বা. যাত্রাবাড়ি মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মাহমুদুল হাসান সাহেব কে মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের আমীরুল উমারা মনোনীত করেছেন।”

সেদিন থেকেই সরাসরি হারদুয়ী হযরত কর্তৃক মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের আমিরুল উমারা হিসেবে বিরাট দায়িত্বের বোঝা মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান দা.বা.এর উপর অর্পণ করা হয়।

হযরত ওয়ালা হারদুয়ী রহ. প্রণীত মজলিসে দাওয়াতুল হকের কর্ম পরিচালনার মূলনীতি

১. প্রযয়োজন হলে ‘মজলিসে উমারার’ সাথে পরামর্শক্রমে আমীর এবং নায়েবে আমীর পরিবর্তন করা যাবে।

২. দাওয়াতুল হকের বাৎসরিক ইজতিমা মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ-এর মারকাজ জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে। আমীরুল উমারার অনুমোদন সাপেক্ষে জেলা ও থানা পর্যায়ে ইজতিমা অনুষ্ঠিত হতে পারে। পয়োজনে আমীরুল উমারা মজলিসে উমারার সাথে পরামর্শ করা যাবে।

৩. মজলিসে দাওয়াতুল হকের কোন আমীর, নায়েবে আমীর ও বিশেষ সদস্যগণ মজলিসুল উমারার অনুমোদন ছাড়া দাওয়াতুল হক বা অন্য কোনও নামে ভিন্নভাবে কাজ করতে পারবেন না। তবে দাওয়াতুল হক থেকে পৃথক হয়ে স্বতন্ত্রভাবে যে কোনও নামে কাজ করার ব্যাপারে সে স্বাধীন।

৪. সমগ্র বাংলাদেশে দাওয়াতুল হকের যাবতীয কার্যক্রম পরিচালনা ও তত্তাবধানের সকল দায়-দায়িত্ব মজলিসুল উমারার উপরই ন্যস্ত থাকবে। অন্য কোনও নেগরান বা মজলিসে শুরার প্রয়োজন নেই। পয়োজনে মজলিসুল উমারা বা কোনও বিশেষ সদস্যের সঙ্গে পরামর্শ করে নেয়া যেতে পরে।

৫. জেলা এবং থানাভিত্তিক ইজতিমার জন্য হালকার সদস্যদের নিকট থেকে অবাধে চাঁদা আদায় থেকে বিরত থাকবে।

৬. জেলা এবং থানাভিত্তিক ইজতিমায় আমীরুল উমারা অথবা তাঁর মনোনীত মজলিসুল উমারার সদস্যদের মধ্য হতে একজন বিশিষ্ট আলেমের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

৭. জেলা এবং থানাভিত্তিক ইজতিমার জন্য আমীরুল উমারা ও হালকার আমীর উভয়ই আহবায়ক হতে পারেন।

৮. কেন্দ্রীয় সমস্ত এ’লান ও প্রচারপত্র ইত্যাদি কেন্দ্র থেকেই প্রচারিত হবে।

৯. কোনও বিষয়ে মত পার্থক্য দেখা দিলে আমীরুল উমারার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে।

১০.আমীর এবং নায়েবে আমীরগণ সরাসরি রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকবেন।

আমার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিগণ বিশেষ করে আমার খুলাফাগণ সবসময় দাওয়াতুল হকের কাজের ব্যাপারে ইখলাস ও মুহাব্বতের সাথে আমীরুল উমারার প্রতি র্সপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন।

লেখক: নায়েবে মুহতামিম ও মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী।

প্রস্তুতি সম্পন্ন; দাওয়াতুল হকের কেন্দ্রীয় ইজতেমা শনিবার

‘উম্মতের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক সুন্নাতে নববীর দাওয়াত’


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ