আতাউর রহমান খসরু
বার্তা সম্পাদক
আল-হাইআতুল উলইয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর একটি আইনী খসড়া চূড়ান্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে প্রতিনিধিত্বের জন্য গঠিত হাইআতুল উলয়ার উচ্চতর কমিটি।
গত ১৫ নভেম্বর বুধবার হাইআতুল উলয়ার কো-চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলীর নেতৃত্বে উচ্চতর কমিটির বৈঠকে এ আইনী খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, আল্লামা আবদুল হালীম বোখারী, মুফতী মোঃ ওয়াক্কাস, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মুফতি রুহুল আমীন, মাওলানা এনামুল হক, মুফতি আরশাদ রাহমানী, মুফতি মোহাম্মদ আলী, মাওলানা মাহফুজুল হক ও মুফতী নুরুল আমীন।
গত ২ অক্টোবর হাইআতুল উলয়ার মূল কমিটির বৈঠকে গৃহীত গঠনতন্ত্র ও বেফাক ব্যতীত ৫ বোর্ডের দাবি সামনে রেখেই এ আইনী খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সংশোধিত আইনী খসড়ায় হাইআতুল উলয়ায় ৫ বোর্ডের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির প্রায় সব দাবি মেনে নেয়া হয়েছে।
এছাড়াও পূর্ববর্তী খসড়া গঠনতন্ত্রের কিছু ধারার ব্যাখ্যা ও নতুন কিছু ধারা সংযুক্ত হয়েছে।
হাইআতুল উলয়ার আইনী খসড়াটিই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন হাইআতুল উলয়ার একাধিক সূত্র।
সূত্র বলেছে, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি না থাকলে এটিই হাইআতুল উলয়ার গঠনতন্ত্র বা আইন হিসেবে বিবেচিত হবে। আর সরকার যদি কোনো বিষয়ে আপত্তি জানায় তাহলে তাদের আপত্তির সামনে রেখে হাইআতুল উলয়ার মিটিংয়ে পুনরায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সঙ্গে আগামীকালের অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকেও এ আইনী খসড়া সামনে রেখে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন হা্ইআতুল উলয়ার প্রতিনিধি দলের একাধিক সদস্য।
‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ এর মতামতসহ আইনি খসড়া’ শিরোনামে সংশোধিত আইনী খসড়ায় সংযুক্ত ব্যাখ্যা ও ধারাগুলো তুলে ধরা হলো,
ধারা ২ ‘কওমি মাদরাসার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা’ অর্থ-এর অধীনে ৬টি উপোনুচ্ছেদে কওমি মাদরাসার মৌলিক দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বাস, আমল, মাজহাব, তাসাউফ ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কওমি মাদরাসার মৌলিকত্ব তুলে ধরে তা সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।
কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা রক্ষায় ২ নং ধারার অনুচ্ছেদ ২ এর ৬ নং উপোনুচ্ছেদ বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তাতে বলা হয়েছে, নেসাবে তা’লীম (পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচী), শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, মাদরাসা পরিচালনা ইত্যাদিতে আজাদি।
ধারা ২ এর ৪ অনুচ্ছেদে ‘দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শ’ অর্থ-এ দারুল উলুম দেওবন্দের নিজস্বতা উপস্থাপন করা হয়েছে। এ অনুচ্ছেদটি অনুচ্ছেদ ২ এর অনুরূপ। তবে ৪ অনুচ্ছেদের উপোনুচ্ছেদ ৫ বিশেষ অর্থবহ। তাতে বলা হয়েছে, ইসলামের ব্যাপকতা, সার্বজনীনতা ও সামগ্রিকতার বাস্তব প্রতিফলন ঘটানো।
খসড়া গঠনতন্ত্রে বোর্ডের ব্যাখ্যায় ৬ বোর্ডের নাম উল্লেখ ছিলো না। কিন্তু চূড়ান্ত আইনী খসড়ায় তা অন্তূর্ভক্ত (ধারা ২ অনুচ্ছেদ৬ ) করা হয়েছে।
অনুচ্ছেদ ৭ থেকে ১০ এ যথাক্রমে চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান, সদস্য ও তহবিলের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।
হাইআতুল উলয়ার কার্যালয় ঢাকায় থাকার কথা বলা হয়েছে ৩ নং ধারায়।
ধারা ৪-এ চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যানের কথা বলা হয়েছে। এ ধারায় ৫ বোর্ডের দাবির প্রেক্ষিতে কো-চেয়ারম্যান-২ এর বিধান রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ ব্যতীত অপর ৫ বোর্ড হইতে হাইআতুল উলয়ার সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে কো-চেয়ারম্যান-২ হইবেন।
৪ নং ধারার অনুচ্ছেদ ৩ এর উপোনুচ্ছেদ ‘ছ’ এ হাইআতুল উলয়া চেয়ারম্যানকে অনুর্ধ্ব ১৫ সদস্য কো-আপট করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে ৫ বোর্ড তাদের প্রত্যেক বোর্ড থেকে একজন করে ৫ জন সদস্য রাখার দাবি করলেও তাতে সায় দেয় নি বেফাক। বরং তাদের মতামতকে আইনী খসড়ায় নোট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ধারা ৭-এ হাইআতুল উলয়ার ক্ষমতা ও কার্যাবলীর বিবরণ দেয়া হয়েছে। এখানেও বেশ কিছু নতুন ধারা যুক্ত হয়েছে। যেমন,
অনুচ্ছেদ ‘খ’ তে বলা হয়েছে, হাইআতুল উলয়া দেশের সকল দাওরায়ে হাদিস মাদরাসার জন্য কারিকুলাম প্রণয়ন করবে এবং উক্ত কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রয়োজনে একাধিক কমিটি ও উপকমিটি গঠন করতে করবে।
অনুচ্ছেদ ‘ঙ’ তে সনদ বিতরণের বিধান বিবৃত হয়েছে। বিধানে বলা হয়েছে, হাইআতুল উলয়ার সনদে কো-চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক-এর স্বাক্ষর করবেন এবং তা গণপ্রাজতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিকট মাস্টার্স (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) এর সমমান বিবেচিত হবে।
অনুচ্ছেদ ‘ছ’ তে কওমি মাদরাসার উপর সরকারের হস্তেক্ষপ প্রভাব এড়াতে বলা হয়েছে, হাইআতুল উলয়ার দাওরায়ে হাদীস-এর সনদ বিষয়ক যাবতীয় কার্যক্রমের ক্ষেত্রে হাইআতুল উলয়া সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বলিয়া বিবেচিত হইবে।
অনুচ্ছেদ ‘ঞ’ তে হাইআতুল উলয়াকে প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
খসড়া গঠনতন্ত্রে বছরে দুটি সভা করার কথা থাকলেও আইনী খসড়ার ৮ নং ধারার ২ নং অনুচ্ছেদ কমিয়ে ৪ মাসে একটি এবং বছরে ৩টি সভার কথা বলা হয়েছে।
একই ধারার অনুচ্ছেদ ৩ এ সাধারণ সদস্যদের সভায় সভাপতিত্ব করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। যা পূর্বে চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যানে সীমাবদ্ধ ছিলো।
৮ নং ধারার গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী হলো, পূর্বে হাইআতুল উলয়ার এক তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিতিতে কোরাম পূর্ণ হওয়ার বিধান রাখা হয়েছিলো। কিন্তু সংশোধিত আইনী খসড়ার ৮ ধারার অনুচ্ছেদ ৪-এ বলা হয়েছে, দুই তৃতীয়াংশ বোর্ডের উপস্থিতিসহ ১১ জন সদস্য উপস্থিত হলে কোরাম পূর্ণ হবে।
৯ নং ধারায় হাইআতুল উলয়ার আয়ের খাতসমূহ (৩টি), ব্যাংক হিসাব ও তহবিল ব্যয়ের বিধান বর্ণিত হয়েছে।
ধারা ১০-এ আরবি বছরকে হাইআতুল উলয়ার অর্থ বছর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং প্রতি বছর জিলকদ মাসে বাৎসরিক বাজেট প্রণয়নের বিধান রাখা রয়েছে।
১১ নং ধারায় হিসাব ও নিরীক্ষার কথা বলা হয়েছে। সংযোজিত ধারাটির ২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সরকার অনুমোদিত কোনো অনুমোদিত হিসাব-নিরীক্ষক কোম্পানি দ্বারা প্রতি বছর হাইআতুল উলয়ার হিসাব নিরীক্ষা করাবে এবং পরবর্তী মিটিংয়ে তা উপস্থাপন করা হবে।
সর্বশেষ ও ১৩ নং ধারায় প্রচলিত আইনের সঙ্গে সংঘর্ষ ও আইনি জটিলতা এড়াতে ‘বলবৎ অন্য কোন আইনে যা কিছু থাক না কেনো এই আইনের বিধানাবলী কার্যকর হবে’ বলে হাইআতুল উলয়ার আইনকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
খসড়া গঠনতন্ত্রে হাইআতুল উলয়াকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার কথা বলা হলেও ৫ বোর্ডের দাবির প্রেক্ষিতে তা বাদ দেয়া হয়েছে। তবে তাদের দাবি অনুযায়ী তা মঞ্জুরী কমিশনের মর্যাদা দান বিষয়ে আইনী খসড়ায়।
হাইআতুল উলয়া’র (খসড়া) গঠনতন্ত্রের অনুমোদন, যা আছে তাতে
কাল মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে হাইআতুল উলয়ার বৈঠক