শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


যা আছে কাকরাইলের মাওলানা আবদুল্লাহ’র তওবানামায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু : তাবলীগ জামাতের মুরব্বি মাওলানা আবদুল্লাহ মনসুর ভুল স্বীকার ও তওবা সংক্রান্ত মোট ৪টি নথি এসেছে আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে। এর মধ্যে দুটি আরবি,  একটি উর্দু ও একটি বাংলা। আরবি নথি দু্টির একটিতে তিনি তার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ নথিতে খুলনা দারুল উলুমের মুফতি গোলাম রহমানের সুপারিশ, তার অভিভাবকত্ব গ্রহণের ঘোষণাসহ তার স্বাক্ষর ও মাদরাসার সিল রয়েছে।

পরবর্তীতে এ নথিতে আরও স্বাক্ষর করেন  বাইতুল উলুম ঢালকানগরের মুহতামিম মুফতি জাফর আহমদ, খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদরাসার মুফতি নূরুল ইসলাম, মুফতি আরেফ বিল্লাহ ও জামেয়া আরাবিয়া রামপুরার মুফতি রেজাউল করিম প্রমুখের।

২য় নথিতে তিনি তার বই ‘আল ইমারা হিয়াস সুন্নাহ’ এ করা ভুল ও বিকৃতি সম্পর্কে  সরল স্বীকারুক্তি দিয়েছেন।

উর্দু নথির শুরু ভাগে কাকরাইল শুরার পক্ষ থেকে মাওলানা মুহাম্মদ যোবায়ের উলামায়ে কেরামের চিঠির উত্তরে বলেছেন, ‘আপনাদের চিঠি পেয়ে আমাদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সতর্ক করার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’

এরপর তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে (মাওলানা আবদুল্লাহ) এ বই লেখার পরামর্শ দেইনি, আমাদের পরামর্শে তা ছাপাও হয় নি। বরং আমরা বিষয়টি জানতে পেরে তা প্রকাশ করতে নিষেধ করেছি।’

মাওলানা যোবায়ের আরও লিখেছেন, ‘বারিধারা মাদরাসার মুফতি ওবায়দুল্লাহ ফারুক চিঠি পাঠালে আমরা লেখককে তার কাছে পাঠাই যেনো তার ভুল বুঝতে পারে এবং তা স্বীকার করে নেয়। এখন আবার আপনাদের কাছে পাঠালাম।’

উর্দু নথির দ্বিতীয়ভাগে মাওলানা আবদুল্লাহ মনসুর তার ভুলের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে মেনে নিয়ে তওবা করেন। এখানে তিনি তার বইয়ের যেসব জায়গায় ভুল হয়েছে তার কয়েকটি উদ্ধৃতও করেছেন এবং ভবিষ্যতে এ বই প্রকাশ, প্রচার ও ছাপানো থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করেছেন।

উর্দু নথিতে শেষে ৩ জন শীর্ষ আলেমের স্বাক্ষর রয়েছে, যাদের তিনি সাক্ষী রেখে তওবা করেছেন। তারা হলেন, মারকাজুদ দাওয়াহর মুদীর মুফতি আবদুল মালেক, প্রবীন আলেম ও শাইখুল হাদিস  মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্বাস, জামিয়া ইমদাদিয়া ফরিদাবাদের মুহতামিম মাওলানা আবদুল কুদ্দুস।

বাংলা নথিতে তিনি কোনো প্রকার স্বাক্ষর ব্যতীত আরবি দুটি নথির সারকথা তুলে ধরে ঘোষণা করেন, তিনি মুফতি গোলাম রহমানকে মুরব্বি হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং তার পরামর্শে তিনি চলবেন। বাংলা নথিটি তিনি আওয়ার ইসলামে প্রকাশে সহজতার জন্য পাঠিয়েছেন।

[caption id="attachment_47470" align="aligncenter" width="352"] ১ম আরবি নথি।[/caption]

১ম আরবি নথির অনুবাদ :

আল্লাহর নামে শুরু করলাম

ভুল স্বীকার ও মার্জনা কামনা

আমি আবদুল্লাহ মানসুর (পাকিস্তান) রায়বন্ড ইজতেমার সময় তাবলিগি আলেম ও শুরার  বিষয়ে পাঠানো আমার ম্যাসেজের (ক্ষুদে বার্তার)ব্যাপারে আমার ভুল ও অপারগতা স্বীকার করছি। আমি আমার ভুল থেকে ফিরে আসছি। আমি ক্ষমা চাচ্ছি আমার মুরব্বিদের কাছে এবং প্রত্যেক এমন ব্যক্তির কাছে যিনি আমার কারণে মনে কষ্ট পেয়েছেন।ব্যথিত হয়েছেন। আমি ভবিষ্যতের জন্য ঘোষণা করছি আর কখনো উলামায়ে কেরাম ও শায়খদের থেকে বিমুখ থাকবো না।

আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি ক্ষমাশীল আল্লাহর কাছে; যিনি তওবাকারীকে ক্ষমা করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করতে ভালোবাসেন।

এ নথির নিচে মুফতি গোলাম রহমান মাওলানা আবদুল্লাহর অভিভাবকত্ব গ্রহণের ব্যাপারে বলেছেন, ‘অধম (উলামায়ে কেরামের পায়ে ধুলো) ছোট থেকে মাওলানা আবদুল্লাহকে ভালোভাবে জানি। দাওয়াত ও তাবলিগ বিষয়ে তার বইয়ের পাণ্ডুলিপি দেখেছি। জেনে-বুঝে বা না বুঝে করা ভুলের জন্য তিনি নিজেই অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। অধম ভবিষ্যতে মাওলানা আবদুল্লাহর নেগরানি করবো এবং উলামায়ে কেরামের কাছে তার পক্ষে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’

তিনি তার বক্তব্যের সঙ্গে আরও সংযুক্ত করেন, ‘মোবাইলের মাধ্যমে যে অনুচিৎ ম্যাসেজ পাঠিয়ে ছিলেন তার জন্য তিনি লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। ভবিষ্যতে এমন কাজ আর করবে না।’

স্বাক্ষরকারী উলামায়ে কেরাম মাওলানা আবদুল্লাহর তওবা গ্রহণের ঘোষণা করে নিজ নিজ মন্তব্য লিখেছেন। যেমন, জামেয়া আরাবিয়া রামপুরার মুফতি রেজাউল করীম লিখেছেন, ‘ মাওলানা আবদুল্লাহ মনসুরকে নিয়ে বেফাকে মিটিং হয়েছে। আমার উপস্থিতিতে তাকে ক্ষমা করা হয়েছে। সুতরাং তাবলিগের উসুল অনুযায়ী সমস্ত কাজে তাকে সুযোগ দেয়ার সুপারিশ করছি।

[caption id="attachment_47463" align="aligncenter" width="384"] ২য় আরবি নথি। যেখানে তিনি বইয়ের ভুল করার ঘোষণা দিয়েছেন।[/caption]

২য় আরবি নথির অনুবাদ :

‘আল ইমারা হিয়াস সুন্নাহ’ গ্রন্থের ভুলের ঘোষণা

আমি এ কিতাবে ভুল করেছি। সুতরাং কেউ এ কিতাবের ওপর নির্ভর করবেন না এবং তা থেকে দলিলও গ্রহণ করবেন না। কেউ তা ছাপাবেন না এবং কেউ তা পাঠও করবেন না। কেউ তার অনুলিপি করবেন না, কেউ তা বিতরণ  কিংবা বিক্রয়ও করবেন না।

এ ঘোষণা আমি বইয়ের লেখক নিজেই দিচ্ছি।

আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সব আলেমের প্রতি যারা আমাকে উপদেশ দিয়েছেন এবং আমার সংশোধনের চিন্তা করেছেন।

এ নথির নিচে আল ইমারা  হিয়াস সুন্নাহ গ্রন্থের প্রথম পৃষ্ঠার ছবি দেয়া হয়েছে।

[caption id="attachment_47467" align="aligncenter" width="500"] বাংলা তওবানামা। যা তিনি আমাদের কাজের সুবিধার্থে দিয়েছিলেন।[/caption]

উল্লেখ্য, কাকরাইলের মুরব্বি মাওলানা আবদুল্লাহ মনসুরের লেখা, বয়ান ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে দেশের শীর্ষ আলেমগণ দীর্ঘদিন আপত্তি করে আসছিলেন। সর্বশেষ গত ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার  জামিয়া হোসাইনিয়া আরজাবাদে অনুষ্ঠিত শীর্ষ আলেমদের পরামর্শ বৈঠকে মাওলানা আবদুল্লাহকে কাকরাইলের যাবতীয় দায়িত্ব থেকে অব্যহতির দেয়ার দাবি জানানো হয়।

আওয়ার ইসলামে এ সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর মাওলানা আবদুল্লাহ মনসুর তার কাজের ব্যাপারে অনুতপ্ত হন এবং আওয়ার ইসলামে তার তওবানামা প্রেরণ করেন।

এছাড়াও তার লেখা ‘আল ইমারাত হিয়াস সুন্নাহ’ বইটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলেমগণ আপত্তি করেন। যেখানে তিনি দিল্লির মারকাজের মুরব্বি মাওলানা সাদকে আমির হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে নানা রকম যুক্তি পেশ করেন যা নিয়ে ভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।

আগের সংবাদ: কাকরাইলের মাওলানা আবদুল্লাহর তওবানামা

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ