আওয়ার ইসলাম: একাদশ জাতীয় নির্বাচনের হাওয়া বইছে সর্বত্র। প্রার্থীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কাজ করছেন এলাকায়। চলছে জোট মহাজোট গঠনের প্রক্রিয়া-আলোচনা। এর ফাঁকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-৫ (নবীনগর) আসন থেকে দলের প্রার্থী হচ্ছেন ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মাওলানা মেহেদী হাসান। ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় ও নবীনগর উপজেলার নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে এমন ইঙ্গিতই পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আনসারুল হক ইমরান জানান, ইসলামী ঐক্যজোটের নীতিনির্ধারনী ফোরাম মজলিসে শূরা আগামী নির্বাচনে এই আসন থেকে মাওলানা মেহেদী হাসানকেই প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করছে। তার বিকল্প থাকলেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামী ঐক্যজোট কোন জোটে গেলে সেক্ষেত্রে এই আসন অন্যদলকে ছাড় দেবেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে আনসারুল হক ইমরান বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি জোট গড়ার চেষ্টা চলছে। জোট হলেও এই আসনে মাওলানা মেহেদী হাসানকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা ইসলামী ঐক্যজোটের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী এনামুল হাসান বলেন, মাওলানা মেহেদী একজন উদার মনের মানুষ। এলাকায়ও বেশ জনপ্রিয়। পূর্বেও তিনি নির্বাচন করেছেন। কাজেই নির্বাচনী একটা অভিজ্ঞতা কিন্তু তার রয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আমাদের কাছেও তার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। দলের হাইকমান্ডের সাথে তার সম্পর্ক ভাল। আশা করি, তিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশী মাওলানা মেহেদী হাসানকে প্রার্থী হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর উপজেলা)র জনগণ চরম অবহেলা ও বঞ্চণার শিকার। মূল জেলার সাথে আমাদের সড়কপথে যাতায়াত ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন সময়ে জনগণের ভোটে বিজয়ীরা কাঙ্ক্ষিত ও কাঠামোগত উন্নয়নে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর হয়েও নবীনগরে লাগেনি আধুনিক উন্নয়নের ছোয়া। আমরা মনে করি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে সন্ত্রাস, মাদক ও দূর্নীতিমুক্ত আধুনিক সমৃদ্ধ নবীনগর গড়া এখন সময়ের দাবী। এই দাবী পূরণের লক্ষ্যে মানবসেবার মহানব্রত নিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি এই আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। আশা করি, দল আমার প্রত্যাশাকে মূল্যায়ন করবে।
নবীনগর উপজেলা ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি, প্রবীণ আলেম মাওলানা আহমদ আলী বলেন, মেহেদী হাসান নবীনগরের অবহেলিত মানুষের কাছে একটি অতি পরিচিত মুখ। তাঁর কাজের মাধ্যমে অল্পদিনেই সে (মেহেদী) এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এলাকার জনগণ তাকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। এ অঞ্চলের উন্নয়নে তার কোন বিকল্প নাই। উপজেলা ইসলামী ঐক্যজোট তার পক্ষে আছে, থাকবে।
দরিদ্রদের সহায়তা করছেন মাওলানা মেহেদী হাসান
উপজেলা সাধারণ সম্পাদক হাফেজ সানাউল্লাহ জানান, মাওলানা মেহেদী হাসান সহজে মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন। এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষ তাকে সব সময়ই পাশে পায়। সবমিলিয়ে তরুণ এই নেতা মানুষের মধ্যে স্বচ্ছভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। আমরা মনে করি, তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হয়ে সংসদে নবীনগরবাসীর প্রতিনিধিত্ব করবেন। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রে আমরা তার নাম প্রস্তাব করেছি।
উপজেলা ইসলামী ঐক্যজোটের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মাসুদুর রহমান খান বলেন, ব্যক্তি হিসেবে নবীনগরের জনগণের মধ্যে মাওলানা মেহেদী হাসানের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে। বয়সেও তরুণ। কাজেকর্মে তার অদম্য স্প্রিহা। পারিবারিক ঐতিহ্যগতভাবেই বহু আগে থেকেই তিনি সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে জড়িত। ‘মরহুম শাহ্নূর আলম ফাউন্ডেশন’ গঠন করে উপজেলার স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের উদ্যোগ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করেছেন। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ভাতা, সমাজের অসুস্থ অভাবীদের চিকিৎসা ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে তিনি অসহায় অনাথ, ভিটেমাটিহীনদের মাঝে ছাগল, টিউবওয়েল, কাপড়, চাল ও নগদ অর্থ দিয়ে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। একজন প্রার্থীর সবগুণাবলীই তার মধ্যে বিদ্যমান। তিনি প্রার্থী হলে বিজয়ী হবেন ইনশাআল্লাহ।
উল্লেখ্য, মাওলানা মেহেদী হাসান নবীনগর উপজেলার বগডহর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে সন্তান। পিতা হাজী রহিছ মিয়া (সাবেক মেম্বার) ও মাতা হাজী জুহেরা খাতুন। ৫ ভাই ৫ বোনের মেহেদী হাসান সবার ছোট। ছাত্রাবস্থায়ই ইসলামী ঐক্যজোটের সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য আল্লামা মুফতি ফজলুল হক আমিনী রহ. এর সাথে তার পরিচয় হয়। মুফতী আমিনীর রাজনৈতিক চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে ২০০০ সালে ইসলামী ছাত্র খেলাফত বাংলাদেশে যোগ দেন। শুরুতেই নবীনগর উপজেলা ইসলামী ছাত্র খেলাফতের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান। সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করায় ২০০৫ সালের কাউন্সিলে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
২০১০ সালে উপজেলা কাউন্সিলে তিনি নবীনগর উপজেলা ইসলামী ঐক্যজোটের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০১৬-এর কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে দলের হাইকমান্ড তাকে ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য করে সুসংগঠক হিসেবে মুল্যায়ন করেন।
মাওলানা মেহেদী হাসান রাজনীতিবিদ-এর পাশাপাশি নবীনগরের একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। নবীনগর বাজারে বাবার নামে রইস মিয়া মেম্বার মার্কেট করেছেন এবং এমএ ট্রেডার্স নামে একটি বহুমুখী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের তিনি ব্যবস্থানা পরিচালক ও কর্ণধার।
ইসলামি দলের শীর্ষ নেতারা কে কোথায় নির্বাচন করবেন? (২য় পর্ব)
-আরআর