রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


‘পেয়ার দোষী হলে বিচার চাই; নিরপরাধ হলে আল্লাহ যেন হেফাজত করেন’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হামিম আরিফ: তরুণ ফেসবুক সেলিব্রেটি আহসান হাবিব পেয়ারকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা অব্যাহত। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো। তার ভক্তরা বিষয়টি কোনোভাবেই মানতে পারছেন না। যে কারণে তারা তীব্র মন্তব্য করছেন ফেসবুকে।

গতকাল আওয়ার ইসলাম তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন করার পর সেখানেও তার ভক্তরা নানাভাবে কটাক্ষ করেছেন। এদের অনেকেই মারমুখী ভঙ্গিতে উগ্র মতামতও ব্যক্ত করেন। আর তাদের মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে পেয়ারের প্রতারণার ফিরিস্তিও তুলে ধরছেন অনেকে। ফলে বিষয়গুলো ধীরে ধীরেই তিক্ততার দিকে যাচ্ছে।

আহসান হাবিব পেয়ারের সঙ্গে কাজ করা অনেকের সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে কথা হলে তারা জানান, তার অনেক কাজই মানুষের কল্যাণে নিবেদিত ছিল। কিন্তু এসবের সঙ্গে তারও আয় উপার্জনের বিষয়টিও জরিত ছিল।

তাদের মত, আহসান হাবিব কোনো চাকরি না করলেও তার চলাফেরা দেখে বুঝার উপায় থাকে না সে কেমন। তাই পেয়ারের ব্যাপারে আপাত মন্তব্য না করে চুপ থাকাটাই ভালো।

ফেসবুকে তার পক্ষে বিপক্ষে দুই ধরনের মতামতই পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই তার গ্রেফতারে প্রশাসনকে দোষারোপ করছেন। তবে বিশিষ্টজনদের পরামর্শ- এ বিষয়ে মন্তব্যে সচেতনতা অবলম্বন করা।

রেডিও ও টিভি উপস্থাপক মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান লিখেন, পেয়ারের সঙ্গে প্রথম পরিচয় কোন একটি এফ এম এ।এরপর তেমন আর কথা বলি নাই উনার কিছু ত্রুটি দৃশ্যমান হওয়ায়। উনার কাছে হিন্দু আর মুসলিম জিন আছে উনি অনেক আগেই আমাকে বলেছিলেন তার বাসায় রাতে গেলে তিনি দেখাতে পারবেন।কিন্তু আমার যাবার সুযোগ হয়নি দেখিওনি। শুধু বলবো যারা মিডিয়ায় কাজ করছেন ফেমাস হবার জন্যে সত্যিই তারা কপাল পোড়া। পেয়ারের ব্যাপারে বলতে চাই যদি সত্যিই সে দোষী হয় তার বিচার চাই আর যদি নিরপরাধ হন তবে আল্লাহ যেন হেফাজত করেন। তবে নারী কেন্দ্রীক বিষয় গুলি বিশ্বাস করতে পারছি না। আল্লাহ ভালো জানেন।

লেখক ও ছাত্র নেতা ওয়ালি উল্লাহ আরমান পরামর্শ দিয়ে লিখেছেন, অনুমান নির্ভর কিংবা অন্ধ বিদ্বেষী পোস্ট/মন্তব্য থেকে বিরত থাকি৷ মানুষ কখন যে শয়তানের প্ররোচণায় চরমতম ভুল করে ফেলে৷ যখন ধরা খায় তখন সব হারিয়ে যায়৷ কখনো মানুষের দ্বারা এমন ভুল হয়ে যায়, যা আমাদের দূরতম কল্পনাতেও আসে না৷ কার কখন যে পা ফসকে যায়!! আল্লাহ আমাদের হেফাজত করো৷

তিনি লিখেন, আর যারা না জেনে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দোষারোপ করেন তাদের প্রতি অনুরোধ, পুরোটা না জেনে তাদের দোষারোপ করা ঠিক নয়৷ অন্তত আহসান হাবীব পেয়ারের ঘটনায় পুলিশকে দোষী বলাটা সম্পূর্ণ ভুল৷

গোটা ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ, প্রামাণ্য দলীল, অভিযুক্ত এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মুখের বিবরণ থেকেই লিখলাম৷ এর বেশি বলতে পারবো না৷ আর হ্যাঁ, মানুষের বিপর্যয়ে আমরা যেনো উচ্ছ্বসিত না হই৷ এই ঘটনা থেকে সবারই শিক্ষা নেয়ার আছে৷ আছে সতর্কবার্তা৷

জুহাইর মোহাম্মদ লিখেন, আহসান হাবিব পেয়ার একজন মানুষ। পেশায় একজন ইউটিউবার। ব্যক্তিগতভাবে তার সাথে কোন পরিচয় নাই আমার। ইউটিউব/ফেইসবুকের ভিডিও দেখে তাকে চিনেছি। সামগ্রিকভাবে তার ভিডিও মানসম্মত না হলেও ভিওয়ার্স ও ফলোয়ার সাভাবিকের চে'বেশি। মানহীন ভিডিওতে কিছুটা ক্ষতি হলেও উপকারও কিন্তু কম নয়।

সম্প্রতি তার গ্রেফতার নিয়ে বহুজনের বিভিন্ন মন্তব্য। পক্ষে/বিপক্ষে, কেউ যুক্তি কেউ চাপা আবার কেউ কেউ হিংসার জিদটাও ঝেড়ে নিচ্ছেন।

কতজন চিন্তা করেছেন? আপনি যে কারণে তাকে অপছন্দ করেন, সে কি সেই কারণে গ্রেফতার হয়েছে? আজ তার উপর আরোপিত অভিযোগগুলো তো আপনি কখনো কল্পনাও করেন নি! তাহলে অন্যের বিপদে আপনার খিল খিল হাসি কতটা শোভা পায়?

তিনি লিখেন, সে অপরাধী হলে অবশ্যই তার শাস্তি হোক আর নিরপরাধ হলে আমার-আপনার নৈতিক দায়িত্ব, এর প্রতিবাদ করা।

 জাবেদ আহমেদ লিখেন, শুধু পেয়ার নয়, এমন হাজারো পেয়ার আছে আমাদের আশপাশে, বাস করে আমাদের মাঝেই। ছদ্মবেশে। গোপনে। সঙ্গোপনে। যাদের আমরা খুব ভাল, ভদ্র জানতাম।

আসুন আমরা তাদের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক হই। শ্রোতের তালে গা ভাসিয়ে না দেই। আর যারা এমন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছেন, তাদের দেখে উচ্ছ্বসিত না হয়ে নিজে শিক্ষা গ্রহণ করি। মনে রাখবেন, এমন বিপর্যয় আমার আপনার উপর দিয়েও যেতে পারে।

মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাওলানা লুৎফর রহমান লিখেছেন, অবশেষে পেয়ার কে নিয়ে অল্প কিছু বলতে চাই।টেলিভিশনের ক্রাইম টিম এবং ডিবি পুলিশ এ জাতীয় কোন ব্যক্তি বা কোন গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করার পূর্বে অনেক দিন অনুসন্ধান করে বেশ কিছু ডকুমেন্ট হাতে নিয়ে তারপর এমন পদক্ষেপ নেয়৷ পেয়ার যে কাজটি করতো ব্যক্তি উদ্যোগে এটা সে পারে না৷ করতে হলে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং এনজিওব্যুরো থেকে অনুমতি নিতে হয়৷ আর জিনের বিষয়টি আমি আগে থেকে অনেকের কাছে শুনেছি এটাও সুরা আনআমে নিষিদ্ধ৷ পীর সেজে এতো অল্প বয়সে এমন তৎপরতা দেশের আইন ও শরিয়ত বিরোধী৷ অতএব, বিষয়টি নিয়ে পক্ষে বি পক্ষে এত তোড় জোড়ের কিছু নাই৷

মানুষকে সমাজ সচেতন ও প্রতারণা থেকে সাবধান করা মিডিয়ার অন্যতম দায়িত্ব। সে থেকেই তারা কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে অনুসন্ধান করেন। সেটা নিজের বিরুদ্ধে গেলে মানা যাবে না বা প্রকাশ করা যাবে না এ মানসিকতা অবশ্যই বর্জনীয়। আর ইসলামের শিক্ষা হলো সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ উভয়টিই। সুতরাং বিশ্লেষকদের মতামত, অভিযুক্ত কোনো বিষয় সামনে আসার পর তা যাচাইয়ের পরই মন্তব্য করা উচিত।

প্রতারণার অভিযোগে ইউটিউবার আহসান হাবিব পেয়ার গ্রেফতার

আহসান হাবিব পেয়ারের ব্যাপারে যা জানা যাচ্ছে

আরআর


সম্পর্কিত খবর