শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


যে কারণে মেধা তালিকায় বরাবরই শীর্ষে বাইতুল উলুম ঢালকানগর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রোকন রাইয়ান: মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) প্রকাশ পেয়েছে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) এর ফলাফল। এতে পুরুষ বিভাগে ঈর্ষণীয় ফলাফল করে শীর্ষে রয়েছে ঢাকার গেণ্ডারিয়া থানার মাদরাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।

দাওরায়ে হাদিসের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মেধা তালিকায় শীর্ষ ১০-এ স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫ জনই বাইতুল উলুম ঢালকানগরের। তালিকায় এ মাদরাসার শিক্ষার্থীরা যথাক্রমে ১ম, ২য়, ৪র্থ, ৫ম ও ৮ম স্থানে রয়েছেন।

এদিকে মহিলা মাদরাসার মেধা তালিকায় শীর্ষ অবস্থান করছে রামপুরার জাতীয় মহিলা মাদরাসা। সেরা দশে এ মাদরাসার ৩জন শিক্ষার্থী স্থান পেয়েছেন।

মাদরাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর এর আগে বেফাকের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায়ও ঈর্ষণীয় ফলাফলের অধিকারী ছিল। এবারও সুনামের সঙ্গে নিজেদের স্থান ধরে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।

চলতি বছর বাইতুল উলুম থেকে ২২ জন শিক্ষার্থী দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ২০ জন মুমতাজ মার্ক পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বাকি ২জন পেয়েছেন জায়্যিদ জিদ্দান।

১৯৮৯ সালে হযরতওয়ালা করাচি রহ. তারই খলিফা হযরত মাওলানা আবদুল মজীদ ঢাকুবী রহ. এবং মুহিউস সুন্নাহ হযরত হারদুঈ রহ. এর খলিফা মাওলানা সালাহুদ্দীন (শায়েখজী হুজুর) রহ.-কে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন এ মাদরাসা।

প্রতিষ্ঠাকালিন শায়েখদের চিন্তা ছিল যোগ্যতার ভিত্তিতে অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নেয়া। যাতে করে সবার উপর ভালো মেহনত করা যায়। শুধু ইলমি যোগ্যতাই নয় প্রতিটি ছাত্রকে আল্লাহওয়ালা করে তোলাই প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ। ঠিক এ উদ্দেশ্য সামনে রেখেই এগুচ্ছে মাদরাসাটি এবং প্রতিবছর মেধার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে।

ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, মাওলানা শাহ হাকিম মুহাম্মাদ আখতার রহ. (হযরতওয়ালা করাচি) পড়ালেখা করতেন নিজের শায়েখ, হাকিমুল উম্মত হযরত থানবী রহ. এর বিশিষ্ট খলিফা হযরত মাওলানা আবদুল গনী ফুলপুরী রহ. প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায়। যার নাম ছিল ‘মাদরাসা বাইতুল উলুম’। মাদরাসাটির পৃষ্ঠপোষকতা করতেন হযরত থানবী রহ.। তিনিই এই নাম রেখেছিলেন। সেই ‘বাইতুল উলুম’ মাদরাসার অনুকরণে ঢালকানগরে প্রতিষ্ঠিত এই মাদরাসার নামও ‘মাদরাসা বাইতুল উলুম’ রাখেন।

হযরতওয়ালা করাচি রহ. মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করলেও মাদরাসার মূল দায়িত্ব ছিল ঢাকুবী হুজুরের হাতেই। তিনিই ছিলেন এর প্রথম মুহতামিম। পরবর্তীতে বার্ধক্যজনিত কারণে অবসরে গেলে দায়িত্ব দেয়া হয় সদর সাহেব রহ.-এর ছেলে মুফতি রুহুল আমিন-এর উপর। তিনি ২ বছর পর্যন্ত এর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯৮ সাল থেকে হজরওতওয়ালা করাচি রহ. তার অত্যন্ত স্নেহভাজন ও সুযোগ্য খলিফা মুফতি জাফর আহমাদের হাতে মাদরাসা ও খানকাহ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন।

মুফতি জাফর আহমাদ সর্বপ্রথম মাদরাসাকে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সাথে যুক্ত করে বেফাকের সিলেবাস অনুযায়ী তালিমের ধারা চালু করেন। ২০০২ সালে দাওরায়ে হাদিসের দরস চালু হয়।

মাদরাসাটি বর্তমানে মক্তব, নাযেরা বিভাগ ও হিফজ বিভাগ থেকে শুরু করে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। দাওরা ছাড়াও অন্যান্য সব বিভাগে পরীক্ষায় মাদরাসাটির বরাবরই ঈর্ষণীয় ফলাফল লাভ করে আসছে।

দাওরায়ে হাদিসের পর এখানে উচ্চতর বেশ কয়েকটি গবেষণা বিভাগ রয়েছে। এগুলো হলো- তাখাসসুস ফি উলুমিল হাদিস (উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগ)। তাখাসসুস ফিল ফিকহ ওয়াল ইফতা (উচ্চতর ইসলামি আইন ও মাসাইল অনুষদ)। দারুত তাসনিফ (রচনা, গবেষণা ও অনুবাদ বিভাগ)।

মাদরাসাটির রয়েছে একটি অত্যাধুনিক সমৃদ্ধ ইসলামি লাইব্রেরি। এছাড়া মাদরাসার তত্ত্বাবধানেই একটি খানকাহ পরিচালিত হয়ে থাকে। এখানে প্রতিনিয়ত তাযকিয়া, তালিম, তরবিয়াতের পাশাপাশি প্রতি শুক্রবার ইসলাহি মজলিস ও ইংরেজি মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ইসলাহি শবগুজারি অনুষ্ঠিত হয়।

এ মাদরাসারই তত্ত্বাবধানে পৃথক বালিকা শাখাও পরিচালিত হচ্ছে। যেখানে মেয়েদের জন্য ৮ বছরে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত দীনী তালিম হাসিল করার ব্যবস্থা রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির ধারাবাহিক সাফল্যের কারণ জানতে যোগাযোগ করা হলে মাদরাসার মুহাদ্দিস ও ইফতা বিভাগের মুশরিফ মুফতি হাবিবুল্লাহ মিসবাহ বলেন, আল্লাহ তায়ালার বিশেষ মেহেরবানী, হজরতওয়ালা করাচি রহ.সহ আল্লাহওয়ালাদের নেক নজর এবং মাদরাসার স্বনামধন্য মুহতামিম মুফতি জাফর আহমাদের সার্বিক তত্ত্বাবধান, সুদক্ষ পরিচালনা ও আসাতিজায়ে কেরামের নিরলস মেহনতই সফলতার মূল কারণ।

প্রতিবছর বেছে বেছে ছাত্র নেয়া হয় এ কারণেই সাফল্য কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে নতুন ছাত্র খুব একটা নেয়ার সুযোগ থাকে না। কোনো কোনো জামাতে মাত্র চার পাঁচটি কোটার বিপরীতে ১০০/১৫০ ছাত্র পরীক্ষা দিয়ে থাকে। জায়গা স্বল্পতার কারণে নিচের জামাতের ছাত্র দিয়েই উপরের জামাতের কোটা প্রায় শেষ হয়ে যায়। মূলত, আমাদের এখানে আসাতাজায়ে কেরাম নিচের জামাত থেকেই প্রতিটি ছাত্রের পেছনে কঠোর মেহনত করে থাকেন। যাতে শুরু থেকেই তারা দক্ষ হয়ে উঠে।

প্রতিষ্ঠানটি যার হাত ধরে এতদূর এসেছে তিনি মাওলানা মুফতি জাফর আহমাদ। সাফল্যের কারণ জানতেই চাইলে তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, সফলতা আল্লাহ পাকের রহমত ও বরকতেই সম্ভব। এর বাইরে আর কিছু নেই।

এর বাইরেও আমরা দেখি আপনারা শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেশ মেহনত করেন এটাও তো কারণ? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হজরত থানভী রহ. বলতেন, অনেকে বলে তাদের নিজেদের মেহনতের কারণে সফলতা পেয়েছে এটা স্পষ্ট ধোকা। সফলতার পেছনে আল্লাহর রহমতই একমাত্র কারণ।

তবে তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বলেন, আমরা এ উদ্দেশ্য সামনে রেখে ছাত্রদের পেছনে মেহনত করি যেন এখানকার প্রত্যেক ছাত্র ভালো উস্তাদ হতে পারে। কারও যেন ইলম ও আমলে দুর্বলতা না থাকে।

অনেক যোগ্য শিক্ষার্থীরই আশা থাকে বাইতুল উলুম ঢালকানগরে পড়বে। তাদের চিন্তা করে আপনারা কোটা বাড়াবেন কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে জায়গা খুবই অল্প। আগে তো প্রত্যেক জামাতে মাত্র ১০ জন করে ছাত্র নেয়া হতো। এখন ৩০ জন করে নেয়া হয়। এর বেশি নেয়ার সুযোগ নেই।

তবে আল্লাহর শুকর আমরা মাওয়া’র দিকে সিরাজদিখানের ধলেশ্বরী ব্রিজের পাশে ১৫২ শতাংশ জমির উপর একটি নতুন মাদরাসা করছি। ইতোমধ্যেই ৪২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাট করা হয়েছে। শিগগির নির্মাণ কাজ শুরু হবে। জামিয়া আশরাফুল মাদারিস নামে মাদরাসা ও শায়েখ যাকারিয়া রহ. নামে খানকাহ নির্মাণ করা হবে। আল্লাহ চাহে তো সেখানে অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে।

দাওরায়ে হাদিসের ফল প্রকাশ; মেধা তালিকায় শীর্ষে যারা

পুরুষ ৮৩.৯২ মহিলা ৭৮.৯৩; পাশ করেনি ৩৯৮০ জন

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ