লুৎফর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী। গালিবাজ মাওলানা নামে প্রসিদ্ধ। যিনি অশ্লীল গালি ভরা মজমায় পাগড়ি মাথায়ও অবলীলায় বকে যেতে পারেন। প্রচলিত মিলাদ কিয়ামকে মুস্তাহাব বলে বেড়ালেও এ নিয়ে চরম পর্যায়ের প্রান্তিকতা প্রদর্শন করেন। প্রচলিত মিলাদকে বিদআত সাব্যস্তকারীদের জিব টেনে ছিড়ে ফেলার হুমকিও প্রদান করেন প্রকাশ্য মজলিসে।
তার মত একজন অপরিচিত ব্যক্তির ভয়ে নাকি শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমাদ শফী দামাত বারাকাতুহু এবং আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী দামাত বারাকাতুহু পালিয়ে বেড়ান। উলামায়ে দেওবন্দের কোন আলেম তার সামনে গিয়ে এ বিষয়ে নাকি আলোচনা করার হিম্মতই রাখেন না। ইত্যাদি নানাবিধ বাগাড়ম্বরতা করে আসছিলেন মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী।
আমাদের বড়রা তার এ পাগলামীকে বাচ্চাদের শিশুসূলভ আচরণ হিসেবে উপেক্ষা করে আসছিলেন। গুরুত্ব দেইনি আমরা ছোটরাও। নিজের গুরুত্ব বাড়াতে বাজারের ক্যানভাসার কত কথাই বলে। এসব দিকে ভ্রুক্ষেপ করার সময় আমাদের কোথায়?
বিগত জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ঈসাব্দের দিকে হঠাৎ মাহদী হাসান নামে একজন ফোন করেন। পরিচয় দেন তিনি নারায়নগঞ্জ থেকে বলছেন। জানালেনঃ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী সাহেবের চ্যালেঞ্জবাজীর কথা। তার সাথে প্রচলিত মিলাদ কিয়াম নিয়ে কেউ বাহাস করার সাহসই করছেন না। বিষয়টিকে খুবই হালকা হিসেবে নিয়ে আমি বললামঃ আচ্ছা, তাই নাকি? তাহলে তাকে বলেন, আমাদের সাথে আলোচনায় বসতে।
১ম বৈঠক
আমাদের পক্ষ থেকে একথা বলার পর দীর্ঘদিন যাবত আর কোন খবর ছিল না আব্বাসী সাহেবের প্রতিনিধির। তারপর গত এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে আবার ফোন দিলেন মাহদী হাসান। জানালেন আব্বাসী সাহেব আমাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি পাঠাতে বলেছেন বাহাসের ডেট ও শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করার জন্য।
আমি এটাকেও দুর্বল দৃষ্টিতে দেখলাম। বললামঃ ঠিক আছে আমি প্রতিনিধি পাঠাচ্ছি। তার পক্ষ থেকে লোক পাঠাতে বলেন!
উস্তাজে মুহতারাম আল্লামা আব্দুল মতীন সাহেবের সাথে প্রাথমিক আলোচনা করে প্রাথমিক কিছু বিষয় উল্লেখ করে একটি প্রিন্ট কপি দিয়ে জনাব আব্দুস সবুর খানসহ কয়েকজনকে পাঠালাম আব্বাসী সাহেবের প্রতিনিধির সাথে আলোচনা করতে।
৮ এপ্রিল ২০১৭ ঈসাব্দ, সকাল দশটার দিকে বাইতুল মুকররম মসজিদে এ বিষয়ক প্রাথমিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম বৈঠকে আব্বাসী সাহেবের মাদরাসা থেকে আসা প্রতিনিধিদের প্রাথমিক আলোচনায় মিলাদের পক্ষাবলম্বনকারীদের দাবী ও আমাদের জবাবসহ বাহাসের শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা হয়। অবশেষে সিদ্ধান্ত হয়ঃ ২০শে এপ্রিলের মাঝে বাহাসের দিন ও তারিখ ও স্থান জানানো হবে এবং মুবাহিসদের নামও দিতে হবে। যারা দিনও তারিখ প্রদান করতে অস্বিকৃতি জানাবে, তারা পরাজিত বলে গণ্য হবে।
আমি বিষয়টির সত্যতা কেউ যাতে অস্বিকার করতে না পারে, তাই এটিকে ভিডিও রেকর্ড করতে বলি।
কিন্তু সেটি লাইভে সরাসরি সম্প্রচারিত হওয়ায় দেশব্যাপী আলোচিত হয়ে যায়। শুধু দেশ বললে ভুল হবে। বর্হিবিশ্বের বাংলাভাসীদের কাছেও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে দুর্বল দৃষ্টিতে দেখা বিষয়টি আচমকা গুরুত্বপূর্ণ রূপ পরিগ্রহ করে।
২য় বৈঠক
শাইখুল হাদীস আল্লামা মুফতী মীযানুর রহমান সাঈদ এবং আল্লামা মুফতী দিলাওয়ার হুসাইন দামাত বারাকাতুহুমা এর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। হযরতদের পরামর্শে ৬জনের নামসহ আমরা দ্বিতীয় বৈঠকে প্রতিনিধিদল পাঠাই।
দ্বিতীয় বৈঠক ১৯ এপ্রিল ২০১৭ ঈসাব্দ অনুষ্ঠিত হয় সেই বাইতুল মুকাররমেই। সেখানে উভয়পক্ষের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুপাতে শর্তাবলী লিপিবদ্ধ করা হয়। বাহাসের তারিখ নির্ধারিত হয় ২৫ মে ২০১৭ ঈসাব্দ, রোজ বৃহস্পতিবার, সকাল দশটা। স্থান ইসলামী ফাউন্ডেশন মিলনায়তন।
সিদ্ধান্ত হয়, বাহাসের চ্যালেঞ্জকারী মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী বাহাসের দিন অসুস্থ্য হলেও উপস্থিত থাকতে হবে। বাকি মুনাজির ও বিচারকদের কেউ অসুস্থ্য হলে বা অন্য কোন কারণ থাকলে অনুপস্থিত থাকতে পারেন। তখন অপর পক্ষ মেনে নিলে তাদের বিকল্প কেউ থাকতে পারেন।
উভয় পক্ষের সম্মিলিত সেই সিদ্ধান্তসমূহ একই লেখা দু’টি ষ্ট্যাম্পের মাধ্যমে চূড়ান্ত হয়। জানানো হয়, বাহাসের আগেই উভয় পক্ষের মুনাজির ও বিচারকদের দস্তখতকৃত চুক্তিপত্র পরস্পর বিনিময় করতে হবে। যাতে করে বাহাসের দিন মুনাজিরদের অনুপস্থিতির সুযোগ না থাকে। সেই সাথে উভয় পক্ষের সহযোগিতায় স্থানের অনুমোদন এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
৩য় বৈঠক
বাহাসের সময় ঘনিয়ে আসায় আমরা দ্রুত মুনাজির ও বিচারকদের দস্তখতকৃত চুক্তিপত্র অদল বদলের জন্য আব্বাসী সাহেবের প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করি। চুক্তিপত্র হস্তান্তরের তারিখ নির্ধারিত হয় ৯ মে ২০১৭ ঈসাব্দ, বিকাল ৩টা। স্থান বাইতুল মুকাররম মসজিদ ঢাকা।
যেহেতু বাহাসের সময় ঘনিয়ে আসছে। তাই বাহাস স্থলের অনুমোদন এবং নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনা করা জরুরী হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে যেহেতু বাহাসের চ্যালেঞ্জকারী মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী। আর গ্রহণকারী মাওলানা লুৎফুর রহমান ফরায়েজী। তাই প্রতিনিধি রেখে উভয়ের সরাসরি কথা বলার প্রয়োজন অনুভব হয়। যাতে করে প্রশাসনিক অনুমোদনে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা পাওয়া যায়।
সেই হিসেবে ৩য় বৈঠকের আগের দিন তথা ৮ই মে রাতে এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী সাহেবের নাম্বারে ফোন দেয়া হয়। রিসিভ করেন তার পিএস মুহাম্মদ হাসান। তিনি জানান, কিছুক্ষণ পর আপনাকে জানানো হবে।
কিন্তু দীর্ঘ ৪৫ মিনিট পর্যন্ত কোন রেসপন্স তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায় না। তখন আমরা পুনরায় ফোন করি। তখন পাশেই জোরে জোরে চিল্লাচ্ছিলেন মাওলানা আব্বাসী। আর অশ্রাব্য ভাষায় আমাদের গালাগাল করছিলেন। জানালেনঃ আমাকে তিনি চিনেনই না। তাই আমাদের সাথে কথা বলবেন না। আমরা বললামঃ আমাকে না চিনলে তিনি আমাকে কিভাবে তার প্রতিনিধি দিয়ে চ্যালেঞ্জ জানালেন? অপরিচিত কাউকে কিভাবে চ্যালেঞ্জ করলেন?
জবাবে জানানঃ তিনি চ্যালেঞ্জ করেননি? এর মানে এ বাহাসের সাথে এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর কোন সম্পর্ক নেই?
জানানো হল, অবশ্যই আছে। কিন্তু তিনি আমার সাথে কথা বলবেন না।
এরপর যেভাবে ঝগড়া শুরু করলেন। আর নোংরা ভাষায় কথা বলতে থাকলেন, যা আমাদের পক্ষে কল্পনা করাও সম্ভব নয়।
অবশেষে ৯ তারিখ আমি ও মুফতী সামসুদ্দোহা আশরাফীসহ ৬/৭জনের একটি টিম নির্ধারিত সময় বাইতুল মুকাররমে উপস্থিত হই। মুনাজিরদের দস্তখতকৃত চুক্তিনামা হস্তান্তর এবং বাহাসের স্থান ও প্রশাসনিক অনুমতি সংক্রান্ত আলোচনা করতে।
মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী সাহেবের প্রায় ১০/১২জন প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত হন। পূর্বের নির্ধারিত রীতি অনুপাতে আমরা আমাদের সকল মুনাজির ও বিচারকদের দস্তখতকৃত চুক্তিনামা পেশ করি। কিন্তু তারা তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বলেনঃ এ চুক্তিপত্র নাকি অসম্পূর্ণ। আমরা জানালামঃ আমাদের প্রতিটি মুনাজির ও বিচারকের সাইন এখানে প্রদান করা আছে। আমাদের চুক্তিপত্র পূর্ণাঙ্গ। সুতরাং পূর্বের ওয়াদা মুতাবিক তা গ্রহণ করুন। আর আপনাদের মুনাজির বিচারকদের দস্তখতকৃত চুক্তিনামা আমাদের প্রদান করুন। তারপর আমরা প্রশাসনিক অনুমতি ও স্থান বিষয়ক প্রয়োজনীয় আলোচনা সম্পন্ন করবো।
কিন্তু তারা তা দিতে সম্পূর্ণ অস্বিকৃতি জানান। এর মানে তারা নিজেদের মুনাজির ও বিচারকদের দস্তখত নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই গড়িমসি করে মূল বিষয় এড়িয়ে হাঙ্গামা সৃষ্টির অপচেষ্টা করে যান।
তখন আমরা দরদের সাথে জানালামঃ দেখুন আপনাদের সাথে আলোচনার আমাদের মূল মাকসাদ বাহাস নয়।
একথা বলার সাথে সাথে আব্বাসী সাহেবের সকল ভক্ত একযোগে নাউজুবিল্লাহ বলে চিৎকার করে উঠেন। বলেনঃ বাহাস নাকি উদ্দেশ্য নয়? তাহলে উদ্দেশ্য কী?
আমি তখন আবার বললামঃ আমাদের মাকসাদ মূলত বাহাস নয়। বরং উদ্দেশ্য হল বাহাসের মাধ্যমে আপনাদের ও আমাদের মাঝে দূরত্ব কমিয়ে আনা। বাহাস উদ্দেশ্য নয়। বাহাস এ দূরত্ব কমানোর মাধ্যম মাত্র।
আমাদের দরদী কথায় তাদের উগ্র মনোভাবে কিছুটা হলেও নমনীয়তা নিয়ে আসে।
অবশেষে যখন আমরা বুঝে গেলাম তারা দস্তখতকৃত চুক্তিনামা হস্তান্তর করতেই পারবে না। তখন আমরা হেসে বলে ফেললামঃ আসলে আপনারা বাহাসের শর্তাবলীকে ভয় পাচ্ছেন।
আব্বাসী সাহেবের প্রতিনিধি মাওলানা মঞ্জুর সাহেব বললেনঃ না, না ভয় পাচ্ছি না।
আমরা বললামঃ তাহলে চুক্তিপত্র অদল বদল করছেন না কেন? এর মানে আপনারা বাহাসে আসবেন না। ভয় পাচ্ছেন।
এবার আব্বাসী সাহেবের প্রতিনিধি সবাই একযোগে চেঁচিয়ে উঠলেনঃ বাহাস হবে। অবশ্যই হবে।
আমরা বললামঃ তাহলে বাহাস চূড়ান্ত?
জানালেনঃ হ্যাঁ, চূড়ান্ত। তবে একজনের চুক্তিনামা আরেকজনের কাছে হস্তান্তর করা যাবে না। যার যার কাছে থাকবে। কোন পরিবর্তন ছাড়াই বাহাস হবে। বাইতুল মুকাররমে বাহাসের অনুমতি না পাই, তাহলে আমরা আপনাদের আল্লামা মাহমুদুল হাসান সাহেবের যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় বসতে রাজি আছি।
আমরা বললামঃ ঠিক আছে। এবার তাহলে প্রশাসনের অনুমতির জন্য দ্বিপক্ষীয় কমিটি করুন।
আমাদের পক্ষ থেকে কমিটিতে আছেনঃ
১-জনাব এ্যাডভোকেট মাসুদ রানা। ২-মাওলানা ইমদাদ মিসবাহ। ৩-জনাব আব্দুস সবুর খান সুমন।
আব্বাসী সাহেবের পক্ষ থেকে কমিটি সদস্যঃ
১-মাওলানা মঞ্জুর আহমাদ। ২-মুহাম্মদ মাহদী হাসান। ৩-মুহাম্মদ হাসান [আব্বাসী সাহেবের পিএস]
এভাবেই বাহাস বিষয়ক ৩য় ও চূড়ান্ত বৈঠক অনুষ্টিত হয়।সবশেষে উভয় পক্ষের মুসাফাহা ও মুআনাকার মাধ্যমে হাসিখুশি পরিবেশেই বৈঠক সমাপ্ত হয়। আব্বাসী সাহেবের পিএসতো আমাকে জড়িয়ে ধরে দুলাভাই বলেই সম্বোধন করে বসেন। যা দেখে অনেকেই হতবাক হয়ে যান।
আন্তরিক পরিবেশেই বিদায় হলাম সবাই। মসজিদের বারান্দায় যেতেই দেখা হল আলোচিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল আওয়ার ইসলাম ডটকমের প্রতিনিধির সাথে। জানালেনঃ আওয়ার ইসলামের সাংবাদিক পরিচয় দিতেই আব্বাসী গ্রুপের লোকেরা তাকে “জামাতের দালাল” বলে গালাগাল শুরু করেন। অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
তাদের এ উগ্র আচরণ বিষয়ে আমাদের মতামত জানতে চান। আমি বললামঃ ভাই মন খারাপ করবেন না। যাদের নেতা আব্বাসী সাহেবই ভরা মজলিসে অশ্লীল গালাগাল করতে পারেন। তার অনুসারীরা গালাগাল আর অশ্রাব্য কথা বলবে এটাতো স্বাভাবিক। কষ্ট নিবেন না।
যাইহোক। আব্বাসী প্রতিনিধিদের সাথে আমাদের বিদায়টা যেভাবে কুলাকুলি ও হাসিখুশির মাধ্যমে হয়েছে, আমরা ভেবেছিলাম তারা আগে উগ্র মিথ্যাচারী মনোভাবি হলেও আমাদের সাথে বৈঠকের পর সেই উগ্রতা ও প্রতারণায় খানিক ভাটা পড়বে।
কিন্তু আফসোসের সাথে লক্ষ্য করলামঃ সেদিন রাতেই তারা আমাদের নামে অজস্র মিথ্যা ও প্রতারণা নির্ভর পোষ্ট করে ফেইসবুকে আব্বাসী সাহেবের নিজস্ব পেইজে।
মানুষ কতটা নিচে নামতে পারে, তা তাদের পোষ্ট না দেখলে বিশ্বাস হতো না। ইন্নালিল্লাহ। এমন জলজ্যান্ত মিথ্যা! এভাবে সত্য ধামাচাপা দিয়ে প্রতারণার আশ্রয়। মুস্তাহাব দাবীকৃত কিয়ামের জন্য হারাম মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয়?
কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আব্বাসী সাহেব তার অনুসারীদের?
মুস্তাহাব প্রতিষ্ঠা করতে হারাম জালিয়াতী ও অপবাদের আশ্রয় নেবার ভয়ানক খেলায় মেতেছে আব্বাসী সাহেব।
এমন প্রতারক ও মিথ্যুকদের সাথে আমাদের দূরত্ব কমানোর মানসিকতার বাহাসে বসে আদৌ কোন ফায়দা হবে কি?
সংক্ষেপে তাদের নিয়ম বহির্ভূত আচরণের ফিরিস্তি হলঃ
১
বৈঠকের মূল এজেন্ডা ছিল মুনাজির ও বিচারকদের দস্তখতকৃত চুক্তিপত্র হস্তান্তর। কিন্তু আমাদের দস্তখতকৃত পূর্ণাঙ্গ চুক্তিপত্র বারবার হস্তান্তর করে দিতে চাইলেও তারা তাদের চুক্তিপত্র হস্তান্তর করতে সম্মত হয়নি।
২
কুরআনও নাকি পরিবর্তন হয়েছে তাই তাদের চুক্তিনামার শর্তাবলী আবার পরিবর্তন করতে হবে বলে ভয়ানক দাবী করে বসেন। (নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক)
অথচ বাহাসের শর্তাবলী উভয় পক্ষের সম্মতিতে লিখিত হয়ে স্বাক্ষরিত হয়েছে। এখন আবার তা পরিবর্তনের অযৌক্তিক ও বিভ্রান্তিকর দাবী উপস্থাপন করে হট্টগোল সৃষ্টি করেন।
৩
তারা আগের দুই বৈঠকে ভুল করেছেন মর্মে বারবার ঘোষণা করেন।
৪
আব্বাসী প্রতিনিধিরা চূড়ান্ত উগ্রতার সাথে একই সাথে একাধিক ব্যক্তি কথা বলতে থাকেন। মসজিদে বসেও আদব রক্ষা না করে উচ্চ আওয়াজে চিৎকার করে কথা বলেন। তখন আমরা তাদের শান্ত হতে বলার ভদ্রোচিত অনুরোধকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবী করে জঘন্য আখলাকের অধিকারী হবার প্রমাণ দেন আব্বাসী সাহেবের লোকেরা।
৫
অহেতুক ও অযৌক্তিক কথার অবতারণা করে বারংবার হট্টগোল সৃষ্টি।
৬
ভাষার শালীনতা বিসর্জন করে উচ্চবাচ্য করা।
৭
মুনাজির এরশাদ বুখারীকে পরিবর্তনের বিষয়টি এড়িয়ে আমাদের মুবাহিস পরিবর্তনের বিষয়টি হাইলাইটস করে ধুম্রজাল সৃষ্টির অপচেষ্টা।
৮
আমাদের নিজেদের লোকদের কথা না বলতে অনুরোধ করার ভঙ্গিটিকে ওদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবী করে জঘন্য মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়া।
ইত্যাদিসহ আরো যেসব আচরণ তারা সেখানে করেছেন তা কোন সভ্য ও ভদ্র মানুষ করতে পারেন না।
তবু আমরা পরিবেশকে ঠান্ডা রাখতে সাধ্যানুপাতে চেষ্টা করেছি। নিজেদের ছোট করে উপস্থাপন করেও বিশৃংখলা রোধ করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছি। আমাদের এ ভদ্রতাকে তারা দুর্বলতা হিসেবে মনে করে আখলাকী দৈন্যতার পরিচয় দেন।
শুনতে পাচ্ছিঃ টাকা পয়সা খরচ করে প্রশাসন ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন মাওলানা আব্বাসী। যেকোন মূল্যে ২৫তারিখে তিনি বাইতুল মুকাররম দখল করবেন। বাহিনী ও প্রশাসনের সহায়তায় আমাদের আটকে রেখে সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করবেন।
মানুষটার “জিব টেনে ছিড়ে ফেলবো” টাইপ বক্তব্য শুনে এবং তার অনুসারীদের উগ্র আচরণ ও লেখালেখি দেখে আমাদের কাছেও পরিস্কার হয়ে গেছে যে, বাহাসে জোরপূর্বক জিততে যতটা নিচে নামতে হয়, তার সবই করে ছাড়বে এ মিলাদী আব্বাসী সাহেব।
আল্লাহ তাআলা ফিতনাবাজ থেকে উম্মতে মুসলিমাকে হিফাযত করুন।
আমরা আব্বাসী সাহেবকে পরিস্কার বলতে চাইঃ
১
বিশৃংখলা বন্ধ করুন। আপনার অনুসারীদের উগ্রতা থামান। সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে উভয় পক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
যেহেতু বাহাসের চ্যালেঞ্জকারী আপনি। তাই কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে এর দায়ভার আপনার উপরেই বর্তাবে।
২
বাহিনী একত্র করে শক্তি প্রদর্শন করবেন না। তাহলে আমরাও সারা দেশ থেকে তৌহিদী জনতাকে একত্র করে প্রমাণ করবো, তাদের অস্ত্রধারী বাহিনী থাকলেও নিরস্ত্র সাধারণ তৌহিদী জনতা আমাদের পাশেই আছেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকল ফিতনা মুকাবিলায় সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার তৌফিক দান করুন। তার নুসরতে আমাদের ভরপুর করুন। হকের বিজয় দান করুন। তার দ্বীনের জন্য আমাদের কবুল করুন। আমীন।
বৈঠকের পূর্ণাঙ্গ ভিডিও
২৫ মে মিলাদ কিয়ামের বাহাস নিয়ে দুই পক্ষের বৈঠক
এসএস/