শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


‘ইসলামি রাজনীতিকগণ ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার সুফল মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারেন নি’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু : সামনে জাতীয় নির্বাচন। প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বড় রাজনৈতিক দলগুলোতে। প্রচারণাও শুরু করেছে তারা। প্রতিদিনই পাল্টাচ্ছে রাজনীতির  হিসেব। হচ্ছে নতুন জোট আবার ভাঙ্গছেও তা। জাতীয় নির্বাচনের এ উত্তাপ পড়তে শুরু করেছে ইসলামি ধারার রাজনৈতিক দলগুলোতেও। ইসলামি ধারার গুলো নিয়ে স্বতন্ত্র জোট গঠনের গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গণে।

ভোটের রাজনীতিতে ইসলামি দলগুলো বরাবরই অন্যের ক্ষমতা লাভের নিয়ামক হয়েছে। তাই বড় দলগুলোতে বেড়েছে ইসলামি দলের কদর। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসলামি ধারা রাজনৈতিক দলগুলোর সখ্যতা নতুন কিছু নয়। এবার আওয়ামী লীগের মাঝে সে প্রবণতা প্রবল হয়েছে বলে অভিযোগ তার মিত্র বাম দলগুলোর। তাদের দাবি ভোটের রাজনীতির কারণে দেয়া হয়েছে কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি এবং পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তন বিলোপ করা হয়েছে একই হিসেব থেকে।

বড় দলগুলোর আগ্রহ ও দেন-দরবারের কারণেই প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কী ইসলামি দলগুলো দেশের তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে? ইসলামি দলগুলোর মধ্যে যারা জোটবদ্ধ হতে চাচ্ছেন তাদেরও দাবি দেশে তৃতীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার লক্ষ্যেই গঠিত হবে তাদের রাজনৈতিক জোট।

ইসলামি দলগুলোর জোটবদ্ধ হওয়ার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ওমর গণি এম ই এস কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘যে কোনো ঐক্য যে কোনো সংহতি প্রসংশার। ইসলামি দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে শুনে আমি অত্যন্ত খুশি। তবে আমি খুব আশাবাদী নয়। কেননা ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তা টেকে নি। জনগণ খুব বেশি সুফলও লাভ করে নি।’

যেখানে দেশের মূলধারার মিডিয়ায় ভোটের রাজনীতিতে ইসলামি দলগুলোর নানা সম্ভাবণার দিক তুলে ধরছেন, সেখানে তিনি হতাশ কেনো? অধ্যাপক খালিদ বলেন, ‘স্বাধীনতার পরবর্তী এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে আমি ইসলামি দলগুলোর ঐক্য নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারি না। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত যতো নির্বাচন হয়েছে তাতে ইসলামীপন্থী দলগুলোর ভোটের হার ২%।’

দেশের তৃতীয় শক্তি হতে পারে ইসলামি শক্তি: উবায়দুর রহমান খান নদভী

কওমিজোট: বিরোধী দল হওয়া কী সম্ভব?

এ দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। ধর্মীয় ইস্যুতে তারা সব সময়ই সরব। এগুলোর কী তৃতীয় শক্তি হওয়ার সম্ভবনা প্রমাণ করে না? ‘হ্যা, করে। ইসলামি দলগুলোর তৃতীয় শক্তি; এমনটি দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হওয়ার সুযোগ ছিলো এবং এখনো আছে। কিন্তু ইসলামি দলগুলো সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারে নি। তারা ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার সুফল মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারে নি।’

‘ইসলামি দলগুলোর নেতারা মানুষের এতোটুকু আস্থা অর্জন করতে পারে নি যে মানুষ তাদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা তুলে দিবে। এজন্য মানুষ তাদেরকে শ্রদ্ধা করে, তাদের কাছ থেকে পানিপড়া আনে, মুরিদ হয় কিন্তু তাদেরকে ভোট দেয় না। মানুষ মনে করে, ধর্ম-কর্মে আলেমগণ যতোটা পারদর্শী রাষ্ট্র পরিচালনায় ততোটাই আনাড়ি।’

তিনি উল্টো প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘বাংলাদেশের ইসলামি দলগুলোর মধ্যে চরমোনাইয়ের পীরের ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কারো দেশের সব জেলায় হয়তো কমিটিও নেই। অফিসও হয়তো নেই। কিছু ইসলামি দল শুধু নামসর্বস্ব। এরা তৃতীয় শক্তি হবে কী করে?’

আপনার কথা যদি সত্যই হয়, যদি কোনো সম্ভাবনাই না থাকে, তাহলে বড় দলগুলো  ইসলামি দলগুলোকে পাশে পেতে চায় কেনো? উত্তরে অধ্যাপক খালিদ বলেন, ‘বড় রাজনৈতিক দলগুলো তাদেরকে পাশে টানার কারণ হলো, সমাজের মানুষ আলেমদের শ্রদ্ধা করে, তাদের সাথে সম্পর্ক রাখে। আলেমদের পাশে রাখা গেলে সাধারণ মানুষ হয়তো তাদেরকে ইসলামবিরোধী মনে করবে না।’

শবে বরাত: না বাড়াবাড়ি, না ছাড়াছাড়ি

মাদরাসার ছেলেরা নেশা করেন না তাদের রক্ত ১০০% খাঁটি (ভিডিও)

সমকালের আলোচিত একটি ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘শাপলা চত্ত্বর একটি ননপলিটিক্যাল ইস্যু। রাজনৈতিক ইস্যুতে ডাক দিলে এতো মানুষ সমবেত হবে এটা আমি মনে করি না এবং যারা এখন একত্র হয়েছে তাদের অনেকেই হয়তো আর আসবে না।’

অভিজ্ঞ এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি নিজেও এক সময় ইসলামি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। মিনার মার্কার পক্ষে জাতীয় নির্বাচনেই ক্যাম্পেইন করি। বড় বড় নির্বাচনী সভা করেছি। মানুষ দলবেঁধে আমাদের কথা শুনতে আসতো। কিন্তু ভোট দেয় মাত্র আড়াই হাজার।’

তবে তিনি স্পষ্ট করেন যে, তিনি মোটেও ইসলামি দলগুলোর রাজনৈতিক জোট গঠনকে নিরুৎসাহিত করছেন না। তিনি বলতে চাইছেন, সবকিছুর পরও আমি বলবো, ইসলামি দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হোক। কারণ, এককভাবে কোনো এগিয়ে যেতে পারছে না। যদি সবাই এক হতে পারে তাহলে হয়তো অগ্রসর হতে পারবে।’

আলোচনা শেষে তিনি ইসলামি দলগুলোর নেতাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ রাখেন তারা যেনো ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থকে সামনে রেখ জোটবদ্ধ হন এবং তা রক্ষার চেষ্টা করেন। সাথে সাথে তারা যেনো দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা ভুলে না যান।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ