শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

কওমির ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে যে সারল্য সহযোগিতা এবং অবিলাসী জীবন সেটি আর কোথাও পাইনি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

উবায়দুল্লাহ সাআদ
প্রতিবেদক 

অধ্যাপক শামসুদ্দীন। বয়স ৬৮। এই বয়সেও দীনি শিক্ষা অর্জনের জন্য ভর্তি হয়েছেন কওমি মাদরাসায়। এখন চলছে নাহবেমির (মধ্যম) শ্রেণির পরীক্ষা।

গত কয়েকদিন ধরেই তার পরীক্ষা দেয়ার একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ছবিটা প্রেরণা দিয়েছে হাজারও মানুষকে। কিন্তু মানুষটির পরিচয় ঠিকানা কিছুই জানা ছিল না। নানা জায়গায় ফোন করেও তেমন তথ্য পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত কওমি মাদরাস শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) থেকে অনেক কাঠখড় পুলিয়ে অধ্যাপক শামসুদ্দীনের নাম্বার ও বাসার ঠিকানা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেছেন বেফাকের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা রফিকুল ইসলাম। ঠিকানা পেয়ে সেদিনই বিকেলে ছুটে যাই টঙ্গীতে তার বাসায়।

অধ্যাপক শামসুদ্দীন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ এ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি শসস্ত্র যুদ্ধে শরিক হন। তিনি মেজর কেএম সফিউল্লাহর নেতৃত্বেই ৩নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন।

৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত মাদরাসায় পড়াশোনার পর বাকিটা স্কুলেই। রাজশাহী ইউনিভার্সিটি থেকে কেমিস্ট্রিতে অনার্স করেছেন। এরপর ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে আইন শাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে হোমিও চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষের সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন কর্মবীর মানুষটি।

কর্ম জীবনে তিনি একজন সফল শিক্ষক এবং ব্যাংকার, পারিবারিক জীবনে অধ্যাপক শামসুদ্দীন চার সন্তানের জনক জীবনের এই পড়ন্ত সময়ে তার বয়ষ যখন ৬৮ বছর তখন তিনি ভর্তি হয়েছেন কওমি মাদরাসায় এবং অংশগ্রহন করছেন ৪০ তম কেন্দ্রীয় বেফাক পরীক্ষায়। হঠ্যাৎ কওমিতে পড়তে আগ্রহী হলেন কেন? কওমি শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বীকৃতিসহ নানা বিষয়ে তিনি আলোচনা করেছেন আওয়ার ইসলামের সঙ্গে।

কেমন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ ।

আপনার নীজের সম্পর্কে বলুন?
আমার নাম শামসুদ্দীন। আমার জন্ম ১৯৪৯ সালে গাজীপুরের কালীগঞ্জে। প্রাথমিক শিক্ষা নিজ গ্রামে মাদরাসায় ক্লাশ ৮ থেকে স্কুলে, পরে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি থেকে কেমিষ্ট্রিতে অনার্স করেছি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে আইন শাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করি এবং হোমিও প্যাথিক নিয়ে পড়েছি এই তো।

কর্ম জীবন কোথায় কীভাবে কেটেছে?
কর্ম জীবন শুরু করেছি কাপাসিয়া কলেজে। সেখানে কেমিষ্ট্রি ডিপার্মেন্টর চেয়ারম্যান ছিলাম। পরে অগ্রণী ব্যাংকে ৩২ বছর কাজ করেছি। অবসর এসেছি ২০০৯ এ ডিজিএম হিসাবে।

তো এই শেষ বয়সে আপনার কওমি মাদরাসায় পড়ার ইচ্ছা জাগল কিভাবে?
ধর্মীয় ব্যাপারে এবং কুরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে জানার আগ্রহ আমার আগে থেকেই ছিল। অবসরের পর আমার আগ্রহ আরো বেড়ে যায় যেহেতু আমি সময় পাচ্ছি। ওই আগ্রহ থেকেইে আমার এই ক্ষুধা জাগে- কিভাবে আমি কুরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে জানতে পারব। তখন খেয়াল এল কুরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে জানতে হলে আমাকে আরবি ভাষা সাহিত্যে দক্ষ হতে হবে। কুরআনের তাফসির জানতে হবে। এ ইচ্ছা থেকেই আমি কওমি মাদরাসায় পড়াশুনা করছি। যাতে করে আরবির উপর দক্ষতা অর্জন করে কুরআন ও সুন্নাহর মৌলিকত্তটা বুঝতে পারি।

কুরআন ও সুন্নাহর জ্ঞান কি শুধু কওমিতেই শিক্ষা দেওয়া হয়?
জ্বি আমি গবেষণা করে দেখেছি বর্তমানে আমাদের দেশে এরাবিক যে কয়টি শিক্ষা ব্যাবস্থা চালু রয়েছে তার মধ্যে একমাত্র কওমিতেই কুরআন ও সুন্নাহর মৌলিক বিষয়াবলী শিক্ষা দেওয়া হয়। অন্য অনেক জায়গায় এ শিক্ষা রয়েছে তবে পূর্ণাঙ্গ নয়।

অন্যান্য শিক্ষার্থীর তুলনায় কওমি ছাত্রদের আচরণে কোন পার্থক্য লক্ষ করেছেন?
অবশ্যই আমার কাছে খুবই ভাল লাগে, খুবই সুন্দর সরল-সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব এখানকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে। আমাদের সাহাবায়ে কেরামের যে সরল জীবন-যাপনের মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন বা বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, ঠিক সেই সারল্যটা এর মাঝে বিদ্যমান আছে। এখানে কোন বিলাসিতা নেই। কোন গৌরব নেই। কাউকে এড়িয়ে চলার কোন মন-মানসিকতা, ভাব তাদের মাঝে নেই। কোন উগ্রতা নেই। শিক্ষকদের প্রতি তাদের যে ভালবাসা তা সত্যিই বিরল। আমি অন্য কোথাও এমনটা দেখিনি।

সম্প্রতি কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
প্রথম যখন আমি স্বীকৃতি সম্পর্কে জানলাম তখনই বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হই। পর দিন প্রজ্ঞাপন জারি হলো, প্রজ্ঞাাপনকে আমি এভাবে দেখি যে প্রজ্ঞাপনের পর তার চলার একটি প্লাটফ্রম তৈরি হয়েছে। এখন যদি একটা কারিকুলাম কমিটি হয় এবং সেই কমিটির মাধ্যমে সমস্ত কারিকুলাম সুনির্দ্রিষ্ট করে বিভিন্ন মাহারহালার স্তর ভিন্যাস এবং কি ধরনের কোর্স থাকবে এগুলি নিদ্রির্ষ্ট করে যদি ধীরে ধীরে এগিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে স্কুল-কলেজ বা আলিয়া থেকে ভালো শিক্ষার্থী এখানে পাওয়া যাবে। তারাই মেজিস্ট্রেট হতে পারে, সরকারি চাকরিজীবী হতে পারে, সরকারি কলেজে যেতে পারে, সরকারি মাদরাসায় যেতে পারে। এতে স্পৃহা আরো বেড়ে যাবে এবং ইহলৌকিক পরলৌকিক দুটি কাজই এখানে সম্পূর্ণভাবে সমাধান হয়ে যাচ্ছে।

আরেকটি কথা বলতে চাই। আমার শিক্ষা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে বুঝা যায় একটি কারিকুলাম করে নিয়ন্ত্রণ তারা করবে। তবে সে নিয়ন্ত্রণ কওমি উলামায়ে কেরামদের মাধ্যমেই হতে হবে। একটি কওমি বিশ্ববিদ্যালয় হবে যে বিশ্ববিদ্যালয় সারা বাংলাদেশের সমস্ত মাদরাসাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং কমিটির সকলেই কওমির হতে হবে।

কওমি মাদরাসা নিয়ে আপনার কোন স্বপ্ন আছে কি?
আল্লাহ তাআলা যদি আমাকে হায়াত দান করেন, আমি দাওরায়ে হাদিস শেষ করে আলেমদের অধীনে আরো কিছু গবেষণামূলক পড়াশোনা করব ইনশাআল্লাহ। একটি মাদরাসার কাজ ইতোমধ্যেই শুরু করেছি। রমযানের পর সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। পড়াশোনা শেষ করে আমি সেখানে শিক্ষকতার স্বপ্নও দেখি। আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন- নিজেকে গর্বিত মনে করব কওমির শিক্ষক হতে পারলে।

বুড়ো বয়সে বাচ্চাদের সাথে ক্লাশ করেন, কেমন লাগে?
আমার কাছে খুবই ভাল লাগে। বাচ্চাদের ক্লাশ করাটাকে উপভোগ করি এবং উৎসাহ পাই। এনার্জি পাই এবং আমার মনে হচ্ছে যে আমি ছোট সময় স্কুল–কলেজে পড়তাম তখন যে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ এখন তার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। পড়তেও ভাল লাগে। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে আমি পড়ার চেষ্টা করি বিশেষ করে রাসুল সা. এর জীবনীর প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।

আপনার পরিবার এই বয়সের ছাত্রত্ব মেনে নিয়েছে তো?
হ্যাঁ, তারা আমার স্ত্রী পরিবার সবাই সন্তুষ্ট আমার প্রতি। আমার পড়াশোনার আগ্রহ এবং এই বয়সেও নতুন কিছু করার প্রেরণা তাদের কাছে ভালোই লাগে।

কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য আপনার কিছু বলার আছে?
আমার যেসব ভাই কওমিতে পড়াশোনা করছেন তারা ভাল রাস্তায় আছেন। তারা এর প্রতি আরো বেশি মনোযোগী হবেন। এর চর্চা আরো বাড়িয়ে দিন। সময় নষ্ট না করে পড়াশোনায় সময় দিয়ে ইলমে দ্বীন শিক্ষাকে আরও প্রসারিত করুন।

উস্তাদদের সম্পর্কে বলব তারা খুবই ভাল। দু-চার জন উস্তাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কও রয়েছে তারা বলেন, আমরা দ্বীনি শিক্ষার উন্নতির জন্য কওমিতে আছি। আমরা বিলাসিতার মধ্যে নাই। আমাদের সব চেয়ে সন্তুষ্টির জায়গা হলো আমরা দ্বীনি শিক্ষার উন্নতির জন্যে কাজ করছি।

আওয়ার ইসলামকে সময় দেওয়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাদেরকেও ধন্যবাদ যারা কষ্ট করে আমার কথা গুলি পড়ছেন।

বাংলাদেশের তাখাচ্ছুছ বিভাগের জন্য সবার সমন্বয় ও নীতিমালা জরুরি: মুফতি মোহাম্মদ আলী

প্রশ্নবাণে কওমি মাদরাসা : আমাদের নির্মম রসিকতা

কওমি শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিতদের আগ্রহ বাড়ছে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ