বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


অনেক মাদরাসায় শিক্ষকদের বেতন বাকি থাকে, এটা কি দোষণীয়?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

পহেলা মে সারা বিশ্বে শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয়। ১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওইদিন তাঁদের আত্মদানের মধ্য দিয়েই শ্রমিক শ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এ দিনটিকে তখন থেকেই সারা বিশ্বে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। কাগজে কলমে কোথাও শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা হলেও বাস্তবে আসলে কতোটা হয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ।

এখনো সর্বত্র শ্রমিকের হাহাকার চোখে পড়ার মতো। মালিক-শ্রমিক দ্বন্ধ, অধিকার ও কর্তব্য। শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা কেন অনুপস্থিত এবং শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কী করা উচিত। এ ব্যপারে ইসলামে কী দিক-নির্দেশনা রয়েছে আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে সেসব বিষয়ে কথা হয় জামিয়া কারিমিয়া দারুল উলুম বামৈ ঢাকা’র মুহতামিম  মাওলানা মুফতি হাবিবুল্লাহ সিরাজী’র সাথে।

বর্তমান সমাজের বিভিন্ন সেক্টরে শ্রমিক অধিকার অনুপস্থিত প্রতিনিয়ত শ্রমিকরা অবহেলার স্বীকার হচ্ছে এর কারণ জানতে চাইলে মুফতি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন,  শ্রমিকরা সমাজ বিনির্মাণের কারিগর। রাষ্ট্র ও সমাজের উন্নয়নের চালিকা শক্তি। কিন্তু এতো কিছুর পরেও শ্রমিক সমাজ আজ অবহেলিত।

মূলত ইসলাম দিয়েছে শ্রমিকের নায্য অধিকারের গ্যারান্টি। আর ইসলামের বিধি বিধানের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ উদাসীন হওয়ায় অবহেলার মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থার উন্নতির জন্য এখন জরুরি হলো, মালিক সমাজের কাছে ইসলামের বিধান জানা এবং সে অনুযায়ী বিষয়গুলো ব্যক্তিজীবনে প্রয়োগ করা।

ইসলাম শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রমিকদের প্রতি অবহেলা ও তাদের প্রাপ্য না দেয়া অবশ্যই জুলুম। রাসুল স. বলেছেন, মালিকের জন্য শ্রমিকের প্রাপ্য না দেয়া জুলুম।

এক টাকা হোক আর লাখ টাকা হোক শ্রমিকের পাওনা আদায় না করলে মালিক ঋণী থাকবে। আর কেয়ামতের ময়দানে হকের বিনিময়ে হক আদায় করতে হবে। আর জুলুমের শাস্তি তো পেতেই হবে। ইসলাম মূলত এসবের মাধ্যমে মালিককে সচেতন করতে চেয়েছে।

এছাড়া নবীজি তো সুস্পষ্টভাবেই বলেছেন, শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগে তাকে প্রাপ্য দিয়ে দাও।

[caption id="attachment_33962" align="alignleft" width="284"] মুফতি হাবিবুল্লাহ সিরাজী[/caption]

ওলামায়ে কেরাম বিভিন্ন মাদরাসায় শ্রম দিয়ে থাকেন, অনেক সময় দেখা যায়  তাদের বেতন-ভাতাও আটকে থাকে, এটা দোষণীয় কিনা- এ ব্যাপারে মুফতি হাবিবুল্লাহ সিরাজী’র বক্তব্য-

আসলে মাদরাসায় শ্রম দেয়াকে আমরা চাকরি হিসেবে নেই না। কওমি মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগের সময়ই কর্তপক্ষ থেকে বলা হয় এটা কোনো চাকরি নয় আপনি খেদমত করবেন। আপনার পরিবার পরিজন আছে সেই হিসেবে আমরা আপনাকে কিছু সম্মানি দেব। সেটা হতে পারে ছোট বড় নির্দিষ্ট পরিমাণের যে কোনো অঙ্কের।

আরেকটা বিষয় মাদরাসার কর্তৃপক্ষ কিন্তু কোনো বিনিময় নেয় না। তারা বরং মাদরাসা পরিচারনার জন্য বিনিময়হীন শ্রম দিয়ে থাকে। সুতরাং মাদরাসায় শ্রম দেয়াটা সবাই খেদমত হিসেবেই করে। এটা দীনের খেদমত, জাতির খেদমত।

অধিকাংশ অফিস আদালতেই শ্রমিকদের নির্দিষ্ট সময়ের বেশি কাজ করানোর হয়, কিন্তু সে অনুযায়ী তাকে বাড়তি সম্মানি দেয়া হয় না, এ ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?

মুফতি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত কাজ করানো অন্যায়। কেউ যদি কাউকে বলে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করো আমি আসছি সেক্ষেত্রে পাঁচের জায়গায় অতিরিক্ত হলে সটা খেয়ানত হবে। কেননা রাসুল সা. বলেছেন, ব্যক্তি যখন কোনো কথা বলে তখন তা আমানত।

সুতরাং নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত কাজ করানো আমানতের খেয়ানত। তবে যদি এর বিনিময়ে উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেয় তাহলে তা ভিন্ন। কিন্তু পারিশ্রমিক না দিলে প্রথমত জুলুম করার কারণে জুলুমের শাস্তি পাবে, দ্বিতীয়ত অতিরিক্ত কাজের বিনিময় না দেয়ায় হক নষ্ট করার শাস্তি পাবে।

যে ১০টি কাজ কখনো শ্রমিকদের সঙ্গে করবেন না

যেভাবে হত্যা করা হয় ওসামা বিন লাদেনকে

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ