শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


যে ১০টি কাজ কখনো শ্রমিকদের সঙ্গে করবেন না

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

যুবাইর ইসহাক
প্রতিবেদক, আওয়ার ইসলাম

শ্রমিক। যাদের গায়ের ঘামে গড়ে উঠে বড় বড় কল-কারকানা। যাদের শ্রমে সফলতার সপ্ন দেখেন বড় বড় ব্যবসায়ীরা। দেশ এগিয়ে যেতে যাঁদের ভূমিকা অনন্য। যাঁরা কঠোর পরিশ্রম করে দেশ দশের জন্য।
যাঁরা আমাদের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তাদের সঙ্গে সবসময় ১০টি কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।

১. কোনো ধমক বা গালি দেওয়া
একজন লোক দিনভর অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলছে। কিন্তু একটু সাধারণ ভুলে তার উপর ক্ষ্যাপে গেলেন? হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. রাসুল সা. খেদমতে দীর্ঘ দশ বছর ছিলেন। রাসুল সা. এই দশ বছরের ভিতর আনাস রা.-কে কোনো তিরস্কার তো দূরের কথা কোনো ব্যাপারে কৈফিয়ত পর্যন্ত চান নি।

মানুষ মাত্রই ভুল। যে কোন ভুল হওয়া স্বাভাবিক। এই ভুলের কারণে কখনো গালমন্দ করা যায় না। বরং হাসি মুখে বুঝিয়ে বলা কর্তব্য।

২. শ্রমিকের উপর হাত তুলা
এ কাজটা সাধারণত শিশুশ্রমিকের উপর বেশি করা হয়। একটু ভুলেই নিষ্পাপ শরীরে উপর হাত তুলে দেওয়া। হোটেলগুলোতে আমরা প্রতিদিন দেখে থাকি। শিশুটি কাজ শেষ করতে একটু দেরি হচ্ছে। এর অপরাধে তাকে নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে। মনে রাখবেন, এরকম একটি শিশু কিন্তু আপনার ঘরেও আছে!

৩. শ্রমিককে অবমূল্যায়ন করা
একজন শ্রমিক, সে যে-ই শ্রম করুক না কেন, সে আশরাফুল মাখলুকাতের অন্তর্ভূক্ত। সে তার পরিপূর্ণ মূল্যায়ন পাওয়ার অধিকার রাখে। এই শ্রমকে বিন্দুমাত্র লজ্জা বা অবমূল্যায়নের অবকাশ নেই। হযরত আদম আ. কৃষি কাজ করতেন। হযরত নূহ আ. কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। হযরত দাউদ আ. লোহার বর্ম তৈরি করতেন। হযরত ইদরিস আ. সেলাইয়ের কাজ করতেন। হযরত মূসা আ. রাখালের কাজ করতেন। এঁরা সবাই আল্লাহর নবী। যাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনিত হয়েছিলেন।

৪. শ্রমিককে তার স্বাভাবিক জীবনের চাহিদা পূরণের অনুযায়ী মজুরী না দেওয়া
স্বাভাবিক জীবনের চাহিদা অনুযায়ী একজন শ্রমিক পরিশ্রম পাওয়া তাঁর অধিকার। সারা দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে পুরো পরিবার নিয়ে যদি পেঠ ভরে ভাত না খেতে পারে অথবা মাস শেষে নিজে চলে পরিবারে কিছু না দিতে পারে, তবে এটা তার কেমন মজুরি হলো! এখনো বেতন বৃদ্ধির দাবিতে মানব বন্ধন, মিছিল-মিটিং দেখা যায়। ইসলাম ধর্মে একজন শ্রমিকের স্বাভাবিক চাহিদা অনুযায়ী মজুরি দিতে বলা হয়েছে।

৫. মুজুরি নির্দিষ্ট না করে কাজে লাগানো
অনেক সময় আমরা মজুরি ঠিক না করে কাজে লাগিয়ে দেই। রিকশা ব্যাপারে এটা বেশি হয়। আগে ভাড়া বা মজুরি নির্দিষ্ট না করার উভয় পক্ষে ঝগড়া লেগে যায়। রাসূল সা. বলেছেন, শ্রমিকের পারিশ্রম নির্ধারণ না করে তাকে কাজে নিযুক্ত করবে না।

৬. মজুরি আদায়ে দেরি করা
একজন লোক সারা দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করলো। অথচ কাজ শেষে আমরা তার পারিশ্রম আদায় করি না। অনেক দিন ধরে তার বেতন আটকে রাখি। অথচ রাসূল সা. শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর আগে তার পারিশ্রমিক আদায়ের জন্য বলেছেন। কাজ শেষে একজন শ্রমিকের বেতন যথাসম্ভব আদায় করা মানবতারও দাবি।

৭. অতিরিক্ত সময় কাজ করানো
মূলত শ্রমিক দিবসে প্রথম দাবি ছিলো, অতিরিক্ত সময় কাজ না করা। ১৮ এবং ১৯ শতকে শিল্প বিপ্লবের পূর্বে ইউরোপ আমরিকার শ্রমিকরা দৈনিক ১৪ ঘণ্টা বা তারচে বেশি সময় কাজ করতো। ১৮৮৬ সালের ১ মে দৈনিক আট ঘন্টা কাজের দাবিতে শিকাগোর ম্যাক হারভেস্টার কম্পানির অর্ধেক শ্রমিক ধর্মঘটের ডাক দেয়। সেই সমাবেশে তাদের উপর আক্রমণ করা হয়। এমনকি তৎক্ষণাত একজন ধর্মঘটকারী মারা যায় এবং কয়েকজন গুরুত্ত আহত হয়। তাই এখনো অতিরিক্ত কাজ, তাদের উপর অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়।

৮. সুবিধা-অসুবিধা না বুঝা
যদি কেউ আপনার নিয়মিত কাজ করে থাকে, হঠাৎ একদিক মিস করে ফেলে। এতে রাগ হয়ে বেতন বন্ধ করে দেওয়া কিছু নেই। মানুষ হিসাবে তার একটু সুবিধা-অসুবিধা থাকতেই পারে। তাই শ্রমিকের অসুবিধাও বিবেচনা করুন।

৯. ছুটির ক্ষেত্রে কঠোর হওয়া
অনেকে শ্রমিক আছেন, যারা দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে কাজ করেন। যারা বিভিন্ন কলকারকানা গার্মেন্টেসের সাথে জড়িত। বিশেষ ছুটি ছাড়াও তারা বাড়িতে যেতে চান। তাদের ছুটি দেন। এতে মন ভালো থাকবে। কাজেও মনোযোগ বাড়বে।

১০. তাদের সুখ দুঃখে পাশে না থাকা
অনেকে মালিক আছেন যারা, শুধু শ্রমিকদের কাছ থেকে নিতে জানেন, দিতে পারেন না। বিভিন্ন সিজনে হার্ড কাজ করাবে। এমনকি অভার টাইমও করাতে পারে। কিন্তু তাদের খুঁজ-খবর নেন না। তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবি মানতে নারাজ। তারা যে বিপদে আছে, এটাও জানেন না। তাদেরও সুখ দুঃখে হাত বাড়ান।

ইসলামে শ্রম ও শ্রমিকের মূল্যায়ন

আজ মহান মে দিবস

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ